শনিবার, ১ নভেম্বর, ২০২৫
সর্বশেষ স্থানীয় সংবাদ জাতীয় রাজনীতি আর্ন্তজাতিক সারাদেশ অর্থনীতি খেলা বিনোদন ফ্যাক্টচেক আজকের পত্রিকা প্রযুক্তি চাকরি

গণভোট ঘিরে উত্তাল রাজনীতি

  • আপলোড তারিখঃ ৩১-১০-২০২৫ ইং
গণভোট ঘিরে উত্তাল রাজনীতি

নয়া সংকটে দেশ। জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশের সুপারিশ ঘিরে এই সংকট তৈরি হয়েছে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশন যে সুপারিশ দিয়েছে তাতে বিএনপিসহ অনেক দল ক্ষুব্ধ। কমিশনের বিরুদ্ধে বিশ্বাস ভঙ্গ, প্রতারণা ও এখতিয়ারবহির্ভূত পদক্ষেপ নেয়ার অভিযোগ করেছে এসব দল। কমিশনের সুপারিশ প্রকাশের পর রাজনীতির পুরনো বিভক্তি নতুন করে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। খোদ জুলাই সনদ নিয়েই এখন ‘হ্যাঁ’ এবং ‘না’-এর বন্যা বইছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। বিএনপি সুপারিশের সংশোধনী দাবি জানিয়েছে। অন্যদিকে জামায়াত দ্রুত সনদ বাস্তবায়নের দাবি তুলেছে। জাতীয় নাগরিক পার্টি এখনো সনদে সই না করলেও তারা সরকারের পদক্ষেপে খুশি। এমন অবস্থায় জাতীয় ঐক্যের পরিবর্তে নতুন বিভক্তি তৈরি হয়েছে। যা সম্ভাব্য নির্বাচন আয়োজনকে জটিল অবস্থায় ফেলে দিতে পারে। ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশ নির্বাচন নিয়ে তৈরি অনিশ্চয়তাকে আরও গভীর করে তুলেছে। ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নিয়েছিল নানা চ্যালেঞ্জ সামনে রেখে। এই সরকারের প্রতি মানুষের আকাশচুম্বী প্রত্যাশা তৈরি হয়েছিল। যা দিনে দিনে চুপসে যায়। ব্যবসা, বিনিয়োগ, আইনশৃঙ্খলা, কর্মসংস্থান, উন্নয়ন সব সূচক এখন নিম্নমুখী। প্রশাসনে চরম বিশৃঙ্খলা। অনিয়ম আর দুর্নীতির লাগাম টানা যায়নি। সেবাখাত বিপর্যস্ত। এ অবস্থায় সাধারণ মানুষ হতাশ ও ক্ষুব্ধ। মানুষ এখন একটি নির্বাচনের জন্য মুখিয়ে আছে। নির্বাচিত সরকার দায়িত্ব নিলে পরিস্থিতি বদলাবে এমনটা আশা করছেন অনেকে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারও আসছে মধ্য ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের লক্ষ্য স্থির করার ঘোষণা দিয়ে রেখেছে। সেই অনুযায়ী নির্বাচন কমিশনও প্রস্তুতি নিচ্ছে। কিন্তু সরকার এবং ঐকমত্য কমিশনের সাম্প্রতিক অবস্থান নির্বাচন নিয়ে ফের অনিশ্চয়তার আবহ তৈরি করেছে। রাজনৈতিক এই জটিল পরিস্থিতিতে সামনে কি হবে কেউ তা বলতে পারছেন না।


অনেকে বলছেন, অভ্যুত্থান পরবর্তী পরিস্থিতিতে জামায়াতের উচ্চাকাক্সক্ষা পরিস্থিতিকে ক্রমে ঘোলাটে করছে। পিআর দাবি নিয়ে শুরুতে সরব জামায়াত এখন নির্বাচনের আগে গণভোট দাবিতে অনড়। দলটির এই দাবির সঙ্গে সমমনা কয়েকটি দলও আছে। ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশ জমা দেয়ার পর এই গণভোট ইস্যুতে নতুন বিতর্ক তৈরি হয়েছে। এখন বলা হচ্ছে যদিও ভোটের আগে গণভোট হয় এবং বিএনপি এতে অংশ না নেয়, তাহলে পরিস্থিতি কি দাঁড়াবে। আর নির্বাচনে যদি ‘না’ ভোট জয়যুক্ত হয় তখন সরকার ও কমিশন কি করবে। প্রধান উপদেষ্টা বারবারই বলে আসছেন তিনি জাতিকে একটি উৎসবমুখর নির্বাচন উপহার দিতে চান। কিন্তু সরকার এবং কমিশন যে পরিস্থিতি তৈরি করছে এতে প্রধান উপদেষ্টার এই প্রতিশ্রুতি পূরণও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে।


ওদিকে জুলাই সনদ এর আইনি ভিত্তি  ও এর বাস্তবায়নে সরকার এবং কমিশনের কৌশল নিয়েও নানা প্রশ্ন উঠেছে। এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক বলেন, ৪৮ দফা প্রস্তাবকে সংবিধানে তফসিল হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করা হয়েছে, সেটা করা হলে আইনি জটিলতা হতে পারে এবং এগুলো সবই সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এভাবে গণভোট হয় না, গণভোটের প্রক্রিয়া হচ্ছে আগে সংসদে পাস হয়ে জনগণের কাছে যেতে পারে গণভোটের জন্য। কিন্তু এখন উল্টো হয়েছে আগে গণভোট তারপর সংসদে যাবে। তিনি আরও বলেন, কমিশনের দেয়া সুপারিশে বলা হয়েছে নির্বাচিত সংসদ ২৭০ দিবস বা নয় মাসের মধ্যে সংস্কারের প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়ন করতে না পারলে তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংবিধানে সেগুলো যুক্ত হবে, তাহলে আলোচনার যৌক্তিকতা কি? কোনো সংসদকে কোনো কিছু করতে বাধ্য করা যায় না এগুলো আইনের মূল কথা। গণভোট দেয়ার ক্ষমতা তাদেরকে কে দিয়েছে? তারা তো নির্বাচিত নন। এছাড়া সংসদের উচ্চকক্ষ গঠন এবং প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ সুনির্দিষ্ট করাসহ সংবিধান সংস্কারের যে বিষয়গুলো আনা হয়েছে, সেগুলো বর্তমান সংবিধানে নেই। ফলে সেগুলো তফসিল হিসেবে যুক্ত করা হলে বর্তমান সংবিধান বাদ দিতে হবে। 


তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী বা মন্ত্রিসভার সদস্যদের শপথবাক্য হুবহু তফসিল হিসেবে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত থাকে। কিন্তু এর বাইরে সংস্কারের কোনো বিষয় তফসিল হিসেবে যুক্ত করা হলে সে সম্পর্কে সংবিধানের পুরনো বিধানও বহাল থেকে যায়। সেখানেই সংঘর্ষিক হওয়ার প্রশ্ন উঠবে।  প্রশ্ন থাকলেও জুলাই সনদ কার্যকর করতে আজ-কালের মধ্যেই আদেশ জারির দাবি জানিয়েছে জামায়াত। এনসিপি আদেশ জারির উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে। যদিও দলটির এক নেতা দেশে গৃহযুদ্ধের আলামত দেখছেন। এনসিপি’র মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দিন পাটোয়ারী গতকাল এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, ফেব্রুয়ারির মধ্যে দেশে নির্বাচন না হলে যদি গৃহযুদ্ধের পরিস্থিতি হয় এর দায় প্রধান উপদেষ্টাকে নিতে হবে। গতকাল আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট অযৌক্তিক ও অগ্রহণযোগ্য। নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, সরকার এখন প্রতারকের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়েছে। এবি পার্টির চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান মঞ্জু বলেছেন, ঐকমত্য প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থ হলে অন্তবর্তীকালীন সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। গণসংহতি আন্দোলন এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশ জুলাই সনদ বাস্তবায়নকে অনিশ্চয়তায় ফেলে দিয়েছে। 


এদিকে, গণভোট কবে হবে, সে বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা দ্রুতই সিদ্ধান্ত দেবেন বলে জানিয়েছেন আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল। তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো যদি এককভাবে তাদের অবস্থান নেয়ার জন্য সরকারকে জোর করে, তার মানে হচ্ছে তাদের মধ্যে ঐকমত্য নাই। তারা চাচ্ছে, সরকার যেন তাদের দলীয় অবস্থান নেয়। গতকাল উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক শেষে বিকেলে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। এ সময় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম উপস্থিত ছিলেন। গণভোট কবে হবে, তা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিরোধ তীব্রতম পর্যায়ে পৌঁছে গেছে বলে মন্তব্য করেন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। বলেন, সিদ্ধান্ত নেবেন প্রধান উপদেষ্টা। প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে আমরা থাকবো। আমরা সহায়তা করার জন্য থাকবো। সিদ্ধান্ত এটা কোনো পার্টিকুলার কেউ নেবেন না, এটা আপনারা নিশ্চিত থাকেন। এই সিদ্ধান্ত প্রধান উপদেষ্টা নেবেন। দ্রুতই সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।


সনদ বাস্তবায়নে কমিশনের সুপারিশ অগ্রহণযোগ্য: বিএনপি
জুলাই সনদ বাস্তবায়নে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন সরকারের কাছে যে সুপারিশ দিয়েছে তা ‘অযৌক্তিক’ ও অগ্রহণযোগ্য বলে মন্তব্য করেছে বিএনপি। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে গণভোট অপ্রয়োজনীয় এবং অবিবেচনাপ্রসূত বলে মনে করছে দলটি। একই আয়োজনে এবং একই ব্যয়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনই গণভোট অনুষ্ঠান করা বাঞ্ছনীয় বলেও মনে করছে তারা। গতকাল গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় স্থায়ী কমিটির পক্ষে বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আনুষ্ঠানিকভাবে দলের এই অবস্থানের কথা তুলে ধরেন। বুধবার রাতে গুলশানে জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠক হয়। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডন থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে এই বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। এই বৈঠকের পর স্থায়ী কমিটির সদস্যরা সংবাদ সম্মেলন  করেন।
এদিকে, শুক্রবারের মধ্যেই জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারির দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকালে মগবাজারে আল-ফালাহ্ মিলনায়তনে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানায়। সংবাদ সম্মেলনে জামায়াতের নায়েবে আমীর ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, জামায়াত রাষ্ট্র সংস্কারে দেয়া ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবগুলোর পূর্ণ বাস্তবায়ন চায়। সে জন্য সময়ক্ষেপণ না করে সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারি করতে হবে। সরকার চাইলে আজ রাতের (বৃহস্পতিবার) মধ্যেও সেটি করতে পারে। দেরি হলে সরকার জনগণের আস্থা হারাবে। 


জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেছেন, ফেব্রুয়ারির মধ্যে জাতীয় নির্বাচন দিন। আপনারা যদি ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচন দিতে না পারেন, তাহলে পরবর্তী সময় গৃহযুদ্ধের পরিস্থিতি হলে তার দায় প্রধান উপদেষ্টার। গতকাল ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে রাজনীতির বর্তমান এবং ভবিষ্যতের পথরেখা শীর্ষক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি। নাসীরুদ্দীন পাওয়ারী বলেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়নের জন্য সংস্কার কমিশন সুপারিশমালা দিয়েছে। ড. ইউনূসের কোর্টে এখন বল, যেহেতু তিনি আন্তর্জাতিক মানের খেলোয়াড়। বলা হয় যে, বিদেশি খেলোয়াড়রা বাংলাদেশে খেলতে এলে পিছলে যায়, কারণ মাঠ পিছলা। কিন্তু এই পিছলা মাঠে আমাদের আইন উপদেষ্টা আরও বেশি তেলমর্দন করেন। তিনি রাজনীতিবিদদের শুধু পিছলা খাওয়াতে চান। আপনারা সুপারিশমালার ড্রাফট জনসম্মুখে আনুন, তখনই এনসিপি এতে স্বাক্ষর করবে। তিনি বলেন, দেশ অন্য পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছে। ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচন দিন। যদি ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচন না দিতে পারেন তাহলে পরে যদি কোনো গৃহযুদ্ধের পরিস্থিতি হয় সেই দায়িত্ব আপনার (প্রধান উপদেষ্টা) কাঁধে বর্তাবে। গণভোট প্রশ্নে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিএনপি’র ‘না’ সূচক প্রচারণার পরিপ্রেক্ষিতে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, বিএনপি অনলাইনে ‘না’ শব্দ জারি করেছে। বিএনপির ‘না’ বলার কোনো ওয়ে নেই। তারা অলরেডি ‘হ্যাঁ’ বলে দিয়েছেন। তারা বিবাহে রাজিও হয়েছেন, কাবিননামায় সইও করেছেন। এখন তাদের না বলার কোনো অপশন নেই। বিএনপি’র ভেবেচিন্তে জুলাই সনদে সই করা উচিত ছিল।



কমেন্ট বক্স
notebook

চুয়াডাঙ্গার গাইদঘাটে কৃতি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত