ইপেপার । আজবুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

প্রাকৃতিক বৈরিতায় কৃষি খাতে বিপর্যয়ের শঙ্কা ; নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করুন

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৭:৪০:২৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
  • / ২৫ বার পড়া হয়েছে

জলবায়ু পরিবর্তনে এমনিতে সাম্প্রতিক সময়ে দেশে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে প্রাকৃতিক দুরে‌্যাগ বেশি হচ্ছে। মাঝে মধ্যে আঘাত হানা এর নমুনা। অতিবৃষ্টি-অনাবৃষ্টি, জলোচ্ছ্বাস, ঝড়-ঝঞ্ঝার ঝুঁকিতে পড়েছে আমাদের দেশ। ফলে পরিবেশের ভারসাম্যহীনতা তীব্রভাবে লক্ষণীয়। এতে বিপর্যস্ত হচ্ছে জনজীবন। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকিতে রয়েছে উপকূলের ৪০ শতাংশ কৃষিজমি। আর জলবায়ু পরিবর্তনে সবচেয়ে বড় ঝুঁকিতে উপকূলের কৃষি খাত।

বৃষ্টিপাত কমে যাওয়া এবং অসময়ে বৃষ্টিপাত কৃষিনির্ভর আমাদের দেশের শস্য ও ফসল উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এমন পরিস্থিতিতে গত দুই সপ্তাহ ধরে সারা দেশের ওপর দিয়ে বয়ে চলেছে তাপপ্রবাহ। আরো বেশ কয়েক দিন এই তাপমাত্রা কমার কোনো সম্ভাবনা দেখছে না আবহাওয়া বিভাগ। তাই নিশ্চিতভাবে বলা যায়, অতি তাপমাত্রায় কৃষি খাতের ক্ষতি হবে; তা সহজে অনুমান করা যায়। বিশেষ করে বোরো ধান, আম-লিচুর ফলন এবার অনেক কম হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
দেশব্যাপী পক্ষকাল ধরে বয়ে চলা তাপপ্রবাহে পরিবেশ অসহনীয় হয়ে উঠেছে। গ্রীষ্মের এ তাপদাহে সাধারণ মানুষ অসহায় হয়ে পড়ছেন। দুপুর গড়ানো মাত্র প্রায় জনমানবশূন্য হয়ে পড়ছে পথ-ঘাট। চরম দুশ্চিন্তায় কৃষক এবং মৌসুমি ফল ব্যবসায়ীরা। প্রচণ্ড গরমে আম-লিচুর কুঁড়ি ব্যাপকভাবে ঝরে পড়ছে। সবজি ক্ষেত বিশেষ করে টমেটোর গাছ পুড়ে যাচ্ছে। দেশের অন্যতম খাদ্যশস্য বোরো ধান বাঁচাতে কৃষক ক্ষেতে সারা রাত ধরে সেচ দিচ্ছেন। কিন্তু তারপরও দানা বের হওয়া ধান চিটা হয়ে যাওয়ার শঙ্কায় রয়েছেন তারা। বোরো ধানের ফলন পাওয়া নিয়ে কৃষকের কপালে দুশ্চিন্তার ছাপ পড়েছে। রাতে সেচ দিয়ে জমি পানিতে ভর্তি করে দিলেও দুপুর হতে না হতে তা শুকিয়ে যাচ্ছে যদিওবা ভূগর্ভের পানি দিয়ে জমিতে সেচকাজ কোনো মতে চলছে। তবে বৃষ্টির পানি না পেলে ধানে চিটা হওয়ার আশঙ্কা বেশি। এ অবস্থা চলতে থাকলে বোরো ধান উৎপাদনে বিপর্যয় নামার আশঙ্কা করছেন কৃষকরা। আরো হতাশার হলো- বিদ্যুৎ ঠিকমতো না পাওয়ায় ভূগর্ভের পানিও পর্যাপ্ত দেয়া সম্ভব হচ্ছে না জমিতে। অন্যদিকে ডিজেল ব্যবহার করায় সেচের পানি দিতে ব্যয় বেশি পড়ছে। এতে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কৃষক। তাই বর্তমানের মতো তাপদাহ অব্যাহত থাকলে পানির স্তর নেমে যাওয়ার শঙ্কা থেকে যায়।
কিছু দিন আগেই আম-লিচুর গাছগুলো মুকুলে ভরে যাওয়ায় বাগান মালিকরা আশাবাদী হয়েছিলেন। কিন্তু প্রচণ্ড গরমে তাদের সেই আশা এখন হতাশায় রূপ নিয়েছে। কিন্তু হঠাৎ করে দেশব্যাপী প্রচণ্ড রৌদ্রতাপ হতাশা তৈরি করেছে তাদের। আম-লিচুর বাগান মালিকরা মৌসুমি এসব ফলের ফলন বিপর্যয়ের শঙ্কায় শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। এর কারণ, অনেক জেলায় এসব ফল এখন বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন করা হয়। ফলন বিপর্যয় হলে আম ও লিচুচাষিরা পথে বসবেন। তাদের সারা বছর অর্থনৈতিক দৈন্যে কাটাতে হবে। তাই আম-লিচুর মুকুল রক্ষার জন্য বিভিন্ন উপায় অবলম্বন করছেন তারা। এ নিয়েই সময় ব্যয় করছেন বাগান মালিকরা।
আমরা মনে করি, প্রাকৃতিক এ বিপর্যয়ের সময় কৃষি খাতের উৎপাদন ঠিক রাখতে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে যাতে চাষিরা ক্ষেতে প্রয়োজনীয় সেচ দিতে পারেন। এতে বোরো এবং আম-লিচুর ফলন বিপর্যয় অনেক কমে আসতে পারে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

প্রাকৃতিক বৈরিতায় কৃষি খাতে বিপর্যয়ের শঙ্কা ; নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করুন

আপলোড টাইম : ০৭:৪০:২৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

জলবায়ু পরিবর্তনে এমনিতে সাম্প্রতিক সময়ে দেশে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে প্রাকৃতিক দুরে‌্যাগ বেশি হচ্ছে। মাঝে মধ্যে আঘাত হানা এর নমুনা। অতিবৃষ্টি-অনাবৃষ্টি, জলোচ্ছ্বাস, ঝড়-ঝঞ্ঝার ঝুঁকিতে পড়েছে আমাদের দেশ। ফলে পরিবেশের ভারসাম্যহীনতা তীব্রভাবে লক্ষণীয়। এতে বিপর্যস্ত হচ্ছে জনজীবন। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকিতে রয়েছে উপকূলের ৪০ শতাংশ কৃষিজমি। আর জলবায়ু পরিবর্তনে সবচেয়ে বড় ঝুঁকিতে উপকূলের কৃষি খাত।

বৃষ্টিপাত কমে যাওয়া এবং অসময়ে বৃষ্টিপাত কৃষিনির্ভর আমাদের দেশের শস্য ও ফসল উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এমন পরিস্থিতিতে গত দুই সপ্তাহ ধরে সারা দেশের ওপর দিয়ে বয়ে চলেছে তাপপ্রবাহ। আরো বেশ কয়েক দিন এই তাপমাত্রা কমার কোনো সম্ভাবনা দেখছে না আবহাওয়া বিভাগ। তাই নিশ্চিতভাবে বলা যায়, অতি তাপমাত্রায় কৃষি খাতের ক্ষতি হবে; তা সহজে অনুমান করা যায়। বিশেষ করে বোরো ধান, আম-লিচুর ফলন এবার অনেক কম হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
দেশব্যাপী পক্ষকাল ধরে বয়ে চলা তাপপ্রবাহে পরিবেশ অসহনীয় হয়ে উঠেছে। গ্রীষ্মের এ তাপদাহে সাধারণ মানুষ অসহায় হয়ে পড়ছেন। দুপুর গড়ানো মাত্র প্রায় জনমানবশূন্য হয়ে পড়ছে পথ-ঘাট। চরম দুশ্চিন্তায় কৃষক এবং মৌসুমি ফল ব্যবসায়ীরা। প্রচণ্ড গরমে আম-লিচুর কুঁড়ি ব্যাপকভাবে ঝরে পড়ছে। সবজি ক্ষেত বিশেষ করে টমেটোর গাছ পুড়ে যাচ্ছে। দেশের অন্যতম খাদ্যশস্য বোরো ধান বাঁচাতে কৃষক ক্ষেতে সারা রাত ধরে সেচ দিচ্ছেন। কিন্তু তারপরও দানা বের হওয়া ধান চিটা হয়ে যাওয়ার শঙ্কায় রয়েছেন তারা। বোরো ধানের ফলন পাওয়া নিয়ে কৃষকের কপালে দুশ্চিন্তার ছাপ পড়েছে। রাতে সেচ দিয়ে জমি পানিতে ভর্তি করে দিলেও দুপুর হতে না হতে তা শুকিয়ে যাচ্ছে যদিওবা ভূগর্ভের পানি দিয়ে জমিতে সেচকাজ কোনো মতে চলছে। তবে বৃষ্টির পানি না পেলে ধানে চিটা হওয়ার আশঙ্কা বেশি। এ অবস্থা চলতে থাকলে বোরো ধান উৎপাদনে বিপর্যয় নামার আশঙ্কা করছেন কৃষকরা। আরো হতাশার হলো- বিদ্যুৎ ঠিকমতো না পাওয়ায় ভূগর্ভের পানিও পর্যাপ্ত দেয়া সম্ভব হচ্ছে না জমিতে। অন্যদিকে ডিজেল ব্যবহার করায় সেচের পানি দিতে ব্যয় বেশি পড়ছে। এতে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কৃষক। তাই বর্তমানের মতো তাপদাহ অব্যাহত থাকলে পানির স্তর নেমে যাওয়ার শঙ্কা থেকে যায়।
কিছু দিন আগেই আম-লিচুর গাছগুলো মুকুলে ভরে যাওয়ায় বাগান মালিকরা আশাবাদী হয়েছিলেন। কিন্তু প্রচণ্ড গরমে তাদের সেই আশা এখন হতাশায় রূপ নিয়েছে। কিন্তু হঠাৎ করে দেশব্যাপী প্রচণ্ড রৌদ্রতাপ হতাশা তৈরি করেছে তাদের। আম-লিচুর বাগান মালিকরা মৌসুমি এসব ফলের ফলন বিপর্যয়ের শঙ্কায় শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। এর কারণ, অনেক জেলায় এসব ফল এখন বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন করা হয়। ফলন বিপর্যয় হলে আম ও লিচুচাষিরা পথে বসবেন। তাদের সারা বছর অর্থনৈতিক দৈন্যে কাটাতে হবে। তাই আম-লিচুর মুকুল রক্ষার জন্য বিভিন্ন উপায় অবলম্বন করছেন তারা। এ নিয়েই সময় ব্যয় করছেন বাগান মালিকরা।
আমরা মনে করি, প্রাকৃতিক এ বিপর্যয়ের সময় কৃষি খাতের উৎপাদন ঠিক রাখতে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে যাতে চাষিরা ক্ষেতে প্রয়োজনীয় সেচ দিতে পারেন। এতে বোরো এবং আম-লিচুর ফলন বিপর্যয় অনেক কমে আসতে পারে।