জন্মনিবন্ধন সনদেই নবাব
- আপলোড তারিখঃ ০২-১১-২০২০ ইং
এস্টেটের সম্পত্তি দখলের পাঁয়তারা
সমীকরণ প্রতিবেদন:
জন্মনিবন্ধন সনদে ২০১৪ সালে ‘নবাব’ ও ‘খাজা’ শব্দ দুটি যোগ করে নবাব বনে যান আলী হাসান আসকারী। হয়ে যান ‘নবাব খাজা আলী হাসান আসকারী’। একইভাবে স্ত্রী মেরিনা আক্তার হয়ে যান সায়েবা হেনা আসকারী। জন্মসনদের বিপরীতে এই দম্পতি বাগিয়ে নেয় পাসপোর্ট। স্ত্রী ২০১৮ সালে চুয়াডাঙ্গা সদর থেকে এবং স্বামী চলতি বছর ঢাকা-১০ আসনের উপনির্বাচনে মুসলিম লীগ থেকে অংশ নেন। অন্যদিকে ঢাকার নবাব এস্টেটের সম্পত্তি দখলের পাঁয়তারা করেছিলেন এই ভুয়া নবাব। নবাব পরিবারের বংশধর সেজে আলী হাসান আসকারী ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের ভূমি অফিসে পাঁচটি মিস কেসও করেছিলেন। তিন দিনের রিমান্ডের জিজ্ঞাসাবাদে তদন্ত-সংশ্লিষ্টদের কাছে এসব তথ্য দিয়েছেন আলী হাসান আসকারী। এ ছাড়া প্রতারণার অভিযোগে আসকারীর বিরুদ্ধে আরও দুটি মামলা দায়ের করেছেন দুই ভুক্তভোগী। রাজধানীর মিরপুর ও মতিঝিল থানায় শনিবার এই মামলা দুটি নথিভুক্ত হয়েছে। পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, প্রতিদিনই ভুয়া এই নবাবের প্রতারণার তথ্য আসছে তাদের কাছে। বিস্ময়ের মাত্রা প্রতিদিনই বাড়ছে। বিশেষ করে তাদের দাম্পত্য জীবন নিয়ে নানা তথ্যে তদন্ত-সংশ্লিষ্টরাই গোলকধাঁধায় পড়েছেন।
ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আলী হাসান আসকারী এক ভয়ংকর প্রতারক। প্রতিদিনই তার নতুন নতুন প্রতারণার কৌশল সম্পর্কে আমরা জানতে পারছি এবং রীতিমতো অবাক হচ্ছি। তিন দিনের রিমান্ড শেষে তিনি কারাগারে আছেন। তার ব্লাড প্রেসার ও হৃদরোগের জটিলতা আছে তাই জিজ্ঞাসাবাদে বেগ পেতে হচ্ছে। তবে তার কয়েকজন সহযোগীকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।’
নবাব এস্টেটের সম্পত্তি দখলের পাঁয়তারা
পুলিশ জানিয়েছে, আলী হাসান আসকারী ঢাকার নবাব এস্টেটের সম্পত্তির মধ্যে শাহবাগের একটি অংশের মোতাওয়াল্লি হওয়ার জন্য ভূমি অফিসে দুটি মিসকেস (৭০৭/২০২০, ৮৯০/২০২০) করেছেন। এ ছাড়া নারায়ণগঞ্জেও নবাব এস্টেটের কিছু সম্পত্তির মোতাওয়াল্লি হওয়ার জন্য তিনটি মিসকেস (৬৬৬/২০২০, ৬৬৭/২০২০, ৬৬৮/২০২০) করেছেন তিনি। বর্তমানে এসব সম্পত্তি ভূমি সংস্কার বোর্ডের অধীনে কোর্ট অব ওয়ার্ডসের মাধ্যমে দেখভাল করা হয়। নবাব পরিবারের বংশধর না হওয়া সত্ত্বেও এসব মিসকেস করার কারণ জানতে চাইলে হাসান আলী আসকারী বলেন, অনেকেই ভুয়া বংশধর সেজে নওয়াব এস্টেটের বিভিন্ন সম্পত্তির মোতাওয়াল্লি হয়েছেন। তিনিও সেই উদ্দেশ্যে এসব কেস করেছেন। কিন্তু এগুলোর কোনো কিছুতেই তিনি সফল হতে পারেননি।
খাজা নবাব নামে জাতীয় পরিচয়পত্র
পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আলী হাসান আসকারী ২০১৪ সালে ঢাকার নিকুঞ্জ এলাকার ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কাছে নিজের নামে নবাব খাজা আলী হাসান আসকারী নামে একটি জন্মনিবন্ধন নিয়েছেন। সেই জন্মনিবন্ধনের ভিত্তিতে তিনি নবাবের বংশধর হিসেবে পরিচয় দেওয়া শুরু করেন। ২০১৫ সালে তিনি ঢাকার আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস থেকে একটি পাসপোর্ট সংগ্রহ করেন। তার পাসপোর্টের নথিপত্র ঘেঁটে সেখানে পুলিশ ভেরিফিকেশনের কোনো নথি পাওয়া যায়নি। স্থায়ী ঠিকানা হিসেবে সেখানে উত্তরার মাসকট প্লাজা লেখা রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, কোনো অসাধু চক্রের মাধ্যমে তিনি পুলিশ ভেরিফিকেশন ছাড়াই পাসপোর্ট হাতে পান। জন্মনিবন্ধন ও পাসপোর্ট দিয়ে তিনি ২০১৭ সালে আবেদন করে নবাব খাজা আলী হাসান আসকারী নামে জাতীয় পরিচয়পত্র সংগ্রহ করেন।
তদন্ত-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, শুরুতেই জাতীয় পরিচয়পত্র না নিয়ে ২০১৭ সালে জাতীয় পরিচয়পত্র নেওয়ার কারণ জানতে চাইলে আসকারী কোনো উত্তর দিতে পারেননি। এ কারণে ধারণা করা হচ্ছে, আগে তার অন্য কোনো নাম ছিল। জন্মনিবন্ধনের সূত্র ধরে তিনি পরে নতুন করে নতুন নামে জাতীয় পরিচয়পত্র সংগ্রহ করেছেন।
প্রতারণার অভিযোগে আরও দুই মামলা
সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে নার্স নিয়োগের নামে ফেনীর ৪০০ ব্যক্তির কাছ থেকে ৩ কোটি ৩৪ লাখ টাকা নিয়েছিলেন প্রতারক আসকারী। প্রতারিত ব্যক্তিদের পক্ষে সালমান নামে এক মাদ্রাসাশিক্ষকের দায়ের করা মামলায় বুধবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে পাঁচ সহযোগীসহ আসকারীকে গ্রেফতার করা হয়। আসকারীর গ্রেফতারের খবর চাউর হওয়ার পর প্রতারিতদের অনেকেই ঢাকার কাউন্টার টেররিজম ইউনিটে যোগাযোগ শুরু করেন। এরই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার মানজুর রহমান নামে এক ব্যক্তি মিরপুর থানায় আসকারীর বিরুদ্ধে ৪৮ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করেন। আর শনিবার তাজুল ইসলাম নামে আরেক ব্যক্তি মতিঝিল থানায় করেছেন আরও একটি মামলা। সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চাকরি দেওয়ার নাম করে আসকারী তার কাছ থেকে ৪৩ লাখ টাকা নিয়েছেন বলে তিনি মামলায় অভিযোগ করেছেন।
কমেন্ট বক্স