সময় কেবলই এগিয়ে চলে, কিন্তু কিছু মানুষ সময়ের সীমানা পেরিয়ে চিরস্থায়ী হয়ে ওঠেন তাঁদের কর্মে, প্রজ্ঞায় ও মানবিকতায়। ঝিনাইদহ-২ আসনের কিংবদন্তি নেতা, উন্নয়নের রূপকার মসিউর রহমান ছিলেন এমনই এক ক্ষণজন্মা পুরুষ। তিনি রাজনীতিকে ক্ষমতার সিঁড়ি নয়, মানুষের কল্যাণের মঞ্চে নিয়ে গিয়েছিলেন। স্বাধীনতার পর ঝিনাইদহে উন্নয়নের যে ভিত গড়ে ওঠে, তার প্রতিটি ইট-পাথরের পেছনে মসিউর রহমানের পরিশ্রম, স্বপ্ন আর দূরদর্শিতা লুকিয়ে আছে। একটি জেলা শহরের সীমাবদ্ধতা পেরিয়ে তিনি গড়ে তুলেছিলেন সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত।
তাঁর হাত ধরে স্থাপিত হয়েছিল অসংখ্য প্রতিষ্ঠান। ছাগল ফার্ম, রেশম গবেষণা কেন্দ্র, নার্সিং ইনস্টিটিউট, আইএইচটি, ম্যাটস, যুব উন্নয়ন কেন্দ্র, মৃত্তিকা গবেষণা কেন্দ্র, কৃষি ইনস্টিটিউট, বাইপাস সড়ক, অসংখ্য বেসরকারি কলেজ, স্যালাইন ফ্যাক্টরি, টিটিসি, ভেটেরিনারি কলেজসহ বহু উন্নয়ন প্রকল্প মসিউর রহমানের কর্মনিষ্ঠা ও দায়বদ্ধতার নিঃশব্দ সাক্ষ্য বহন করছে। তিনি ছিলেন একজন সাহসী সংসদ সদস্য, যার বক্তৃতা সংসদে ঝড় তুলত, আর নেতৃত্বে ঐক্য পেত তাঁর প্রিয় দল বিএনপি। কিন্তু দলীয় রাজনীতির বাইরে তিনি সকলের নেতা হওয়ার চেষ্টা করতেন।
তাঁর উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে প্রাণ ফিরে পেয়েছিল হরিণাকুন্ডু ও ঝিনাইদহের প্রতিটি গ্রাম, প্রতিটি মানুষ। সংসদের মঞ্চে তার গর্জন, তার যুক্তি, তার সাহস বিএনপিকে একসূত্রে গেঁথেছিল। কিন্তু দলের সীমারেখা পেরিয়ে তিনি হয়ে উঠেছিলে মানুষের নেতা। উন্নয়ন তার ভাষা ছিল, আর মানুষের কল্যাণই ছিল তার মানবধর্ম। ২০২২ সালের পহেলা নভেম্বর, তিনি চিরবিদায় নিলেও তাঁর রেখে যাওয়া উন্নয়ন আজও বেঁচে আছে প্রতিটি সড়কে, প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে, প্রতিটি মানুষের অন্তরে। বাংলাদেশ টেলিভিশনের (বিটিভি) সাংবাদিক হিসেবে তাঁর সঙ্গে কাটানো মুহূর্তগুলো আজ কেবল স্মৃতিতে বেঁচে থাকা এক আলোকিত অধ্যায়।
মসিউর রহমান একজন সংসদ সদস্য নন, তিনি ছিলেন একজন স্বপ্নদ্রষ্টা, যিনি প্রমাণ করে গেছেন যে, ইচ্ছা আর নিষ্ঠা থাকলে ছোট একটি জেলা থেকেও পরিবর্তনের আলো জ্বালানো সম্ভব। তাঁকে হারানো মানে শুধু একজন রাজনীতিককে হারানো নয়, হারানো মানে এক প্রেরণার উৎস, এক দিকনির্দেশক মানুষকে হারানো। তবুও তাঁর কাজ, তাঁর সৃষ্টিগুলো, আর মানুষের ভালোবাসা তাঁকে অমর করে রেখেছে ঝিনাইদহের প্রতিটি হৃদয়ে। শ্রদ্ধাঞ্জলি রইল উন্নয়নের রূপকার, কিংবদন্তি নেতা মসিউর রহমানের প্রতি। তাঁর স্বপ্নের পথেই এগিয়ে যাক ঝিনাইদহ, আলোকিত হোক বাংলাদেশ।
ঝিনাইদহ অফিস