দামুড়হুদা উপজেলার ইব্রাহিমপুর গ্রামের মেহেরুননেছা পার্কে গোপন ‘মিনি চিড়িয়াখানা’ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে খাঁচাবন্দী সব বন্যপ্রাণি। গতকাল রোববার সকাল ১০টায় বন্যপ্রাণি অপরাধ দমন ইউনিট ও দামুড়হুদা সামাজিক বন বিভাগের যৌথ অভিযানে এ উদ্ধার কার্যক্রম চালানো হয়। দীর্ঘদিন ধরে পার্কটিতে অবৈধভাবে বন্যপ্রাণি আটকে রাখার অভিযোগ উঠছিল। পরিবেশবাদী সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে একাধিকবার এ বিষয়ে প্রতিবাদ জানানো হলেও এতদিন কার্যকর কোনো পদক্ষেপ ছিল না।
অবশেষে অভিযানে ৩টি বানর, ১টি হুতুম পেঁচা ও ১টি মেছো বিড়ালসহ মোট ৫টি বন্যপ্রাণি উদ্ধার করা হয়। এগুলোকে প্রাথমিকভাবে বন বিভাগের হেফাজতে নেওয়া হয় এবং চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের পর গতকালই চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর ও কুষ্টিয়ায় উপযুক্ত পরিবেশে অবমুক্ত করা হয়। এ বিষয়ে বন্যপ্রাণি অপরাধ দমন ইউনিটের পরিদর্শক আব্দুল্লাহ আস সাদিক বলেন, ‘বন্যপ্রাণিগুলোকে দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে আটকে রেখে প্রদর্শন করা হচ্ছিল, যা বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন, ২০১২-এর সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। গণমাধ্যমে প্রতিবেদন এবং স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতেই এই অভিযান পরিচালিত হয়।’
অভিযানে উপস্থিত ছিলেন ‘মানবতার জন্য সংগঠনের’ সভাপতি আহসান হাবীব। তিনি বলেন, ‘বন্যপ্রাণির প্রকৃতিতে ঘুরে বেড়ানোর অধিকার রয়েছে। কিছু মানুষ এসব প্রাণিকে বন্দি করে অর্থ উপার্জনের পথ বানিয়েছে, যা সম্পূর্ণ অবৈধ। অধিকাংশ মিনি চিড়িয়াখানায় খাদ্য, আবাসন এবং চিকিৎসার সঠিক ব্যবস্থাও থাকে না, ফলে প্রাণিগুলো ধুঁকে ধুঁকে মারা যায়।’
এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন দামুড়হুদা উপজেলা বন কর্মকর্তা মিজানুর রহমান, জীবননগর উপজেলা বন কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম কাজল এবং বন্যপ্রাণি অপরাধ দমন ইউনিটের কর্মকর্তারা-অশিম মল্লিক, সঞ্জয়, জাহিদ ও ‘মানবতার জন্য’ সংগঠনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মান্নান।
বন অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে জানানো হয়, বন্যপ্রাণি সংরক্ষণ এবং অবৈধ দখল রোধে নিয়মিত অভিযান চলবে। এ অভিযানকে সাধুবাদ জানিয়েছেন স্থানীয় সচেতন মহল। তবে উদ্ধার করেই দায়িত্ব শেষ করেনি ইউনিটটি। পরিদর্শক আব্দুল্লাহ আস সাদিক জানিয়েছেন, প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত যাচাই করে ঢাকায় ফিরে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে ওই মিনি চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মামলা এবং অন্যান্য আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মুজিবনগরে ২৭টি বন্যপ্রাণি উদ্ধার:
মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলার সীমান্তবর্তী মনোরমা মিনি চিড়িয়াখানায় অভিযান চালিয়ে ২৭টি বন্যপ্রাণি উদ্ধার করেছে বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিট। গতকাল রোববার বিকেলে এই অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানে উদ্ধার হওয়া প্রাণিদের মধ্যে রয়েছে- ২টি হনুমান, ২টি বানর, ৮টি কালেম পাখি, একটি সজারু, একটি অজগর, একটি হরিয়াল, ৪টি মুনিয়া, একটি টিয়া, একটি কচ্ছপ এবং ৪টি বালি হাঁস। স্থানীয় পরিবেশের উপযোগী প্রাণিগুলো ঘটনাস্থলেই অবমুক্ত করা হয়। বাকিগুলো বিশেষ করে অজগর ও কালেম পাখিগুলো সঙ্গে নিয়ে যায় অভিযানকারী দলটি, যা পরে নির্ধারিত উপযুক্ত পরিবেশে অবমুক্ত করা হবে বলে জানানো হয়।
বন্যপ্রাণি অপরাধ দমন ইউনিটের পরিদর্শক আব্দুল্লাহ আল সাদিক বলেন, সারা দেশের বিভিন্ন চিড়িয়াখানা, রিসোর্ট ও মিনি পার্কে ধারাবাহিকভাবে অভিযান চলছে। যেখানেই বন্যপ্রাণি অবৈধভাবে রাখা হয়েছে, সেখানেই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তিনি আরও জানান, এ অভিযানে মেহেরপুরের উপযোগী কয়েকটি প্রাণি অবমুক্ত করা হয়। বাকিগুলো নিরাপদ আশ্রয়ে পাঠানো হয়েছে। তিনি জানান, চলতি বছর জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত দেশের ৮টি মিনি চিড়িয়াখানায় অভিযান চালানো হয়েছে, যেখান থেকে ৭৬টি বন্যপ্রাণি উদ্ধার করা হয়েছে। পাশাপাশি বন্যপ্রাণি পাচারের সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত করার কাজ চলছে। জড়িতদের আইনের আওতায় আনারও হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
অভিযানে বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের ঢাকা দলের সদস্যসহ পরিদর্শক অসিম মল্লিক অংশ নেন। এদিকে মনোরমা মিনি চিড়িয়াখানার মালিক তাহাজ উদ্দীন দাবি করেছেন, প্রায় দেড় বছর আগে তিনি এই চিড়িয়াখানাটি কিনেছেন। আগের মালিক যে কাগজপত্রগুলো দিয়েছে সেগুলোই আছে বলে দাবি করেছেন। সেগুলো দেখিয়ে কোন কাজ হয়নি।