মেহেরপুরে সার সংকটে কৃষক দিশেহারা। বিভিন্ন ডিলারের কাছে ধর্ণা দিয়ে সরকারি মূল্যে সার কিনতে পারছেন না। অথচ ডিলার ও খুচরা ব্যবসায়ীদের যোগসাজশে কালোবাজারে সেই সার পাচার হচ্ছে বিভিন্ন স্থানে। এ ঘটনার মধ্যে গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে গাংনী উপজেলার বিসিআইসি ডিলারের সার খুচরা ব্যবসায়ীর মাধ্যমে মেহেরপুর সদর উপজেলার আমদহে পাচারের সময় জনতা আটক করেন। স্থানীয় জনতা গাংনী উপজেলা কৃষি অফিসকে খবর দেন। উপজেলা কৃষি অফিসার ইমরান হোসেন ও গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আনোয়ার হোসেন ঘটনাস্থলে আসেন।
পরে সার ব্যবস্থাপনা সংশোধনী আইন ২০১৮ এর ৪ ধারায় দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় খুচরা সার ব্যবসায়ী মেসার্স আলীম ট্রেডার্সের মালিক বাঁশবাড়িয়া গ্রামের মাহবুব হাসানকে ১৫ হাজার টাকা অর্থদণ্ড এবং উদ্ধার হওয়া ১২ বস্তা টিএসপি সার স্থানীয় কৃষকদের মাঝে সরকারি মূল্যে তাৎক্ষণিক বিক্রি করা হয়।
এদিকে খুচরা সার ব্যবসায়ী মাহবুব হোসেন জানান, তিনি মূলত কীটনাশক ব্যবসায়ী। স্থানীয় বিসিআইসি সার ডিলার এন.আর. ট্রেডার্সের মালিক এনামুল হকের কাছ থেকে গোপনে ১২ বস্তা সার কিনে মেহেরপুর সদর উপজেলার আমদহ গ্রামের খুচরা সার ব্যবসায়ী লাল মোহাম্মদের কাছে বিক্রি করেছেন। তিনি আরও জানান, ‘প্রত্যেক ডিলার আমাদের মতো খুচরা সার ব্যবসায়ীদের কাছে গোপনে সার বিক্রি করেন। আমরা কৃষকদের কাছ থেকে তাদের এনআইডি কার্ড জমা নিয়ে সার বিক্রি করি।’
এদিকে স্থানীয়রা এলাকার জন্য বরাদ্দকৃত সার অন্যস্থানে কালোবাজারের মাধ্যমে পাচার হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তারা বলেন, ‘আমরা ডিলারদের কাছে ধর্ণা দিয়েও সরকারি মূল্যে সার কিনতে পারছি না। কিন্তু খুচরা দোকানে গেলে ১৩৫০ টাকার টিএসপি সার ২২৫০ বা ২৩৫০ টাকা দিলে পাওয়া যাচ্ছে। আবার গাংনীর সার কালোবাজারের মাধ্যমে মেহেরপুর ও মুজিবনগর উপজেলার খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে চলে যাচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন গাংনী উপজেলার কৃষকরা।’
জানা গেছে, সার ডিলার এনামুল হকের বাড়ি গাংনী উপজেলা শহরে হলেও তিনি ধানখোলা ইউনিয়নের বিসিআইসি ডিলার। স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, এনামুল হক সার কৃষকদের মাঝে সরকারি মূল্যে বিক্রি না করে অতিরিক্ত মুনাফার আশায় কালোবাজারে বিক্রি করেন। ইতোমধ্যে এলাকার ভুক্তভোগী কৃষকরা তার বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসক, গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও কৃষি বিভাগে লিখিত অভিযোগ করেছেন। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি জেলা প্রশাসন ও কৃষি বিভাগ।
সার কালোবাজার সিন্ডিকেট ভাঙার জন্য কৃষি বিভাগ চেষ্টা করছে বলে জানিয়েছেন গাংনী উপজেলা কৃষি অফিসার ইমরান হোসেন। তিনি বলেন, ‘আমরা খোঁজ নিচ্ছি- যেসব ডিলার সার কালোবাজারে দিচ্ছেন, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’