সমস্যা সমাধানে জনপ্রতিনিধিদের ভূমিকা রাখার আহ্বান
- আপলোড তারিখঃ ০২-১২-২০২১ ইং
ফলোচার্ট: ‘চিকিৎসক সংকটের কথা তুলে ধরলেন সময়ের সমীকরণ প্রধান সম্পাদক’
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলায় বিদ্যমান স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নয়নে গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল বুধবার বেলা সাড়ে ১১টা থেকে বেলা দুইটা পর্যন্ত ওয়েভ ফাউন্ডেশনের ট্রেনিং সেন্টারে এ গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়। গণশুনানির আয়োজন করে সদর উপজেলা লোকমোর্চা ও ওয়েভ ফাউন্ডেশন।
গণশুনানিতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. শামীম ভুইয়া। প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘সময়ের সাথে সাথে সেবার মানও বাড়ছে। সেবাপ্রার্থীদেরও সচেতন হতে হবে। এখানে হাসপাতালের দালালের একটা কথা উঠেছে। আমরা বেশ কয়েকটি অভিযান পরিচালনা করেছি। প্রয়োজনে আরও অভিযান করা হবে। আমরা ব্যবস্থা নেব। অনেক দিনেরই একটি সমস্যা হাসপাতাল সড়কের। সেটা একমুখীকরণ করা হয়েছে। আসলে হাসপাতাল রোড প্রচুর ব্যস্ত একটা সড়ক। আমরা একমুখীকরণ মেনে চলার জন্য বারবার বলছি। আমরা উপজেলা প্রশাসন পাশে আছি। কোথাও সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলেই জানাবেন। আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করব অভিযোগ প্রতিকারের।’
সদর উপজেলা লোকমোর্চার সভাপতি অ্যাড. মানিক আকবরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. এএসএম ফাতেহ্ আকরাম। গণশুনানিতে অংশগ্রহণকারীরা হাসপাতালের বিভিন্ন সমস্যা তুলে ধরেন। উত্থাপিত সমস্যা নিয়ে বিস্তারিত আলাপ ও সমস্যা সমাধান বিষয়ে কথা বলেন আরএমও ডা. ফাতেহ্ আকরাম।
তিনি বলেন, ‘আমাদের সদর হাসপাতাল ৫০ শয্যার জনবল দিয়ে চলছে। সেবার মান কীভাবে উন্নত হবে, সে বিষয়ে আপনাদেরও ভাবতে হবে। সদর হাসপাতালের ২৫০ বেড চালু হচ্ছে না কেন? সেটা নিয়ে আপনাদেরও কথা বলতে হবে। দাবি তুলতে হবে, প্রয়োজনে মানববন্ধন করতে হবে। কেন ডাক্তার নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে না? এখনো মেডিকেল টেকনোলোজিস্ট কেন নিয়োগ হচ্ছে না? পরিচ্ছন্নতা কর্মী কেন নেই? এই প্রশ্নগুলো আমাদের কাছে যেমন করবেন, ঠিক তেমনি আপনাদেরও দায়িত্ব, এগুলো কেন হচ্ছে না সেই কারণ বের করে প্রতিকারে কাজ করা। জনপ্রতিনিধিদের বিষয়গুলো জানাতে হবে। তাঁদেরকে এগুলো সরকারের কাছ থেকে আনার জন্য বলতে হবে। এগুলো জনপ্রতিনিধিরা পারবেন। ডিমান্ট ক্রিয়েট করতে হবে। পদ সৃষ্টি করতে হবে। ছোট ছোট উপজেলাতে কনসালট্যান্ট পদ সৃষ্টি হয়েছে। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে কেন পদ সৃষ্টি হলো না? সে খোঁজও নিতে হবে। জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে সরকারের কাছে এগুলো জানাতে হবে, বলতে হবে। আমিই আপনাদেরকে বলব, কেন আপনারা দাবি জানাচ্ছেন না? কেন আপনারা ডিমান্ড তৈরি করেননি। কেনই বা চতুর্থ শ্রেণি নিয়োগ নেই। পদসৃজন করা একট কাজ। জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে পদসৃজন করাতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা আমাদের আমাদের সর্বোচ্চ দিয়ে সেবা দিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু কিছু কাজ আছে, যেগুলো আপনাদেরই করতে হবে। আপনাদের জনপ্রতিনিধিরাই যেগুলো পারেন। তাহলে সমস্ত সমস্যার সমাধান হবে।’
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে দৈনিক সময়ের সমীকরণ-এর প্রধান সম্পাদক নাজমুল হক স্বপন বলেন, ‘আমাদের এখানে চিকিৎসকের অভাব রয়েছে। আজকের সব আলোচনার মধ্যে স্পষ্ট যে, এই সমস্যাগুলোর সমাধান রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ছাড়া সম্ভব নয়। কিছু দিন আগে আমার এক বন্ধু নিউইয়র্কে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত। তাঁর বাড়ির কাছে একটা সরকারি হাসপাতাল, সে সেখানে যায়নি। গেছে একটা প্রাইভেট হাসপাতালে। সেই তুলনায় বলা যায়, এতো সমালোচনার মধ্যেও বাংলাদেশের সরকারি হাসপাতালগুলো সবথেকে বেশি সেবা দেয়। ৭০ শতাংশ মানুষ আমরা এখান থেকেই সেবা নিই। চিকিৎসক প্রাণপণ চেষ্টা করেন মানুষকে সেবা দেওয়ার। রাজনৈতিক নেতাদেরও ভাবতে হবে, আমার এলাকার সেবাকে কীভাবে আরও বেশি ভালো করব। রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ যদি উদ্যোগী না হয়, তাহলে এই আলোচনাটি আলোচনাই থেকে যাবে। আমরা প্রতিকার পাব না। আমাদের এমপি মহোদয় তিনি অত্যন্ত জনপ্রিয়। তাকে প্রধানমন্ত্রী নিজেই চিনেন। ওনার পক্ষে এটি সম্ভব। তাঁর সাথে সেরকম সুযোগ্য কেউ থেকে সঠিক স্থানে তদবির করে এগুলো আনতে হবে। তাহলে এই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব।’
গণশুনানিতে বিশেষ অতিথি হিসেবে আরও বক্তব্য দেন উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা অফিসের মেডিকেল অফিসার (এমসিএইচএফপি) ডা. বেলাল উদ্দীন, জেলা লোকমোর্চার সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম সনি, ওয়েভ ফাউন্ডেশনের সমম্বয়কারী নির্মল দাস প্রমুখ।
এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন ওয়েভ ফাউন্ডেশনের উপ-সমন্বয়কারী কামরুজ্জামান যুদ্ধ, সদর উপজেলা লোকমোর্চার সহসভাপতি নাসির আহাদ জোয়ার্দ্দার, সহসভাপতি শোহিনা খাতুন, যুগ্ম সম্পাদক আশরাফ বিশ্বাস মিণ্টু, যুগ্ম সম্পাদক ইসলাম রকিব, সহসাধারণ সম্পাদক পারভিন লায়লা, দপ্তর সম্পাদক হাজী নাসীর জোয়ার্দ্দার, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেরাব্বিন সানভী, সদস্য অ্যাড. শাহাজাহান আলী, অ্যাড. বদর উদ্দিন, মাসুমা খাতুন, শেখ লিটন, আব্দুর রহমান, লোকমোর্চার সদস্যসচিব কানিজ সুলতানা প্রমুখ। গণশুনানিতে সদর উপজেলা লোকমোর্চার ৫০ জন প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেন। প্রতিনিধিরা হাসপাতালের স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নয়নে বিভিন্ন পরামর্শ ও প্রস্তাব উপস্থাপন করেন।
কমেন্ট বক্স