ইপেপার । আজশুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিবিএসের অনির্ভরযোগ্য বেকারত্ব জরিপ; পরিস্থিতি উত্তরণের বদলে ক্ষতি বাড়াবে

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৪:১৮:৫১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ জানুয়ারী ২০২৪
  • / ৪৯ বার পড়া হয়েছে

আমাদের দেশে বেকারত্ব অভিশাপ হিসেবে বহুল আলোচিত। উচ্চ শিক্ষিতদের মধ্যে রীতিমতো আতঙ্ক থাকে পড়াশোনা শেষে বেকার হয়ে ঘুরে বেড়াতে হবে কিনা। কিছু সংখ্যকের চাকরি মিললেও এ দেশের প্রত্যেক তরুণ যুবককে এ জন্য জুতার সুকতলি খোয়াতে হয়। পড়াশোনা শেষ করে অনেকের বেকার জীবনের অবসান হয় না। হতাশ হয়ে বিদেশে গিয়ে উপার্জনের চেষ্টা করেন। এই যাত্রায় এই দেশের যুবকদের জীবনে বহু করুণ কাহিনীর জন্ম হয়েছে। ইউরোপ আমেরিকার বিপদসঙ্কুল পথ পাড়ি দিতে গিয়ে প্রাণ হারাচ্ছেন অনেকে। করোনা মহামারী, বৈশ্বিক যুদ্ধাবস্থার জন্য বাংলাদেশের অর্থনীতি চাপের মধ্যে পড়ছে। এর ওপর রয়েছে বড় ধরনের অনিয়ম-দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনাজনিত বিশৃঙ্খলা। বেকারের সংখ্যা বাড়ার লক্ষণ চারদিকে স্পষ্ট। সেই সময় বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) জরিপ বলছে, দেশে বেকারের সংখ্যা কমছে। বিবিএস ২০২৩ সালের চতুর্থ প্রান্তিকের শ্রমশক্তি জরিপের প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। পুরো বছরের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে জানাচ্ছে, গত বছর পুরুষ বেকারের সংখ্যা কমেছে ২০ হাজার ও নারী বেকারের সংখ্যা কমেছে ৯০ হাজার। তাদের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে দেশে ২৪ লাখ ৭০ হাজার মানুষ বেকার ছিল। ২০২২ সালে বেকার ছিল ২৫ লাখ ৮০ হাজার। সব মিলিয়ে বছরে বেকার কমেছে এক লাখ ১০ হাজার। এক লাখ ২৩ হাজার ২৬৪টি খানা থেকে তথ্য সংগ্রহ করে শ্রমশক্তি জরিপটি করা হয়েছে।
বিবিএসের জরিপে ধারাবাহিক বেকার কমার পরিসংখ্যান সাজানো আছে। তাদের প্রচারিত তথ্যে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে দেশে বেকার ছিল ২৭ লাখ। সব মিলিয়ে ছয় বছরে মোট বেকার কমেছে দুুই লাখ ৩০ হাজার। সরকারি সংস্থাটির প্রদর্শিত পরিসংখ্যানে দেশে প্রতি বছর ২০ লাখ মানুষ চাকরির বাজারে প্রবেশ করে। তাদের মধ্যে ১৪ লাখ দেশে কাজ পায়। তাদের মতে, বেকারের সংখ্যা ২৪ থেকে ২৮ লাখের মধ্যে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বিবিএসের এই জরিপ পদ্ধতি সঠিক নয়। আমাদের দেশ একটি দরিদ্র এবং কর্মের তুলনায় বাড়তি জনসংখ্যার দেশ। ইউরোপ ও আমেরিকার মতো উন্নত দেশের মডেল অনুসারে কৃত জরিপ সঠিক তথ্য দেবে না। বিবিএসের এই জরিপের সাথে বেকার জনসংখ্যার চিত্রের মিল পাওয়া যায় না। সরকারি চাকরির আবেদনে স্পষ্টভাবে দেখা যায়- বিসিএসসহ সরকারি নিয়োগে প্রতি বছর আসনপ্রতি প্রতিযোগীর সংখ্যা বাড়ছে। একটি আসনের বিপরীতে কয়েক শ’ প্রার্থী পর্যন্ত চাকরির জন্য আবেদন করতে দেখা যায়। শিক্ষিতদের মধ্যে বড় অংশটি তাদের চাহিদা অনুযায়ী কাজ পায় না। তাদের যোগ্যতার তুলনায় নিচু মানের পেশা বেছে নিতে হচ্ছে। বড় অংশটি কোনো কাজ না পেয়ে পাড়ি জমাচ্ছে প্রবাসে। বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশে প্রকৃত বেকারের সংখ্যা কয়েক কোটি। বিবিএস পরিচালিত হয় সরকারের স্বার্থে। তারা এই লক্ষ্য নিয়েই অগ্রসর হয় যাতে অর্থনীতির সূচক ঊর্ধ্বমুখী দেখানো যায়। এতে সরকারের জন্য স্বস্তি মেলে। দেশে এখন চলছে ডলার সঙ্কট, বড় দাগে আমদানি কমে গেছে, বিদেশী বিনিয়োগ দ্রুত কমছে, ব্যবসায়-বাণিজ্য মন্দা। এ অবস্থায় বেকারত্বের হার বাড়াটাই স্বাভাবিক।
শ্রমশক্তির উপযুক্ত ব্যবহার ও বেকারত্ব নিরসনে প্রথমত কার্যকরণ তথ্য-উপাত্ত দরকার। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো বস্তুনিষ্ঠভাবে সেটি করতে না পারায় কাগজ-কলমে প্রকৃত পরিস্থিতি পাওয়া যাচ্ছে না। যদিও চার দিকে আমাদের অর্থনৈতিক দুরবস্থা ফুটে আছে। জনগণের অর্থনৈতিক অবস্থার পরিবর্তনে সরকারকে সততার নীতি গ্রহণ করতে হবে। বরাবরই সরকার নিজের স্বার্থকে প্রাধান্য দিলে আমরা দারিদ্র্য দূর করতে পারব না। আমরা মনে করি, বিবিএসসহ সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে কার্যকরভাবে ব্যবহার করার উদ্যোগ নিতে হবে। যাতে পরিস্থিতির আসল চিত্র আমাদের সামনে স্পষ্ট হয়।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

বিবিএসের অনির্ভরযোগ্য বেকারত্ব জরিপ; পরিস্থিতি উত্তরণের বদলে ক্ষতি বাড়াবে

আপলোড টাইম : ০৪:১৮:৫১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ জানুয়ারী ২০২৪

আমাদের দেশে বেকারত্ব অভিশাপ হিসেবে বহুল আলোচিত। উচ্চ শিক্ষিতদের মধ্যে রীতিমতো আতঙ্ক থাকে পড়াশোনা শেষে বেকার হয়ে ঘুরে বেড়াতে হবে কিনা। কিছু সংখ্যকের চাকরি মিললেও এ দেশের প্রত্যেক তরুণ যুবককে এ জন্য জুতার সুকতলি খোয়াতে হয়। পড়াশোনা শেষ করে অনেকের বেকার জীবনের অবসান হয় না। হতাশ হয়ে বিদেশে গিয়ে উপার্জনের চেষ্টা করেন। এই যাত্রায় এই দেশের যুবকদের জীবনে বহু করুণ কাহিনীর জন্ম হয়েছে। ইউরোপ আমেরিকার বিপদসঙ্কুল পথ পাড়ি দিতে গিয়ে প্রাণ হারাচ্ছেন অনেকে। করোনা মহামারী, বৈশ্বিক যুদ্ধাবস্থার জন্য বাংলাদেশের অর্থনীতি চাপের মধ্যে পড়ছে। এর ওপর রয়েছে বড় ধরনের অনিয়ম-দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনাজনিত বিশৃঙ্খলা। বেকারের সংখ্যা বাড়ার লক্ষণ চারদিকে স্পষ্ট। সেই সময় বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) জরিপ বলছে, দেশে বেকারের সংখ্যা কমছে। বিবিএস ২০২৩ সালের চতুর্থ প্রান্তিকের শ্রমশক্তি জরিপের প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। পুরো বছরের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে জানাচ্ছে, গত বছর পুরুষ বেকারের সংখ্যা কমেছে ২০ হাজার ও নারী বেকারের সংখ্যা কমেছে ৯০ হাজার। তাদের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে দেশে ২৪ লাখ ৭০ হাজার মানুষ বেকার ছিল। ২০২২ সালে বেকার ছিল ২৫ লাখ ৮০ হাজার। সব মিলিয়ে বছরে বেকার কমেছে এক লাখ ১০ হাজার। এক লাখ ২৩ হাজার ২৬৪টি খানা থেকে তথ্য সংগ্রহ করে শ্রমশক্তি জরিপটি করা হয়েছে।
বিবিএসের জরিপে ধারাবাহিক বেকার কমার পরিসংখ্যান সাজানো আছে। তাদের প্রচারিত তথ্যে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে দেশে বেকার ছিল ২৭ লাখ। সব মিলিয়ে ছয় বছরে মোট বেকার কমেছে দুুই লাখ ৩০ হাজার। সরকারি সংস্থাটির প্রদর্শিত পরিসংখ্যানে দেশে প্রতি বছর ২০ লাখ মানুষ চাকরির বাজারে প্রবেশ করে। তাদের মধ্যে ১৪ লাখ দেশে কাজ পায়। তাদের মতে, বেকারের সংখ্যা ২৪ থেকে ২৮ লাখের মধ্যে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বিবিএসের এই জরিপ পদ্ধতি সঠিক নয়। আমাদের দেশ একটি দরিদ্র এবং কর্মের তুলনায় বাড়তি জনসংখ্যার দেশ। ইউরোপ ও আমেরিকার মতো উন্নত দেশের মডেল অনুসারে কৃত জরিপ সঠিক তথ্য দেবে না। বিবিএসের এই জরিপের সাথে বেকার জনসংখ্যার চিত্রের মিল পাওয়া যায় না। সরকারি চাকরির আবেদনে স্পষ্টভাবে দেখা যায়- বিসিএসসহ সরকারি নিয়োগে প্রতি বছর আসনপ্রতি প্রতিযোগীর সংখ্যা বাড়ছে। একটি আসনের বিপরীতে কয়েক শ’ প্রার্থী পর্যন্ত চাকরির জন্য আবেদন করতে দেখা যায়। শিক্ষিতদের মধ্যে বড় অংশটি তাদের চাহিদা অনুযায়ী কাজ পায় না। তাদের যোগ্যতার তুলনায় নিচু মানের পেশা বেছে নিতে হচ্ছে। বড় অংশটি কোনো কাজ না পেয়ে পাড়ি জমাচ্ছে প্রবাসে। বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশে প্রকৃত বেকারের সংখ্যা কয়েক কোটি। বিবিএস পরিচালিত হয় সরকারের স্বার্থে। তারা এই লক্ষ্য নিয়েই অগ্রসর হয় যাতে অর্থনীতির সূচক ঊর্ধ্বমুখী দেখানো যায়। এতে সরকারের জন্য স্বস্তি মেলে। দেশে এখন চলছে ডলার সঙ্কট, বড় দাগে আমদানি কমে গেছে, বিদেশী বিনিয়োগ দ্রুত কমছে, ব্যবসায়-বাণিজ্য মন্দা। এ অবস্থায় বেকারত্বের হার বাড়াটাই স্বাভাবিক।
শ্রমশক্তির উপযুক্ত ব্যবহার ও বেকারত্ব নিরসনে প্রথমত কার্যকরণ তথ্য-উপাত্ত দরকার। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো বস্তুনিষ্ঠভাবে সেটি করতে না পারায় কাগজ-কলমে প্রকৃত পরিস্থিতি পাওয়া যাচ্ছে না। যদিও চার দিকে আমাদের অর্থনৈতিক দুরবস্থা ফুটে আছে। জনগণের অর্থনৈতিক অবস্থার পরিবর্তনে সরকারকে সততার নীতি গ্রহণ করতে হবে। বরাবরই সরকার নিজের স্বার্থকে প্রাধান্য দিলে আমরা দারিদ্র্য দূর করতে পারব না। আমরা মনে করি, বিবিএসসহ সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে কার্যকরভাবে ব্যবহার করার উদ্যোগ নিতে হবে। যাতে পরিস্থিতির আসল চিত্র আমাদের সামনে স্পষ্ট হয়।