সোমবার, ২৩ জুন, ২০২৫
সর্বশেষ স্থানীয় সংবাদ জাতীয় রাজনীতি আর্ন্তজাতিক সারাদেশ অর্থনীতি খেলা বিনোদন ফ্যাক্টচেক আজকের পত্রিকা প্রযুক্তি চাকরি

চুয়াডাঙ্গায় চার দিন ধরে তীব্র তাপপ্রবাহ, তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি ছুঁই ছুঁই

সূর্য যেন আগুন ছুড়ছে, স্বস্তি নেই কোথাও
  • আপলোড তারিখঃ ১২-০৫-২০২৫ ইং
চুয়াডাঙ্গায় চার দিন ধরে তীব্র তাপপ্রবাহ, তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি ছুঁই ছুঁই ছবির ক্যাপশন: তীব্র তাপপ্রবাহ

চুয়াডাঙ্গায় চারদিন ধরে বইছে মাঝারি থেকে তীব্র তাপপ্রবাহ। সূর্য ওঠার পর থেকেই গরমের তীব্রতা বেড়েই চলেছে। চরম অস্বস্তিতে আছে জনজীবন। গতকাল রোববার বেলা তিনটায় জেলায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪১ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এসময় বাতাসে আর্দ্রতা ছিল ২৬ শতাংশ। এটি ছিল গতকাল সারাদেশের মধ্যে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ কমে যাওয়ায় ভ্যাপসা গরমে তীব্র গরমের প্রভাব আরও স্পষ্ট হয়ে উঠছে। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের শিশু ও ডায়রিয়া ওয়ার্ডে গরমজনিত কারণে অতিরিক্ত রোগীর ভর্তি হচ্ছেন। জেলার বিভিন্ন পশু খামারে গরমে গবাদিপশু মৃত্যুর খবরও আসছে। আবহাওয়া অফিস বলছে, বৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত মিলছে না স্বস্তি। আরও কয়েকদিন থাকতে পারে তাপপ্রবাহ।


চুয়াডাঙ্গা প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের তথ্য মতে, গত বৃহস্পতিবার (৮ মে) চুয়াডাঙ্গায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছিল ৩৯ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত শুক্রবার (৯ মে) বেলা ৩টায় জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছিল ৪১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সর্বশেষ গত শনিবার বেলা তিনটায় জেলায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এসময় বাতাসের আদ্রতা ছিল মাত্র ২৩ শতাংশ।


আবহাওয়া অধিদপ্তরের সূচক অনুযায়ী, ৩৬ থেকে ৩৭.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত মৃদু তাপপ্রবাহ ধরা হয়। ৩৮ থেকে ৩৯.৯ মাঝারি এবং ৪০ থেকে ৪১.৯ তীব্র তাপপ্রবাহের অন্তর্ভুক্ত। তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস পেরিয়ে গেলে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ হিসেবে গণ্য করা হয়। সে হিসেবে গত শনিবার চুয়াডাঙ্গায় অতি তীব্র তাপপ্রবাহ ও গতকাল রোববার তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে।


সরেজমিনে চুয়াডাঙ্গা জেলা শহর ও আশপাশের এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, গরমে মানুষের হাঁসফাঁস অবস্থা। জীবিকার তাগিদে তীব্র রোদে কাজ করতে হচ্ছে খেটে খাওয়া মানুষদের। বাইরে কাজ করা শ্রমজীবী মানুষ তীব্র রোদে কেউ ছায়া খুঁজছেন, কেউ পান করছেন ঠান্ডা শরবত। যেদিকেই চোখ যায় শুধু প্রখর সূর্যের তীব্র চোখ রাঙানি। রোদে পুড়ছে পথ-ঘাট, বাতাসে যেন ঝরছে আগুনের ফুলকি। শ্রমিক, দিনমজুর, রিকশা-ভ্যানচালকরা বিপাকে পড়েছেন। জীবিকার তাগিদে হাফিয়ে হাফিয়ে আবার মাঝে মধ্যে জিরিয়ে ভাড়া টানছেন তারা। শান্তি নেই কোথাও। গরমের কারণে মানুষের স্বাভাবিক চলাফেরাতেও নেমেছে ছন্দপতন। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের হচ্ছেন না সাধারণ মানুষ।


রিকশাচালক কাশেম আলী বলেন, ‘আমাদের বাপু শান্তি নাই। শীতে এক কষ্ট, গরমে তো আরও বেশি কষ্ট। কোনোভাবেই কাজ করতে পারছি না। কাজ হচ্চেই না তো। ভাড়া-ভুতো নেই। রাস্তা ঘাটে মানুষ-মুনিষ্যে নেই।’ আরেকজন রিকশাচালক আলিম হোসেন বলেন, ‘একটু পথ চলতেই ঘামে গোসল, গলা শুকিয়ে আসছে। বেশিক্ষণ ভাড়া টানতে পারি না। কিন্তু দিন শেষে রিকশা মালিককে জমার টাকা দিতে হবে, তাই এখনো রাস্তায় আছি। এভাবে টানা গরম পড়লে আয়-রোজগার কমে যাবে আমাদের। তাই ক্লান্ত হলেও জিরিয়ে জিরিয়ে রিকশা চালাচ্ছি।


বাসচালক খালেক আলী বলেন, ‘প্রচুর গরম। ইরে তো গরম আছেই, গাড়ির ভেতরে ইঞ্জিনের গরম। খুব কষ্ট হচ্ছে।’ বেসরকারি চাকরিজীবী সাহেদ জামাল বলেন, ‘চুয়াডাঙ্গার পরিস্থিতি ভালো না। এভাবে তাপমাত্রা বাড়তে থাকলে বড় ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। কৃষকদের চাষে প্রচুর সেচ লাগছে। মানুষের মধ্যে হাঁসফাঁস অবস্থা। সরকারি উদ্যোগ নেয়া উচিত। যাতে তাপমাত্রা কমে, সে জন্য কার্যকরি পদক্ষেপ নিতে হবে। নতুন নতুন জেলা প্রশাসক আসে। ফলাও করে লাখ লাখ গাছ লাগানোর ঘোষণা দেয়। কিন্তু বাস্তবায়ন হয় না। শুধু গাছ লাগানোর ঘোষণায় শুনি, গাছ লাগাতে দেখি না।’


গরমে সবজি বাজারেও স্বস্তি নেই। গরমে দ্রুত সবজি নষ্ট হওয়ায় বিক্রেতাদের হচ্ছে লোকসান। বড় বাজারের সবজি বিক্রেতা আকুল হোসেন বলেন, ‘গরমে সকালে বাজারে আনা সবজি সকাল ৯-১০টার মধ্যে শুকিয়ে যাচ্ছে। বারবার পানি মারতে হচ্ছে। তবুও বেচাবিক্রি কম। প্রতিদিন লস হচ্ছে।’ ডাব বিক্রেতা শাওন কুমার বলেন, ‘গরমে ডাবের বিক্রি বেড়েছে। তবে ১০টা থেকে ৫টা পর্যন্ত বেচাকেনা নেই বললেই চলে। সন্ধ্যার পর ভালো বিক্রি হচ্ছে। দিনে শহরে লোকজন কম।’ সরবত বিক্রেতা আবুল হোসেন বলেন, ‘বিক্রি হলে গরমেই হয়। কী আর করার। গরম পড়েছে, তাই আমাদের বেচাবিক্রি ভালো।’


চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে গত শনিবার সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, শিশু ওয়ার্ডে ২৫ শয্যার বিপরীতে গরমজনিত রোগে আক্রান্ত শিশু ভর্তি আছে ৪৯ জন। আর ডায়রিয়া ওয়ার্ডে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি আছেন শিশুসহ ৫২ জন। প্রতিদিন হাসপাতালের বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৫ শতাধিক রোগী। রোগীর চাপ থাকায় চিকিৎসা সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকরা। সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এক রোগীর স্বজন আলামিন মিয়া বলেন, ‘আম্মু গরমে অসুস্থ হয়ে গেছে। তাই হাসপাতালে নিয়ে এসছি। ডাক্তার ভর্তি রেখে। তবে ওয়ার্ডে ফাঁকা নেই। প্রচুর ভিড়। কিছু করার নেই, তারপরও চিকিৎসার জন্য থাকতে হবে। তবে সদর হাসপাতালের অবস্থা ভালো না।


আরেক রোগীর স্বজন মিকাইল ইসলাম বলেন, ‘বাচ্চার ডায়রিয়া হয়েছে। গরমের কারণে হয়েছে বলেছে ডাক্তার। তাই ভর্তি রেখেছে। তবে ডায়রিয়া ওয়ার্ডে অনেক বেশি রোগী ভর্তি।’ চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. আব্দুল কাদের বলেন, ‘চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ডায়রিয়াজনিত রোগী আঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে। আমরা বিষয়ে বিভিন্ন পরামর্শও দিচ্ছি। খাবার খাওয়ার ক্ষেত্রে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। বেশি বেশি পানি এবং স্যালাইন খেতে হবে। হাসপাতালে বর্তমানে স্যালাইন পর্যাপ্ত আছে।’


চুয়াডাঙ্গা প্রথম শ্রেণির আবহওয়া অফিসের পর্যবেক্ষক আলতাফ হোসেন বলেন, চুয়াডাঙ্গার ওপর দিয়ে কয়েকদিন ধরে মাঝারি থেকে তীব্র ও অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। গতকাল রোববার চুয়াডাঙ্গায় ৪১ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। বৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত এই তাপপ্রবাহ আরও কয়েকদিন অব্যহত থাকতে পারে।



কমেন্ট বক্স
notebook

পানি খেতে গিয়ে বিদ্যুতের ফাঁদে যুবকের মৃত্যু