ইপেপার । আজবৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
জীবননগরে দালালের খপ্পরে পড়ে বিদেশ গমন

প্রবাসীকে ফেরাতে স্ত্রী-সন্তানের আকুতি

জীবননগর অফিস:
  • আপলোড টাইম : ০৮:৩৯:১১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
  • / ৮০ বার পড়া হয়েছে

জীবননগরে ওষুধ কোম্পানিতে চাকরি করতেন সীমান্ত ইউনিয়নের গয়েশপুর গ্রামের খাজা মইনুদ্দিনের ছেলে ইব্রাহিম। একই এলাকার দালাল বিপ্লব হোসেন ওয়াজের খপ্পরে পড়েন তিনি। সৌদি আরবে উচ্চ বেতনের চাকরির প্রলোভন দেখান তিনি। তার আশ্বাসে ছোট দুই মেয়ে, স্ত্রী ও মা-বাবাকে রেখে প্রবাসে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন ইব্রাহিম। কিন্তু গিয়ে পড়েন বিপদে। কোনো প্রতিশ্রুতিই রাখেনি দালাল বিপ্লব। দিয়েছেন ট্যুরিস্ট ভিসা। এখন তাকে দেশে ফেরাতে বিভিন্ন মানুষের কাছে ধরনা দিয়ে আকুতি জানাচ্ছেন ইব্রাহিমের স্ত্রী মোছা. শিল্পী খাতুন ও বাবা খাজা মইনুদ্দিন।

জানা গেছে, গত বছরের ডিসেম্বর মাসে ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকায় চুক্তি করে তাকে সৌদি আরবে পাঠান বিপ্লব। তবে দালাল বিপ্লব তাকে কাজের ভিসার পরিবর্তে ট্যুরিস্ট ভিসায় সৌদি আরবে পাঠান। এ কারণে তিনি পড়েন বিপদে। বিদেশে যাওয়ার স্বপ্ন এখন তার দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে।

গতকাল বুধবার জীবননগর প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে মোছা. শিল্পী খাতুন বলেন, ‘বিপ্লব হোসেন ওয়াজ ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে ২০২৩ সালের ১৭ ডিসেম্বর আমার স্বামীকে সৌদি আরবে পাঠায়। সৌদি আরবে কোম্পানির মালিকপক্ষ কোনো কাজ ছাড়া ১৫ দিন তাকে আটক রাখে। ঠিকমতো খেতে দিতো না। পরে তারা তাকে আরেক কোম্পানির কাছে হস্তান্তর করে। সেখানেও তাকে আটকে রাখা হয়। আমার স্বামী আমাকে বিষয়টি জানালে জীবননগর থানায় লিখিত অভিযোগ করি। পরে বিচারে বিপ্লব সকল দায় স্বীকার করে দুই মাসের মধ্য আমার স্বামীকে কাজের ব্যবস্থা করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। আর জরিমানা স্বরূপ ৩৮ হাজার টাকা এবং তার কথা মতো কাজ না দিতে পারায় আমার স্বামীকে দেশে ফিরিয়ে আনাসহ চার লাখ ৫০ হাজার টাকা ফেরত দিবে বলে স্ট্যাম্পে সই করে। তবে সে কাজ দেয়নি। আর আমাদের ১০ হাজার টাকা এবং আমার স্বামীকে ৯ হাজার টাকা দিয়েছ। এরপর বিপ্লব আমার স্বামীকে ১৮ ঘণ্টা করে কাজ করিয়ে নিয়ে সপ্তাহে ৫০ থেকে ১০০ রিয়েল দিচ্ছিল। বাংলাদেশি টাকায় দুই থেকে তিন হাজার টাকা। পরে অনেকবার অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পায়নি।’

শিল্পী খাতুন আরও বলেন, ‘আমার স্বামী ওই কোম্পানির মালিকের কাছে বাংলাদেশের ফেরত আসার কথা বলে পাসপোর্ট চাইতে গেলে তিনি বলেন, আমি তোমাকে ৫ লাখ টাকা দিয়ে কিনেছি। যদি ৫ লাখ টাকা দিতে পারো তাহলে আমরা তোমাকে পাসপোর্ট দিব। পরে আমার স্বামী আকুতি মিনতি জানালে তারা তাকে সাহায্য না করে একটি মামলা দেয়। এখন সৌদি আরবে একটি বাড়িতে কোনো খাবার ছাড়া তাকে আটকে রাখা হয়েছে। তারা ৫ লাখ টাকা দাবি করছে। আমি আমার স্বামীকে ফেরত চাই।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিপ্লব হোসেন ওয়াজ বলেন, ‘এটা মিথ্যা। চারজন কোম্পানির বসের সাথে মারামারি করেছিল। এ ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে সৌদিতে মামলা হয়। তাদের ১৫ হাজার রিয়াল করে জরিমানা করা হয়েছে। এই নিয়ে তারা বিভিন্ন জায়গায় ঝামেলা করে বেড়াচ্ছে। তারা সৌদিতে মারামারি করলে তো আর দায়ভার আমি নিতে পারব না।’ তিনি আরও বলেন, তারা সেখানে ফুড ডেলিভারির কাজ করে। ওটা টার্গেটের কাজ। ৫০০ ডেলিভারি দিলে ২ হাজার ৫০০ রিয়াল পাবে। এখন তারা যদি টার্গেট পূরণ করতে না পারে, তাহলে তো টাকা কম পাবে, এটাই স্বাভাবিক। তার সাথে আরও যারা বিদেশে গিয়েছে, তারা কিন্তু ঠিকই সেখানে কাজ করছে।’

জীবননগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম জাবীদ হাসান বলেন, এ বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছিলাম। পরে তাদের থানায় ডেকে একটি সমাধান করা হয়। এখন আবার ঝামেলা শুরু হয়েছে শুনছি। বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

জীবননগরে দালালের খপ্পরে পড়ে বিদেশ গমন

প্রবাসীকে ফেরাতে স্ত্রী-সন্তানের আকুতি

আপলোড টাইম : ০৮:৩৯:১১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

জীবননগরে ওষুধ কোম্পানিতে চাকরি করতেন সীমান্ত ইউনিয়নের গয়েশপুর গ্রামের খাজা মইনুদ্দিনের ছেলে ইব্রাহিম। একই এলাকার দালাল বিপ্লব হোসেন ওয়াজের খপ্পরে পড়েন তিনি। সৌদি আরবে উচ্চ বেতনের চাকরির প্রলোভন দেখান তিনি। তার আশ্বাসে ছোট দুই মেয়ে, স্ত্রী ও মা-বাবাকে রেখে প্রবাসে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন ইব্রাহিম। কিন্তু গিয়ে পড়েন বিপদে। কোনো প্রতিশ্রুতিই রাখেনি দালাল বিপ্লব। দিয়েছেন ট্যুরিস্ট ভিসা। এখন তাকে দেশে ফেরাতে বিভিন্ন মানুষের কাছে ধরনা দিয়ে আকুতি জানাচ্ছেন ইব্রাহিমের স্ত্রী মোছা. শিল্পী খাতুন ও বাবা খাজা মইনুদ্দিন।

জানা গেছে, গত বছরের ডিসেম্বর মাসে ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকায় চুক্তি করে তাকে সৌদি আরবে পাঠান বিপ্লব। তবে দালাল বিপ্লব তাকে কাজের ভিসার পরিবর্তে ট্যুরিস্ট ভিসায় সৌদি আরবে পাঠান। এ কারণে তিনি পড়েন বিপদে। বিদেশে যাওয়ার স্বপ্ন এখন তার দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে।

গতকাল বুধবার জীবননগর প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে মোছা. শিল্পী খাতুন বলেন, ‘বিপ্লব হোসেন ওয়াজ ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে ২০২৩ সালের ১৭ ডিসেম্বর আমার স্বামীকে সৌদি আরবে পাঠায়। সৌদি আরবে কোম্পানির মালিকপক্ষ কোনো কাজ ছাড়া ১৫ দিন তাকে আটক রাখে। ঠিকমতো খেতে দিতো না। পরে তারা তাকে আরেক কোম্পানির কাছে হস্তান্তর করে। সেখানেও তাকে আটকে রাখা হয়। আমার স্বামী আমাকে বিষয়টি জানালে জীবননগর থানায় লিখিত অভিযোগ করি। পরে বিচারে বিপ্লব সকল দায় স্বীকার করে দুই মাসের মধ্য আমার স্বামীকে কাজের ব্যবস্থা করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। আর জরিমানা স্বরূপ ৩৮ হাজার টাকা এবং তার কথা মতো কাজ না দিতে পারায় আমার স্বামীকে দেশে ফিরিয়ে আনাসহ চার লাখ ৫০ হাজার টাকা ফেরত দিবে বলে স্ট্যাম্পে সই করে। তবে সে কাজ দেয়নি। আর আমাদের ১০ হাজার টাকা এবং আমার স্বামীকে ৯ হাজার টাকা দিয়েছ। এরপর বিপ্লব আমার স্বামীকে ১৮ ঘণ্টা করে কাজ করিয়ে নিয়ে সপ্তাহে ৫০ থেকে ১০০ রিয়েল দিচ্ছিল। বাংলাদেশি টাকায় দুই থেকে তিন হাজার টাকা। পরে অনেকবার অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পায়নি।’

শিল্পী খাতুন আরও বলেন, ‘আমার স্বামী ওই কোম্পানির মালিকের কাছে বাংলাদেশের ফেরত আসার কথা বলে পাসপোর্ট চাইতে গেলে তিনি বলেন, আমি তোমাকে ৫ লাখ টাকা দিয়ে কিনেছি। যদি ৫ লাখ টাকা দিতে পারো তাহলে আমরা তোমাকে পাসপোর্ট দিব। পরে আমার স্বামী আকুতি মিনতি জানালে তারা তাকে সাহায্য না করে একটি মামলা দেয়। এখন সৌদি আরবে একটি বাড়িতে কোনো খাবার ছাড়া তাকে আটকে রাখা হয়েছে। তারা ৫ লাখ টাকা দাবি করছে। আমি আমার স্বামীকে ফেরত চাই।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিপ্লব হোসেন ওয়াজ বলেন, ‘এটা মিথ্যা। চারজন কোম্পানির বসের সাথে মারামারি করেছিল। এ ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে সৌদিতে মামলা হয়। তাদের ১৫ হাজার রিয়াল করে জরিমানা করা হয়েছে। এই নিয়ে তারা বিভিন্ন জায়গায় ঝামেলা করে বেড়াচ্ছে। তারা সৌদিতে মারামারি করলে তো আর দায়ভার আমি নিতে পারব না।’ তিনি আরও বলেন, তারা সেখানে ফুড ডেলিভারির কাজ করে। ওটা টার্গেটের কাজ। ৫০০ ডেলিভারি দিলে ২ হাজার ৫০০ রিয়াল পাবে। এখন তারা যদি টার্গেট পূরণ করতে না পারে, তাহলে তো টাকা কম পাবে, এটাই স্বাভাবিক। তার সাথে আরও যারা বিদেশে গিয়েছে, তারা কিন্তু ঠিকই সেখানে কাজ করছে।’

জীবননগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম জাবীদ হাসান বলেন, এ বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছিলাম। পরে তাদের থানায় ডেকে একটি সমাধান করা হয়। এখন আবার ঝামেলা শুরু হয়েছে শুনছি। বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে।