আসিফ কাজল, ঝিনাইদহ:
ঝিনাইদহে সরকারি উন্নয়ন কার্যক্রম অনেকটা থেমে গেছে। আগের মতো সরকারি অফিসগুলোতে কোলাহলমুখর পরিবেশ নেই। জেলার বিভিন্ন দপ্তরে অতিরিক্ত বা বিশেষ বরাদ্দ না থাকায় নতুন প্রকল্প গ্রহণ সম্ভব হচ্ছে না। অর্থ বরাদ্দের ঘাটতি ও প্রশাসনিক জটিলতায় জনদুর্ভোগ চরমে উঠেছে। এর প্রভাব পড়েছে জেলার অর্থনীতি, স্বাস্থ্যসেবা থেকে শুরু করে অবকাঠামো উন্নয়নে। এলজিইডি, গণপূর্ত বিভাগ, পানি উন্নয়ন বোর্ড, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর, হেলথ ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ ও জেলা পরিষদসহ সরকারি অপ্রতুল বরাদ্দ আসলেও মন্ত্রণালয়ের দীর্ঘসূত্রিতার কারণে রাস্তাঘাট মেরামতে বিলম্ব হচ্ছে। ফলে কোথাও রাস্তায় বড় বড় গর্ত, কোথাও কালভার্ট ভেঙে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে। শহর ও গ্রামীণ সড়কে চলাচল করতে মানুষ নাজেহাল হচ্ছেন।
পৌরসভাগুলোর অবস্থাও শোচনীয়। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, ড্রেনেজ ব্যবস্থা ও রাস্তা সংস্কার সব কিছুতেই অবহেলা ও স্থবিরতা স্পষ্ট। স্থানীয়ভাবে কর আদায়ও কমে গেছে, ফলে পৌর সেবা কার্যক্রমেও দেখা দিয়েছে স্থবিরতা। জনপ্রতিনিধিরা বলছেন, উন্নয়ন প্রকল্প না থাকায় বাজারে টাকার রোলিং কমে গেছে। স্থানীয় ঠিকাদার, শ্রমিক ও ব্যবসায়ীরা কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। ছোট বড় প্রকল্পের কাজ না থাকায় নির্মাণসামগ্রীর দোকানগুলোতেও মন্দা বিরাজ করছে। ঠিকাদারদের ভাষ্য, “বছরের পর বছর ধরে কোনো নতুন কাজ নেই। শ্রমিকেরা বেকার হয়ে যাচ্ছে, ব্যবসাও ধসে পড়ছে।
এদিকে অর্থ সংকটের প্রভাব পড়েছে ঝিনাইদহ স্বাস্থ্য খাতে। জেলা সদর হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে ওষুধের সংকট দেখা দিচ্ছে। অনেক রোগী প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পাচ্ছেন না। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, বরাদ্দ কমে যাওয়ায় ওষুধ সরবরাহ ব্যহত হচ্ছে।
জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাড. এম এ মজিদ বলেন, এক বছরেরও বেশি সময় নির্বাচন না হওয়ায় স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলো কার্যত নেতৃত্বশূন্য অবস্থায় পড়েছে। প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে ধীরগতি ও দ্বিধা দেখা দিয়েছে। নতুন সরকার আসলে এসব সমস্যা মিটে যেতে পারে। সনাকের সাবেক সভাপতি সাইয়েদুল আলম জানান, উন্নয়ন বন্ধ মানে জীবন থেমে যাওয়া। রাস্তা খারাপ, হাসপাতাল ওষুধ নেই, পৌর এলাকার রাস্তা ও ড্রেনকালভার্ট নষ্ট। সব মিলিয়ে যেন এক অবহেলিত জেলা।
ঝিনাইদহ পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী কামাল উদ্দীন জানান, রাজনৈতিক সরকারের আমলের মতো বেশি প্রজেক্ট নেই। তবে এডিপি বরাদ্দ আগের চেয়ে বেশি এসেছে। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় এবার এক কোটি ৭৯ লাখ টাকা পাওয়া গেছে। এছাড়া এনসিপি নেতা তারেক রেজা মন্ত্রণালয়ে তদবির করে এক কোটি ৭০ লাখ টাকার বরাদ্দ নিয়ে এসেছেন। এছাড়া কোভিড ১৯ ও আরইউটিডিপি নামে দুইটি প্রজেক্ট চলছে।
ঝিনাইদহ সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী হাফিজুর রহমান জানান, গত তিন বছর ধরে নতুন কোনো প্রজেক্ট নেই। তবে ভাঙাচোরা রাস্তা মেরামতের জন্য বরাদ্দ পাওয়া যাচ্ছে। তিনি বলেন, নতুন নতুন প্রজেক্ট না থাকায় জেলার প্রায় সাড়ে চার’শ কিলোমিটার রাস্তা ভালো রাখা অসম্ভব হয়ে পড়ছে। ঝিনাইদহবাসীর জন্য সুখবর যে, শহরের মধ্যে টার্মিনাল থেকে হামদহ ভায়া আরাপপুর রাস্তা উন্নয়নে ৪০ কোটি টাকার বরাদ্দ পাওয়া গেছে। এরমধ্যে ১৬ কোটি টাকা ঢালাই রাস্তা ও ২৪ কোটি টাকা রাস্তা চওড়া করার জন্য বরাদ্দ পাওয়া গেছে।
ঝিনাইদহ অফিস