ইপেপার । আজশনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

অনলাইন জুয়ার বিজ্ঞাপন প্রচার; বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিন

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৯:৩১:৪২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১২ মে ২০২৪
  • / ৭৩ বার পড়া হয়েছে

বাংলাদেশের সংবিধানের ১৮ অনুচ্ছেদে জুয়া খেলা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এর পরও দেশের নানা প্রান্তে জুয়া খেলা লুকিয়ে চলছে। এখন রূপ নিয়েছে ডিজিটাল সংস্করণ ‘অনলাইন বেটিং’য়ে। এর সামাজিক প্রভাব ‘অ্যানালগ জুয়ার’ মতো নেতিবাচক। সারোগেট বা ছদ্মবেশী বিজ্ঞাপনে প্রলুব্ধ হয়ে অনলাইন জুয়ায় জড়িয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বিপুলসংখ্যক মানুষ। দেশে জুয়া খেলা আগে ক্লাব বা ঘরের মধ্যে সীমিত ছিল। গত কয়েক বছরে ডিজিটাল মাধ্যম এবং খেলার সময় টেলিভিশনে জুয়া খেলার বিজ্ঞাপন প্রচারিত হওয়ায় সমাজে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে। এতে কিশোর-তরুণদের জুয়ার মতো ভয়ঙ্কর সামাজিক ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
অনেক দেশে বেটিং বৈধ হলেও বাংলাদেশের আইনে যেকোনো ধরনের জুয়া ও বাজি ধরা নিষিদ্ধ। নিষিদ্ধ এসবের প্রচারণাও। তবু দেশের টেলিভিশন চ্যানেল, ওয়েবসাইট, ইউটিউব চ্যানেল এবং ওটিটি প্ল্যাটফর্মে বেটিং সাইটের বিজ্ঞাপন আসে, তা আসে ভিন্ন উপস্থাপনায় বা ছদ্মবেশ ও চাতুরীর মাধ্যমে। আসলে খেলার মাঝে বেটিং সাইটের সারোগেট বিজ্ঞাপন দেখানোর উদ্দেশ্য মূলত দর্শকদের জুয়ার প্রলোভনে ফেলা।
অবস্থা এমন যে, টেলিভিশনে খেলা দেখা যেন এখন আর শুধু খেলা দেখা নয়, সাথে বাজি ধরার চটকদার বিজ্ঞাপন দেখাও! চাইলে খেলা দেখতে দেখতে যে কেউ একটা ম্যাচ বা ম্যাচের কোনো অংশ নিয়ে বাজি ধরতে পারেন। মানে জুয়া বা বেটিং। আদালতের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও খেলার মধ্যে দেখানো হচ্ছে বেটিং-সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ছদ্মবেশী বিজ্ঞাপন। আইনি ঝামেলা এড়াতে বিজ্ঞাপনগুলোতে শুধু বানানে বা ওয়েবসাইট ঠিকানায় দু-একটি অক্ষরের তারতম্য রেখে দেয়া হয়। যাতে সমস্যায় পড়লে অজুহাত দেয়া যায়, এটা বেটিং ওয়েবসাইটের বিজ্ঞাপন নয়। কখনো মূল বেটিং সাইটের নামের সাথে ‘নিউজ’ কথাটা জুড়ে দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা হয়, এটি আসলে একটা সংবাদ ওয়েবসাইটের বিজ্ঞাপন।
কৌতূহলোদ্দীপক হলো- সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের সাথে এসব বেটিং সাইটের চলে লুকোচুরি খেলা। একটা বন্ধ করা হয়; আরো কয়েকটা চলে আসে। এভাবে অনলাইন বেটিং সমাজে ছড়িয়ে পড়ছে মাদকের নেশার মতো। গ্রাম্য বাজার থেকে শুরু করে শহরের পাড়া-মহল্লার চায়ের দোকান, সর্বত্র চলছে অনলাইন বেটিংয়ের চর্চা। অনেকে অনলাইন বেটিংয়ে আসক্ত হয়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছেন। এ নিয়ে পারিবারিক অশান্তি, মারামারি, এমনকি খুনখারাবির ঘটনা ঘটছে।
অনলাইনে জুয়ার বিস্তার নিয়ে গত বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। জুয়ার কারণে নানা সামাজিক সমস্যার কথা উল্লেখ করে সংস্থাটি বলেছে, অনলাইন জুয়ার মাধ্যমে বিপুল অঙ্কের টাকা পাচার হয়। বিষয়টি একই দিন জাতীয় সংসদের আলোচনায় ওঠে। অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী এক সংসদ সদস্যের প্রশ্নের লিখিত উত্তরে জানান, অনলাইন জুয়া, হুন্ডিসহ অপরাধমূলক বিভিন্ন কারণে দেশ থেকে মুদ্রা (টাকা) পাচার হচ্ছে।
অনলাইন জুয়া বন্ধে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তেমন কোনো উদ্যোগ দৃশ্যমান নয়। বেটিং প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন টেলিভিশনে দেখানো হলেও সেসব যেন চোখে পড়ছে না সরকারের সংশ্লিষ্ট সব বিভাগের। এতে এক ধরনের উদাসীনতা যেন কাজ করছে। আগে এ অপরাধে শুধু কয়েকটি চ্যানেলকে কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে এবং জরিমানা করা হয়েছে। ফলে এক বল্গাহীন পরিস্থিতি চলছে। সব দেখে মনে হওয়া স্বাভাবিক যে, এ নিয়ে কারো যেন কোনো দায়বদ্ধতা নেই। বাস্তবতা হলো- এই পরিস্থিতি কোনোভাবে চলতে দেয়া যায় না।
অনলাইন জুয়ার বিজ্ঞাপনের সুদূরপ্রসারী ক্ষতিকর প্রভাব রয়েছে। দেশে এর বিস্তার থামাতে না পারলে খেলোয়াড়দের মনোজগতেও এটি কালো ছায়া ফেলতে পারে, যা তাদের উসকে দিতে পারে ম্যাচ গড়াপেটার প্রলোভনের দিকে। এ ছাড়া দেশের কিশোর তরুণ প্রজন্ম খেলাধুলার চেয়ে বেটিংয়ের দিকে বেশি ঝুঁকে যেতে পারে। সময় থাকতে অনলাইন জুয়ার বিস্তার রোধ করতে না পারলে দেশের অপূরণীয় ক্ষতি হবে, এটি নিশ্চিত করে বলা যায়।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

অনলাইন জুয়ার বিজ্ঞাপন প্রচার; বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিন

আপলোড টাইম : ০৯:৩১:৪২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১২ মে ২০২৪

বাংলাদেশের সংবিধানের ১৮ অনুচ্ছেদে জুয়া খেলা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এর পরও দেশের নানা প্রান্তে জুয়া খেলা লুকিয়ে চলছে। এখন রূপ নিয়েছে ডিজিটাল সংস্করণ ‘অনলাইন বেটিং’য়ে। এর সামাজিক প্রভাব ‘অ্যানালগ জুয়ার’ মতো নেতিবাচক। সারোগেট বা ছদ্মবেশী বিজ্ঞাপনে প্রলুব্ধ হয়ে অনলাইন জুয়ায় জড়িয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বিপুলসংখ্যক মানুষ। দেশে জুয়া খেলা আগে ক্লাব বা ঘরের মধ্যে সীমিত ছিল। গত কয়েক বছরে ডিজিটাল মাধ্যম এবং খেলার সময় টেলিভিশনে জুয়া খেলার বিজ্ঞাপন প্রচারিত হওয়ায় সমাজে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে। এতে কিশোর-তরুণদের জুয়ার মতো ভয়ঙ্কর সামাজিক ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
অনেক দেশে বেটিং বৈধ হলেও বাংলাদেশের আইনে যেকোনো ধরনের জুয়া ও বাজি ধরা নিষিদ্ধ। নিষিদ্ধ এসবের প্রচারণাও। তবু দেশের টেলিভিশন চ্যানেল, ওয়েবসাইট, ইউটিউব চ্যানেল এবং ওটিটি প্ল্যাটফর্মে বেটিং সাইটের বিজ্ঞাপন আসে, তা আসে ভিন্ন উপস্থাপনায় বা ছদ্মবেশ ও চাতুরীর মাধ্যমে। আসলে খেলার মাঝে বেটিং সাইটের সারোগেট বিজ্ঞাপন দেখানোর উদ্দেশ্য মূলত দর্শকদের জুয়ার প্রলোভনে ফেলা।
অবস্থা এমন যে, টেলিভিশনে খেলা দেখা যেন এখন আর শুধু খেলা দেখা নয়, সাথে বাজি ধরার চটকদার বিজ্ঞাপন দেখাও! চাইলে খেলা দেখতে দেখতে যে কেউ একটা ম্যাচ বা ম্যাচের কোনো অংশ নিয়ে বাজি ধরতে পারেন। মানে জুয়া বা বেটিং। আদালতের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও খেলার মধ্যে দেখানো হচ্ছে বেটিং-সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ছদ্মবেশী বিজ্ঞাপন। আইনি ঝামেলা এড়াতে বিজ্ঞাপনগুলোতে শুধু বানানে বা ওয়েবসাইট ঠিকানায় দু-একটি অক্ষরের তারতম্য রেখে দেয়া হয়। যাতে সমস্যায় পড়লে অজুহাত দেয়া যায়, এটা বেটিং ওয়েবসাইটের বিজ্ঞাপন নয়। কখনো মূল বেটিং সাইটের নামের সাথে ‘নিউজ’ কথাটা জুড়ে দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা হয়, এটি আসলে একটা সংবাদ ওয়েবসাইটের বিজ্ঞাপন।
কৌতূহলোদ্দীপক হলো- সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের সাথে এসব বেটিং সাইটের চলে লুকোচুরি খেলা। একটা বন্ধ করা হয়; আরো কয়েকটা চলে আসে। এভাবে অনলাইন বেটিং সমাজে ছড়িয়ে পড়ছে মাদকের নেশার মতো। গ্রাম্য বাজার থেকে শুরু করে শহরের পাড়া-মহল্লার চায়ের দোকান, সর্বত্র চলছে অনলাইন বেটিংয়ের চর্চা। অনেকে অনলাইন বেটিংয়ে আসক্ত হয়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছেন। এ নিয়ে পারিবারিক অশান্তি, মারামারি, এমনকি খুনখারাবির ঘটনা ঘটছে।
অনলাইনে জুয়ার বিস্তার নিয়ে গত বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। জুয়ার কারণে নানা সামাজিক সমস্যার কথা উল্লেখ করে সংস্থাটি বলেছে, অনলাইন জুয়ার মাধ্যমে বিপুল অঙ্কের টাকা পাচার হয়। বিষয়টি একই দিন জাতীয় সংসদের আলোচনায় ওঠে। অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী এক সংসদ সদস্যের প্রশ্নের লিখিত উত্তরে জানান, অনলাইন জুয়া, হুন্ডিসহ অপরাধমূলক বিভিন্ন কারণে দেশ থেকে মুদ্রা (টাকা) পাচার হচ্ছে।
অনলাইন জুয়া বন্ধে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তেমন কোনো উদ্যোগ দৃশ্যমান নয়। বেটিং প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন টেলিভিশনে দেখানো হলেও সেসব যেন চোখে পড়ছে না সরকারের সংশ্লিষ্ট সব বিভাগের। এতে এক ধরনের উদাসীনতা যেন কাজ করছে। আগে এ অপরাধে শুধু কয়েকটি চ্যানেলকে কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে এবং জরিমানা করা হয়েছে। ফলে এক বল্গাহীন পরিস্থিতি চলছে। সব দেখে মনে হওয়া স্বাভাবিক যে, এ নিয়ে কারো যেন কোনো দায়বদ্ধতা নেই। বাস্তবতা হলো- এই পরিস্থিতি কোনোভাবে চলতে দেয়া যায় না।
অনলাইন জুয়ার বিজ্ঞাপনের সুদূরপ্রসারী ক্ষতিকর প্রভাব রয়েছে। দেশে এর বিস্তার থামাতে না পারলে খেলোয়াড়দের মনোজগতেও এটি কালো ছায়া ফেলতে পারে, যা তাদের উসকে দিতে পারে ম্যাচ গড়াপেটার প্রলোভনের দিকে। এ ছাড়া দেশের কিশোর তরুণ প্রজন্ম খেলাধুলার চেয়ে বেটিংয়ের দিকে বেশি ঝুঁকে যেতে পারে। সময় থাকতে অনলাইন জুয়ার বিস্তার রোধ করতে না পারলে দেশের অপূরণীয় ক্ষতি হবে, এটি নিশ্চিত করে বলা যায়।