আহত-৭ : দুটি গাড়ী ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত : ওসির বক্তব্য দায়সারা-গতানুগতিক
বিশেষ প্রতিবেদক: প্রচার-প্রচারণা শুরুর প্রথম দিনেই হামলার শিকার হয়েছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট, ২০ দলীয় জোট ও বিএনপি মনোনীন ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী মো. শরীফুজ্জামান শরীফ। গতকাল সোমবার আলমডাঙ্গায় প্রচারণা শেষে ফেরার পথে রাত ৯টার দিকে মুন্সীগঞ্জ পশুহাট নামক স্থানে পৌঁছুলে তাঁর গাড়ী বহরে হামলা করা হয়। এতে গাড়ীর ড্রাইভারসহ ৭ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন এবং ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রার্থী ও তাঁর সফরসঙ্গীদের বহনকারী দু’টি মাইক্রোবাস।
এদিকে, হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে রাত ১০টায় চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে হামলার বর্ণনা দেন বিএনপি মনোনীত সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী শরীফুজ্জামান শরীফ। তিনি বলেন, ‘প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে নির্বাচনী আচরণ বিধিমালা অনুসরণ করে প্রচারণা শুরু করেছি। প্রথম দিন চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের আলমডাঙ্গা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রচার-প্রচারণা শেষে চুয়াডাঙ্গায় ফেরার পথে জেহালা বাজারে অপেক্ষমান নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংক্ষিপ্ত কুশল বিনিময় শেষে রাত ৯টা নাগাদ আলমডাঙ্গা-চুয়াডাঙ্গা সড়কের মুন্সীগঞ্জ পশু হাটে পৌছুলে প্রথমে অন্ধকারের মধ্যে টর্চলাইটের আলো ফেলে সিগন্যাল দিয়ে মোটরসাইকেল দুটিকে থামানোর চেষ্টা করে। এ সময় দেশীয় অস্ত্র, দা, কুঁড়াল, চাপাতি, রড, লাঠি-সোটা ও বাঁশ নিয়ে ৩’শ থেকে ৪’শ লোক আমাদের গাড়ির দিকে ধেয়ে আসতে থাকে। বিপদ আশঙ্কায় মোটরসাইকেল আরোহীরা দ্রুত স্থান ত্যাগ করতে পারলেও আমরা তাদের হাত থেকে রক্ষা পাইনি। হামলাকারীরা ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিতে দিতে এক পর্যায়ে আমি যে গাড়ীর সামনে বসে ছিলাম সেই গাড়ীর গ্লাসে আঘাত করে ভেঙে ফেলে এবং আমার উপর চড়াও হওয়ার চেষ্টা করে। প্রাণভয়ে আমাদের গাড়ীর ড্রাইভার সামনের দিকে যেতে চাইলে রাস্তার উপর তেলের ব্যারেল ফেলে গাড়ীর গতিরোধ করার চেষ্টা করে তারা। হামলার মধ্যেও আমাকে বহনকারী গাড়িটির ড্রাইভার দ্রুত হামলাস্থল ত্যাগ করতে পারায় তাদের হাত থেকে আমার ও সহকর্মীদের জীবন রক্ষা পায়। এরপর পিছনে থাকা অপর গাড়ীটির উপরেও হামলা চালানো হয়। এতে দু’টি গাড়ী (ঢাকা মেট্রো-চ- ৫৩-৩৬০০ ও ঢাকা মেট্রো-চ-১৩-৬২৪৯) ক্ষতিগ্রস্ত, ড্রাইভার জাহাঙ্গীর ও কাজলসহ আহত হয় ৭ জন। আহত অন্যান্যরা হলেন- জেলা যুবদলের যুগ্ম-সম্পাদক হাফিজউদ্দিন হাবলু, জেলা ছাত্রদলের সদস্য মিশা, সোহেল, জেলা যুবদলের সদস্য ছোটন, রুবেল ও মিঠু। আহতরা চুয়াডাঙ্গা হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা গ্রহণ করেন। তাৎক্ষণিক বিষয়টি রিটার্নিং অফিসার ও পুলিশ সুপারকে জানিয়েছি।’

ঘটনার সঙ্গে কে বা কারা জড়িত এমন প্রশ্নের জবাবে শরীফুজ্জামান বলেন, ‘এই হামলার নেতৃত্ব ছিলেন স্থানীয় যুবলীগ নেতা হান্নান, শিলন ও মোমিনপুরের নবিছদ্দিন। এই হামলা সম্পূর্ণ পূর্বপরিকল্পিত। আমার দলের নেতাকর্মী ও আলমডাঙ্গা-চুয়াডাঙ্গার ভোটারদের ভীতসন্তস্ত করে ভোট কেন্দ্রে যেতে ভয় দেখাতেই এই হামলা। আরও দেড় মাস আগে এই গং’র ব্যাপারে পুলিশকে জানিয়েছিলাম। এদের কারণে এলাকার পাঁচ থেকে ছয়টি পরিবার আজও ঘর ছাড়া, তারা অন্য এলাকায় বসবাস করছে। কিন্তু আলমডাঙ্গার ওসি কোন ব্যবস্থা তো নেয়নি, উপরন্তÍ প্রতিদিনই বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বাড়িতে অভিযান চালাচ্ছে। এমনকি তফসিল ঘোষণার পর থেকে অতিসম্প্রতি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়াই গায়েবি-পেন্ডিং মামলায় নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করছে। আলমডাঙ্গা ওসির ভূমিকা অনেকাংশেই পক্ষপাতদুষ্ট। যার ফলস্বরুপ আজ আমাদের উপর নগ্ন হামলার ঘটনা ঘটলো। উপরন্তÍ আমাদের উপর দায় চাপানো হচ্ছে আমরা নাকি স্থানীয় আওয়ামী লীগের অফিস ভাঙচুর করেছি। যা সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। দলের সংকট অবস্থায় আমরা যখন ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেছি, তখনি তারা আমাদের উপর হামলা করে আতঙ্ক সৃষ্টির পায়তারা করছে। আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই- প্রতিপক্ষ আ.লীগ, যুবলীগসহ গোষ্ঠীগত নেতৃবৃন্দ আমাদের উপর যে নির্যাতন, নিপীড়ন আর অত্যাচার চালাচ্ছে তার জবাব ব্যালটের মাধ্যমে দেওয়া হবে। আমরা শেষ পর্যন্ত নির্বাচনের মাঠে থাকবো। এই অপশক্তির প্রার্দুভাব আর নয়, সাধারণ জনগন ভোটের মাধ্যমে এই জুলুমবাজদের বিচার করবে।’

এদিকে রাতেই বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টের নেতৃবৃন্দ হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত গাড়ি দু’টি পুলিশ সুপারকে দেখান। এ সময় পুলিশ সুপার মাহবুবুর রহমান পিপিএম নেতৃবৃন্দকে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন।
এ ঘটনা প্রসঙ্গে আলমডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ আবু জিহাদ মো. ফখরুল আলম খানের কাছে জানতে চাওয়া হয়। তবে তার বক্তব্য দায়সারা, গতানুগতিক। তিনি বলেন, ‘পাল্টাপাল্টি ঘটনার কথা শুনেছি। একটি পক্ষ তাদের অফিস ভাঙচুরের অভিযোগ আমাকে মোবাইলে জানিয়েছেন। বিএনপি প্রার্থী আমার কাছে কোন অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত আলমডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ হামলার শিকার বিএনপি প্রার্থীর নিকট ঘটনা সম্পর্কে কোন কিছু জানতে চাননি বলে জানিয়েছেন সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী শরীফুজ্জামান শরীফ।