ইপেপার । আজবৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাংলাদেশ-কাতার ১০ চুক্তি ও সমঝোতা, জ¦ালানি-জনশক্তি খাতে গুরুত্ব

বাণিজ্য ও বিনিয়োগে নজর

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৯:২৫:১৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
  • / ১৯ বার পড়া হয়েছে


বাংলাদেশ ও কাতারের জনগণের মধ্যে পারস্পারিক যোগাযোগ এবং রাষ্ট্রীয় ব্যবসা ও রাজনৈতিক নেতৃত্বসহ সব স্তরে সফল বিনিময়ের মাধ্যমে সম্পর্ককে আরো বাড়ানোর বিষয়ে গুরুত্ব দিয়েছে দুই দেশ বাংলাদেশ-কাতার। বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ, জনশক্তি, প্রতিরক্ষা, শিক্ষা, কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তায় দুই দেশের মধ্যে আরো নিবিড় সম্পর্ক বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বাংলাদেশের দিক থেকে কর্মসংস্থান খাতেও বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এসব ক্ষেত্রে গভীর সম্পর্ক এবং দ্বিপক্ষীয় উন্নয়নে ১০ চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। দুই দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপ্রধান মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির পৃথক পৃথক বৈঠকে উভয় দেশের আর্থ-সামাজিক ও বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে ইতিবাচক বিষয়ে আলোচনা হয়। ব্যস্ত এই সফর শেষে গতকাল মঙ্গলবার বিকাল ৩টার দিকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিশেষ ফ্লাইটযোগে ঢাকা ত্যাগ করেন শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে গতকাল বলা হয়, কাতার আমিরের সফর দুই দেশের মধ্যে অসাধারণ সদিচ্ছা ও বোঝাপড়া তৈরি করেছে। বিবৃতিতে বলা হয়, সর্বোচ্চ পর্যায়ের এ সফরটি দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে আরো সুসংহত এবং সম্পর্ককে পরবর্তী স্তরে উন্নীত করতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে পারে। এ ব্যাপারে কূটনৈতিক বিশ্লেষক ও সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শমসের মবিন চৌধুরী বলেন, ইসরায়েল ইস্যু নিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতা বিরাজ করছে। এই সময়ে বাংলাদেশে কাতারের আমীরের সফরের রাজনৈতিক গুরুত্ব অনেক বেশি। সফরে বাংলাদেশ ও কাতারের মধ্যে সমঝোতা ও চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। এর ফলে দুই দেশের মধ্যে বিনিয়োগ এবং বাণিজ্যে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। জ¦ালানিতেও ভালো প্রভাব পড়বে কাতারের আমীরের এই সফরে। তিনি বলেন, বিশ্বে জ¦ালানি সংকট রয়েছে। এই সংকটের কারণে অনেকেই উদ্বিগ্ন। এ রকম পরিস্থিতিতে কাতারের আমীরের সঙ্গে জ¦ালানি ইস্যুতে বাংলাদেশের আলোচনা হয়েছে। কাতার থেকে বাংলাদেশ যদি জ¦ালানি সুবিধা নিতে পারে তাহলে এটাও বড় প্রাপ্তি হবে।
বিনিয়োগ ও বাণিজ্যে সম্ভাবনা :
পারস্পরিক সহযোগিতা জোরদার করতে গতকাল বাংলাদেশ ও কাতারের মধ্যে পাঁচটি চুক্তি ও পাঁচটি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত চুক্তি সই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি উপস্থিত ছিলেন। দ্বিপক্ষীয় আলোচনার সময় উভয় পক্ষই দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার প্রশংসা করে। উভয়পক্ষ গাজা যুদ্ধ এবং মিয়ানমারের নাগরিক রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনসহ পারস্পরিক স্বার্থের আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক ইস্যুতেও মতবিনিময় করেছে। উভয় নেতা মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা ও সহিংসতা বেড়ে যাওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং ফিলিস্তিনের সমস্যার টেকসই সমাধানের জন্য বিশ্ব নেতাদের কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানান তারা। প্রধানমন্ত্রী তার উদ্বোধনী বক্তব্যে একটি উন্নত জ্ঞানভিত্তিক বহু-সাংস্কৃতিক সমাজ হিসাবে কাতারের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি এবং রূপান্তর এবং আমিরের নেতৃত্বে মধ্যস্থতা ও বহুপক্ষীয় কূটনীতিতে কাতারের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার গভীরভাবে প্রশংসা করেন। তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবদ্দশায় বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়া কয়েকটি উপসাগরীয় দেশের অন্যতম হওয়ার জন্য কাতারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। কাতারের আমির প্রধানমন্ত্রীর গতিশীল নেতৃত্বে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রশংসা করেন।
তিনি বাংলাদেশকে একটি উদীয়মান বিনিয়োগ গন্তব্য হিসেবে প্রশংসা করেন এবং কাতার ও বাংলাদেশের মধ্যে বিনিয়োগ প্রসার ও সুরক্ষা সংক্রান্ত চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য উভয় পক্ষকে ধন্যবাদ জানান এবং বাংলাদেশে সম্ভাবনার ক্ষেত্রে ব্যবসা অনুসন্ধানে আগ্রহ প্রকাশ করেন। আমির কাতারের উন্নয়নে বাংলাদেশ প্রবাসী সম্প্রদায়ের ভূমিকারও স্বীকৃতি দেন, যারা উভয় দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক অবদান রাখছেন। এই প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ থেকে আরো কর্মী, পেশাদার, নার্স, টেকনিশিয়ান, কেয়ারগিভার ইত্যাদি নিয়োগের বিষয়টি বিবেচনা করার জন্য কাতারের আমিরকে অনুরোধ করেন। কাতারের আমির এতে ইতিবাচকভাবে সাড়া দেন। মতবিনিময়কালে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী দুই দেশের চেম্বার সংস্থার মধ্যে একটি জয়েন্ট বিজনেস কাউন্সিল (জেবিসি) গঠনকে স্বাগত জানান এবং ব্যবসায়িক সম্প্রদায়ের মধ্যে পারস্পরিক আলাপ-আলোচনা এবং সম্পৃক্ততার সুবিধার্থে ব্যবসায়িক চক্রের জন্য ভিসা পদ্ধতি সহজ করার জন্য কাতারি পক্ষের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি কাতারি বিনিয়োগকারীদের এবং ব্যবসায়ীদের কক্সবাজারে পর্যটন খাত বিকাশ এবং তাদের জন্য নিবেদিত এক্সক্লুসিভ ইকোনমিক জোনে বিনিয়োগের সুযোগ অন্বেষণের প্রস্তাব দেন।
কাতারের আমির ইইজেড এবং কক্সবাজারের পর্যটন স্পটগুলোতে বিনিয়োগের প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, তিনি কাতার ইনভেস্টমেন্ট অথরিটি (কিউআইএ) এবং কাতারের ব্যবসায়িক প্রতিনিধিদের বাংলাদেশ সফর করতে এবং প্রস্তাবিত খাতে বিনিয়োগের সম্ভাবনা দেখতে বলবেন। তিনি কাতারের ফ্রি ইকোনমিক জোন সম্পর্কেও বৈঠকে অবহিত করেন এবং প্রধানমন্ত্রীকে ব্যবসায়িক প্রতিনিধি দল পাঠানোর অনুরোধ জানান। এর আগে কাতারের আমির প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পৌঁছালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমিরকে টাইগার গেটে ফুলের তোড়া দিয়ে স্বাগত জানান। এরপর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের শিমুল হলে একান্ত বৈঠকে বসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি। একান্ত বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের গ্লোব হলে ফটোসেশনে অংশ নেন তারা। এরপর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের চামেলী হলে দুদেশের প্রতিনিধিদের নিয়ে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন। কার্যালয় ত্যাগের আগে কাতারের আমির টাইগার গেটে রক্ষিত দর্শনার্থী বইয়েও সই করেন।
১০ চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই :
বাংলাদেশের পক্ষে শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন এবং কাতারের বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন হামাদ আল থানি বাংলাদেশ ও কাতারের মধ্যে পারস্পরিক বিনিয়োগ উন্নয়ন ও সুরক্ষা চুক্তিতে সই করেন। পাশাপাশি বাংলাদেশ ও কাতারের মধ্যে আয়ের ক্ষেত্রে দ্বৈত কর পরিহার এবং রাজস্ব ফাঁকি প্রতিরোধ চুক্তিটি স্বাক্ষর করেন কাতারের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সুলতান বিন সাদ আল মুরাইখি এবং বাংলাদেশের অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান। আইন, বিচার ও সংসদবিষয়কমন্ত্রী আনিসুল হক এবং কাতারের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সুলতান বিন সাদ আল মুরাইখি বাংলাদেশ সরকার ও কাতার রাষ্ট্রের মধ্যে আইনি ক্ষেত্রে সহযোগিতা চুক্তিতে সই করেন। কাতার ও বাংলাদেশের মধ্যে সামুদ্রিক পরিবহন সংক্রান্ত চুক্তিতে সই করেন কাতারের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সুলতান বিন সাদ আল মুরাইখি এবং নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। এছাড়া বাংলাদেশ-কাতার জয়েন্ট বিজনেস কাউন্সিল প্রতিষ্ঠা সংক্রান্ত চুক্তিতে সই করেন কাতার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (কিউসিসিআই) চেয়ারম্যান শেখ খলিফা বিন জসিম আল থানি এবং ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (এফবিসিসিআই) সভাপতি মাহবুবুল আলম।
বাংলাদেশ ও কাতারের মধ্যে কূটনৈতিক প্রশিক্ষণে সহযোগিতা সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারকে সই করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এবং কাতারের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সুলতান বিন সাদ আল মুরাইখি। পাশাপাশি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এবং কাতারের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সুলতান বিন সাদ আল মুরাইখি বাংলাদেশ ও কাতারের মধ্যে শিক্ষা, উচ্চশিক্ষা এবং বৈজ্ঞানিক গবেষণার ক্ষেত্রে সহযোগিতার বিষয়ে সমঝোতা স্মারকেও সই করেন। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী এবং কাতারের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সুলতান বিন সাদ আল মুরাইখি জনশক্তি কর্মসংস্থান (শ্রম) ক্ষেত্রে সহযোগিতা সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারকে সই করেন। বন্দরের ক্ষেত্রে সহযোগিতায় (এমডব্লিউএএনআই কাতার এবং চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ) কাতারের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সুলতান বিন সাদ আল মুরাইখি এবং নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী সই করেছেন।
কাতার আমিরের নামে পার্ক ও সড়ক :
চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই অনুষ্ঠানে কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির নামে রাজধানী ঢাকার একটি সড়ক ও একটি পার্কের নামকরণ করা হয়। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) অধীনে মিরপুরের কালসি এলাকার বালুর মাঠে পার্কটি নির্মাণ করা হচ্ছে। মিরপুর ইসিবি চত্বর থেকে কালসি ফ্লাইওভার পর্যন্ত সড়কটির নামকরণ করা হয়েছে কাতারের আমিরের নামে। এখন থেকে সড়ক ও পার্কটি শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি এভিনিউ এবং শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি পার্ক নামে পরিচিত হবে।
বাংলাদেশ থেকে আরো কর্মী নিতে কাতারের প্রতি আহ্বান রাষ্ট্রপতির :
বাংলাদেশ থেকে আরো দক্ষ ও আধা দক্ষ কর্মী নিতে কাতারের আমিরের শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানিকে অনুরোধ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। গতকাল দুপুরে রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন বঙ্গভবনের দরবার হলে কাতারের আমিরের সম্মানে মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন করেন। বঙ্গভবনে কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি ও তার সফরসঙ্গীদের স্বাগত জানিয়ে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, কাতার বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন অংশীদার। আমিরের এ সফর দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। বিদেশি বিনিয়োগের জন্য ১০০ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠাসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা তুলে ধরে রাষ্ট্রপতি এসব সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করে জ্বালানি, মেশিনারিজ, আইটি, খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ করতে কাতারের বিনিয়োগকারীদের প্রতি আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে কাতার ও বাংলাদেশের মধ্যে জ্বালানি, নিরাপত্তা ও আইটিসহ বেশ কয়েকটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। রাষ্ট্রপতি এ ব্যাপারে সন্তোষ প্রকাশ করেন।
তিনি আশা প্রকাশ করেন, আগামীতে দুই দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা আরো জোরদার হবে। বাংলাদেশে এলএনজি সরবরাহ করায় কাতার সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে ভবিষ্যতে জ্বালানিসহ বিভিন্ন খাতে কাতারের সহযোগিতা বাড়বে বলেও আশা প্রকাশ করেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। বৈঠকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত মন্ত্রী, সচিব ও রাষ্ট্রপতির সচিবরা উপস্থিত ছিলেন। প্রসঙ্গত. বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ আমন্ত্রণে সোমবার দুদিনের রাষ্ট্রীয় সফরে ঢাকায় আসেন কাতারের আমির। তিনি সরকারি ও বেসরকারি সেক্টরের সদস্যদের সমন্বয়ে একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন, যাতে অন্যদের মধ্যে ছিলেন আমির-ই দেওয়ান প্রধান, বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী, কাতারের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী, কাতার চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির চেয়ারম্যান, কাতার ইনভেস্টমেন্ট অথরিটির (কিউআইএ) এশিয়া ও আফ্রিকা ইনভেস্টমেন্টের প্রধান, এশিয়ান অ্যাফেয়ার্স অ্যান্ড স্টাডিজ অ্যান্ড রিসার্চের পরিচালক। রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন আমিরকে স্বাগত জানান। বিমানবন্দরে তাকে লাল গালিচা সংবর্ধনা এবং গার্ড অব অনারও দেয়া হয়। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধবিষয়কমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী এবং সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এ বছরের জানুয়ারিতে দেশে নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পর এটি ছিল রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে প্রথম স্বাগতিক সফর। এই সফর বাংলাদেশ ও কাতারের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৫০ বছর পূর্তির উপলক্ষ সামনে রেখেও অনুষ্ঠিত হয়।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

বাংলাদেশ-কাতার ১০ চুক্তি ও সমঝোতা, জ¦ালানি-জনশক্তি খাতে গুরুত্ব

বাণিজ্য ও বিনিয়োগে নজর

আপলোড টাইম : ০৯:২৫:১৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪


বাংলাদেশ ও কাতারের জনগণের মধ্যে পারস্পারিক যোগাযোগ এবং রাষ্ট্রীয় ব্যবসা ও রাজনৈতিক নেতৃত্বসহ সব স্তরে সফল বিনিময়ের মাধ্যমে সম্পর্ককে আরো বাড়ানোর বিষয়ে গুরুত্ব দিয়েছে দুই দেশ বাংলাদেশ-কাতার। বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ, জনশক্তি, প্রতিরক্ষা, শিক্ষা, কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তায় দুই দেশের মধ্যে আরো নিবিড় সম্পর্ক বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বাংলাদেশের দিক থেকে কর্মসংস্থান খাতেও বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এসব ক্ষেত্রে গভীর সম্পর্ক এবং দ্বিপক্ষীয় উন্নয়নে ১০ চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। দুই দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপ্রধান মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির পৃথক পৃথক বৈঠকে উভয় দেশের আর্থ-সামাজিক ও বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে ইতিবাচক বিষয়ে আলোচনা হয়। ব্যস্ত এই সফর শেষে গতকাল মঙ্গলবার বিকাল ৩টার দিকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিশেষ ফ্লাইটযোগে ঢাকা ত্যাগ করেন শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে গতকাল বলা হয়, কাতার আমিরের সফর দুই দেশের মধ্যে অসাধারণ সদিচ্ছা ও বোঝাপড়া তৈরি করেছে। বিবৃতিতে বলা হয়, সর্বোচ্চ পর্যায়ের এ সফরটি দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে আরো সুসংহত এবং সম্পর্ককে পরবর্তী স্তরে উন্নীত করতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে পারে। এ ব্যাপারে কূটনৈতিক বিশ্লেষক ও সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শমসের মবিন চৌধুরী বলেন, ইসরায়েল ইস্যু নিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতা বিরাজ করছে। এই সময়ে বাংলাদেশে কাতারের আমীরের সফরের রাজনৈতিক গুরুত্ব অনেক বেশি। সফরে বাংলাদেশ ও কাতারের মধ্যে সমঝোতা ও চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। এর ফলে দুই দেশের মধ্যে বিনিয়োগ এবং বাণিজ্যে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। জ¦ালানিতেও ভালো প্রভাব পড়বে কাতারের আমীরের এই সফরে। তিনি বলেন, বিশ্বে জ¦ালানি সংকট রয়েছে। এই সংকটের কারণে অনেকেই উদ্বিগ্ন। এ রকম পরিস্থিতিতে কাতারের আমীরের সঙ্গে জ¦ালানি ইস্যুতে বাংলাদেশের আলোচনা হয়েছে। কাতার থেকে বাংলাদেশ যদি জ¦ালানি সুবিধা নিতে পারে তাহলে এটাও বড় প্রাপ্তি হবে।
বিনিয়োগ ও বাণিজ্যে সম্ভাবনা :
পারস্পরিক সহযোগিতা জোরদার করতে গতকাল বাংলাদেশ ও কাতারের মধ্যে পাঁচটি চুক্তি ও পাঁচটি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত চুক্তি সই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি উপস্থিত ছিলেন। দ্বিপক্ষীয় আলোচনার সময় উভয় পক্ষই দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার প্রশংসা করে। উভয়পক্ষ গাজা যুদ্ধ এবং মিয়ানমারের নাগরিক রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনসহ পারস্পরিক স্বার্থের আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক ইস্যুতেও মতবিনিময় করেছে। উভয় নেতা মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা ও সহিংসতা বেড়ে যাওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং ফিলিস্তিনের সমস্যার টেকসই সমাধানের জন্য বিশ্ব নেতাদের কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানান তারা। প্রধানমন্ত্রী তার উদ্বোধনী বক্তব্যে একটি উন্নত জ্ঞানভিত্তিক বহু-সাংস্কৃতিক সমাজ হিসাবে কাতারের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি এবং রূপান্তর এবং আমিরের নেতৃত্বে মধ্যস্থতা ও বহুপক্ষীয় কূটনীতিতে কাতারের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার গভীরভাবে প্রশংসা করেন। তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবদ্দশায় বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়া কয়েকটি উপসাগরীয় দেশের অন্যতম হওয়ার জন্য কাতারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। কাতারের আমির প্রধানমন্ত্রীর গতিশীল নেতৃত্বে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রশংসা করেন।
তিনি বাংলাদেশকে একটি উদীয়মান বিনিয়োগ গন্তব্য হিসেবে প্রশংসা করেন এবং কাতার ও বাংলাদেশের মধ্যে বিনিয়োগ প্রসার ও সুরক্ষা সংক্রান্ত চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য উভয় পক্ষকে ধন্যবাদ জানান এবং বাংলাদেশে সম্ভাবনার ক্ষেত্রে ব্যবসা অনুসন্ধানে আগ্রহ প্রকাশ করেন। আমির কাতারের উন্নয়নে বাংলাদেশ প্রবাসী সম্প্রদায়ের ভূমিকারও স্বীকৃতি দেন, যারা উভয় দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক অবদান রাখছেন। এই প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ থেকে আরো কর্মী, পেশাদার, নার্স, টেকনিশিয়ান, কেয়ারগিভার ইত্যাদি নিয়োগের বিষয়টি বিবেচনা করার জন্য কাতারের আমিরকে অনুরোধ করেন। কাতারের আমির এতে ইতিবাচকভাবে সাড়া দেন। মতবিনিময়কালে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী দুই দেশের চেম্বার সংস্থার মধ্যে একটি জয়েন্ট বিজনেস কাউন্সিল (জেবিসি) গঠনকে স্বাগত জানান এবং ব্যবসায়িক সম্প্রদায়ের মধ্যে পারস্পরিক আলাপ-আলোচনা এবং সম্পৃক্ততার সুবিধার্থে ব্যবসায়িক চক্রের জন্য ভিসা পদ্ধতি সহজ করার জন্য কাতারি পক্ষের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি কাতারি বিনিয়োগকারীদের এবং ব্যবসায়ীদের কক্সবাজারে পর্যটন খাত বিকাশ এবং তাদের জন্য নিবেদিত এক্সক্লুসিভ ইকোনমিক জোনে বিনিয়োগের সুযোগ অন্বেষণের প্রস্তাব দেন।
কাতারের আমির ইইজেড এবং কক্সবাজারের পর্যটন স্পটগুলোতে বিনিয়োগের প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, তিনি কাতার ইনভেস্টমেন্ট অথরিটি (কিউআইএ) এবং কাতারের ব্যবসায়িক প্রতিনিধিদের বাংলাদেশ সফর করতে এবং প্রস্তাবিত খাতে বিনিয়োগের সম্ভাবনা দেখতে বলবেন। তিনি কাতারের ফ্রি ইকোনমিক জোন সম্পর্কেও বৈঠকে অবহিত করেন এবং প্রধানমন্ত্রীকে ব্যবসায়িক প্রতিনিধি দল পাঠানোর অনুরোধ জানান। এর আগে কাতারের আমির প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পৌঁছালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমিরকে টাইগার গেটে ফুলের তোড়া দিয়ে স্বাগত জানান। এরপর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের শিমুল হলে একান্ত বৈঠকে বসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি। একান্ত বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের গ্লোব হলে ফটোসেশনে অংশ নেন তারা। এরপর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের চামেলী হলে দুদেশের প্রতিনিধিদের নিয়ে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন। কার্যালয় ত্যাগের আগে কাতারের আমির টাইগার গেটে রক্ষিত দর্শনার্থী বইয়েও সই করেন।
১০ চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই :
বাংলাদেশের পক্ষে শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন এবং কাতারের বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন হামাদ আল থানি বাংলাদেশ ও কাতারের মধ্যে পারস্পরিক বিনিয়োগ উন্নয়ন ও সুরক্ষা চুক্তিতে সই করেন। পাশাপাশি বাংলাদেশ ও কাতারের মধ্যে আয়ের ক্ষেত্রে দ্বৈত কর পরিহার এবং রাজস্ব ফাঁকি প্রতিরোধ চুক্তিটি স্বাক্ষর করেন কাতারের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সুলতান বিন সাদ আল মুরাইখি এবং বাংলাদেশের অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান। আইন, বিচার ও সংসদবিষয়কমন্ত্রী আনিসুল হক এবং কাতারের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সুলতান বিন সাদ আল মুরাইখি বাংলাদেশ সরকার ও কাতার রাষ্ট্রের মধ্যে আইনি ক্ষেত্রে সহযোগিতা চুক্তিতে সই করেন। কাতার ও বাংলাদেশের মধ্যে সামুদ্রিক পরিবহন সংক্রান্ত চুক্তিতে সই করেন কাতারের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সুলতান বিন সাদ আল মুরাইখি এবং নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। এছাড়া বাংলাদেশ-কাতার জয়েন্ট বিজনেস কাউন্সিল প্রতিষ্ঠা সংক্রান্ত চুক্তিতে সই করেন কাতার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (কিউসিসিআই) চেয়ারম্যান শেখ খলিফা বিন জসিম আল থানি এবং ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (এফবিসিসিআই) সভাপতি মাহবুবুল আলম।
বাংলাদেশ ও কাতারের মধ্যে কূটনৈতিক প্রশিক্ষণে সহযোগিতা সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারকে সই করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এবং কাতারের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সুলতান বিন সাদ আল মুরাইখি। পাশাপাশি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এবং কাতারের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সুলতান বিন সাদ আল মুরাইখি বাংলাদেশ ও কাতারের মধ্যে শিক্ষা, উচ্চশিক্ষা এবং বৈজ্ঞানিক গবেষণার ক্ষেত্রে সহযোগিতার বিষয়ে সমঝোতা স্মারকেও সই করেন। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী এবং কাতারের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সুলতান বিন সাদ আল মুরাইখি জনশক্তি কর্মসংস্থান (শ্রম) ক্ষেত্রে সহযোগিতা সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারকে সই করেন। বন্দরের ক্ষেত্রে সহযোগিতায় (এমডব্লিউএএনআই কাতার এবং চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ) কাতারের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সুলতান বিন সাদ আল মুরাইখি এবং নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী সই করেছেন।
কাতার আমিরের নামে পার্ক ও সড়ক :
চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই অনুষ্ঠানে কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির নামে রাজধানী ঢাকার একটি সড়ক ও একটি পার্কের নামকরণ করা হয়। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) অধীনে মিরপুরের কালসি এলাকার বালুর মাঠে পার্কটি নির্মাণ করা হচ্ছে। মিরপুর ইসিবি চত্বর থেকে কালসি ফ্লাইওভার পর্যন্ত সড়কটির নামকরণ করা হয়েছে কাতারের আমিরের নামে। এখন থেকে সড়ক ও পার্কটি শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি এভিনিউ এবং শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি পার্ক নামে পরিচিত হবে।
বাংলাদেশ থেকে আরো কর্মী নিতে কাতারের প্রতি আহ্বান রাষ্ট্রপতির :
বাংলাদেশ থেকে আরো দক্ষ ও আধা দক্ষ কর্মী নিতে কাতারের আমিরের শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানিকে অনুরোধ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। গতকাল দুপুরে রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন বঙ্গভবনের দরবার হলে কাতারের আমিরের সম্মানে মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন করেন। বঙ্গভবনে কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি ও তার সফরসঙ্গীদের স্বাগত জানিয়ে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, কাতার বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন অংশীদার। আমিরের এ সফর দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। বিদেশি বিনিয়োগের জন্য ১০০ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠাসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা তুলে ধরে রাষ্ট্রপতি এসব সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করে জ্বালানি, মেশিনারিজ, আইটি, খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ করতে কাতারের বিনিয়োগকারীদের প্রতি আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে কাতার ও বাংলাদেশের মধ্যে জ্বালানি, নিরাপত্তা ও আইটিসহ বেশ কয়েকটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। রাষ্ট্রপতি এ ব্যাপারে সন্তোষ প্রকাশ করেন।
তিনি আশা প্রকাশ করেন, আগামীতে দুই দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা আরো জোরদার হবে। বাংলাদেশে এলএনজি সরবরাহ করায় কাতার সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে ভবিষ্যতে জ্বালানিসহ বিভিন্ন খাতে কাতারের সহযোগিতা বাড়বে বলেও আশা প্রকাশ করেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। বৈঠকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত মন্ত্রী, সচিব ও রাষ্ট্রপতির সচিবরা উপস্থিত ছিলেন। প্রসঙ্গত. বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ আমন্ত্রণে সোমবার দুদিনের রাষ্ট্রীয় সফরে ঢাকায় আসেন কাতারের আমির। তিনি সরকারি ও বেসরকারি সেক্টরের সদস্যদের সমন্বয়ে একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন, যাতে অন্যদের মধ্যে ছিলেন আমির-ই দেওয়ান প্রধান, বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী, কাতারের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী, কাতার চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির চেয়ারম্যান, কাতার ইনভেস্টমেন্ট অথরিটির (কিউআইএ) এশিয়া ও আফ্রিকা ইনভেস্টমেন্টের প্রধান, এশিয়ান অ্যাফেয়ার্স অ্যান্ড স্টাডিজ অ্যান্ড রিসার্চের পরিচালক। রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন আমিরকে স্বাগত জানান। বিমানবন্দরে তাকে লাল গালিচা সংবর্ধনা এবং গার্ড অব অনারও দেয়া হয়। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধবিষয়কমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী এবং সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এ বছরের জানুয়ারিতে দেশে নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পর এটি ছিল রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে প্রথম স্বাগতিক সফর। এই সফর বাংলাদেশ ও কাতারের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৫০ বছর পূর্তির উপলক্ষ সামনে রেখেও অনুষ্ঠিত হয়।