ইপেপার । আজশুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে ; দিশেহারা মানুষ

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১০:৫০:২৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
  • / ৫৮ বার পড়া হয়েছে

বাজারে চাল, ডাল, ভোজ্যতেল, সিলিন্ডার গ্যাস, পেঁয়াজ, শাকসবজি থেকে শুরু করে এমন কোনো নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য নেই, যার দাম বাড়ছে না। নতুন বছর শুরু হতে না হতে বাসাভাড়া বেড়েছে, ছেয়েমেয়েদের বিদ্যালয়ে ভর্তির ফিও বাড়তি। এরপর বাজারে অরাজকতা। বেতনের অল্প টাকায় সব কিছু সামাল দেয়া আর সম্ভব হচ্ছে না সীমিত ও স্বল্প আয়ের মানুষের। তাদের পিঠ একদম দেয়ালে ঠেকে গেছে। বাস্তবে সব কিছু এখন মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে। এতে করে প্রতিনিয়ত বাড়ছে সংসারের ব্যয় ভার।

বাড়িভাড়া, খাবার খরচ, শিক্ষা খরচ কমানোর সুযোগ নেই। কিন্তু আয় বাড়ছে না সেভাবে। এর প্রভাবে সাধারণ মানুষ কষ্টে দিনাতিপাত করছেন। ধারদেনায়ও সংসার চালাতে পারছেন না তারা। দ্রব্যমূল্যের নিয়ন্ত্রণহীন ও লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি জনজীবনকে অতিষ্ঠ করে তুলছে। অবস্থা এখন এমন দাঁড়িয়েছে যে, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে সাধারণ মানুষের জীবন ওষ্ঠাগত হয়ে পড়েছে।

বর্তমান পরিস্থিতিতে সব কিছুর দর উচ্চমূল্যে স্থির থাকায় বিপাকে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। মাসের নির্দিষ্ট আয় দিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে সবাইকে। দেশের বেশির ভাগ মানুষ যা আয় করছেন; তার পুরোটা জীবনধারণে ন্যূনতম খাদ্যদ্রব্য ক্রয় করতে শেষ হয়ে যাচ্ছে। কোনোভাবে আয় ও ব্যয়ের সাথে সামঞ্জস্য রক্ষা করতে পারছেন না। প্রতিদিন বাজারে জিনিসপত্রের নিত্যনতুন দাম। আগের দিন যে দামে পণ্য কিনেছিলেন ক্রেতা, পরদিন দাম এক লাফে আকাশ ছুঁয়ে যাচ্ছে। বাসা থেকে হিসাব কষে যে টাকা নিয়ে আসছেন ভোক্তা, ওই অর্থে সব কেনা সম্ভব হচ্ছে না। যা না কিনলে নয়, তাই নিয়ে বাসায় ফিরতে হচ্ছে। শীতের মৌসুমে মানুষ যে একটু সস্তায় সবজি কিনে খাবেন তারও উপায় নেই। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির জাঁতাকলে নিম্নআয়ের মানুষের পাশাপাশি পিষ্ট হচ্ছেন শিক্ষার্থীরাও।

খাদ্যসহ নিত্যপণ্যের চড়া মূল্যের বিরূপ প্রভাব পড়েছে অতিদরিদ্র ও নিম্নআয়ের মানুষের ওপর। আলু খাবেন তারও উপায় নেই। ভরা মৌসুমে আলুর কেজি ৫০ টাকার উপরে। অসহায় মানুষের দুঃখের কথা বলার কোনো জায়গা নেই। নানারকম কাটছাঁট করার পরেও গত এক বছরে দেশের বেশির ভাগ মানুষের সাংসারিক খরচ দেড়গুণ বেড়ে গেছে। কারণ বাজারের প্রতিটি জিনিসের দাম বেড়েছে। এক বছর আগেও যে দামে আটা-চিনির দাম ছিল সহনীয়, এখন তার দ্বিগুণ হয়ে গেছে। চাল, ডাল, তেল- প্রতিটি জিনিসের দাম বেড়েছে। সেভাবে আয় বাড়েনি।

বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয় ও কৃষি বিপণন অধিদফতরের বেঁধে দেয়া মূল্যে ব্যবসায়ীরা পণ্য বিক্রি করছেন না। সরকারি সংস্থাগুলো পণ্যের যে মূল্য প্রকাশ করে তার সাথে বাজারে মিল নেই। চাহিদা ও সরবরাহের তথ্যেও রয়েছে গরমিল। পণ্যমূল্যের তালিকা প্রতিটি বাজারে প্রতিদিন হালনাগাদ করার কথা থাকলেও তা করা হচ্ছে না। অথচ সরকারসহ দায়িত্বশীল সবার জানা, নিত্যপণ্যের দাম বেশি বাড়লে সাধারণের কষ্ট বাড়ে। তাদের জীবনমানের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। মূল্যস্ফীতির যে রিপোর্ট, তাতে একটি বিষয় স্পষ্ট, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যে দাম এমনভাবে বাড়ছে, মানুষ খাপ খাইয়ে নিতে পারছেন না।

অর্থনীতিবিদদের মতো আমরাও মনে করি, নিত্যপণ্যের উচ্চমূল্যে মানুষের জীবনযাত্রা চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। মানুষ এখন রূঢ় বাস্তবতার মুখোমুখি। জীবিকা নির্বাহ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। এ সমস্যা থেকে উত্তরণে সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে। ক্রয়সীমার মধ্যে থাকলে মানুষ খেয়ে পরে বাঁচতে পারবেন। ক্রয়ক্ষমতা মানুষের নাগালের মধ্যে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে সরকারকে। এর জন্য তাৎক্ষণিক প্রয়োজন হলো বাজারে নজরদারি বাড়ানো। সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া। আর দীর্ঘমেয়াদে একটি টেকসই বাজার ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা; যাতে উৎপাদক, ক্রেতা-বিক্রেতার স্বার্থ সংরক্ষণ করা যায়।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে ; দিশেহারা মানুষ

আপলোড টাইম : ১০:৫০:২৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

বাজারে চাল, ডাল, ভোজ্যতেল, সিলিন্ডার গ্যাস, পেঁয়াজ, শাকসবজি থেকে শুরু করে এমন কোনো নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য নেই, যার দাম বাড়ছে না। নতুন বছর শুরু হতে না হতে বাসাভাড়া বেড়েছে, ছেয়েমেয়েদের বিদ্যালয়ে ভর্তির ফিও বাড়তি। এরপর বাজারে অরাজকতা। বেতনের অল্প টাকায় সব কিছু সামাল দেয়া আর সম্ভব হচ্ছে না সীমিত ও স্বল্প আয়ের মানুষের। তাদের পিঠ একদম দেয়ালে ঠেকে গেছে। বাস্তবে সব কিছু এখন মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে। এতে করে প্রতিনিয়ত বাড়ছে সংসারের ব্যয় ভার।

বাড়িভাড়া, খাবার খরচ, শিক্ষা খরচ কমানোর সুযোগ নেই। কিন্তু আয় বাড়ছে না সেভাবে। এর প্রভাবে সাধারণ মানুষ কষ্টে দিনাতিপাত করছেন। ধারদেনায়ও সংসার চালাতে পারছেন না তারা। দ্রব্যমূল্যের নিয়ন্ত্রণহীন ও লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি জনজীবনকে অতিষ্ঠ করে তুলছে। অবস্থা এখন এমন দাঁড়িয়েছে যে, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে সাধারণ মানুষের জীবন ওষ্ঠাগত হয়ে পড়েছে।

বর্তমান পরিস্থিতিতে সব কিছুর দর উচ্চমূল্যে স্থির থাকায় বিপাকে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। মাসের নির্দিষ্ট আয় দিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে সবাইকে। দেশের বেশির ভাগ মানুষ যা আয় করছেন; তার পুরোটা জীবনধারণে ন্যূনতম খাদ্যদ্রব্য ক্রয় করতে শেষ হয়ে যাচ্ছে। কোনোভাবে আয় ও ব্যয়ের সাথে সামঞ্জস্য রক্ষা করতে পারছেন না। প্রতিদিন বাজারে জিনিসপত্রের নিত্যনতুন দাম। আগের দিন যে দামে পণ্য কিনেছিলেন ক্রেতা, পরদিন দাম এক লাফে আকাশ ছুঁয়ে যাচ্ছে। বাসা থেকে হিসাব কষে যে টাকা নিয়ে আসছেন ভোক্তা, ওই অর্থে সব কেনা সম্ভব হচ্ছে না। যা না কিনলে নয়, তাই নিয়ে বাসায় ফিরতে হচ্ছে। শীতের মৌসুমে মানুষ যে একটু সস্তায় সবজি কিনে খাবেন তারও উপায় নেই। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির জাঁতাকলে নিম্নআয়ের মানুষের পাশাপাশি পিষ্ট হচ্ছেন শিক্ষার্থীরাও।

খাদ্যসহ নিত্যপণ্যের চড়া মূল্যের বিরূপ প্রভাব পড়েছে অতিদরিদ্র ও নিম্নআয়ের মানুষের ওপর। আলু খাবেন তারও উপায় নেই। ভরা মৌসুমে আলুর কেজি ৫০ টাকার উপরে। অসহায় মানুষের দুঃখের কথা বলার কোনো জায়গা নেই। নানারকম কাটছাঁট করার পরেও গত এক বছরে দেশের বেশির ভাগ মানুষের সাংসারিক খরচ দেড়গুণ বেড়ে গেছে। কারণ বাজারের প্রতিটি জিনিসের দাম বেড়েছে। এক বছর আগেও যে দামে আটা-চিনির দাম ছিল সহনীয়, এখন তার দ্বিগুণ হয়ে গেছে। চাল, ডাল, তেল- প্রতিটি জিনিসের দাম বেড়েছে। সেভাবে আয় বাড়েনি।

বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয় ও কৃষি বিপণন অধিদফতরের বেঁধে দেয়া মূল্যে ব্যবসায়ীরা পণ্য বিক্রি করছেন না। সরকারি সংস্থাগুলো পণ্যের যে মূল্য প্রকাশ করে তার সাথে বাজারে মিল নেই। চাহিদা ও সরবরাহের তথ্যেও রয়েছে গরমিল। পণ্যমূল্যের তালিকা প্রতিটি বাজারে প্রতিদিন হালনাগাদ করার কথা থাকলেও তা করা হচ্ছে না। অথচ সরকারসহ দায়িত্বশীল সবার জানা, নিত্যপণ্যের দাম বেশি বাড়লে সাধারণের কষ্ট বাড়ে। তাদের জীবনমানের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। মূল্যস্ফীতির যে রিপোর্ট, তাতে একটি বিষয় স্পষ্ট, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যে দাম এমনভাবে বাড়ছে, মানুষ খাপ খাইয়ে নিতে পারছেন না।

অর্থনীতিবিদদের মতো আমরাও মনে করি, নিত্যপণ্যের উচ্চমূল্যে মানুষের জীবনযাত্রা চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। মানুষ এখন রূঢ় বাস্তবতার মুখোমুখি। জীবিকা নির্বাহ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। এ সমস্যা থেকে উত্তরণে সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে। ক্রয়সীমার মধ্যে থাকলে মানুষ খেয়ে পরে বাঁচতে পারবেন। ক্রয়ক্ষমতা মানুষের নাগালের মধ্যে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে সরকারকে। এর জন্য তাৎক্ষণিক প্রয়োজন হলো বাজারে নজরদারি বাড়ানো। সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া। আর দীর্ঘমেয়াদে একটি টেকসই বাজার ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা; যাতে উৎপাদক, ক্রেতা-বিক্রেতার স্বার্থ সংরক্ষণ করা যায়।