ইপেপার । আজশুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জিকে প্রকল্পে সব পাম্প অচল ;পানি সরবরাহ নিশ্চিত করুন

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৯:১৯:৪০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৮ মার্চ ২০২৪
  • / ৬৬ বার পড়া হয়েছে

দেশের বৃহত্তম গঙ্গা-কপোতাক্ষ (জিকে) সেচ প্রকল্পের সব ক’টি পাম্প অচল হয়ে গেছে। ফলে প্রকল্পের আওতাধীন জমিতে সেচ বন্ধ হয়ে গেছে। বিপাকে পড়েছেন সংশ্লিষ্ট কৃষকরা। কবে নাগাদ পানি সরবরাহ স্বাভাবিক হবে, তা বলতে পারছেন না পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কর্মকর্তারা। একটি সহযোগী দৈনিকে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। জিকে সেচ প্রকল্পের আওতায় তিনটি পাম্পের সাহায্যে কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ ও মাগুরার কৃষকদের সেচের পানি দেয়া হতো। কয়েক বছর ধরে দু’টি পাম্প বন্ধ ছিল। সর্বশেষ চার উপজেলায় একটি পাম্পের সাহায্যে পানি সরবরাহ চালু ছিল। দুই সপ্তাহ ধরে তাও বন্ধ রয়েছে। বোরো ধানের চারা রোপণের এ মৌসুমে এক লাখের বেশি কৃষক বিপদে পড়েছেন।

সর্বশেষ সচল পাম্পটি বন্ধ হয়ে যায় গত ১৯ ফেব্রুয়ারি। চুয়াডাঙ্গা সদর ও আলমডাঙ্গা এবং কুষ্টিয়া সদর ও মিরপুর- এ চার উপজেলার কৃষক দুর্ভোগে পড়েছেন। পানির অভাবে অনেকে চারা রোপণ করতে পারছেন না, কারো ধানের জমি শুকিয়ে চৌচির হয়ে গেছে, কেউ শ্যালো ইঞ্জিন দিয়ে বিকল্প সেচের ব্যবস্থা করেছেন। এতে ধানের উৎপাদন খরচ বেশ কয়েকগুণ বেড়ে যাবে।
কুষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যমতে, জিকে সেচ প্রকল্পের পানিতে কুষ্টিয়া ও চুয়াডাঙ্গার চার উপজেলার অন্তত এক লাখ ছয় হাজার কৃষক বোরো আবাদ করতে পারেন। ১৯৬২-৬৩ সালে জিকে সেচ প্রকল্প চালু হয়। তখন থেকে প্রকল্পের পানি কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ ও মাগুরা জেলার ১৩টি উপজেলায় সরবরাহ করা হতো। প্রকল্পের আওতায় সেচযোগ্য এলাকা রয়েছে এক লাখ ১০ হাজার ১০৭ হেক্টর।

মূলত আমন চাষে পানির ঘাটতি মেটাতে প্রকল্পটি শুরু হয়েছিল। সেটি প্রায় সারা বছর তিন মৌসুমে কাজে দিচ্ছিল। তবে পদ্মায় পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় তিন-চার বছর আগে থেকে বোরো মৌসুমে শুধু কুষ্টিয়া ও চুয়াডাঙ্গায় পানি সরবরাহ স্বাভাবিক রাখা হলেও মাগুরা এবং ঝিনাইদহের খালগুলোর কপাট বন্ধ রাখা হয়।

কৃষকরা বলছেন, বোরো ধানে সবচেয়ে বেশি সেচ দিতে হয়। ক্ষেত প্রস্তুত থেকে শুরু করে দানা আসা পর্যন্ত সেচ লাগে। কখনো দিনে দুই বেলাও সেচ দিতে হয়। জানুয়ারি থেকে ধান আবাদের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তারা। কিন্তু পানি সরবরাহ শুরুর ১৯ দিনের মাথায় হঠাৎ পাম্প বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাদের এখন দিশেহারা অবস্থা।

পাম্প বন্ধের কারণে এবার ফলনও কম হতে পারে। কৃষক ক্ষতির মুখে পড়বেন। এদিকে প্রকল্পের আওতাধীন কৃষক সংগঠনের দাবি, খালে পানি না আসায় সেচের পেছনে ডিজেল ও মেশিন ভাড়াসহ ছয় থেকে সাত হাজার টাকা খরচ হবে কৃষকের। বাড়তি খরচের আশঙ্কায় অনেক কৃষক ধান চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। অবিলম্বে পানি সরবরাহ চালু করে হাজারো কৃষককে বাঁচাতে হবে। না হলে এ খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। তাই দ্রুত জিকে সেচ প্রকল্পের পাম্প মেরামত করে সেচের পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে যথাযথ উদ্যোগ নিতে হবে। তা না হলে সামগ্রিক খাদ্য নিরাপত্তায় নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

জিকে প্রকল্পে সব পাম্প অচল ;পানি সরবরাহ নিশ্চিত করুন

আপলোড টাইম : ০৯:১৯:৪০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৮ মার্চ ২০২৪

দেশের বৃহত্তম গঙ্গা-কপোতাক্ষ (জিকে) সেচ প্রকল্পের সব ক’টি পাম্প অচল হয়ে গেছে। ফলে প্রকল্পের আওতাধীন জমিতে সেচ বন্ধ হয়ে গেছে। বিপাকে পড়েছেন সংশ্লিষ্ট কৃষকরা। কবে নাগাদ পানি সরবরাহ স্বাভাবিক হবে, তা বলতে পারছেন না পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কর্মকর্তারা। একটি সহযোগী দৈনিকে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। জিকে সেচ প্রকল্পের আওতায় তিনটি পাম্পের সাহায্যে কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ ও মাগুরার কৃষকদের সেচের পানি দেয়া হতো। কয়েক বছর ধরে দু’টি পাম্প বন্ধ ছিল। সর্বশেষ চার উপজেলায় একটি পাম্পের সাহায্যে পানি সরবরাহ চালু ছিল। দুই সপ্তাহ ধরে তাও বন্ধ রয়েছে। বোরো ধানের চারা রোপণের এ মৌসুমে এক লাখের বেশি কৃষক বিপদে পড়েছেন।

সর্বশেষ সচল পাম্পটি বন্ধ হয়ে যায় গত ১৯ ফেব্রুয়ারি। চুয়াডাঙ্গা সদর ও আলমডাঙ্গা এবং কুষ্টিয়া সদর ও মিরপুর- এ চার উপজেলার কৃষক দুর্ভোগে পড়েছেন। পানির অভাবে অনেকে চারা রোপণ করতে পারছেন না, কারো ধানের জমি শুকিয়ে চৌচির হয়ে গেছে, কেউ শ্যালো ইঞ্জিন দিয়ে বিকল্প সেচের ব্যবস্থা করেছেন। এতে ধানের উৎপাদন খরচ বেশ কয়েকগুণ বেড়ে যাবে।
কুষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যমতে, জিকে সেচ প্রকল্পের পানিতে কুষ্টিয়া ও চুয়াডাঙ্গার চার উপজেলার অন্তত এক লাখ ছয় হাজার কৃষক বোরো আবাদ করতে পারেন। ১৯৬২-৬৩ সালে জিকে সেচ প্রকল্প চালু হয়। তখন থেকে প্রকল্পের পানি কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ ও মাগুরা জেলার ১৩টি উপজেলায় সরবরাহ করা হতো। প্রকল্পের আওতায় সেচযোগ্য এলাকা রয়েছে এক লাখ ১০ হাজার ১০৭ হেক্টর।

মূলত আমন চাষে পানির ঘাটতি মেটাতে প্রকল্পটি শুরু হয়েছিল। সেটি প্রায় সারা বছর তিন মৌসুমে কাজে দিচ্ছিল। তবে পদ্মায় পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় তিন-চার বছর আগে থেকে বোরো মৌসুমে শুধু কুষ্টিয়া ও চুয়াডাঙ্গায় পানি সরবরাহ স্বাভাবিক রাখা হলেও মাগুরা এবং ঝিনাইদহের খালগুলোর কপাট বন্ধ রাখা হয়।

কৃষকরা বলছেন, বোরো ধানে সবচেয়ে বেশি সেচ দিতে হয়। ক্ষেত প্রস্তুত থেকে শুরু করে দানা আসা পর্যন্ত সেচ লাগে। কখনো দিনে দুই বেলাও সেচ দিতে হয়। জানুয়ারি থেকে ধান আবাদের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তারা। কিন্তু পানি সরবরাহ শুরুর ১৯ দিনের মাথায় হঠাৎ পাম্প বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাদের এখন দিশেহারা অবস্থা।

পাম্প বন্ধের কারণে এবার ফলনও কম হতে পারে। কৃষক ক্ষতির মুখে পড়বেন। এদিকে প্রকল্পের আওতাধীন কৃষক সংগঠনের দাবি, খালে পানি না আসায় সেচের পেছনে ডিজেল ও মেশিন ভাড়াসহ ছয় থেকে সাত হাজার টাকা খরচ হবে কৃষকের। বাড়তি খরচের আশঙ্কায় অনেক কৃষক ধান চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। অবিলম্বে পানি সরবরাহ চালু করে হাজারো কৃষককে বাঁচাতে হবে। না হলে এ খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। তাই দ্রুত জিকে সেচ প্রকল্পের পাম্প মেরামত করে সেচের পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে যথাযথ উদ্যোগ নিতে হবে। তা না হলে সামগ্রিক খাদ্য নিরাপত্তায় নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।