ইপেপার । আজশুক্রবার, ১৪ জুন ২০২৪, ৩১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

‘কপাল পুড়ছে’ আওয়ামী লীগের ৭০ প্রার্থীর

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৩:৪৯:৫৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৯ ডিসেম্বর ২০২৩
  • / ৩২ বার পড়া হয়েছে

সমীকরণ প্রতিবেদন:
আওয়ামী লীগের ‘মনোনয়ন পেলেই এমপি’, এই কথা তেমন একটা খাটছে না আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে। আসন্ন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত অন্তত ৭০ জন প্রার্থীকে আসন ছেড়ে দিতে হবে। আসন ভাগাভাগি নিয়ে এরই মধ্যে জোটসহ নানান দলের সঙ্গে চলছে দেনদরবার। আগামী ১৭ ডিসেম্বরের মধ্যে আওয়ামী লীগ মনোনীত অনেক প্রার্থী তাদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করতে পারেন। এছাড়া নির্বাচনে ‘ডামি প্রার্থী’ ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাছেও হেরে যেতে পারেন আওয়ামী লীগের কোনো কোনো প্রার্থী। নির্বাচনে দলীয় টিকিট পাওয়া অনেক প্রার্থীই বিষয়টি জানেন এবং খোঁজখবর রাখছেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পাননি আওয়ামী লীগের ৬৯ সংসদ সদস্য (এমপি)। মনোনীত প্রার্থীদের মধ্যেও অন্তত ৭০ জনের কপাল পুড়বে। এর মধ্যে কিছু আসনে ছাড় পাবে ১৪ দলীয় জোট, জাতীয় পার্টি, তৃণমূল বিএনপি ও ইসলামি দলগুলো। আলোচনার ভিত্তিতে এসব দলকে বেশকিছু আসন ছাড়বে আওয়ামী লীগ। পাশাপাশি নিজ দলের ‘ডামি প্রার্থী’ ও স্বতন্ত্রদের কাছেও ভোটে পরাজিত হবেন কিছু প্রার্থী।
গত ২৬ নভেম্বর ২৯৮ আসনে মনোনীত প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করে আওয়ামী লীগ। এই ঘোষণার মধ্য দিয়েই জোটের ইঙ্গিত দেয় দলটি। সেখানে জাতীয় পার্টির একটি আসন (নারায়ণগঞ্জ-৫) ও ১৪ দলীয় জোটের শরিক জাসদের একটি আসনে (কুষ্টিয়া-২) প্রার্থী ঘোষণা করা হয়নি। দলীয় সূত্র বলছে, আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া আরও ৭০ প্রার্থী বাদ পড়তে পারেন। এর মধ্যে ১৪ দলীয় জোটের ৮টি আসন আছে, তাদের দাবি আরও বেশি। জাতীয় পার্টির চাহিদা ৩০ থেকে ৩৫টি আসন। এ নিয়ে দফায় দফায় চলছে বৈঠক। তৃণমূল বিএনপি ও কয়েকটি ইসলামি দলকেও আসন ছাড় দেবে আওয়ামী লীগ। এর বাইরেও প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচনে বেশকিছু জায়গায় স্বতন্ত্র প্রার্থী পাস করবেন। তবে এবার আসন বণ্টনের বিষয়টি বেশ গোপনীয়তার সঙ্গেই করছে আওয়ামী লীগ। দলটির নেতৃত্বে ১৪ দলীয় জোটের বৈঠক হলেও আসন বণ্টনের বিষয়টি স্পষ্ট করেনি। জোট সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু বলেছেন, ‘জাতীয় পার্টির সঙ্গে বৈঠকের পর আসন ভাগাভাগি চূড়ান্ত হবে।’
অথচ জাতীয় পার্টির সঙ্গে বৈঠক নিয়েও বেশে লুকোচুরি করেছে দুই দল। কখন, কোথায় বসছে তা স্পষ্ট করেনি কেউই। ১৪ দলের বৈঠক শেষে আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানান, নির্বাচন সুন্দর, সুষ্ঠু করতে তাদের আলোচনা হয়েছে। আসন বণ্টন নিয়ে আলোচনা হয়নি। এর আগে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু কোনো ধরনের রাখঢাক না রেখেই গণমাধ্যমকে সরাসরি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ থেকে আশ্বাস পেয়েই আমরা নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
জাতীয় পার্টির সঙ্গে বৈঠক নিয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানফি বলেন, ‘নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করার জন্য নিজেদের মধ্যে বৈঠক করেছি। আমরা অতীতে দেখেছি, নির্বাচনী মাঠে প্রতিপক্ষ মানেই তাদের সঙ্গে একটা যুদ্ধংদেহী মনোভাব। একে অপরের কর্মীদের ওপর হামলা-মামলাসহ নানা সমস্যা হয়। এই ধরনের কোনো ঘটনা যাতে না ঘটে। নির্বাচন একটা উৎসব। সেই উৎসবে সরকারি দল, বিরোধীদলসহ সব দলই যাতে উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচন করতে পারে। আমরা সেজন্যই বসেছি, আলোচনায় তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আমাদের বিরোধীদল জাতীয় পার্টিও উৎসবের আমেজ ধরে রাখতে আহ্বান জানিয়েছে। আমরা তাদের আশ্বস্ত করেছি।’ জাতীয় পার্টিকে ৩৫টি আসন দেওয়া হচ্ছে, খসড়া তালিকা তৈরি হয়েছে- এসব তথ্য শোনা যাচ্ছে। এগুলো কতটা সত্য জানতে চাইলে হানিফ বলেন, ‘কে কী বলেছে আমি জানি না। এমন কোনো তথ্য আমার কাছে নেই। আসন নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।’
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ‘তাদের মতামত, তাদের চিন্তা ও আমাদের চিন্তা নিয়ে রাজনৈতিক কারণে আমরা বসতেই পারি। এ ধরনের বৈঠক অতীতেও হয়েছে। আমাদের সঙ্গে জাতীয় পার্টির যেমন কথা হয়েছে, ১৪ দলের শরিকদের সঙ্গেও আলোচনা হয়েছে। এগুলোর সবকিছুই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যেন সুন্দর, সুষ্ঠু ও প্রতিযোগিতামূলক হয়, সেজন্য। জনগণ যেন শান্তিতে, স্বস্তিতে ভোট দিতে পারে, এ ব্যাপারে আমরা একমত। এটা বাংলাদেশের রাজনীতি, গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা ও দেশের অগ্রগতির পক্ষে। দেশকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য এরকম বৈঠক গুরুত্বপূর্ণ।’ আসন বণ্টনের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘অনেক কথাই তো মাঠে আছে। অনেক কথাই পত্রপত্রিকায় লেখা হয়। বাস্তবতা হলো, ১৭ ডিসেম্বরের আগেই সব পরিষ্কার হবে। তবে একটি প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন হবে। এর জন্য সব রাজনৈতিক দল একসঙ্গে কাজ করছি।’
জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুও দাবি করেছেন, ‘আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন বণ্টন নিয়ে আলোচনা হয়নি।’ তবে এ বিষয়ে বেশ খোলামেলা ১৪ দলের শরিক দলগুলো। আওয়ামী লীগ সভাপতির সঙ্গে বৈঠক শেষে তারা জাগো নিউজকে জানান, আসন বণ্টন নিয়ে কথা হয়েছে। তাদের চার শরিক দলের প্রধান নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করছেন- সেটি মোটামুটি চূড়ান্ত। বাকিগুলো নিয়ে আরও আলাপ-আলোচনা হবে। এ বিষয়ে একটি টিম করে দেওয়া হয়েছে। তারা আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবেন। ওই টিম বসে এরই মধ্যে ৬-৭টি আসনের বিষয়ে খসড়া চূড়ান্ত করেছে। বাকিটা জোটনেত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চূড়ান্ত করবেন বলে জানা গেছে।
আসন বণ্টন নিয়ে জাতীয় পার্টির (জেপি) চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু বলেন, ‘আসন ভাগাভাগি চূড়ান্ত হয়নি। সেদিন প্রধানমন্ত্রী বসেছিলেন। দেশি-বিদেশি সব বিষয়ে আলোচনা করেছেন। আসন কাকে কয়টি দেওয়া হবে, এ বিষয়ে চার নেতাকে দায়িত্ব দিয়েছেন। অনেকের সঙ্গে আমু সাহেব (আমির হোসেন আমু) বসেছিলেনও। আমাকে নিয়েও বসবেন। তারপর কথা হবে।’ তিনি বলেন, ‘আমি দেন-দরবার করার লোক না। জোট করেছি জেতার জন্য। আমার যেমন বড় দলকে প্রয়োজন আছে, তেমনি বড় দলেরও আমাকে নিশ্চয়ই প্রয়োজন আছে। আমার ব্যক্তিগত চাহিদা না থাকলেও আমার দলে যারা এত বছর টিকে আছেন, তাদের আছে। তারপরও হুজুরেরা (আওয়ামী লীগ) যা দেয়, তা নিয়েই সন্তুষ্ট থাকবো। বাকি আসনে আমার ‘সাইকেল’ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করবো।’
এসব বিষয়ে কথা হয় জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনুর সঙ্গে। ইনু বলেন, ‘এটা নিয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। কথা চলছে, এখনই বলা মুশকিল। যার যত আসন আছে, সেখান থেকে একটু বাড়াবে। তবে বাড়ানোর মাত্রা তো ঠিক নেই। যেখানে আছি, সেখান থেকে বাড়লে মনটা খুশি হবে। আমার কর্মীরা খুশি হবে। দল খুশি হবে। জোট শক্তিশালী হবে।’
ইসলামি দলগুলোকেও আসন ছাড়বে আওয়ামী লীগ:
আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, জামায়াতের বিকল্প শক্তিকে শক্তিশালী করতে চায় তারা। এজন্য তাদের মিত্র ইসলামি দলগুলোকে পৃষ্ঠপোষকতার পাশাপাশি এবার সংসদে ও সরকারে আনার চিন্তা আছে। সে জায়গা থেকে বেশ কয়েকটি ইসলামি দল নির্বাচনে এসেছে। তাদের আসন ছাড় দেওয়ার বিষয়ে আলাপ-আলোচনা হচ্ছে। সম্প্রতি ৯টি ইসলামি দল প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে নির্বাচনে আসার আগ্রহের কথা জানায়। দলগুলো হলো- ইসলামী ঐক্যজোট, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি, বাংলাদেশ ইসলামী ঐক্যজোট, আশেকানে আউলিয়া ঐক্য পরিষদ এবং জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ। এসব দলের ১৪ জন নেতা বৈঠকে অংশ নেন। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন- আতাউল্লাহ হাফেজ্জী, সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ, আবুল হাসনাত আমিনী, মোহাম্মদ ফয়জুল্লাহ, সৈয়দ বাহাদুর শাহ মোজাদ্দেদী, মিসবাহুর রহমান চৌধুরী, শাহীনূর পাশা চৌধুরী, আলম নূরী ও আবুল খায়ের।
এদের অনেকেই নিজেদের সংসদ সদস্য হওয়ার বিষয়ে আওয়ামী লীগের সহায়তা চান। জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বাধীনতার পক্ষের ইসলামি শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান। এর বাইরেও খেলাফত রব্বানী বাংলাদেশ ও নেজামে ইসলামী পার্টির নেতারা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। দল দুটির নেতা মুফতি ফয়জুল হক জালালাবাদী ও মাওলানা আনোয়ারুল হকও নির্বাচন নিয়ে আলোচনা করেন।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

‘কপাল পুড়ছে’ আওয়ামী লীগের ৭০ প্রার্থীর

আপলোড টাইম : ০৩:৪৯:৫৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৯ ডিসেম্বর ২০২৩

সমীকরণ প্রতিবেদন:
আওয়ামী লীগের ‘মনোনয়ন পেলেই এমপি’, এই কথা তেমন একটা খাটছে না আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে। আসন্ন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত অন্তত ৭০ জন প্রার্থীকে আসন ছেড়ে দিতে হবে। আসন ভাগাভাগি নিয়ে এরই মধ্যে জোটসহ নানান দলের সঙ্গে চলছে দেনদরবার। আগামী ১৭ ডিসেম্বরের মধ্যে আওয়ামী লীগ মনোনীত অনেক প্রার্থী তাদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করতে পারেন। এছাড়া নির্বাচনে ‘ডামি প্রার্থী’ ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাছেও হেরে যেতে পারেন আওয়ামী লীগের কোনো কোনো প্রার্থী। নির্বাচনে দলীয় টিকিট পাওয়া অনেক প্রার্থীই বিষয়টি জানেন এবং খোঁজখবর রাখছেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পাননি আওয়ামী লীগের ৬৯ সংসদ সদস্য (এমপি)। মনোনীত প্রার্থীদের মধ্যেও অন্তত ৭০ জনের কপাল পুড়বে। এর মধ্যে কিছু আসনে ছাড় পাবে ১৪ দলীয় জোট, জাতীয় পার্টি, তৃণমূল বিএনপি ও ইসলামি দলগুলো। আলোচনার ভিত্তিতে এসব দলকে বেশকিছু আসন ছাড়বে আওয়ামী লীগ। পাশাপাশি নিজ দলের ‘ডামি প্রার্থী’ ও স্বতন্ত্রদের কাছেও ভোটে পরাজিত হবেন কিছু প্রার্থী।
গত ২৬ নভেম্বর ২৯৮ আসনে মনোনীত প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করে আওয়ামী লীগ। এই ঘোষণার মধ্য দিয়েই জোটের ইঙ্গিত দেয় দলটি। সেখানে জাতীয় পার্টির একটি আসন (নারায়ণগঞ্জ-৫) ও ১৪ দলীয় জোটের শরিক জাসদের একটি আসনে (কুষ্টিয়া-২) প্রার্থী ঘোষণা করা হয়নি। দলীয় সূত্র বলছে, আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া আরও ৭০ প্রার্থী বাদ পড়তে পারেন। এর মধ্যে ১৪ দলীয় জোটের ৮টি আসন আছে, তাদের দাবি আরও বেশি। জাতীয় পার্টির চাহিদা ৩০ থেকে ৩৫টি আসন। এ নিয়ে দফায় দফায় চলছে বৈঠক। তৃণমূল বিএনপি ও কয়েকটি ইসলামি দলকেও আসন ছাড় দেবে আওয়ামী লীগ। এর বাইরেও প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচনে বেশকিছু জায়গায় স্বতন্ত্র প্রার্থী পাস করবেন। তবে এবার আসন বণ্টনের বিষয়টি বেশ গোপনীয়তার সঙ্গেই করছে আওয়ামী লীগ। দলটির নেতৃত্বে ১৪ দলীয় জোটের বৈঠক হলেও আসন বণ্টনের বিষয়টি স্পষ্ট করেনি। জোট সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু বলেছেন, ‘জাতীয় পার্টির সঙ্গে বৈঠকের পর আসন ভাগাভাগি চূড়ান্ত হবে।’
অথচ জাতীয় পার্টির সঙ্গে বৈঠক নিয়েও বেশে লুকোচুরি করেছে দুই দল। কখন, কোথায় বসছে তা স্পষ্ট করেনি কেউই। ১৪ দলের বৈঠক শেষে আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানান, নির্বাচন সুন্দর, সুষ্ঠু করতে তাদের আলোচনা হয়েছে। আসন বণ্টন নিয়ে আলোচনা হয়নি। এর আগে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু কোনো ধরনের রাখঢাক না রেখেই গণমাধ্যমকে সরাসরি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ থেকে আশ্বাস পেয়েই আমরা নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
জাতীয় পার্টির সঙ্গে বৈঠক নিয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানফি বলেন, ‘নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করার জন্য নিজেদের মধ্যে বৈঠক করেছি। আমরা অতীতে দেখেছি, নির্বাচনী মাঠে প্রতিপক্ষ মানেই তাদের সঙ্গে একটা যুদ্ধংদেহী মনোভাব। একে অপরের কর্মীদের ওপর হামলা-মামলাসহ নানা সমস্যা হয়। এই ধরনের কোনো ঘটনা যাতে না ঘটে। নির্বাচন একটা উৎসব। সেই উৎসবে সরকারি দল, বিরোধীদলসহ সব দলই যাতে উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচন করতে পারে। আমরা সেজন্যই বসেছি, আলোচনায় তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আমাদের বিরোধীদল জাতীয় পার্টিও উৎসবের আমেজ ধরে রাখতে আহ্বান জানিয়েছে। আমরা তাদের আশ্বস্ত করেছি।’ জাতীয় পার্টিকে ৩৫টি আসন দেওয়া হচ্ছে, খসড়া তালিকা তৈরি হয়েছে- এসব তথ্য শোনা যাচ্ছে। এগুলো কতটা সত্য জানতে চাইলে হানিফ বলেন, ‘কে কী বলেছে আমি জানি না। এমন কোনো তথ্য আমার কাছে নেই। আসন নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।’
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ‘তাদের মতামত, তাদের চিন্তা ও আমাদের চিন্তা নিয়ে রাজনৈতিক কারণে আমরা বসতেই পারি। এ ধরনের বৈঠক অতীতেও হয়েছে। আমাদের সঙ্গে জাতীয় পার্টির যেমন কথা হয়েছে, ১৪ দলের শরিকদের সঙ্গেও আলোচনা হয়েছে। এগুলোর সবকিছুই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যেন সুন্দর, সুষ্ঠু ও প্রতিযোগিতামূলক হয়, সেজন্য। জনগণ যেন শান্তিতে, স্বস্তিতে ভোট দিতে পারে, এ ব্যাপারে আমরা একমত। এটা বাংলাদেশের রাজনীতি, গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা ও দেশের অগ্রগতির পক্ষে। দেশকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য এরকম বৈঠক গুরুত্বপূর্ণ।’ আসন বণ্টনের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘অনেক কথাই তো মাঠে আছে। অনেক কথাই পত্রপত্রিকায় লেখা হয়। বাস্তবতা হলো, ১৭ ডিসেম্বরের আগেই সব পরিষ্কার হবে। তবে একটি প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন হবে। এর জন্য সব রাজনৈতিক দল একসঙ্গে কাজ করছি।’
জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুও দাবি করেছেন, ‘আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন বণ্টন নিয়ে আলোচনা হয়নি।’ তবে এ বিষয়ে বেশ খোলামেলা ১৪ দলের শরিক দলগুলো। আওয়ামী লীগ সভাপতির সঙ্গে বৈঠক শেষে তারা জাগো নিউজকে জানান, আসন বণ্টন নিয়ে কথা হয়েছে। তাদের চার শরিক দলের প্রধান নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করছেন- সেটি মোটামুটি চূড়ান্ত। বাকিগুলো নিয়ে আরও আলাপ-আলোচনা হবে। এ বিষয়ে একটি টিম করে দেওয়া হয়েছে। তারা আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবেন। ওই টিম বসে এরই মধ্যে ৬-৭টি আসনের বিষয়ে খসড়া চূড়ান্ত করেছে। বাকিটা জোটনেত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চূড়ান্ত করবেন বলে জানা গেছে।
আসন বণ্টন নিয়ে জাতীয় পার্টির (জেপি) চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু বলেন, ‘আসন ভাগাভাগি চূড়ান্ত হয়নি। সেদিন প্রধানমন্ত্রী বসেছিলেন। দেশি-বিদেশি সব বিষয়ে আলোচনা করেছেন। আসন কাকে কয়টি দেওয়া হবে, এ বিষয়ে চার নেতাকে দায়িত্ব দিয়েছেন। অনেকের সঙ্গে আমু সাহেব (আমির হোসেন আমু) বসেছিলেনও। আমাকে নিয়েও বসবেন। তারপর কথা হবে।’ তিনি বলেন, ‘আমি দেন-দরবার করার লোক না। জোট করেছি জেতার জন্য। আমার যেমন বড় দলকে প্রয়োজন আছে, তেমনি বড় দলেরও আমাকে নিশ্চয়ই প্রয়োজন আছে। আমার ব্যক্তিগত চাহিদা না থাকলেও আমার দলে যারা এত বছর টিকে আছেন, তাদের আছে। তারপরও হুজুরেরা (আওয়ামী লীগ) যা দেয়, তা নিয়েই সন্তুষ্ট থাকবো। বাকি আসনে আমার ‘সাইকেল’ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করবো।’
এসব বিষয়ে কথা হয় জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনুর সঙ্গে। ইনু বলেন, ‘এটা নিয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। কথা চলছে, এখনই বলা মুশকিল। যার যত আসন আছে, সেখান থেকে একটু বাড়াবে। তবে বাড়ানোর মাত্রা তো ঠিক নেই। যেখানে আছি, সেখান থেকে বাড়লে মনটা খুশি হবে। আমার কর্মীরা খুশি হবে। দল খুশি হবে। জোট শক্তিশালী হবে।’
ইসলামি দলগুলোকেও আসন ছাড়বে আওয়ামী লীগ:
আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, জামায়াতের বিকল্প শক্তিকে শক্তিশালী করতে চায় তারা। এজন্য তাদের মিত্র ইসলামি দলগুলোকে পৃষ্ঠপোষকতার পাশাপাশি এবার সংসদে ও সরকারে আনার চিন্তা আছে। সে জায়গা থেকে বেশ কয়েকটি ইসলামি দল নির্বাচনে এসেছে। তাদের আসন ছাড় দেওয়ার বিষয়ে আলাপ-আলোচনা হচ্ছে। সম্প্রতি ৯টি ইসলামি দল প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে নির্বাচনে আসার আগ্রহের কথা জানায়। দলগুলো হলো- ইসলামী ঐক্যজোট, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি, বাংলাদেশ ইসলামী ঐক্যজোট, আশেকানে আউলিয়া ঐক্য পরিষদ এবং জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ। এসব দলের ১৪ জন নেতা বৈঠকে অংশ নেন। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন- আতাউল্লাহ হাফেজ্জী, সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ, আবুল হাসনাত আমিনী, মোহাম্মদ ফয়জুল্লাহ, সৈয়দ বাহাদুর শাহ মোজাদ্দেদী, মিসবাহুর রহমান চৌধুরী, শাহীনূর পাশা চৌধুরী, আলম নূরী ও আবুল খায়ের।
এদের অনেকেই নিজেদের সংসদ সদস্য হওয়ার বিষয়ে আওয়ামী লীগের সহায়তা চান। জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বাধীনতার পক্ষের ইসলামি শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান। এর বাইরেও খেলাফত রব্বানী বাংলাদেশ ও নেজামে ইসলামী পার্টির নেতারা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। দল দুটির নেতা মুফতি ফয়জুল হক জালালাবাদী ও মাওলানা আনোয়ারুল হকও নির্বাচন নিয়ে আলোচনা করেন।