ইপেপার । আজশুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

স্বর্ণ চোরাচালান বাড়ছে ; ধরাছোঁয়ার বাইরে হোতারা

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১০:৩২:৩৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
  • / ৮৩ বার পড়া হয়েছে

মাদকসহ নানা ধরনের নিষিদ্ধ বস্তু পাচারে চোরাচালান হয়। বিশ্বব্যাপী ছড়ানো ছিটানো চক্র রয়েছে যাদের কাজ চোরাচালান করা। কিছু দেশে এ চক্র বেশি সক্রিয়। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির দুর্বলতা নিয়ে তারা এটি করে। বাংলাদেশ মাদক চোরাচালানের অন্যতম একটি স্পট। প্রতিবেশী ভারত ও মিয়ানমার থেকে চোরাচালান হয়ে আসা মাদকে ধ্বংস হচ্ছে এ দেশের যুবসমাজ। সাম্প্রতিক সময়ে দেশের বিমানবন্দরগুলোতে ব্যাপক হারে স্বর্ণ চোরাচালান হচ্ছে। নিয়মিত বিরতিতে জব্দ হচ্ছে চোরাই স্বর্ণ। বরাবরের মতো এর বাহক কিংবা চক্রের সদস্যদের খুব কম আটক করা যাচ্ছে। ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে চোরাই কারবারিসহ গডফাদাররা।
গত নভেম্বর থেকে জানুয়ারি স্বর্ণের বারের ১১টি চালান জব্দ হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি স্বর্ণের বার উদ্ধার হয়েছে ডিসেম্বরে। পাঁচটি পৃথক চালানে প্রায় ৪৯ কেজি স্বর্ণের বার ধরা পড়ে। এর মধ্যে সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে একটি, চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে একটি এবং ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তিনটি চালান ধরা পড়ে। জানুয়ারিতে উদ্ধার হয় ১৯ কেজি স্বর্ণের বার। গত নভেম্বরে জব্দ করা হয় পাঁচ কেজি স্বর্ণের বার।
সর্বশেষ গত শুক্রবার রাতে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দুবাই-ফেরত এক যাত্রীর কাছ থেকে জব্দ করা হয় সাড়ে তিন কেজি স্বর্ণের বার। ওই যাত্রী তার তিনটি মানিব্যাগে ২৮টি স্বর্ণের বার ও একটি স্বর্ণের মুদ্রা লুকিয়ে রেখেছিলেন। তাকে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগের লোকেরা আটক করেন। তবে জব্দ হওয়া স্বর্ণ চালানের বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কোনোভাবে এর বাহককে শনাক্ত করা যাচ্ছে না। এ ধরনের বিশাল একটি চোরাচালানের ঘটনা ঘটে ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। বাংলাদেশ বিমানের একটি উড়োজাহাজ থেকে ৩৪ কেজি স্বর্ণের বারের একটি চালান জব্দ করা হয়। স্বর্ণের বারগুলো উড়োজাহাজের যাত্রীদের আসনের নিচে, শৌচাগারে বিক্ষিপ্তভাবে লুকিয়ে রাখা হয়েছিল।
১৩ জানুয়ারি ব্যাংকক থেকে শাহ আমানত বিমানবন্দরে আসা বাংলাদেশ বিমানের একটি উড়োজাহাজ থেকে জব্দ করা হয় ৪০টি স্বর্ণের বার। এক যাত্রীর সিটের নিচে বারগুলো পাওয়া যায়। ১৮ জানুয়ারি শাহজালাল বিমানবন্দরে ওমানের মাসকাট থেকে আসা বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটের শৌচাগার থেকে সাড়ে চার কেজি ওজনের ৪০টি স্বর্ণের বার উদ্ধার করা হয়। ওই ঘটনায়ও কোনো বাহককে আটক করা যায়নি। গত তিন মাসে তিনটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে প্রায় ৭৩ কেজি স্বর্ণের বার জব্দ হয়। এর বাজারমূল্য প্রায় ৬৬ কোটি টাকা। স্বর্ণ চালানে কিছু ক্ষেত্রে বাহকদের আটক করা গেলেও চোরাচালানের হোতাদের শনাক্ত করা যায় না। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কোনো সুযোগ থাকে না। এর কারণে স্বর্ণ চোরাচালানও বিরামহীন চলছে। ধারণা করা হয়, জব্দ হওয়া স্বর্ণের চেয়ে বিমানবন্দর দিয়ে আরো অনেক বেশি স্বর্ণ পাচার হয়ে যাচ্ছে।
জাতীয় নির্বাচনের সময় গোয়েন্দা নজরদারি কমার কারণে বিমানবন্দর দিয়ে চোরাচালান বেড়েছে বলে অনুমান করা হচ্ছে। বাস্তবতা হচ্ছে, আমরা যদি গত কয়েক বছরের চিত্র দেখি তাতে বিমানবন্দর দিয়ে স্বর্ণ চালান নিয়মিত বিরতিতে চলার লক্ষণ দেখতে পাবো। মূল্যস্ফীতির কারণে ডলারের বিনিময় হার বাড়ায় চোরাচালান আরো লোভনীয় হয়েছে। আমরা মনে করি, চোরাচালানিরা দেশের শত্রু। মাদক চোরাচালান ও মানবপাচারের মতো স্বর্ণ চোরাচালান দেশের জন্য বড় ধরনের ক্ষতি বয়ে আনে। এদের রুখে দেয়ার জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এর জন্য মূল হোতাদের বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

স্বর্ণ চোরাচালান বাড়ছে ; ধরাছোঁয়ার বাইরে হোতারা

আপলোড টাইম : ১০:৩২:৩৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

মাদকসহ নানা ধরনের নিষিদ্ধ বস্তু পাচারে চোরাচালান হয়। বিশ্বব্যাপী ছড়ানো ছিটানো চক্র রয়েছে যাদের কাজ চোরাচালান করা। কিছু দেশে এ চক্র বেশি সক্রিয়। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির দুর্বলতা নিয়ে তারা এটি করে। বাংলাদেশ মাদক চোরাচালানের অন্যতম একটি স্পট। প্রতিবেশী ভারত ও মিয়ানমার থেকে চোরাচালান হয়ে আসা মাদকে ধ্বংস হচ্ছে এ দেশের যুবসমাজ। সাম্প্রতিক সময়ে দেশের বিমানবন্দরগুলোতে ব্যাপক হারে স্বর্ণ চোরাচালান হচ্ছে। নিয়মিত বিরতিতে জব্দ হচ্ছে চোরাই স্বর্ণ। বরাবরের মতো এর বাহক কিংবা চক্রের সদস্যদের খুব কম আটক করা যাচ্ছে। ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে চোরাই কারবারিসহ গডফাদাররা।
গত নভেম্বর থেকে জানুয়ারি স্বর্ণের বারের ১১টি চালান জব্দ হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি স্বর্ণের বার উদ্ধার হয়েছে ডিসেম্বরে। পাঁচটি পৃথক চালানে প্রায় ৪৯ কেজি স্বর্ণের বার ধরা পড়ে। এর মধ্যে সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে একটি, চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে একটি এবং ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তিনটি চালান ধরা পড়ে। জানুয়ারিতে উদ্ধার হয় ১৯ কেজি স্বর্ণের বার। গত নভেম্বরে জব্দ করা হয় পাঁচ কেজি স্বর্ণের বার।
সর্বশেষ গত শুক্রবার রাতে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দুবাই-ফেরত এক যাত্রীর কাছ থেকে জব্দ করা হয় সাড়ে তিন কেজি স্বর্ণের বার। ওই যাত্রী তার তিনটি মানিব্যাগে ২৮টি স্বর্ণের বার ও একটি স্বর্ণের মুদ্রা লুকিয়ে রেখেছিলেন। তাকে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগের লোকেরা আটক করেন। তবে জব্দ হওয়া স্বর্ণ চালানের বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কোনোভাবে এর বাহককে শনাক্ত করা যাচ্ছে না। এ ধরনের বিশাল একটি চোরাচালানের ঘটনা ঘটে ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। বাংলাদেশ বিমানের একটি উড়োজাহাজ থেকে ৩৪ কেজি স্বর্ণের বারের একটি চালান জব্দ করা হয়। স্বর্ণের বারগুলো উড়োজাহাজের যাত্রীদের আসনের নিচে, শৌচাগারে বিক্ষিপ্তভাবে লুকিয়ে রাখা হয়েছিল।
১৩ জানুয়ারি ব্যাংকক থেকে শাহ আমানত বিমানবন্দরে আসা বাংলাদেশ বিমানের একটি উড়োজাহাজ থেকে জব্দ করা হয় ৪০টি স্বর্ণের বার। এক যাত্রীর সিটের নিচে বারগুলো পাওয়া যায়। ১৮ জানুয়ারি শাহজালাল বিমানবন্দরে ওমানের মাসকাট থেকে আসা বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটের শৌচাগার থেকে সাড়ে চার কেজি ওজনের ৪০টি স্বর্ণের বার উদ্ধার করা হয়। ওই ঘটনায়ও কোনো বাহককে আটক করা যায়নি। গত তিন মাসে তিনটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে প্রায় ৭৩ কেজি স্বর্ণের বার জব্দ হয়। এর বাজারমূল্য প্রায় ৬৬ কোটি টাকা। স্বর্ণ চালানে কিছু ক্ষেত্রে বাহকদের আটক করা গেলেও চোরাচালানের হোতাদের শনাক্ত করা যায় না। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কোনো সুযোগ থাকে না। এর কারণে স্বর্ণ চোরাচালানও বিরামহীন চলছে। ধারণা করা হয়, জব্দ হওয়া স্বর্ণের চেয়ে বিমানবন্দর দিয়ে আরো অনেক বেশি স্বর্ণ পাচার হয়ে যাচ্ছে।
জাতীয় নির্বাচনের সময় গোয়েন্দা নজরদারি কমার কারণে বিমানবন্দর দিয়ে চোরাচালান বেড়েছে বলে অনুমান করা হচ্ছে। বাস্তবতা হচ্ছে, আমরা যদি গত কয়েক বছরের চিত্র দেখি তাতে বিমানবন্দর দিয়ে স্বর্ণ চালান নিয়মিত বিরতিতে চলার লক্ষণ দেখতে পাবো। মূল্যস্ফীতির কারণে ডলারের বিনিময় হার বাড়ায় চোরাচালান আরো লোভনীয় হয়েছে। আমরা মনে করি, চোরাচালানিরা দেশের শত্রু। মাদক চোরাচালান ও মানবপাচারের মতো স্বর্ণ চোরাচালান দেশের জন্য বড় ধরনের ক্ষতি বয়ে আনে। এদের রুখে দেয়ার জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এর জন্য মূল হোতাদের বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।