ইপেপার । আজসোমবার, ২০ মে ২০২৪, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

প্রচণ্ড রোদ-গরমের পর বৃষ্টিতে জনজীবনে স্বস্তি

চুয়াডাঙ্গায় টানা ৩৭ দিন তাপদাহের পর দমকা হাওয়া, বজ্রসহ শিলাবৃষ্টি

নিজস্ব প্রতিবেদক:
  • আপলোড টাইম : ১২:২২:২২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৭ মে ২০২৪
  • / ১৬ বার পড়া হয়েছে

টানা ৩৭ দিন দাবদাহের পর অবশেষে স্বস্তির বৃষ্টি শুরু হয়েছে চুয়াডাঙ্গায়। গতকাল সোমবার বেলা ৩টা ৩৭ মিনিট থেকে দমকা হাওয়ার সঙ্গে বজ্রসহ বৃষ্টি শুরু হয়। বিকেল ৪টার পর থেকে শিলা পড়তে শুরু করে। প্রচণ্ড গরমের পর এই বৃষ্টিতে জনজীবনে নেমে এসেছে স্বস্তি। প্রকৃতি ফিরে পেয়েছে প্রাণ। ১০-১৫ মিনিট শিলাবৃষ্টিসহ ১ ঘণ্টা ৩৮ মিনিট স্থায়ী বজ্রসহ বৃষ্টিতে মোট ২৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।

চুয়াডাঙ্গা প্রথম শ্রেণি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার সূত্রে জানা গেছে, মার্চ মাসের ২৯ তারিখ থেকে চুয়াডাঙ্গা জেলায় তাপপ্রবাহ শুরু হয়। পুরো এপ্রিল মাস ছিল মাঝারি, তীব্র ও অতি তীব্র দাবদাহের সঙ্গে গরমের দাপট। এর মধ্যে গত ২৯ এপ্রিল চুয়াডাঙ্গায় ৪৩ ডিগ্রি ও পরদিন ৩০ এপ্রিল সর্বোচ্চ ৪৩ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। যা স্বাধীনতার পর থেকে চুয়াডাঙ্গার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। গতকাল বেলা ৩টায় এ জেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩৬ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এসময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৫২ শতাংশ। সন্ধ্যা ৬টায় তাপমাত্রা কিছুটা বেড়ে দাঁড়ায় ৩৭ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ ৯৪ শতাংশ।

চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ইনচার্জ জামিনুর রহমান বলেন, ‘দুপুরের পর থেকেই চুয়াডাঙ্গার বিভিন্ন স্থানের আকাশ কালো মেঘে ঢেকে যায়। বেলা ৩টা ৩৭ মিনিট থেকে দমকা হাওয়ার সঙ্গে শিলাবৃষ্টি শুরু হয়। বিকেল ৫টা ১৫ মিনিট পর্যন্ত স্থায়ী ছিল বৃষ্টি।’ তিনি আরও বলেন, ‘এসময় মোট ২৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। সেই সঙ্গে ডায়ামিটারে ১ সেন্টিমিটার শিলা রেকর্ড করা হয়েছে।’ এ আবহাওয়া কর্মকর্তা বলেন, ‘এই বৃষ্টির মধ্যদিয়ে চুয়াডাঙ্গায় তাপপ্রবাহ শেষ হয়েছে। আগামী ১২ থেকে ১৩ মে পর্যন্ত এ জেলায় থেমে থেমে বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। এসময় কালবৈশাখী, শিলাবৃষ্টি ও বজ্রবৃষ্টিও হতে পারে।’

এদিকে টানা দাবদাহের পর চুয়াডাঙ্গায় স্বস্তির বৃষ্টিতে খুশি এ অঞ্চলের মানুষ। বৃষ্টি শুরুর পর শিশু, কিশোরসহ বিভিন্ন বয়সী মানুষকে বৃষ্টির পানিতে ভিজতে দেখা গেছে। অনেকে উল্লাস উদ্যাপন করেছেন। চুয়াডাঙ্গা শহরের রিকশাচালক আলতাফ মিয়া স্বস্তির নিঃশ্বাস ছেড়ে বলেন, ‘অনেক দিন ধরি গরমে মইরে যাচ্ছেলাম। এখন পানি (বৃষ্টি) হইল। ম্যাগ (মেঘ) আছে, আরও হতি পারে। খুব ভালো লাগছি। ভাড়া না হলিও শরীরডা একটু শান্তি পাইলো।’

বৃষ্টির আনন্দ নিতে ভিজতে দেখা যায় শহর ও পাড়া-মহল্লার বিভিন্ন বয়সী ও শ্রেণি-পেশার মানুষদের। কোর্ট পাড়ার বাসিন্দা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সাদিকুর বলেন, টানা রোদ ও তাপপ্রবাহের পর চুয়াডাঙ্গায় স্বস্তির বৃষ্টি এসেছে। মেঘের গর্জন শুনেই মনে প্রশান্তি এসেছে। ভিজতেও ভালো লাগছে।’ রাস্তায় মোটরসাইকেল চালকেরা, রিকশা ও ভ্যানসহ বিভিন্ন খোলা যানের যাত্রীদেরও বৃষ্টিতে ভিজতে দেখা যায়। ভ্যানচালক সাকিল হোসেন বলেন, জয়রামপুর থেকে ভাড়া নিয়ে চুয়াডাঙ্গায় এসেছি। নতুন জেলখানার সামনে পৌঁছানোর পর বৃষ্টি শুরু হয়েছে। এসময় সামান্য ভিজেছিও। টানা গরমের পর বৃষ্টিতে গাছপালাও স্বস্তি পেল।

শান্তিপাড়ার কিশোর রিফাত বলেন, ‘টানা রোদ-গরমের পর এমন বৃষ্টি হচ্ছে। তাই বৃষ্টির পানিতে ভেজার লোভ আর সামলাতে পারলাম না। আমরা একসঙ্গে পাড়ার অনেকজন বৃষ্টিতে ভিজেছি।’ সদর উপজেলার তালতলা গ্রামের লিচুবাগানের মালিক পারভেজ আলী বলেন, ‘বৃষ্টিতে স্বস্তি লাগছে, কিন্তু শিলার কারণে লিচুর ক্ষতি হবে। কেবল কিছু লিচু হারভেস্ট করা শুরু হয়েছে। এখন গাছের লিচু পাকতে কিছুদিন সময় লাগবে। শিলাবৃষ্টিতে লিচুসহ সব ফসলেরই ক্ষতি হবে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

প্রচণ্ড রোদ-গরমের পর বৃষ্টিতে জনজীবনে স্বস্তি

চুয়াডাঙ্গায় টানা ৩৭ দিন তাপদাহের পর দমকা হাওয়া, বজ্রসহ শিলাবৃষ্টি

আপলোড টাইম : ১২:২২:২২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৭ মে ২০২৪

টানা ৩৭ দিন দাবদাহের পর অবশেষে স্বস্তির বৃষ্টি শুরু হয়েছে চুয়াডাঙ্গায়। গতকাল সোমবার বেলা ৩টা ৩৭ মিনিট থেকে দমকা হাওয়ার সঙ্গে বজ্রসহ বৃষ্টি শুরু হয়। বিকেল ৪টার পর থেকে শিলা পড়তে শুরু করে। প্রচণ্ড গরমের পর এই বৃষ্টিতে জনজীবনে নেমে এসেছে স্বস্তি। প্রকৃতি ফিরে পেয়েছে প্রাণ। ১০-১৫ মিনিট শিলাবৃষ্টিসহ ১ ঘণ্টা ৩৮ মিনিট স্থায়ী বজ্রসহ বৃষ্টিতে মোট ২৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।

চুয়াডাঙ্গা প্রথম শ্রেণি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার সূত্রে জানা গেছে, মার্চ মাসের ২৯ তারিখ থেকে চুয়াডাঙ্গা জেলায় তাপপ্রবাহ শুরু হয়। পুরো এপ্রিল মাস ছিল মাঝারি, তীব্র ও অতি তীব্র দাবদাহের সঙ্গে গরমের দাপট। এর মধ্যে গত ২৯ এপ্রিল চুয়াডাঙ্গায় ৪৩ ডিগ্রি ও পরদিন ৩০ এপ্রিল সর্বোচ্চ ৪৩ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। যা স্বাধীনতার পর থেকে চুয়াডাঙ্গার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। গতকাল বেলা ৩টায় এ জেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩৬ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এসময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৫২ শতাংশ। সন্ধ্যা ৬টায় তাপমাত্রা কিছুটা বেড়ে দাঁড়ায় ৩৭ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ ৯৪ শতাংশ।

চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ইনচার্জ জামিনুর রহমান বলেন, ‘দুপুরের পর থেকেই চুয়াডাঙ্গার বিভিন্ন স্থানের আকাশ কালো মেঘে ঢেকে যায়। বেলা ৩টা ৩৭ মিনিট থেকে দমকা হাওয়ার সঙ্গে শিলাবৃষ্টি শুরু হয়। বিকেল ৫টা ১৫ মিনিট পর্যন্ত স্থায়ী ছিল বৃষ্টি।’ তিনি আরও বলেন, ‘এসময় মোট ২৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। সেই সঙ্গে ডায়ামিটারে ১ সেন্টিমিটার শিলা রেকর্ড করা হয়েছে।’ এ আবহাওয়া কর্মকর্তা বলেন, ‘এই বৃষ্টির মধ্যদিয়ে চুয়াডাঙ্গায় তাপপ্রবাহ শেষ হয়েছে। আগামী ১২ থেকে ১৩ মে পর্যন্ত এ জেলায় থেমে থেমে বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। এসময় কালবৈশাখী, শিলাবৃষ্টি ও বজ্রবৃষ্টিও হতে পারে।’

এদিকে টানা দাবদাহের পর চুয়াডাঙ্গায় স্বস্তির বৃষ্টিতে খুশি এ অঞ্চলের মানুষ। বৃষ্টি শুরুর পর শিশু, কিশোরসহ বিভিন্ন বয়সী মানুষকে বৃষ্টির পানিতে ভিজতে দেখা গেছে। অনেকে উল্লাস উদ্যাপন করেছেন। চুয়াডাঙ্গা শহরের রিকশাচালক আলতাফ মিয়া স্বস্তির নিঃশ্বাস ছেড়ে বলেন, ‘অনেক দিন ধরি গরমে মইরে যাচ্ছেলাম। এখন পানি (বৃষ্টি) হইল। ম্যাগ (মেঘ) আছে, আরও হতি পারে। খুব ভালো লাগছি। ভাড়া না হলিও শরীরডা একটু শান্তি পাইলো।’

বৃষ্টির আনন্দ নিতে ভিজতে দেখা যায় শহর ও পাড়া-মহল্লার বিভিন্ন বয়সী ও শ্রেণি-পেশার মানুষদের। কোর্ট পাড়ার বাসিন্দা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সাদিকুর বলেন, টানা রোদ ও তাপপ্রবাহের পর চুয়াডাঙ্গায় স্বস্তির বৃষ্টি এসেছে। মেঘের গর্জন শুনেই মনে প্রশান্তি এসেছে। ভিজতেও ভালো লাগছে।’ রাস্তায় মোটরসাইকেল চালকেরা, রিকশা ও ভ্যানসহ বিভিন্ন খোলা যানের যাত্রীদেরও বৃষ্টিতে ভিজতে দেখা যায়। ভ্যানচালক সাকিল হোসেন বলেন, জয়রামপুর থেকে ভাড়া নিয়ে চুয়াডাঙ্গায় এসেছি। নতুন জেলখানার সামনে পৌঁছানোর পর বৃষ্টি শুরু হয়েছে। এসময় সামান্য ভিজেছিও। টানা গরমের পর বৃষ্টিতে গাছপালাও স্বস্তি পেল।

শান্তিপাড়ার কিশোর রিফাত বলেন, ‘টানা রোদ-গরমের পর এমন বৃষ্টি হচ্ছে। তাই বৃষ্টির পানিতে ভেজার লোভ আর সামলাতে পারলাম না। আমরা একসঙ্গে পাড়ার অনেকজন বৃষ্টিতে ভিজেছি।’ সদর উপজেলার তালতলা গ্রামের লিচুবাগানের মালিক পারভেজ আলী বলেন, ‘বৃষ্টিতে স্বস্তি লাগছে, কিন্তু শিলার কারণে লিচুর ক্ষতি হবে। কেবল কিছু লিচু হারভেস্ট করা শুরু হয়েছে। এখন গাছের লিচু পাকতে কিছুদিন সময় লাগবে। শিলাবৃষ্টিতে লিচুসহ সব ফসলেরই ক্ষতি হবে।