ইপেপার । আজ বুধবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৪
বছর বছর বাড়ছে বিদ্যুৎকেন্দ্রের ক্যাপাসিটি চার্জ

কুইক রেন্টাল এখন গলার কাঁটা

এক অর্থবছরেই খরচ ৩২ হাজার কোটি টাকা

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০২:৪৬:৩২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ জুন ২০২৪
  • / ৪৩ বার পড়া হয়েছে

এক সময় বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে জরুরিভাবে চালু করা হয়েছিল কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে যা এখন গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেকটা বসিয়ে রেখেই দিনের পর দিন ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হচ্ছে এসব কেন্দ্রকে। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরে ক্যাপাসিটি চার্জ ছিল ৩২ হাজার কোটি টাকা। যার বেশিরভাগই গেছে এসব রেন্টাল বা কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিচালন ব্যয়ে। এর আগের অর্থবছরে অর্থাৎ ২০২২-২৩ অর্থবছরে এর পরিমাণ ছিল ২৮ হাজার কোটি টাকা। যা ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ছিল পাঁচ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। টাকার অবমূল্যায়নসহ নানা কারণে মাত্র পাঁচ বছরের ব্যবধানে প্রায় ছয় গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে ক্যাপাসিটি চার্জের পরিমাণ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকির বেশিরভাগ অর্থই এসব বেসরকারি রেন্টাল-কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর ক্যাপাসিটি চার্জ মেটাতে ব্যয় করা হয়েছে। এই কেন্দ্রগুলো বিদ্যুৎ উৎপাদন না করলেও তাদের উৎপাদনক্ষমতার ওপর ভিত্তি করে একটি নির্দিষ্ট ফি কেন্দ্রগুলোকে দিতে হয়, যার পুরোটাই সরকারকে বহন করতে হয়। এই পরিমাণ অর্থ বিদ্যুতের অন্য কোনো উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে ব্যবহার হলে তা দেশের জন্য উপকার হতো বলে মনে করছেন তারা।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের গুরুত্ব বিবেচনায় এ খাতে ৩০ হাজার ৩১৭ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়। এর মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে ২৯ হাজার ২৩০ কোটি টাকা এবং জ্বালানি খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে এক হাজার ৮৭ কোটি টাকা। বাজেট বক্তৃতাকালে অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী জানান, সব খাত মিলিয়ে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য ভর্তুকি বরাদ্দ এক লাখ আট হাজার ২৪০ কোটি টাকা, যার মধ্যে বিদ্যুৎ খাত পাবে ৪০ হাজার কোটি টাকা, যা মোট বরাদ্দের ৩৭ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে মোট এক লাখ ছয় হাজার ৮৯৭ কোটি টাকা ভর্তুকির মধ্যে বিদ্যুৎ খাত পেয়েছে ৩৫ হাজার কোটি টাকা। যার মধ্যে ৩২ হাজার কোটি টাকা শুধু ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধেই খরচ হয়েছে। তাই বিদ্যুৎ খাতের ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা বিবেচনায় এসব কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্তৃতায় বলেন, বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। গ্রিড যুগোপযোগী করার মাধ্যমে বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের পরিমাণ ২৪ হাজার সার্কিট কিলোমিটারে উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে।
এছাড়া বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের সমন্বিত মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। গ্রিড যুগোপযোগী করার মাধ্যমে বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের পরিমাণ ২৪ হাজার সার্কিট কিলোমিটারে উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে। এছাড়া বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের সমন্বিত মহাপরিকল্পনা প্রণয়নের কার্যক্রম হিসেবে ‘ইন্টিগ্রেটেড এনার্জি অ্যান্ড পাওয়ার মাস্টারপ্ল্যান (আইপিএমপি) প্রণয়ন করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, বিদ্যুৎ উৎপাদনের দীর্ঘমেয়াদি মহাপরিকল্পনার অংশ হিসেবে আঞ্চলিক ও উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতা কার্যক্রমের আওতায় ২০৪১ সালের মধ্যে পার্শ্ববর্তী দেশগুলো থেকে প্রায় ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এছাড়া মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৪০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ ছাড়া গ্রিড আন্তঃসংযোগের মাধ্যমে এক হাজার ১৬০ মেগাওয়াট এবং কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে এক হাজার ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ভারত থেকে বাংলাদেশের গ্রিডে সরবরাহ করা হচ্ছে।
পাবনার ঈশ্বরদীতে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। এটি বাস্তবায়ন শেষে দুটি ইউনিটে মোট দুই হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে। যা দেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি হিসেবে অর্থনৈতিক উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করবে। কিন্তু মোট ভর্তুকির যদি বড় একটা অংশ ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধেই ব্যয় হয়, তাহলে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন কঠিন হয়ে যাবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, আসন্ন অর্থবছরে বরাদ্দ বৃদ্ধির মূল কারণ আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির উচ্চমূল্য এবং বর্ধিত ক্যাপাসিটি পেমেন্ট। দেশজুড়ে জ্বালানি সাশ্রয়ের নামে কয়েক বছর যাবত বিদ্যুৎ উৎপাদনে পরিচালিত হচ্ছে ‘কৃচ্ছ্র’ অভিযান। কৃচ্ছ্রর নামে কয়েকবার কমানো হয়েছে বিদ্যুৎ উৎপাদনও। ফলে লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ জীবনযাপন করতে হয়েছে মানুষজনকে। তবুও বন্ধ হওয়ার লক্ষণ নেই রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো। বরং দিনের পর দিন বসিয়ে রেখে পরিশোধ করা হচ্ছে ক্যাপাসিটি চার্জ।
‘নো ইলেকট্রিসিটি, নো পেমেন্ট’ পদ্ধতি অবলম্বনের কথা বলা হলেও ‘মেইনটেনেন্স কস্ট’ বা পরিচালন ব্যয়ের নামেই সরকারের কোষাগার থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে হাজার হাজার কোটি টাকা। এই অপ্রয়োজনীয় খরচ বন্ধ করলে সরকারের সাশ্রয়ী নীতিরই কোনো প্রয়োজন হতো না বলে দাবি করছেন বিশেষজ্ঞরা। গত বছরগুলোতে আরও কয়েকটি রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ বাড়ানো হয়। মেয়াদ বাড়ানোর সময় ‘নো ইলেকট্রিসিটি, নো পেমেন্ট’ শর্তের কথা বলা হলেও ভিন্ন নামে টাকা নিয়ে যাচ্ছেন মালিকরা। বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ১০০ মেগাওয়াট একটি কেন্দ্রের ক্ষেত্রে বছরে গড়ে শুধু কেন্দ্র ভাড়াই দিতে হয় ৯০ কোটি টাকার বেশি। ফলে কোনো বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদন না করে বসিয়ে রাখলে বিদ্যুৎকেন্দ্রের কেন্দ্রভাড়া দিতে গিয়ে সরকারের লোকসান বাড়ে। এর বাইরেও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা, অফিস পরিচালনা সংক্রান্ত ব্যয় বাবদ আর অন্তত ৫-১০ কোটি টাকা বাড়তি খরচ হচ্ছে বছর বছর।
পিডিবির তথ্যমতে, ২০০৭-০৮ থেকে ২০১৯-২০ অর্থবছর পর্যন্ত ১৩ বছরে বেসরকারি খাত থেকে কেনা হয় ২৫ হাজার ৩১ কোটি কিলোওয়াট ঘণ্টা বিদ্যুৎ। এজন্য পিডিবিকে পরিশোধ করতে হয় এক লাখ ৫৯ হাজার ৬৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে শুধু ক্যাপাসিটি চার্জই ছিল ৬৪ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা। তবে ২০২০-২১ অর্থবছরে ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ ছিল পিডিবির ইতিহাসে রেকর্ড। এ সময়ে শীর্ষ ১২টি কোম্পানিকে আট হাজার কোটি টাকার বেশি ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করতে হয়েছে। এত বিশাল ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধের পরও সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে উৎপাদনে আসার জন্য মোট ৪৯ হাজার ৩৯২ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন আরও ৪৬টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের অনুমোদন দিয়েছে। এর অধিকাংশই গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। বিদ্যুৎ বিভাগের হিসাবে, ২০০৯ সালে দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ছিল চার হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট। বর্তমানে ২৫ হাজার ৫৬৪ মেগাওয়াট। চলতি বছরের ২২ এপ্রিল সর্বোচ্চ উৎপাদন হয় ১৬ হাজার ২৩৩ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। অর্থাৎ উৎপাদন ক্ষমতার অর্ধেক বিদ্যুৎও ব্যবহার করা যাচ্ছে না। অলস বসিয়ে রাখতে হচ্ছে সচল বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো।
আর এর খেসারত হিসাবে বেসরকারি কেন্দ্রের বিদ্যুৎ ব্যবহার না করেই চুক্তি অনুযায়ী তথাকথিত ‘ক্যাপাসিটি চার্জ’ বাবদ প্রতি বছর গড়ে ৫-৭ হাজার কোটি টাকা করে গচ্চা দিতে হচ্ছে সরকারকে। গত ১৫ বছরে এই গচ্চার পরিমাণ প্রায় ৮০-৯০ হাজার কোটি টাকা। নতুন করে নতুন করে পরিচালন ব্যয়ের নামে যোগ হচ্ছে আরও হাজার কোটি টাকা।
বিদ্যুৎ বিভাগের বক্তব্য:
এ বিষয়ে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বারবার প্রশ্ন করেও সদুত্তর পাওয়া যায়নি। তবে ক্যাপাসিটি চার্জ না থাকলেও রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর পরিচালন ব্যয় অর্থাৎ এর সার্বিক তত্ত্বাবধানের খরচ সরকারকে বহন করতে হয় বলে স্বীকার করেছেন পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন। তিনি বলেন, এটা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই যে, রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো আমাদের জিডিপিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। জরুরি প্রয়োজনে ২০০৯ সালের পর থেকে এই কেন্দ্রগুলো অনিবার্য ছিল, এখন নেই। তাই বর্তমানে এগুলো চলছে ‘নো ইলেক্ট্রিসিটি, নো পেমেন্ট’ নীতিতে। মানে এখান থেকে বিদ্যুৎ কেনা হলে ক্যাপাসিটি চার্জ দেওয়া হবে। না ব্যবহার হলে দেওয়া হবে না। তবে তাদের মেইনটেন্যান্স খরচ দিতে হচ্ছে। তা পরিমাণে খুবই সামান্য। একটি কেন্দ্রে যে কয়জন চাকরি করছে, তাদের বেতন-ভাতাসহ অন্যান্য পরিচালন যা টাকার অঙ্কে খুব বড় কিছু নয়।
এসব কথা বিষয়ে কথা বলতে নারাজ বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। সাশ্রয়ী নীতির বদলে রেন্টাল-কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো চালানোর কি যৌক্তিকতা রয়েছে, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এগুলো পুরনো ইস্যু। বর্তমান সংকটের সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই। বর্তমান সংকট বিশ্বজুড়ে। তাই সবাইকে মিলে সাশ্রয়ী নীতির মাধ্যমেই এই সংকট কাটাতে হবে। এখানে রেন্টাল বা কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর কথা আসছে কেন?
কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা:
এ বিষয়ে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশনের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, বিশ্বজুড়ে জ্বালানির বাজারে একটা অস্থিরতা বিরাজ করছে। এমন অবস্থায় দেশেও জ্বালানির সংকট হবে এটা খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু এর জন্য সাশ্রয়ী নীতির চাইতে রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন সুবিধা দিয়ে রেন্টাল ও কুইক রেন্টালসহ শতাধিক প্রকল্প অপ্রয়োজনে চালু রাখার কোনো মানে হয় না। শুধু দলীয় ব্যবসায়ীদের সুবিধা দিতেই একের পর এক এসব বিদ্যুৎকেন্দ্র করা হয়েছে। চাহিদা না থাকায় এসব কেন্দ্র প্রায়ই বন্ধ থাকে। বসে থেকে বছর বছর ক্যাপাসিটি পেমেন্ট নিচ্ছে, যা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। অপ্রয়োজনীয় কেন্দ্রগুলো বন্ধ করে ভর্তুকির টাকা বিদ্যুৎ খাতের টেকসই উন্নয়নে কাজে লাগানো সম্ভব।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ২০০৯-১০ সালের বিদ্যুৎ খাত এবং এখনকার বিদ্যুৎ খাত এক নয়। তখন জরুরি ভিত্তিতে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর সঙ্গে চুক্তি করা হয়েছিল। চুক্তিগুলো ছিল ৩-৫ বছরের। কিন্তু এরপর এগুলোর সঙ্গে একই শর্তে কেন চুক্তি নবায়ন করা হলো আমি বুঝতে পারছি না। তিনি বলেন, যখন দেখা গেল চাহিদার চেয়ে ৪০-৪৮ ভাগ ক্যাপাসিটি বেশি তখনই তো সিদ্ধান্ত নেওয়ার দরকার ছিল। দেশ এখন একটি অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এখন এইগুলোকে বসিয়ে বসিয়ে ভাড়া দেওয়া অর্থনীতির বড় বিপর্যয়ের কারণ হতে পারে। তিনি বলেন, যদিও আমরা বলে থাকি প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে আমাদের গড়ে সাড়ে সাত থেকে আট টাকা যায়। কিন্তু বাস্তবে কেন্দ্রভিত্তিক হিসাবের সঙ্গে কুইক রেন্টাল যুক্ত করা হয় তাহলে কোনো কোনো কেন্দ্র থেকে সরকারকে প্রতি কিলোওয়াট আওয়ার বিদ্যুৎ কিনতে হয় ৬০০ টাকায়। এটা বসিয়ে রেখে ভাড়া দেওয়ার কারণে হচ্ছে। আর এর চাপ কিন্তু দেশের মানুষকে নিতে হচ্ছে। তাই সরকারকে এখন চুক্তি বাতিল করতে হবে বা চুক্তি নবায়ন বন্ধ রাখতে হবে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

বছর বছর বাড়ছে বিদ্যুৎকেন্দ্রের ক্যাপাসিটি চার্জ

কুইক রেন্টাল এখন গলার কাঁটা

এক অর্থবছরেই খরচ ৩২ হাজার কোটি টাকা

আপলোড টাইম : ০২:৪৬:৩২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ জুন ২০২৪

এক সময় বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে জরুরিভাবে চালু করা হয়েছিল কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে যা এখন গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেকটা বসিয়ে রেখেই দিনের পর দিন ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হচ্ছে এসব কেন্দ্রকে। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরে ক্যাপাসিটি চার্জ ছিল ৩২ হাজার কোটি টাকা। যার বেশিরভাগই গেছে এসব রেন্টাল বা কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিচালন ব্যয়ে। এর আগের অর্থবছরে অর্থাৎ ২০২২-২৩ অর্থবছরে এর পরিমাণ ছিল ২৮ হাজার কোটি টাকা। যা ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ছিল পাঁচ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। টাকার অবমূল্যায়নসহ নানা কারণে মাত্র পাঁচ বছরের ব্যবধানে প্রায় ছয় গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে ক্যাপাসিটি চার্জের পরিমাণ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকির বেশিরভাগ অর্থই এসব বেসরকারি রেন্টাল-কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর ক্যাপাসিটি চার্জ মেটাতে ব্যয় করা হয়েছে। এই কেন্দ্রগুলো বিদ্যুৎ উৎপাদন না করলেও তাদের উৎপাদনক্ষমতার ওপর ভিত্তি করে একটি নির্দিষ্ট ফি কেন্দ্রগুলোকে দিতে হয়, যার পুরোটাই সরকারকে বহন করতে হয়। এই পরিমাণ অর্থ বিদ্যুতের অন্য কোনো উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে ব্যবহার হলে তা দেশের জন্য উপকার হতো বলে মনে করছেন তারা।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের গুরুত্ব বিবেচনায় এ খাতে ৩০ হাজার ৩১৭ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়। এর মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে ২৯ হাজার ২৩০ কোটি টাকা এবং জ্বালানি খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে এক হাজার ৮৭ কোটি টাকা। বাজেট বক্তৃতাকালে অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী জানান, সব খাত মিলিয়ে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য ভর্তুকি বরাদ্দ এক লাখ আট হাজার ২৪০ কোটি টাকা, যার মধ্যে বিদ্যুৎ খাত পাবে ৪০ হাজার কোটি টাকা, যা মোট বরাদ্দের ৩৭ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে মোট এক লাখ ছয় হাজার ৮৯৭ কোটি টাকা ভর্তুকির মধ্যে বিদ্যুৎ খাত পেয়েছে ৩৫ হাজার কোটি টাকা। যার মধ্যে ৩২ হাজার কোটি টাকা শুধু ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধেই খরচ হয়েছে। তাই বিদ্যুৎ খাতের ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা বিবেচনায় এসব কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্তৃতায় বলেন, বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। গ্রিড যুগোপযোগী করার মাধ্যমে বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের পরিমাণ ২৪ হাজার সার্কিট কিলোমিটারে উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে।
এছাড়া বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের সমন্বিত মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। গ্রিড যুগোপযোগী করার মাধ্যমে বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের পরিমাণ ২৪ হাজার সার্কিট কিলোমিটারে উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে। এছাড়া বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের সমন্বিত মহাপরিকল্পনা প্রণয়নের কার্যক্রম হিসেবে ‘ইন্টিগ্রেটেড এনার্জি অ্যান্ড পাওয়ার মাস্টারপ্ল্যান (আইপিএমপি) প্রণয়ন করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, বিদ্যুৎ উৎপাদনের দীর্ঘমেয়াদি মহাপরিকল্পনার অংশ হিসেবে আঞ্চলিক ও উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতা কার্যক্রমের আওতায় ২০৪১ সালের মধ্যে পার্শ্ববর্তী দেশগুলো থেকে প্রায় ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এছাড়া মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৪০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ ছাড়া গ্রিড আন্তঃসংযোগের মাধ্যমে এক হাজার ১৬০ মেগাওয়াট এবং কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে এক হাজার ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ভারত থেকে বাংলাদেশের গ্রিডে সরবরাহ করা হচ্ছে।
পাবনার ঈশ্বরদীতে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। এটি বাস্তবায়ন শেষে দুটি ইউনিটে মোট দুই হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে। যা দেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি হিসেবে অর্থনৈতিক উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করবে। কিন্তু মোট ভর্তুকির যদি বড় একটা অংশ ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধেই ব্যয় হয়, তাহলে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন কঠিন হয়ে যাবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, আসন্ন অর্থবছরে বরাদ্দ বৃদ্ধির মূল কারণ আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির উচ্চমূল্য এবং বর্ধিত ক্যাপাসিটি পেমেন্ট। দেশজুড়ে জ্বালানি সাশ্রয়ের নামে কয়েক বছর যাবত বিদ্যুৎ উৎপাদনে পরিচালিত হচ্ছে ‘কৃচ্ছ্র’ অভিযান। কৃচ্ছ্রর নামে কয়েকবার কমানো হয়েছে বিদ্যুৎ উৎপাদনও। ফলে লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ জীবনযাপন করতে হয়েছে মানুষজনকে। তবুও বন্ধ হওয়ার লক্ষণ নেই রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো। বরং দিনের পর দিন বসিয়ে রেখে পরিশোধ করা হচ্ছে ক্যাপাসিটি চার্জ।
‘নো ইলেকট্রিসিটি, নো পেমেন্ট’ পদ্ধতি অবলম্বনের কথা বলা হলেও ‘মেইনটেনেন্স কস্ট’ বা পরিচালন ব্যয়ের নামেই সরকারের কোষাগার থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে হাজার হাজার কোটি টাকা। এই অপ্রয়োজনীয় খরচ বন্ধ করলে সরকারের সাশ্রয়ী নীতিরই কোনো প্রয়োজন হতো না বলে দাবি করছেন বিশেষজ্ঞরা। গত বছরগুলোতে আরও কয়েকটি রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ বাড়ানো হয়। মেয়াদ বাড়ানোর সময় ‘নো ইলেকট্রিসিটি, নো পেমেন্ট’ শর্তের কথা বলা হলেও ভিন্ন নামে টাকা নিয়ে যাচ্ছেন মালিকরা। বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ১০০ মেগাওয়াট একটি কেন্দ্রের ক্ষেত্রে বছরে গড়ে শুধু কেন্দ্র ভাড়াই দিতে হয় ৯০ কোটি টাকার বেশি। ফলে কোনো বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদন না করে বসিয়ে রাখলে বিদ্যুৎকেন্দ্রের কেন্দ্রভাড়া দিতে গিয়ে সরকারের লোকসান বাড়ে। এর বাইরেও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা, অফিস পরিচালনা সংক্রান্ত ব্যয় বাবদ আর অন্তত ৫-১০ কোটি টাকা বাড়তি খরচ হচ্ছে বছর বছর।
পিডিবির তথ্যমতে, ২০০৭-০৮ থেকে ২০১৯-২০ অর্থবছর পর্যন্ত ১৩ বছরে বেসরকারি খাত থেকে কেনা হয় ২৫ হাজার ৩১ কোটি কিলোওয়াট ঘণ্টা বিদ্যুৎ। এজন্য পিডিবিকে পরিশোধ করতে হয় এক লাখ ৫৯ হাজার ৬৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে শুধু ক্যাপাসিটি চার্জই ছিল ৬৪ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা। তবে ২০২০-২১ অর্থবছরে ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ ছিল পিডিবির ইতিহাসে রেকর্ড। এ সময়ে শীর্ষ ১২টি কোম্পানিকে আট হাজার কোটি টাকার বেশি ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করতে হয়েছে। এত বিশাল ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধের পরও সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে উৎপাদনে আসার জন্য মোট ৪৯ হাজার ৩৯২ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন আরও ৪৬টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের অনুমোদন দিয়েছে। এর অধিকাংশই গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। বিদ্যুৎ বিভাগের হিসাবে, ২০০৯ সালে দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ছিল চার হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট। বর্তমানে ২৫ হাজার ৫৬৪ মেগাওয়াট। চলতি বছরের ২২ এপ্রিল সর্বোচ্চ উৎপাদন হয় ১৬ হাজার ২৩৩ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। অর্থাৎ উৎপাদন ক্ষমতার অর্ধেক বিদ্যুৎও ব্যবহার করা যাচ্ছে না। অলস বসিয়ে রাখতে হচ্ছে সচল বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো।
আর এর খেসারত হিসাবে বেসরকারি কেন্দ্রের বিদ্যুৎ ব্যবহার না করেই চুক্তি অনুযায়ী তথাকথিত ‘ক্যাপাসিটি চার্জ’ বাবদ প্রতি বছর গড়ে ৫-৭ হাজার কোটি টাকা করে গচ্চা দিতে হচ্ছে সরকারকে। গত ১৫ বছরে এই গচ্চার পরিমাণ প্রায় ৮০-৯০ হাজার কোটি টাকা। নতুন করে নতুন করে পরিচালন ব্যয়ের নামে যোগ হচ্ছে আরও হাজার কোটি টাকা।
বিদ্যুৎ বিভাগের বক্তব্য:
এ বিষয়ে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বারবার প্রশ্ন করেও সদুত্তর পাওয়া যায়নি। তবে ক্যাপাসিটি চার্জ না থাকলেও রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর পরিচালন ব্যয় অর্থাৎ এর সার্বিক তত্ত্বাবধানের খরচ সরকারকে বহন করতে হয় বলে স্বীকার করেছেন পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন। তিনি বলেন, এটা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই যে, রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো আমাদের জিডিপিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। জরুরি প্রয়োজনে ২০০৯ সালের পর থেকে এই কেন্দ্রগুলো অনিবার্য ছিল, এখন নেই। তাই বর্তমানে এগুলো চলছে ‘নো ইলেক্ট্রিসিটি, নো পেমেন্ট’ নীতিতে। মানে এখান থেকে বিদ্যুৎ কেনা হলে ক্যাপাসিটি চার্জ দেওয়া হবে। না ব্যবহার হলে দেওয়া হবে না। তবে তাদের মেইনটেন্যান্স খরচ দিতে হচ্ছে। তা পরিমাণে খুবই সামান্য। একটি কেন্দ্রে যে কয়জন চাকরি করছে, তাদের বেতন-ভাতাসহ অন্যান্য পরিচালন যা টাকার অঙ্কে খুব বড় কিছু নয়।
এসব কথা বিষয়ে কথা বলতে নারাজ বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। সাশ্রয়ী নীতির বদলে রেন্টাল-কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো চালানোর কি যৌক্তিকতা রয়েছে, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এগুলো পুরনো ইস্যু। বর্তমান সংকটের সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই। বর্তমান সংকট বিশ্বজুড়ে। তাই সবাইকে মিলে সাশ্রয়ী নীতির মাধ্যমেই এই সংকট কাটাতে হবে। এখানে রেন্টাল বা কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর কথা আসছে কেন?
কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা:
এ বিষয়ে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশনের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, বিশ্বজুড়ে জ্বালানির বাজারে একটা অস্থিরতা বিরাজ করছে। এমন অবস্থায় দেশেও জ্বালানির সংকট হবে এটা খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু এর জন্য সাশ্রয়ী নীতির চাইতে রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন সুবিধা দিয়ে রেন্টাল ও কুইক রেন্টালসহ শতাধিক প্রকল্প অপ্রয়োজনে চালু রাখার কোনো মানে হয় না। শুধু দলীয় ব্যবসায়ীদের সুবিধা দিতেই একের পর এক এসব বিদ্যুৎকেন্দ্র করা হয়েছে। চাহিদা না থাকায় এসব কেন্দ্র প্রায়ই বন্ধ থাকে। বসে থেকে বছর বছর ক্যাপাসিটি পেমেন্ট নিচ্ছে, যা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। অপ্রয়োজনীয় কেন্দ্রগুলো বন্ধ করে ভর্তুকির টাকা বিদ্যুৎ খাতের টেকসই উন্নয়নে কাজে লাগানো সম্ভব।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ২০০৯-১০ সালের বিদ্যুৎ খাত এবং এখনকার বিদ্যুৎ খাত এক নয়। তখন জরুরি ভিত্তিতে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর সঙ্গে চুক্তি করা হয়েছিল। চুক্তিগুলো ছিল ৩-৫ বছরের। কিন্তু এরপর এগুলোর সঙ্গে একই শর্তে কেন চুক্তি নবায়ন করা হলো আমি বুঝতে পারছি না। তিনি বলেন, যখন দেখা গেল চাহিদার চেয়ে ৪০-৪৮ ভাগ ক্যাপাসিটি বেশি তখনই তো সিদ্ধান্ত নেওয়ার দরকার ছিল। দেশ এখন একটি অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এখন এইগুলোকে বসিয়ে বসিয়ে ভাড়া দেওয়া অর্থনীতির বড় বিপর্যয়ের কারণ হতে পারে। তিনি বলেন, যদিও আমরা বলে থাকি প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে আমাদের গড়ে সাড়ে সাত থেকে আট টাকা যায়। কিন্তু বাস্তবে কেন্দ্রভিত্তিক হিসাবের সঙ্গে কুইক রেন্টাল যুক্ত করা হয় তাহলে কোনো কোনো কেন্দ্র থেকে সরকারকে প্রতি কিলোওয়াট আওয়ার বিদ্যুৎ কিনতে হয় ৬০০ টাকায়। এটা বসিয়ে রেখে ভাড়া দেওয়ার কারণে হচ্ছে। আর এর চাপ কিন্তু দেশের মানুষকে নিতে হচ্ছে। তাই সরকারকে এখন চুক্তি বাতিল করতে হবে বা চুক্তি নবায়ন বন্ধ রাখতে হবে।