শনিবার, ১ নভেম্বর, ২০২৫
সর্বশেষ স্থানীয় সংবাদ জাতীয় রাজনীতি আর্ন্তজাতিক সারাদেশ অর্থনীতি খেলা বিনোদন ফ্যাক্টচেক আজকের পত্রিকা প্রযুক্তি চাকরি

ঝিনাইদহে ব্যবসা-বাণিজ্যে ধস, দোকান খোলা থাকলেও ক্রেতা নেই

টিকে থাকার সংগ্রামে দুই লাখ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান
  • আপলোড তারিখঃ ২৭-১০-২০২৫ ইং
ঝিনাইদহে ব্যবসা-বাণিজ্যে ধস, দোকান খোলা থাকলেও ক্রেতা নেই

আসিফ কাজল, ঝিনাইদহ:
ঝিনাইদহ জেলায় ব্যবসা-বাণিজ্যে ধস নেমেছে। অভূতপূর্ব মন্দায় থেমে গেছে ব্যবসার ছন্দপতন। এ অবস্থায় ঝিনাইদহ জেলার প্রায় দুই লাখ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এখন টিকে থাকার লড়াই করছে। দোকান খোলা থাকলেও ক্রেতা নেই, নেই কেনাবেচা। ফলে অনেকে বাধ্য হচ্ছেন পুঁজি ভেঙে সংসার চালাতে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ফ্যাসিস্ট সরকার পতনের পর থেকে ব্যবসায় চলছে ভাটার টান। জেলাজুড়ে প্রায় দুই লাখ ছোট-বড় ও মাঝারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থাকলেও একমাত্র ওষুধ ও চালের দোকান ছাড়া বেচাকেনা নেই।


ঝিনাইদহ শহরের কেপি বসু সড়কের ‘এস. স্টাইল’ পোশাকের দোকানের মালিক নয়ন খন্দকার বলেন, ‘আগে দিনে ২০ হাজার টাকার বেচাকেনা হতো, এখন হয় মাত্র ৫-৬ হাজার টাকা। এই টাকায় ভাড়া, বিদ্যুৎ বিল, কর্মচারীর বেতন দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।’ গিফট কর্নারের মালিক প্রশান্ত কুমার জয়দ্দার জানান, ‘আগে ৩০ হাজার টাকার বেচাকেনা হতো, এখন ১৮ থেকে ২০ হাজার টাকায় নেমে এসেছে। মানুষ বাজারে আসে না, কেনাকাটার আগ্রহও কম।’


একই চিত্র ঝিনাইদহ শহরের হুমায়ুন কবীর হুমার সিট হাউজ, বিধানচন্দ্রের আমাদের দোকান এবং মফিজ গার্মেন্টসের মতো পুরনো প্রতিষ্ঠিত ব্যবসাগুলোতেও। তাদের দাবি, শহরে ক্রেতা না আসার অন্যতম কারণ হলো রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা। তাদের ভাষ্য, নির্দিষ্ট একটি দলের নেতা-কর্মীরা পলাতক। যারা সাধারণত কেনাকাটা করতেন, তাদের অনেকেই এখন বাজারে আসেন না। ফলে বাজারে টাকার চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।


ঝিনাইদহ জেলা দোকান মালিক সমিতির সভাপতি আনোয়ারুল ইসলাম বাদশা বলেন, ‘মানুষের হাতে টাকা নেই। দেশের টাকা পাচার হয়ে গেছে। নির্দিষ্ট শ্রেণির মানুষের হাতে টাকাগুলো বন্দি। ফলে বাজারে টাকার হাতবদল হচ্ছে না, ব্যবসা থমকে গেছে।’ তার মতে, এই আর্থিক স্থবিরতা কেবল ক্ষুদ্র ব্যবসা নয়, পুরো জেলার অর্থনৈতিক কার্যক্রমকে ঝুঁকিতে ফেলেছে। অনেক ছোট দোকান ইতোমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে, বাকিরা টিকে থাকার সংগ্রামে আছেন।


ঝিনাইদহ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, তাদের সংগঠনে ৮০০ সদস্য আছে, কিন্তু কারো ব্যবসা ভালো যাচ্ছে না। দেশে নির্বাচিত সরকার না থাকায় বিনিয়োগের পরিবেশ অনিশ্চিত। মানুষ টাকা ইনভেস্ট করতে ভয় পাচ্ছেন। তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে উন্নয়নমূলক কাজ প্রায় বন্ধ। ফলে টাকার ব্যবহার ও হাতবদল হচ্ছে না। ব্যাংকের ইন্টারেস্ট রেটও খুব বেশি। এক লাখ টাকায় ১৪% সুদ দিতে হচ্ছে। এতে ব্যবসা টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে। স্থিতিশীল পরিবেশ না থাকলে ব্যবসা চলবে না। ব্যাংকের ঋণের বোঝা, উচ্চ সুদের চাপ আর ক্রেতা সংকট- সব মিলিয়ে ব্যবসায়ীরা পথে বসছেন।’
সূতা ব্যবসায়ী আরিফ বিল্লাহ জানান, বর্তমানে বাজারে এক ধরনের আতঙ্ক বিরাজ করছে। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, প্রশাসনিক স্থবিরতা ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তায় ব্যবসায়ীরা নতুন করে পুঁজি বিনিয়োগ করতে সাহস পাচ্ছেন না। অনেকে দোকান চালাতে বাধ্য হচ্ছেন আগের সঞ্চয় বা ঋণের ওপর নির্ভর করে।
স্থানীয় অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, ঝিনাইদহের বর্তমান পরিস্থিতি দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক মন্দার প্রতিফলন। তারা বলছেন, বাজারে টাকার প্রবাহ না থাকলে কর্মসংস্থান ও আয় কমে, ফলে ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে। এভাবে অর্থনৈতিক স্থবিরতা এক দুষ্টচক্রে পরিণত হচ্ছে। তাদের মতে, মন্দা কাটিয়ে উঠতে জরুরি ভিত্তিতে স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ, ব্যবসাবান্ধব নীতি ও স্বল্পসুদে ঋণ সুবিধা প্রয়োজন।



কমেন্ট বক্স
notebook

চুয়াডাঙ্গার গাইদঘাটে কৃতি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত