ইপেপার । আজশুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ইফতারে হামলা ও বাধা দেয়া কাম্য নয়

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৮:৪৫:৫৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৭ মার্চ ২০২৪
  • / ৫০ বার পড়া হয়েছে

আমাদের দেশে শত শত বছর ধরে চলে আসা ধর্মীয় বিধান এবং ঐতিহ্যে পরিণত হওয়া ইফতার আয়োজনে হামলা ও প- করে দেয়ার মতো ঘটনা প্রথমবারের মতো এবারের রোজায় ঘটেছে। এটি এক বিস্ময়কর ও অবাক করা বিষয়। রোজার আগে মন্ত্রীসভার বৈঠকে সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এবার রোজায় সরকারিভাবে কোনো ইফতারের আয়োজন করা হবে না। এর পেছনে সরকারের কৃচ্ছ্রসাধনের বিষয়টি জড়িয়ে রয়েছে। তবে বিভিন্ন সংগঠন এবং ব্যক্তি পর্যায়ে ইফতারের আয়োজনের ক্ষেত্রে কোনো বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়নি। এটা যার যার স্বাধীনমতো আয়োজন করতে পারে। দেখা গেছে, দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ও ছাত্র সংগঠন ইফতারের আয়োজন করতে গেলে তা ছাত্রলীগ হামলা করে প- করে দিয়েছে। ইতোমধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ ইফতার মাহফিল ও আলোচনা সভায় হামলা চালিয়ে প- করে দিয়েছে। এ নিয়ে ইসলামী ধারার দল এবং সাধারণ শির্ক্ষার্থী থেকে শুরু করে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। এর প্রতিবাদ যেমন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে, তেমনি বিভিন্ন ক্যাম্পাসেও চলছে। অনেকে প্রতিবাদস্বরূপ মানববন্ধন ও গণইফতারের আয়োজন করছে। দেশে সাম্প্রতিক সময়ে ইফতারির উপকরণ নিয়ে মন্ত্রীদের বিতর্কিত মন্তব্য থেকে শুরু করে নানা ধরনের বাহুল্য বক্তব্য তীব্র সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। এতে সরকারের ভাবমর্যাদা যথেষ্ট ক্ষুণ্ন হচ্ছে। ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের রাগ-ক্ষোভ গিয়ে পড়ছে সরকারের উপর। বিশেষ করে আমাদের চিরায়ত ঐতিহ্য ইফতার মাহফিল বা সমাবেশে সরকারি দলের অঙ্গসংগঠনের হামলা মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিতে অনেক বড় আঘাত হিসেবে গণ্য। সারাদিন রোজা শেষে ইফতারি খাওয়া আমাদের দেশে হাজার বছরের ঐতিহ্য। এটা শুধু ঐতিহ্যই নয়, ধর্মীয় রীতি। ইফতারের আগে রোজাদার একসাথে ইফতারি করার মধ্য দিয়ে একে অপরের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধের পরিচয় দিয়ে থাকে। এখানে পরিচিত-অপরিচিত কোনো ভেদাভেদ থাকে না। গ্রামে-গঞ্জে ইফতারের আগে সড়কের পাশের বাড়ির লোকজন রোজাদার পথিককে ইফতার করানোর জন্য সরবত, পানি, গুড়-মুড়ি কিংবা খেজুর নিয়ে অপেক্ষা করার দৃশ্য এখনও দেখা যায়। এটা আমাদের ধর্মীয় আচার, মানবিক রীতি-নীতি ও মূল্যবোধের পরিচায়ক। পাড়া-মহল্লায় এক বাড়ি থেকে আরেক বাড়িতে ইফতার পাঠানোও ঐতিহ্য। এখনও এ ঐতিহ্য অটুট রয়েছে। তরুণ প্রজন্মের মধ্যে বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসে খোলা আকাশের নিচে বসে ইফতারি করতে দেখা যায়। বিভিন্ন গ্রুপে গ্রুপে ইফতার করার এক অপূর্ব দৃশ্য দেখা যায়। হঠাৎ করে কী এমন ঘটল যে ইফতার মাহফিলে ছাত্রলীগকে হামলা করতে হবে! ইফতার বন্ধ করতে হবে? ছাত্রলীগ বা অন্য কোনো সংগঠন যদি ইফতার আয়োজন না করে, সেটা তাদের নিজেদের সিদ্ধান্তের ব্যাপার। তবে তারা করবে না বলে, অন্যকে করতে দেয়া হবে না, এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। ধর্মীয় অনুষ্ঠঅনে বাধা দেয়ার অধিকার তাদের থাকতে পারে না। এতে মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়া হচ্ছে, বিষয়টি ছাত্রলীগকে বুঝতে হবে। একে ইতোমধ্যে ইসলামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হিসেবে আলেম-ওলামারা মনে করছেন। ছাত্রলীগের এহেন অপকর্মের বিরুদ্ধে সরকারের তরফ থেকেও কোন বক্তব্য দেয়া হয়নি। আইনবিদরা মনে করছেন, ইফতার অনুষ্ঠানে হামলা বা বাধা দেয়া ফৌজদারি অপরাধ। ছাত্রলীগের যারা ইফতারে বাধা দিয়ে এই অপরাধ করছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কেন নীরব এবং ব্যবস্থা নিচ্ছে না, তা বুঝতে বাকি থাকে না। দেশের মানুষ তা মেনে নেবে না। ইফতারে বাধা দেয়া এবং তার প্রতিক্রিয়া থেকেই বোঝা উচিত, দেশের মানুষকে তার ধর্মীয় বিশ্বাস ও ঐতিহ্য থেকে বিচ্যুৎ করা যাবে না।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

ইফতারে হামলা ও বাধা দেয়া কাম্য নয়

আপলোড টাইম : ০৮:৪৫:৫৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৭ মার্চ ২০২৪

আমাদের দেশে শত শত বছর ধরে চলে আসা ধর্মীয় বিধান এবং ঐতিহ্যে পরিণত হওয়া ইফতার আয়োজনে হামলা ও প- করে দেয়ার মতো ঘটনা প্রথমবারের মতো এবারের রোজায় ঘটেছে। এটি এক বিস্ময়কর ও অবাক করা বিষয়। রোজার আগে মন্ত্রীসভার বৈঠকে সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এবার রোজায় সরকারিভাবে কোনো ইফতারের আয়োজন করা হবে না। এর পেছনে সরকারের কৃচ্ছ্রসাধনের বিষয়টি জড়িয়ে রয়েছে। তবে বিভিন্ন সংগঠন এবং ব্যক্তি পর্যায়ে ইফতারের আয়োজনের ক্ষেত্রে কোনো বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়নি। এটা যার যার স্বাধীনমতো আয়োজন করতে পারে। দেখা গেছে, দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ও ছাত্র সংগঠন ইফতারের আয়োজন করতে গেলে তা ছাত্রলীগ হামলা করে প- করে দিয়েছে। ইতোমধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ ইফতার মাহফিল ও আলোচনা সভায় হামলা চালিয়ে প- করে দিয়েছে। এ নিয়ে ইসলামী ধারার দল এবং সাধারণ শির্ক্ষার্থী থেকে শুরু করে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। এর প্রতিবাদ যেমন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে, তেমনি বিভিন্ন ক্যাম্পাসেও চলছে। অনেকে প্রতিবাদস্বরূপ মানববন্ধন ও গণইফতারের আয়োজন করছে। দেশে সাম্প্রতিক সময়ে ইফতারির উপকরণ নিয়ে মন্ত্রীদের বিতর্কিত মন্তব্য থেকে শুরু করে নানা ধরনের বাহুল্য বক্তব্য তীব্র সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। এতে সরকারের ভাবমর্যাদা যথেষ্ট ক্ষুণ্ন হচ্ছে। ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের রাগ-ক্ষোভ গিয়ে পড়ছে সরকারের উপর। বিশেষ করে আমাদের চিরায়ত ঐতিহ্য ইফতার মাহফিল বা সমাবেশে সরকারি দলের অঙ্গসংগঠনের হামলা মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিতে অনেক বড় আঘাত হিসেবে গণ্য। সারাদিন রোজা শেষে ইফতারি খাওয়া আমাদের দেশে হাজার বছরের ঐতিহ্য। এটা শুধু ঐতিহ্যই নয়, ধর্মীয় রীতি। ইফতারের আগে রোজাদার একসাথে ইফতারি করার মধ্য দিয়ে একে অপরের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধের পরিচয় দিয়ে থাকে। এখানে পরিচিত-অপরিচিত কোনো ভেদাভেদ থাকে না। গ্রামে-গঞ্জে ইফতারের আগে সড়কের পাশের বাড়ির লোকজন রোজাদার পথিককে ইফতার করানোর জন্য সরবত, পানি, গুড়-মুড়ি কিংবা খেজুর নিয়ে অপেক্ষা করার দৃশ্য এখনও দেখা যায়। এটা আমাদের ধর্মীয় আচার, মানবিক রীতি-নীতি ও মূল্যবোধের পরিচায়ক। পাড়া-মহল্লায় এক বাড়ি থেকে আরেক বাড়িতে ইফতার পাঠানোও ঐতিহ্য। এখনও এ ঐতিহ্য অটুট রয়েছে। তরুণ প্রজন্মের মধ্যে বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসে খোলা আকাশের নিচে বসে ইফতারি করতে দেখা যায়। বিভিন্ন গ্রুপে গ্রুপে ইফতার করার এক অপূর্ব দৃশ্য দেখা যায়। হঠাৎ করে কী এমন ঘটল যে ইফতার মাহফিলে ছাত্রলীগকে হামলা করতে হবে! ইফতার বন্ধ করতে হবে? ছাত্রলীগ বা অন্য কোনো সংগঠন যদি ইফতার আয়োজন না করে, সেটা তাদের নিজেদের সিদ্ধান্তের ব্যাপার। তবে তারা করবে না বলে, অন্যকে করতে দেয়া হবে না, এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। ধর্মীয় অনুষ্ঠঅনে বাধা দেয়ার অধিকার তাদের থাকতে পারে না। এতে মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়া হচ্ছে, বিষয়টি ছাত্রলীগকে বুঝতে হবে। একে ইতোমধ্যে ইসলামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হিসেবে আলেম-ওলামারা মনে করছেন। ছাত্রলীগের এহেন অপকর্মের বিরুদ্ধে সরকারের তরফ থেকেও কোন বক্তব্য দেয়া হয়নি। আইনবিদরা মনে করছেন, ইফতার অনুষ্ঠানে হামলা বা বাধা দেয়া ফৌজদারি অপরাধ। ছাত্রলীগের যারা ইফতারে বাধা দিয়ে এই অপরাধ করছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কেন নীরব এবং ব্যবস্থা নিচ্ছে না, তা বুঝতে বাকি থাকে না। দেশের মানুষ তা মেনে নেবে না। ইফতারে বাধা দেয়া এবং তার প্রতিক্রিয়া থেকেই বোঝা উচিত, দেশের মানুষকে তার ধর্মীয় বিশ্বাস ও ঐতিহ্য থেকে বিচ্যুৎ করা যাবে না।