ইপেপার । আজসোমবার, ২০ মে ২০২৪, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কয়েক’শ বছরের পুরানো নৌকা নিয়ে উৎসুক জনতার ভীড়

আসিফ কাজল, ঝিনাইদহ:
  • আপলোড টাইম : ০৮:১৬:২৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৯ মে ২০২৪
  • / ১৪ বার পড়া হয়েছে

ঝিনাইদহের মহেশপুর এলাকায় কয়েক’শ বছরের একটি পুরানো নৌকা নিয়ে উৎসুক জনতার ভীড় বাড়ছে। নৌকাটি চার ফুট মাটির নিচ থেকে খনন করে পাওয়া গেছে। বিশাল আকৃতির এই নৌকা নিয়ে প্রতিদিন কৌতুহল মানুষের ভীড় বাড়ছে মহেশপুর উপজেলার এসবিকে ইউনিয়নের বজরাপুর গ্রামে। গ্রামবাসী সূত্রে জানা গেছে, বজরাপুর গ্রামের নজের আলীর ছেলে মনছের আলী তিনদিন আগে বজরাপুর বাওড় থেকে ধানক্ষেতে পানি দেওয়ার জন্য সেচখাল খনন করছিলেন। খাল খুড়তে খুড়তে তার কোদালের মাথায় নৌকার কিছু অংশ উঠে আসে। এ খবর চাওর হয়ে পড়লে গ্রামের মানুষ সমষ্টিগতভাবে নৌকার সন্ধানে খনন করতে থাকে। তিনদিন ধরে খননের পর গতকাল বুধবার নৌকার পূর্ণাঙ্গ আকৃতি খুঁজে পান তারা।

স্থানীয় সাবেক ইউপি সদস্য পূর্ণিমা রানী জানান, নৌকার প্রতিশব্দ হচ্ছে ‘বজরা’। এই গ্রামের নামও বজরাপুর। হয়তো কোন এক সময় এই গ্রামের মানুষের চলাচলের একমাত্র সম্বল ছিল নৌকা। সেই নাম অনুসারে গ্রামটির নামকরণ করা হয়েছে ‘বজরাপুর’। তিনি বলেন, খবরটি শুনে তিনিও বজরাপুর বাওড় এলাকার হালদার পাড়ায় গিয়ে বৃহৎ নৌকাটি দেখে এসেছেন। তিনি এটি সংরক্ষনের দাবি করেন। খননকাজে যুক্ত বজরাপুর গ্রামের ইসমাইল মল্লিক জানান, নৌকাটি লম্বায় প্রায় এক’শ ফুট ও চওড়া ২০ফুট হবে। নৌকার বেশির ভাগ অংশ বাওড়ের মধ্যে ঢুকে আছে। নৌকাটি শাল কাঠ দিয়ে তৈরী হবে হয়তো।

বজরাপুর গ্রামের আমজাদ হোসেন জানান, গ্রামের কৃষক মনছের আলী আলীর জমিতে পাওয়া নৌকাটি বহুকালের পুরানো। কাঠগুলো পচে নষ্ট হয়ে গেছে। লাম্বা কাঠগুলো কিছুটা ভালো আছে। মাটির চার ফুট নিচে এই নৌকাটি পাওয়া গেছে। তিনি জানান নৌকাটি দেখতে প্রতিদিন শত শত মানুষ ভীড় জমাচ্ছে। তবে এখনো প্রশাসনের লোকজন ঘটনাস্থলে আসেননি।

তথ্য নিয়ে জানা গেছে, বজরা অধিক ওজন বহন করার উপযোগী বড় ধরনের নৌকার সাধারণ নাম। খ্রিস্টীয় উনবিংশ শতাব্দীতে ভারতবর্ষে ইউরোপীয় এবং স্থানীয় ধনাঢ্য ব্যক্তিরা এই ধরনের নৌকা ব্যবহার করত নৌবিহারের জন্য। এ নৌকার দুই-তৃতীয়াংশ জায়গা জুড়ে থাকত ঘুমানো বা বিশ্রামের কক্ষ। ঘরবাড়ির মতো এসব কক্ষে থাকত জানালা। সাধারণভাবে যাত্রীর ধারণক্ষমতা থাকত ১০ থেকে ১২ জন। এর ভেতরে মাঝি থাকত চারজন। রান্না ও অন্যান্য কাজের জন্য চাকর থাকত দুজন।

গ্রামবাসি পূজা রানীর ভাষ্যমতে বজরাপুর গ্রাম একটি প্রাচীন জনপদ। এই গ্রামটি কপোতাক্ষ নদের সংযোগস্থলে গড়ে ওঠে। গ্রামের বেশির ভাগ মানুষ জমিদার ও আধুনিক জীবন যাপনে অভ্যস্ত ছিল। ফলে এই নৌকাটি বজরাপুর গ্রামের নামকরণ ও গ্রামের মানুষের জীবনযাপনের সাক্ষ্য বহন করে। বিশ^বিদ্যালয় পড়ুয়া পূজা রানী নৌকাটি সংরক্ষনসহ নির্মাণ ও ব্যবহারকারীদের ইতিহাস খুঁেজ বের করার দাবি করেন।

বিষয়টি নিয়ে মহেশপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) অনুপ দাস জানান, পুরানো নৌকা পাওয়ার বিষয়টি তিনি প্রত্নতত্ব অধিদপ্তরকে জানাবেন, যাতে তারা ব্যবস্থা গ্রহন করেন। প্রত্নতত্ব অধিদপ্তর খুলনা বিভাগের সহকারী পরিচালক মো. গোলাম ফেরদৌস জানান, এ ধরণের নিদর্শন প্রত্নতত্ব অধিদপ্তরের সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তিনি এ বিষয় বিস্তারিত খোঁজ খবর নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহন করবেন বলেও জানান।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

কয়েক’শ বছরের পুরানো নৌকা নিয়ে উৎসুক জনতার ভীড়

আপলোড টাইম : ০৮:১৬:২৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৯ মে ২০২৪

ঝিনাইদহের মহেশপুর এলাকায় কয়েক’শ বছরের একটি পুরানো নৌকা নিয়ে উৎসুক জনতার ভীড় বাড়ছে। নৌকাটি চার ফুট মাটির নিচ থেকে খনন করে পাওয়া গেছে। বিশাল আকৃতির এই নৌকা নিয়ে প্রতিদিন কৌতুহল মানুষের ভীড় বাড়ছে মহেশপুর উপজেলার এসবিকে ইউনিয়নের বজরাপুর গ্রামে। গ্রামবাসী সূত্রে জানা গেছে, বজরাপুর গ্রামের নজের আলীর ছেলে মনছের আলী তিনদিন আগে বজরাপুর বাওড় থেকে ধানক্ষেতে পানি দেওয়ার জন্য সেচখাল খনন করছিলেন। খাল খুড়তে খুড়তে তার কোদালের মাথায় নৌকার কিছু অংশ উঠে আসে। এ খবর চাওর হয়ে পড়লে গ্রামের মানুষ সমষ্টিগতভাবে নৌকার সন্ধানে খনন করতে থাকে। তিনদিন ধরে খননের পর গতকাল বুধবার নৌকার পূর্ণাঙ্গ আকৃতি খুঁজে পান তারা।

স্থানীয় সাবেক ইউপি সদস্য পূর্ণিমা রানী জানান, নৌকার প্রতিশব্দ হচ্ছে ‘বজরা’। এই গ্রামের নামও বজরাপুর। হয়তো কোন এক সময় এই গ্রামের মানুষের চলাচলের একমাত্র সম্বল ছিল নৌকা। সেই নাম অনুসারে গ্রামটির নামকরণ করা হয়েছে ‘বজরাপুর’। তিনি বলেন, খবরটি শুনে তিনিও বজরাপুর বাওড় এলাকার হালদার পাড়ায় গিয়ে বৃহৎ নৌকাটি দেখে এসেছেন। তিনি এটি সংরক্ষনের দাবি করেন। খননকাজে যুক্ত বজরাপুর গ্রামের ইসমাইল মল্লিক জানান, নৌকাটি লম্বায় প্রায় এক’শ ফুট ও চওড়া ২০ফুট হবে। নৌকার বেশির ভাগ অংশ বাওড়ের মধ্যে ঢুকে আছে। নৌকাটি শাল কাঠ দিয়ে তৈরী হবে হয়তো।

বজরাপুর গ্রামের আমজাদ হোসেন জানান, গ্রামের কৃষক মনছের আলী আলীর জমিতে পাওয়া নৌকাটি বহুকালের পুরানো। কাঠগুলো পচে নষ্ট হয়ে গেছে। লাম্বা কাঠগুলো কিছুটা ভালো আছে। মাটির চার ফুট নিচে এই নৌকাটি পাওয়া গেছে। তিনি জানান নৌকাটি দেখতে প্রতিদিন শত শত মানুষ ভীড় জমাচ্ছে। তবে এখনো প্রশাসনের লোকজন ঘটনাস্থলে আসেননি।

তথ্য নিয়ে জানা গেছে, বজরা অধিক ওজন বহন করার উপযোগী বড় ধরনের নৌকার সাধারণ নাম। খ্রিস্টীয় উনবিংশ শতাব্দীতে ভারতবর্ষে ইউরোপীয় এবং স্থানীয় ধনাঢ্য ব্যক্তিরা এই ধরনের নৌকা ব্যবহার করত নৌবিহারের জন্য। এ নৌকার দুই-তৃতীয়াংশ জায়গা জুড়ে থাকত ঘুমানো বা বিশ্রামের কক্ষ। ঘরবাড়ির মতো এসব কক্ষে থাকত জানালা। সাধারণভাবে যাত্রীর ধারণক্ষমতা থাকত ১০ থেকে ১২ জন। এর ভেতরে মাঝি থাকত চারজন। রান্না ও অন্যান্য কাজের জন্য চাকর থাকত দুজন।

গ্রামবাসি পূজা রানীর ভাষ্যমতে বজরাপুর গ্রাম একটি প্রাচীন জনপদ। এই গ্রামটি কপোতাক্ষ নদের সংযোগস্থলে গড়ে ওঠে। গ্রামের বেশির ভাগ মানুষ জমিদার ও আধুনিক জীবন যাপনে অভ্যস্ত ছিল। ফলে এই নৌকাটি বজরাপুর গ্রামের নামকরণ ও গ্রামের মানুষের জীবনযাপনের সাক্ষ্য বহন করে। বিশ^বিদ্যালয় পড়ুয়া পূজা রানী নৌকাটি সংরক্ষনসহ নির্মাণ ও ব্যবহারকারীদের ইতিহাস খুঁেজ বের করার দাবি করেন।

বিষয়টি নিয়ে মহেশপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) অনুপ দাস জানান, পুরানো নৌকা পাওয়ার বিষয়টি তিনি প্রত্নতত্ব অধিদপ্তরকে জানাবেন, যাতে তারা ব্যবস্থা গ্রহন করেন। প্রত্নতত্ব অধিদপ্তর খুলনা বিভাগের সহকারী পরিচালক মো. গোলাম ফেরদৌস জানান, এ ধরণের নিদর্শন প্রত্নতত্ব অধিদপ্তরের সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তিনি এ বিষয় বিস্তারিত খোঁজ খবর নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহন করবেন বলেও জানান।