ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু উপজেলা পোস্ট মাস্টার মনিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে গ্রাহকদের কাছ থেকে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে, তিনি কাজ সম্পাদনের জন্য গ্রাহকদের কাছ থেকে নিয়মিত ‘মিষ্টি খাওয়ার’ নামে টাকা আদায় করেন। টাকা দেওয়া না হলে ফাইলের কাজ ফেলে রাখা হয়।
উপজেলার জোড়াদহ গ্রামের বাসিন্দা আরতী রানী বিশ্বাস জানান, তিনি দীর্ঘদিন ধরে ডাক বিভাগের সঞ্চয় থেকে টাকা উত্তোলনের চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু পোস্ট মাস্টার মনিরুল ‘মিষ্টি খাওয়ার’ টাকা দেওয়ার আগে কাজ করেননি। প্রায় ছয় মাস অপেক্ষার পর অবশেষে টাকা দেওয়ার পর তিনি নিজের টাকা উত্তোলন করতে সক্ষম হন। আরও জানা যায়, শুধু তিনি নন, অনেক গ্রাহকই পোস্টমাস্টারের এই অযৌক্তিক দাবির শিকার।
পোস্টমাস্টার মনিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ রয়েছে যে, তিনি দীর্ঘদিন ধরে একই পদে থেকে বিভিন্ন অনিয়মের মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন। পোস্ট অফিসের কেনাকাটা ও সরঞ্জাম সরবরাহের ক্ষেত্রে ভুয়া বিল-ভাউচারের মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মনিরুলের এসব অনিয়মের বিষয়ে তদন্ত হলেও অজ্ঞাত কারণে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বরং অভিযোগকারী বা ভুক্তভোগীদের ওপর নানাভাবে চাপ প্রয়োগ করে হয়রানি করা হচ্ছে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে পোস্টমাস্টার মনিরুল ইসলাম স্বীকার করেন যে, ‘মিষ্টি খাওয়ার’ টাকা নেওয়া হয়েছে। তবে তিনি দাবি করেন, এই টাকা অফিসের কর্মচারীদের জন্য নেওয়া হয়েছে এবং তা ব্যক্তিগতভাবে ব্যবহার করেননি।
এ বিষয়ে ঝিনাইদহের ডাক কর্মকর্তা আনন্দ কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘কোনো সরকারি কর্মকর্তা বা কর্মচারী গ্রাহকদের সেবা দেয়ার জন্য কোনো অর্থ নিতে পারেন না। বিষয়টি তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
যশোরের ডেপুটি পোস্টমাস্টার মিরাজ হোসেন দৈনিক সময়ের সমীকরণকে বলেন, ‘পোস্টমাস্টাররা কোনোভাবেই গ্রাহকদের কাছ থেকে নগদ টাকা গ্রহণ করতে পারেন না। অভিযোগ প্রমাণিত হলে দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এদিকে স্থানীয়রা আরও অভিযোগ করেন, হরিণাকুণ্ডু পোস্ট অফিসের সেবার মান দিন দিন নিম্নমুখী হচ্ছে। পোস্টমাস্টারের দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে গ্রাহকরা সঠিক সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তারা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দ্রুত হস্তক্ষেপ ও দোষীদের শাস্তি দাবি করেছেন। তারা বলেন, সরকারি প্রতিষ্ঠানের সেবার মান উন্নত করতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কার্যকর ভূমিকা ও গ্রাহকদের হয়রানি বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে।