পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধের উত্তেজনা প্রশমিত হলেও মেহেরপুর সীমান্তে বাড়তি সতর্কতা জারি রেখেছে দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী। ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) সীমান্ত এলাকায় চলাচল ও কৃষিকাজে সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছে। একইভাবে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি) সন্ধ্যার পর সীমান্ত এলাকায় চলাচল সীমিত রাখতে নির্দেশনা দিয়েছে এবং টহল জোরদার করেছে। এতে সীমান্ত এলাকার মানুষের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
সরেজমিনে সীমান্ত এলাকার কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ‘নো ম্যান্স ল্যান্ড’ এলাকায় ভারতীয়দের বহু জমি রয়েছে, যা তারা বিভিন্ন জটিলতার কারণে নিজেরা চাষাবাদ করতে না পেরে বাংলাদেশিদের বর্গা দিয়েছেন। দীর্ঘদিন ধরে এই বর্গা প্রথায় জমি চাষ করে আসলেও বর্তমানে পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে নিরাপত্তার কারণে বিএসএফ জমিতে চাষাবাদ ব্যতীত অন্যান্য কাজে চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। সীমান্তবাসীদের মতে, সীমান্ত এলাকায় ভারতীয় অংশের কাঁটাতারের বেড়ার এপারে অন্তত ১,৫০০ থেকে ২,০০০ বিঘা জমি রয়েছে, যেগুলো বাংলাদেশি কৃষকরা বিঘা প্রতি ৮-১০ হাজার টাকা দিয়ে বর্গা নিয়ে চাষাবাদ করছেন। এই মৌসুমে অধিকাংশ জমিতে আবাদ সম্পন্ন হয়েছে, এখন কেবল ফসল ঘরে তোলার পালা। তবে সতর্কতার অংশ হিসেবে বিজিবি ও বিএসএফ উভয় পক্ষ সন্ধ্যার পর থেকে পরদিন সকাল পর্যন্ত চলাচলে সীমাবদ্ধতা আরোপ করেছে।
স্থানীয়রা জানান, মেহেরপুর জেলার মুজিবনগর, গাংনী ও সদর উপজেলা নিয়ে গঠিত প্রায় ৮৯ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সীমান্ত ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বিভিন্ন জেলার সঙ্গে সংযুক্ত। সীমান্ত এলাকায় দুই দেশের মানুষের মধ্যে রয়েছে আত্মীয়তার সম্পর্ক। সীমান্তে স্থাপিত ৭৪টি সীমান্ত গেট দিয়ে ভারতীয় কৃষকরা নিজেদের জমিতে প্রবেশ করেন, যা এখন সীমিত করা হয়েছে। বর্তমানে এসব কৃষক বিএসএফের প্রহরায় জমিতে যাচ্ছেন।
সবচেয়ে বেশি জমি রয়েছে মেহেরপুরের ইচাখালী সীমান্তে। সেখানে অন্তত ২৮-৩০ জন ভারতীয় কৃষকের প্রায় ৭৫ বিঘা জমি রয়েছে, যার বেশিরভাগই চাষাবাদ করেন বাংলাদেশের গোভিপুর এলাকার কৃষকরা। দেশভাগের সময় জমিগুলো ভারতের অংশে পড়ে গেলেও দীর্ঘদিন ধরে তা চাষাবাদ করছেন বাংলাদেশিরা। জমিগুলোর মালিকানা নিয়ে বিজিবি ও বিএসএফের মধ্যে একাধিকবার আলোচনা হলেও এখনও কোনো স্থায়ী সমাধান হয়নি।
গাংনীর সহড়াতলা গ্রামের কৃষক নুরুল হক বলেন, ‘দেশ বিভাগের পর থেকেই দুই দেশের মধ্যে সেতুবন্ধন রচিত হয়েছে। নোম্যান্স ল্যান্ডে উভয় দেশের কৃষকরাই কাজ করেন। এখনো আমরা ফসল কাটছি, তবে চলাচলে সতর্কতা আরোপ করা হয়েছে।’ একই কথা জানান রংমহল এলাকার আব্দুল জলিল। তিনি বলেন, সন্ধ্যার পর মসজিদের মাইকে চলাচলে সতর্ক থাকার অনুরোধ জানানো হয়, যার ফলে এলাকায় উদ্বেগ বিরাজ করছে।
গাংনীর তেতুঁলবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান আব্দুল ওয়াহাব বলেন, ‘পাক-ভারত যুদ্ধের প্রভাব আমাদের সীমান্তে নেই। আগের মতোই দুই দেশের কৃষক চাষাবাদ করছেন। তবে সতর্কতা হিসেবে সীমান্তরক্ষীরা সন্ধ্যার পর চলাচলে বিধিনিষেধ দিয়েছে।’ এ বিষয়ে ৪৭ বিজিবির কমান্ডিং অফিসার মাহাবুব মুর্শেদ জানান, সীমান্তে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে মাইকিং করা হয়েছে। সন্ধ্যার পর চলাচল সীমিত রাখা হয়েছে এবং টহল জোরদার করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘সীমান্তে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতেই এই সতর্কতা। তবে পাক-ভারত যুদ্ধের সরাসরি প্রভাব এই অঞ্চলে নেই।’