ইতিহাস মুছে ফেলা যায় না: শেখ হাসিনা
- আপলোড তারিখঃ ১৯-১১-২০১৭ ইং
ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত নাগরিক সমাবেশে মানুষের ঢল, জয় বাংলা ধ্বনিতে মুখরিত
ডেস্ক রিপোর্ট: বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ ইউনেস্কো ঘোষিত ‘বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্যে’র স্বীকৃতি পাওয়ায় নাগরিক কমিটির ব্যানারে গতকাল শনিবার (১৮ নভেম্বর) বিকেলে রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ও বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বেলা তিনটার দিকে সমাবেশস্থলে এসে পৌঁছান। ৪টা ২০ মিনিটে বক্তব্য শুরু করেন তিনি। শেষ করেন ৪টা ৫০ মিনিটে। প্রধানমন্ত্রী বক্তব্যের শুরুতেই স্বাধিকার থেকে স্বাধীনতা আন্দোলনে বীর শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানান। স্মরণ করেন ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট নিহত বঙ্গবন্ধু, তাঁর পরিবারের সদস্য এবং জেলহত্যার শিকার চার জাতীয় নেতাকে। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী তাঁর বক্তব্যে ইউনেসকো ও যে দেশগুলো ভোট দিয়ে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণকে স্বীকৃতি দিয়েছে, তাদের ধন্যবাদ দেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেন, ইতিহাস মুছে ফেলা যায় না। ইতিহাস যতই মুছতে চেষ্টা করুন, তা সম্ভব নয়। ইতিহাস সত্যকেই তুলে ধরে। ৭ মার্চের ভাষণকে ঐতিহাসিক দলিলের স্বীকৃতি দেয়ায় ইউনেস্কোর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পৃথিবীর কোনো ভাষণ এত দিন, এত ঘণ্টা প্রচার হয়নি। ওই ভাষণে যতই বাধা এসেছে মানুষ ততই জাগ্রত হয়েছে। পাকিস্তানের তোষামোদকারী-চাটুকার-প্রেতাত্মারা আর যেন ইতিহাস বিকৃতির সুযোগ না পায়, সেজন্য সমগ্র বাংলাদেশের মানুষকে জাগ্রত হতে হবে। তিনি বলেন, বিশ্বে স্বীকৃতি পাওয়া ভাষণগুলো ছিল লিখিত। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর ভাষণ লিখিত ছিল না। এই ভাষণের জন্য কোনো ‘নোটস’ ও বঙ্গবন্ধুর হাতে ছিল না। ৭ মার্চে ভাষণ দেওয়ার আগে সহধর্মিণী ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বঙ্গবন্ধুকে আলাদা ডেকে নিয়ে পরামর্শ দিয়েছিলেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মা, বাবাকে ডেকে নিয়ে বলেছিলেন, ‘‘অনেকে অনেক কিছু বলছে। কিন্তু তুমি তাই বলবে যা তুমি ভালো মনে করো।’’ প্রধানমন্ত্রী বাবাকে দেওয়া মায়ের এই পরামর্শকে শ্রেষ্ঠ পরামর্শ বলে উল্লেখ করেন। স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি যেন আর মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার সুযোগ না পায়, সে জন্য দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী বক্তব্যের শেষ দিকে বলেন, ‘এতক্ষণ মেঘে ছেয়েছিল, আজকে আমাদের সূর্য নতুনভাবে দেখা দিয়েছে। এই সূর্যই আমাদেরকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। বাংলাদেশকে আবারও আমরা উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তুলব।’
দুপুর থেকেই রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নাগরিক সমাবেশে মানুষের ঢল নামে। সকাল থেকেই খ- খ- মিছিল নিয়ে আওয়ামী লীগ, এর বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠন, বিভিন্ন সামাজিক ও ও সাংস্কৃতিক সংগঠন ব্যানার নিয়ে সমাবেশে আসতে শুরু করে। দুপুরের মধ্যেই কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে ওঠে এ বিশাল উদ্যান। এখানেই ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শুনিয়েছিলেন স্বাধীনতার অমর সেই বাণী, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম।’ সমাবেশস্থল সাজানো হয় ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের মতো করে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের কৃত্রিম লেকে শোভা পায় পাটবোঝাই পালতোলা নৌকা। আর নৌকার পালে আছে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের বিভিন্ন অংশ। এসবের মধ্যে ‘এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম,’ ‘রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরও দেব, এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশা আল্লাহ’, ‘তোমাদের হাতে যার যা কিছু আছে, তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করতে হবে’ লেখা ব্যানার। জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় সমাবেশ। তারপর বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থ থেকে পাঠ করা হয়। শহীদ জায়া শ্যামলী নাসরীন চৌধুরী, অধ্যাপক রফিকুল হক, অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল, সাংবাদিক গোলাম সারওয়ার অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। কবি নির্মলেন্দু গুণ তাঁর রচিত কবিতা এবং সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর কবিতা আবৃত্তি করেন। বক্তব্যের ফাঁকে ফাঁকে পরিবেশিত হয় গান ও কবিতা। পরিবেশিত হয় রবীন্দ্র, নজরুল আর মরমি কবি লালন শাহের গান।
কমেন্ট বক্স