মেহেরপুরের গাংনীর খাসমহল বাজারের সরকারি জমি দখলমুক্ত করেছে জেলা প্রশাসন। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে দখলে থাকা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করেন গাংনী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্র্রেট নাজমুল আলম।
অভিযান পরিচালনাকালে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাজমুল আলম বলেন, দীর্ঘ ১৮ বছর ধরে উপজেলার খাসমহল গ্রামের মৃত আলম হোসেনের ছেলে আয়নাল হক নামের এক ব্যক্তি খাসমহল বাজারের সরকারি জমি দখল করে চারটি পাকা দোকান নির্মাণ করেছিলেন। দোকার ঘর নির্মাণের ফলে ওই বাজারে সাপ্তাহিক হাট বসতে চরম সমস্যায় পড়তেন এলাকাবাসী। এছাড়াও স্থানীয় জনগণের চলাফেরায় অসুবিধা হলে লিখিতভাবে অভিযোগ করেন স্থানীয় বাজার কমিটির লোকজন। স্থানীয়দের অভিযোগের ভিত্তিতে উক্ত জমি জরিপ করা হলে ৮ শতক জমি সরকারি খতিয়ানভুক্ত পাওয়া যায়্। ওই ৮ শতক জমির মধ্যে ৩ শতক জমি দখল করে পাকা দোকান-ঘর নির্মাণ শুরু করেন আয়নাল হক।
পরে দখলদার আইনাল হককে স্থানীয় তহশীলদার জমি ছেড়ে দেবার নোটিশ করেন। পরে উপজেলা ভূমি অফিস থেকেও নোটিশ করা হয়। তাতেও তিনি তাঁর স্থাপনার কাজ চালিয়ে আসছিলেন। পরে জেলা প্রশাসনকে বিষয়টি অবহিত করা হলে জেলা প্রশাসক সেখান থেকেও নোটিশ প্রদান করেন। এভাবে তিনবার নোটিশ দেওয়া সত্বেও তিনি তাঁর স্থাপনা অপসারণ না করায় সরকারি সকল নিয়ম মেনে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এই দখলমুক্ত অভিযান পরিচালনা করা হয়। এসময় স্থানীয় কাথুলী ইউনিয়নের তহশিলদার রমজান আলী, ষোলটাকা ইউনিয়নের তহশিলদার আব্দুর রহিমসহ গাংনী থানা পুলিশের একটি টিম উচ্ছেদ অভিযানে সহায়তা করেন।

স্থানীয় ভূমি অফিস সূত্রে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, উপজেলার তেঁতুলবাড়ীয়া ইউনিয়নের তেঁতুলবাড়ীয়া মৌজার আরএস ১ নম্বর খাস খতিয়ানভুক্ত আরএস ১১৮৫ দাগের ধানী (বর্তমানে হাট) শ্রেণির ০.০৮ একর জমির মধ্যে ০.০৩ একর জমি অবৈধ দখল করে স্থানীয় আয়নাল হক। অবৈধ স্থাপনা অপসারণের নিমিত্তে উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যে বি গভর্নমেন্ট এন্ড লোকাল অথরিটি ল্যান্ডস এন্ড বিল্ডিং (রিকভারী অব পজেশন) অর্ডিনেন্স ১৯৭০ (অধ্যাদেশ নং-২৪) এর বিধান অনুযায়ী গাংনী উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়ে বর্ণিত ভূসম্পত্তি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে দখলমুক্ত করেন।
স্থানীয় সাবেক ইউপি সদস্য একরামুল হক বলেন, অবৈধ দখলদার উচ্ছেদের ফলে এলাকার জনগণের দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ হয়েছে। অবৈধ স্থাপনার ফলে পথযাত্রীরাও পড়তেন নানা বিড়ম্বনায়। মাঝে মাঝে দুর্ঘটনার কবলেও পড়তে হতো পথচারীদের। দীর্ঘ ১৮ বছর পরে দখলমুক্ত হলো সরকারি জমি। প্রশাসনের এমন পদক্ষেপকে স্বাগত জানান তিনি।
সাবেক ইউপি সদস্য সালাউদ্দীন বরেন, এখানকার মানুষের একমাত্র হাটের জায়গা বেদখল থাকায় এলাকার মানুষকে নানা সমস্যায় পড়তে হতো। এই উচ্ছেদ অভিযানে সাময়িকভাবে কয়েকজনের স্বার্থে আঘাত লাগলেও শতশত মানুষ এর সুবিধা ভোগ করবে। তিনি আরও বলেন, শুধু খাসমহলই নয়, এমন অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে সরকারি জমি দখলমুক্ত করলে হাজার হাজার মানুষ উপকৃত হবে।
মেহেরপুর জেলা প্রশাসক ড.মুনসুর আলম খান বলেন, সাধারণ মানুষের অসুবিধা করে একজন ব্যক্তি সরকারি জমি ভোগ করবে, এটা হতে দেওয়া যাবে না। দখলদারদের কবল থেকে আমাদের এই দখলমুক্ত অভিযান অব্যাহত থাকবে।