চুয়াডাঙ্গায় ৪৮ ঘণ্টায় অপারেশন ডেভিল হান্টের অভিযানে ৭ জনকে গেস্খপ্তার করা হয়েছে। গত শুক্রবার ও গতকাল শনিবার চুয়াডাঙ্গা সদর, আলমডাঙ্গা ও দামুড়হুদায় পৃথক পৃথক অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
চুয়াডাঙ্গা:
চুয়াডাঙ্গা সদর থানা-পুলিশের ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ অভিযানে দুজনকে গ্রেপ্তার হয়েছে। গত শুক্রবার দিবাগত রাতে সদর উপজেলার গোপিনাথপুর ও যাদবপুর গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- সদর উপজেলার গোপিনাথপুর গ্রামের মৃত জিন্নাতের ছেলে ও পদ্মবিলা ইউনিয়নের মেম্বার ফেরদৌস (৪৬) এবং যাদবপুর গ্রামের মানিক মিয়ার ছেলে আওয়ামী লীগ কর্মী সিদ্দিক মিয়া।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শরীয়তুল্লাহর নেতৃত্বে সঙ্গীয় ফোর্স গোপিনাথপুর ও যাদবপুর এলাকায় পৃথক অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারকৃতদের গতকাল শনিবার আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।
সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) খালেদুর রহমান বলেন, ‘গ্রেপ্তারকৃত আসামিরা ভিন্ন ভিন্ন মামলার আসামি। চলমান অভিযানের অংশ হিসেবে তাদের গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।’ তিনি জানান, আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় এ ধরনের বিশেষ অভিযান অব্যাহত থাকবে। এদিকে, চুয়াডাঙ্গায় নুর আলম তরফদার নামের এক আওয়ামী লীগ কর্মীকে আটক করা হয়েছে। গতকাল শনিবার দুপুরের পর চুয়াডাঙ্গা জেলা পরিষদের সামনে থেকে তাকে আটক করা হয় বলে জানা গেছে। আটক আওয়ামী লীগের কর্মী নুর আলম তরফদার (৪৬) চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার হাটকালুগঞ্জের মৃত ঝড়ু তরফদারের ছেলে।

স্থানীয়ীরা জানায়, নুর আলম তরফদার একসময় চুয়াডাঙ্গা শ্রমিক লীগের নেতা ছিল। পরে আওয়ামী লীগের কর্মী হিসেবে কাজ শুরু করেন তিনি। পরবর্তীতে রাজ্জাক খানের পক্ষে ফ্রিজ মার্কায় ভোট করেন এই নুর আলম তরফদার। স্থানীয়রা আরও বলেন, স্থানীয় ছাত্রলীগ যুবলীগের দাপট দেখিয়ে মাদক ব্যবসাও রমরমা ছিল তার। মাস দুই আগে কেরু অ্যান্ড কোম্পানির গাড়িতে ফেনসিডিলসহ তরফদার আটক হয়েছিলেন। সম্প্রতি তার দুই কোটি টাকার মাদকের চালান ধরে পড়েছে। ৫ আগস্টের পর আওয়ামী লীগ সরকার পালিয়ে গেলে গা বাঁচিয়ে চলতে শুরু করেন নুর আলম তরফদার। অবশেষে গতকাল সদর থানা-পুলিশ তাকে আটক করেন।
আলমডাঙ্গা:
আলমডাঙ্গা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আমিরুল ইসলাম মন্টুকে (৪৫) তার নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল শনিবার রাতে অপারেশন ডেভিল হান্টের অংশ হিসেবে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

এ বিষয়ে আলমডাঙ্গা থানার ওসি মাসুদুর রহমান বলেন, আমিরুল ইসলাম মন্টুকে রাজনৈতিক মামলায় এবং অপারেশন ডেভিল হান্টের অংশ হিসেবে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে বিএনপি নেতা-কর্মীদের পথযাত্রায় হামলার অভিযোগ রয়েছে। তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।
দামুড়হুদা:
দামুড়হুদায় ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ অভিযানে দুই আওয়ামী লীগ কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে দামুড়হুদা মডেল থানা পুলিশ। গতকাল শনিবার থানাধীন পৃথক স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- দামুড়হুদার বিষ্ণুপুর গ্রামের মাদার মণ্ডলের ছেলে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মহিদুল ইসলাম ও তার ছোট ভাই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সক্রিয় সদস্য মতিয়ার রহমান। দামুড়হুদা মডেল থানার সূত্রে জানা গেছে, মারামারি মামলার আসামি হিসেবে তাদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা রয়েছে। মামলার নম্বর ১০, তারিখ ১০/০২/২৪, ধারা ১৪৩/৩২৩/৩২৪/৩২৬।
এ বিষয়ে দামুড়হুদা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হুমায়ুন কবির বলেন, ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট অভিযানে দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। রোববার (আজ) তাদেরকে বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করা হবে।’ ওসি জানান, পুলিশ জানান, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে।
দর্শনা:
দর্শনা পৌর আওয়ামী যুবলীগের সভাপতি আশরাফুল ইসলাম বাবু ওরফে নেটা বাবুকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল শনিবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে দর্শনা চটকাতলা ডাকবাংলোর সামনে থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
জানা গেছে, বাবু পরাণপুরে নিজ চানাচুর ফ্যাক্টরি থেকে মোটরসাইকেলযোগে বাড়ি ফিরছিলেন। এসময় দর্শনা ডাকবাংলোর সামনে পৌঁছালে পুলিশ তার পথরোধ করে এবং তাকে গ্রেপ্তার করে।
দর্শনা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শহীদ তিতুমীর জানান, আশরাফুল ইসলাম বাবুকে ডেভিল হান্ট অভিযানের আওতায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে কোন মামলায় তাকে আটক করা হয়েছে, সে বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হয়নি। গ্রেপ্তারের পরপরই তাকে আদালতে পাঠানো হয়েছে বলে জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।