কালীগঞ্জ অগ্রণী ব্যাংকের বরখাস্ত দুই কর্মকর্তাসহ তিনজনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
- আপলোড তারিখঃ ২১-১১-২০২০ ইং
ঝিনাইদহ অফিস :
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ অগ্রণী ব্যাংক শাখার সাময়িক বরখাস্ত দুই কর্মকর্তাসহ তিনজনকে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। দেশের সব স্থল ও বিমানবন্দর ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ বরাবর এ সংক্রান্ত চিঠি দেওয়া হয়েছে। ব্যাংকটির সাবেক শাখা ব্যবস্থাপক শৈলেন কুমার বিশ্বাস, অফিসার (ক্যাশ) আবদুস সালাম ও অস্থায়ী মাঠ সহকারী আজির আলীর বিরুদ্ধে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে ব্যাংকটির প্রধান কার্যালয় কঠোর অবস্থানে রয়েছে। গত বৃহস্পতিবার অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ শামস-উল ইসলাম বলেন, ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।
সূত্র জানায়, জাল কাগজপত্র তৈরি করে মৃত ব্যক্তি, শ্রমিক, ব্যবসায়ী, প্রবাসীসহ শত শত মানুষের নামে শৈলেন বিশ্বাস, আবদুস সালাম ও আজির আলী কৃষি ঋণের লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। প্রাথমিক তদন্তে অভিযোগের সত্যতা মিলেছে। কালীগঞ্জ উপজেলার নিশ্চিন্তপুর গ্রামের জগন্নাথ বিশ্বাসের ছেলে শৈলেন ২০১৭ সালের ১৭ জুলাই শাখা ম্যানেজার পদে যোগ দেন। তাঁর বিরুদ্ধে আগেও নানা অনিয়ম-অভিযোগের তদন্ত হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কোটায় ২০১৭ সালের ৫ অক্টোবর কালীগঞ্জ শাখায় অফিসার (ক্যাশ) পদে যোগ দেন হরিণাকুণ্ড উপজেলার ভেড়াখালী গ্রামের আবদুস সালাম। অথচ তাঁকে ঋণ শাখায় দায়িত্ব দেওয়া হয়। শৈলেন ও সালামকে সঙ্গে করে প্রতারক আজির আলী নতুন পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নামেন। স্থানীয় চক্রের সহযোগিতায় তাঁরা জালিয়াত সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। কৃষকসহ কাল্পনিক গ্রহীতাদের নামে কাগজপত্র তৈরি করে এবং ভুয়া স্বাক্ষর করে তাঁরা কৃষিঋণ নেন।
জানা গেছে, কৃষকদের ৪ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ সুদে এক লাখ টাকার নিচে সহজ শর্তে ঋণ দিয়ে আসছিল ব্যাংকটি। অনুমান এক হাজার ১ শ জনের নামে পৌনে চার কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করা হয়। ব্যাংকটির আঞ্চলিক অফিস থেকে প্রতিবছর তদারকি করা হয়েছে। একাধিক এজিএম ও ডিজিএমও শাখা পরিদর্শন করেছেন। কিন্তু কারও চোখে জালিয়াতির বিষয়টি এতোদিন ধরা পড়েনি। শৈলেন বিশ্বাসকে চুয়াডাঙ্গায় বদলি করা হলে এবং শাখায় নতুন ব্যবস্থাপক হিসেবে এসপিও নাজমুস সাদাত যোগ দিলে ঘটনাটি ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসে। ২০২০ সালের ২২ জুন যোগ দিয়ে নাজমুস সাদাত খাতা-কলমে ঋণ বিতরণের সঙ্গে বাস্তবের কোনো মিল খুঁজে পাননি। একই বছর ৩০ সেপ্টেম্বর জোনাল অফিসের উপ-মহাব্যবস্থাপক শেখ দীন মহম্মদ শাখাটি পরিদর্শন করেন। কয়েকজন ঋণগ্রহীতার কাছে তিনি ফোন করলে অনিয়ম-দুর্নীতির প্রকৃত ঘটনা জানতে পারেন। একই দিন আঞ্চলিক কার্যালয়ের সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার আনোয়ার হোসেনকে প্রধান করে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্তে লাখ লাখ টাকার হিসাবের গড়মিল বেরিয়ে আসে। এ নিয়ে পত্রিকায় তথ্য ভিত্তিক সংবাদ প্রকাশিত হলে তাঁরা ঝিনাইদহের সিনিয়র সাংবাদিক আসিফ কাজল ও যুগান্তরের কালীগঞ্জ প্রতিনিধি সোহাগের নামে আদালতে মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করেন।
ঝিনাইদহ জোনাল অফিসের উপ-মহাব্যবস্থাপক শেখ দীন মহম্মদ বলেন, এলাকার ১১ শ কৃষকের মধ্যে পৌনে চার কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। কত কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে, তা অডিট শেষে জানা সম্ভব হবে। তিনি বলেন, জড়িতরা গোপনে ২৭ লাখ টাকা ব্যাংকে ফেরত দিয়েছে। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. সেলিম রেজার সভাপতিত্বে এসএমই ঋণ বিতরণ মনিটরিং কমিটির সভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হয়। সভায় শেখ দীন মহম্মদ ঘটনাটি জানান। একই সভায় বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক পার্থ প্রতিম জানান, বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে গুরুত্ব সহকারে ঘটনাটি তদন্ত করা হবে।
কমেন্ট বক্স