ইপেপার । আজ বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পঞ্চগড়ে সংঘর্ষে বিএনপি নেতা নিহত, বাগেরহাটে ভাঙ্চুর!

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১১:২৯:৫৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২২
  • / ১১২ বার পড়া হয়েছে

বিএনপির দাবি- ‘পুলিশ ও ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের হামলায় আহত ও আটক অন্তত দুই শতাধিক’

সমীকরণ প্রতিবেদক: সরকারের পদত্যাগ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানসহ ১০ দফা দাবিতে চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর ও ঝিনাইদহসহ সারা দেশের অন্তত ৪৪ জেলা ও মহানগরে বিএনপির গণমিছিল কর্মসূচি পালিত হয়েছে। দলীয় নেতাকর্মীদের অভিযোগ, গণমিছিল করতে গিয়ে প্রায় সব এলাকায় পুলিশের বাধার মুখে পড়তে হয়েছে নেতাকর্মীদের। কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে পঞ্চগড়ে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে এক বিএনপি নেতা নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্তত শতাধিক নেতাকর্মী। এছাড়াও পুলিশের হাতে আটক হয়েছেন আরও শতাধিক। সবমিলিয়ে আহত ও আটক হয়েছেন অন্তত দুই শতাধিক। বিএনপি নেতাকর্মীরা বলছেন, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, ঝিনাইদহ, পঞ্চগড়, নেত্রকোনা, পিরোজপুর, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, সিরাজগঞ্জ, দিনাজপুর, গাইবান্ধা, জামালপুর, লালমনিরহাট, বরিশাল, সুনামগঞ্জ, বান্দরবান, নওগাঁ, নাটোর, ভোলা, কুড়িগ্রাম, কিশোরগঞ্জ, বগুড়া, হবিগঞ্জ, খুলনা, চাঁদপুর, নারায়ণগঞ্জ, ঠাকুরগাঁও, ময়মনসিংহ, যশোর, রাঙামাটি, চাপাইনবাবগঞ্জ , মানিকগঞ্জ, কুষ্টিয়া, চট্টগ্রাম, জয়পুরহাট, পাবনা, মাগুরা, মুন্সিগঞ্জ, মাদারীপুর, রাজবাড়ী, সিরাজগঞ্জ, ফরিদপুর, সিলেট, হবিগঞ্জ, রাজশাহী ও গাজীপুরে গণমিছিল হয়েছে। এ জেলাগুলোর মধ্যে চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ, পঞ্চগড়, নীলফামারী, ফরিদপুর, গাজীপুর, রাজশাহী, মাগুরা, নোয়াখালী, লালমনিরহাটসহ বিভিন্ন এলাকায় বিএনপির গণমিছিলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বাধা দিয়েছে।

বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান সংবাদকর্মীদের জানিয়েছেন, সারা দেশে দলীয়ভাবে তথ্য পেয়েছি যুগপৎ গণমিছিল থেকে আটক হয়েছেন শতাধিক নেতাকর্মী। শুধু পঞ্চগড় জেলায় আহত হয়েছেন ৫০ জনের মতো। এছাড়া আরও কয়েকটি জেলায় ২০-২৫ জন আহত হয়েছেন। প্রায় সব জায়গায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ ক্ষমতাসীন দলের নেতারা বাধা দিয়েছেন। বোদা উপজেলার ময়দানদিঘি ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুর রশিদ আরেফিন পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন।

পঞ্চগড় জেলা পুলিশ সুপার এস এম সিরাজুল হুদা দাবি করেছেন, ‘পুলিশের পিটুনিতে নিহত হওয়ার অভিযোগ করা হচ্ছে, এরকম কোনও ঘটনা ঘটেনি। বিএনপিকে শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি করার কথা বলা হয়। জানমালের নিরাপত্তার স্বার্থে স্বাভাবিকভাবেই আমরা পর্যাপ্ত পুলিশ ফোর্স মোতায়েন করি। বিএনপি শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি না করে লাঠিসোঁটা ও ইটপাটকেল নিয়ে মিছিল করে এবং পুলিশের নির্দেশনা উপেক্ষা করে রাস্তায় নেমে ভাঙচুর করে। পুলিশের ওপর ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে।’

তিনি আরও দাবি করেন, ‘যেহেতু পুলিশের ওপর আক্রমণ করা হয়েছে এবং রাস্তায় ভাঙচুর করা হয়েছে- এ সময় পুলিশ জানমালের নিরাপত্তার স্বার্থে টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করেছে। এতে বিএনপির ২০/২৫ জন এবং পুলিশের ১০/১২ জন আহত হয়। আব্দুর রশিদ আরেফিন নামে যে ব্যক্তি মারা গেছেন তিনি মূলত বাইপাস রোগী। হৃদরোগজনিত কারণে মারা গেছেন। তার শরীরে কোন আঘাতের চিহ্ন নেই। আগামীকাল তার ময়নাতদন্ত করা হবে। আপাতত কাউকে আটক করা হয়নি। সরকারি কাজে বাধা, পুলিশের ওপর আক্রমণ, সম্পত্তির ক্ষয়ক্ষতির কারণে মামলা করা হবে।’

পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা. তৌফিক আহামেদ জানান, আরেফিন নামে এক ব্যক্তির লাশ হাসপাতাল মর্গে রয়েছে। হাসপাতালে আনার আগেই তিনি মারা যান। তবে কীভাবে বা কী কারণে মারা গেছেন তা ময়নাতদন্ত ছাড়া বলা যাবে না।

মেহেরপুর:

মেহেরপুর জেলা বিএনপির আয়োজনে ১০ দফা দাবিতে গণমিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মেহেরপুর জেলা বিএনপি’র সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য মাসুদ অরুনের নেতৃত্বে শহরের কাথুলী সড়ক থেকে গণমিছিল বের করা হয়। মিছিলটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে মেহেরপুর কাথুলী বাসস্ট্যান্ডে এসে শেষ হয়। মিছিল শেষে সমাবেশে দ্রুত এই সরকারের পদত্যাগ, অবৈধ সংসদ বাতিল ও নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন, বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও মির্জা আব্বাসসহ সকল নেতৃবৃন্দর মুক্তিসহ ১০ দফা দাবি তোলা হয়।

অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য দেন বিএনপি নেতা মাসুদ অরুন, মেহেরপুর জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি আব্দুর রহমান, পৌর বিএনপির সভাপতি জাহাঙ্গীর বিশ্বাস, সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি মারুফ আহমেদ বিজন, মুজিবনগর উপজেলা বিএনপির সভাপতি আমিরুল ইসলাম প্রমুখ।

সমাবেশে সাবেক সাংসদ মাসুদ অরুন বলেন, ‘শতবাধা পেরিয়ে বিভাগীয় সমাবেশ শেষে ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় রক্তপাতের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত সমাবেশ প্রমান করেছে বিএনপি অপ্রতিরোধ্য। তাই এই সরকারকে বিএনপি দাবি মানতেই হবে। অন্যথায় কোন নির্বাচন হবে না। কারণ বিএনপি’র ১০ দফা দেশের গণতন্ত্র, বাকস্বাধীনতা, আইনের শাসন, মানুষের জানমালের নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠাসহ একটি কার্যকর জবাবদিহিতামূলক রাস্ট্রব্যবস্থা নিশ্চিতকরণের দাবি। তিনি বলেন- তাই কালক্ষেপন না করে অবিলম্বে বেগম খালেদা জিদাসহ কারাবন্দি সকল নেতাদের মুক্তি দিয়ে গণতান্ত্রিক আচরণের পথ বেছে নিয়ে দেশকে সংঘাতের হাত থেকে মুক্ত করতে সরকারকে এগিয়ে আসার আহবান জানান তিনি।

ঝিনাইদহ:

১০ দফা দাবি বাস্তবায়নসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের মুক্তির দাবিতে ঝিনাইদহে গণমিছিল ও সমাবেশ করেছে বিএনপি। গতকাল শনিবার সকালে জেলা বিএনপির আয়োজনে ঝিনাইদহ প্রেসক্লাবের সামনে থেকে মিছিলটি বের করা হয়। সকাল থেকেই বিভিন্ন উপজেলা থেকে নেতাকর্মীরা ঝিনাইদহ শহরে মিছিল নিয়ে জমায়েত হতে থাকে। দুপুর নাগাদ ঝিনাইদহ প্রেসক্লাবের রাস্তা ও আশপাশের এলাকায় জনতার ঢেউ আছড়ে পড়ে। ঝিনাইদহ প্রেসক্লাবের সামনে থেকে বিএপির মিছিলটি শহরে প্রবেশ করতে চাইলে পুলিশ বাঁদাদেয়। ফলে পুলিশের বাধা পেয়ে শহরের মর্ডান মোড়ে মিছিলটি শেষ হয়। সেখানে অনুষ্ঠিত সমাবেশে জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক এস এম মশিয়ুর রহমান, জেলা বিএনপির সভাপতি এ্যাড. এম এ মজিদ, সাধারণ সম্পাদক জাহিদুজ্জামান মনা, সহ-সভাপতি এ্যাড মুন্সী কামাল আজাদ পান্নু, যুগ্ম সম্পাদক আব্দুল মজিদ বিশ^াস, সহ-সভাপতি আক্তারুজ্জামানসহ নেতাকর্মীরা বক্তব্য দেন।

জেলা বিএনপির সভাপতি এম এ মজিদ বলেন, ‘পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদ মির্জা ফকরুল ইসলাম আলমগীরকে সরকার আটকে রেখে প্রমাণ করেছে সবখানে তাদের হস্তক্ষেপ আছে। হাসিনা সরকার দেশের গণতন্ত্র, নির্বাচন ব্যবস্থা, মানবাধিকার, আইন আদালত, পুলিশ, র‌্যাব সবকিছুই ধ্বংস করে দিয়ে গণতন্ত্রের বানী শোনাচ্ছেন। তিনি ফকরুল ও মির্জা আব্বাসসহ গ্রেফতারকৃত নেতাকর্মীদের নিঃশর্ত মুক্তি ও তত্বাবধায়ক সরকারের অধিনে নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আরও বলেন, ‘দেশের মজলুম জনতা জেগে উঠেছে। সময় থাকতে পদত্যাগ করে চলে যান, নইলে দেশের শোষিত মানুষ টেনে হিচড়ে গদি থেকে নামাতে বাধ্য হবে।’

বাগেরহাট:

বাগেরহাটে জেলা বিএনপির অফিস ও জেলা আহ্বায়কের বাড়িতে ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে। শনিবার কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচির দিন এ ঘটনা ঘটে। বিএনপির জেলা আহ্বায়ক এ টি এম আকরাম হোসেন তালিম জানান, ‘আমাদের বাড়িতে চাচাত ভাই আলী রেজা আহম্মেদ কামালের স্ত্রী ফাতেমা বেগমকে দাফনের প্রস্তুতি চলছিল। এ সময় ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা আমাদের বাড়িতে হামলা চালায়। তারা বাড়ির শোকসন্তপ্ত মানুষজনকে মারধর করে। ঘরের দরজা, জানালা ও চেয়ার ভাঙচুর করে।’ অপরদিকে, জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এম এ সালামের কার্যালয়ে ব্যাপক ভাঙচুর করা হয়েছে বলে দাবি করেন এম এ সালাম।

উল্লেখ্য, মরহুমা ফাতেমা বেগম কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মরহুম ডা: এস এ মালেকের ভাগ্নি ছিলেন।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

পঞ্চগড়ে সংঘর্ষে বিএনপি নেতা নিহত, বাগেরহাটে ভাঙ্চুর!

আপলোড টাইম : ১১:২৯:৫৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২২

বিএনপির দাবি- ‘পুলিশ ও ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের হামলায় আহত ও আটক অন্তত দুই শতাধিক’

সমীকরণ প্রতিবেদক: সরকারের পদত্যাগ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানসহ ১০ দফা দাবিতে চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর ও ঝিনাইদহসহ সারা দেশের অন্তত ৪৪ জেলা ও মহানগরে বিএনপির গণমিছিল কর্মসূচি পালিত হয়েছে। দলীয় নেতাকর্মীদের অভিযোগ, গণমিছিল করতে গিয়ে প্রায় সব এলাকায় পুলিশের বাধার মুখে পড়তে হয়েছে নেতাকর্মীদের। কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে পঞ্চগড়ে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে এক বিএনপি নেতা নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্তত শতাধিক নেতাকর্মী। এছাড়াও পুলিশের হাতে আটক হয়েছেন আরও শতাধিক। সবমিলিয়ে আহত ও আটক হয়েছেন অন্তত দুই শতাধিক। বিএনপি নেতাকর্মীরা বলছেন, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, ঝিনাইদহ, পঞ্চগড়, নেত্রকোনা, পিরোজপুর, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, সিরাজগঞ্জ, দিনাজপুর, গাইবান্ধা, জামালপুর, লালমনিরহাট, বরিশাল, সুনামগঞ্জ, বান্দরবান, নওগাঁ, নাটোর, ভোলা, কুড়িগ্রাম, কিশোরগঞ্জ, বগুড়া, হবিগঞ্জ, খুলনা, চাঁদপুর, নারায়ণগঞ্জ, ঠাকুরগাঁও, ময়মনসিংহ, যশোর, রাঙামাটি, চাপাইনবাবগঞ্জ , মানিকগঞ্জ, কুষ্টিয়া, চট্টগ্রাম, জয়পুরহাট, পাবনা, মাগুরা, মুন্সিগঞ্জ, মাদারীপুর, রাজবাড়ী, সিরাজগঞ্জ, ফরিদপুর, সিলেট, হবিগঞ্জ, রাজশাহী ও গাজীপুরে গণমিছিল হয়েছে। এ জেলাগুলোর মধ্যে চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ, পঞ্চগড়, নীলফামারী, ফরিদপুর, গাজীপুর, রাজশাহী, মাগুরা, নোয়াখালী, লালমনিরহাটসহ বিভিন্ন এলাকায় বিএনপির গণমিছিলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বাধা দিয়েছে।

বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান সংবাদকর্মীদের জানিয়েছেন, সারা দেশে দলীয়ভাবে তথ্য পেয়েছি যুগপৎ গণমিছিল থেকে আটক হয়েছেন শতাধিক নেতাকর্মী। শুধু পঞ্চগড় জেলায় আহত হয়েছেন ৫০ জনের মতো। এছাড়া আরও কয়েকটি জেলায় ২০-২৫ জন আহত হয়েছেন। প্রায় সব জায়গায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ ক্ষমতাসীন দলের নেতারা বাধা দিয়েছেন। বোদা উপজেলার ময়দানদিঘি ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুর রশিদ আরেফিন পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন।

পঞ্চগড় জেলা পুলিশ সুপার এস এম সিরাজুল হুদা দাবি করেছেন, ‘পুলিশের পিটুনিতে নিহত হওয়ার অভিযোগ করা হচ্ছে, এরকম কোনও ঘটনা ঘটেনি। বিএনপিকে শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি করার কথা বলা হয়। জানমালের নিরাপত্তার স্বার্থে স্বাভাবিকভাবেই আমরা পর্যাপ্ত পুলিশ ফোর্স মোতায়েন করি। বিএনপি শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি না করে লাঠিসোঁটা ও ইটপাটকেল নিয়ে মিছিল করে এবং পুলিশের নির্দেশনা উপেক্ষা করে রাস্তায় নেমে ভাঙচুর করে। পুলিশের ওপর ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে।’

তিনি আরও দাবি করেন, ‘যেহেতু পুলিশের ওপর আক্রমণ করা হয়েছে এবং রাস্তায় ভাঙচুর করা হয়েছে- এ সময় পুলিশ জানমালের নিরাপত্তার স্বার্থে টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করেছে। এতে বিএনপির ২০/২৫ জন এবং পুলিশের ১০/১২ জন আহত হয়। আব্দুর রশিদ আরেফিন নামে যে ব্যক্তি মারা গেছেন তিনি মূলত বাইপাস রোগী। হৃদরোগজনিত কারণে মারা গেছেন। তার শরীরে কোন আঘাতের চিহ্ন নেই। আগামীকাল তার ময়নাতদন্ত করা হবে। আপাতত কাউকে আটক করা হয়নি। সরকারি কাজে বাধা, পুলিশের ওপর আক্রমণ, সম্পত্তির ক্ষয়ক্ষতির কারণে মামলা করা হবে।’

পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা. তৌফিক আহামেদ জানান, আরেফিন নামে এক ব্যক্তির লাশ হাসপাতাল মর্গে রয়েছে। হাসপাতালে আনার আগেই তিনি মারা যান। তবে কীভাবে বা কী কারণে মারা গেছেন তা ময়নাতদন্ত ছাড়া বলা যাবে না।

মেহেরপুর:

মেহেরপুর জেলা বিএনপির আয়োজনে ১০ দফা দাবিতে গণমিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মেহেরপুর জেলা বিএনপি’র সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য মাসুদ অরুনের নেতৃত্বে শহরের কাথুলী সড়ক থেকে গণমিছিল বের করা হয়। মিছিলটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে মেহেরপুর কাথুলী বাসস্ট্যান্ডে এসে শেষ হয়। মিছিল শেষে সমাবেশে দ্রুত এই সরকারের পদত্যাগ, অবৈধ সংসদ বাতিল ও নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন, বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও মির্জা আব্বাসসহ সকল নেতৃবৃন্দর মুক্তিসহ ১০ দফা দাবি তোলা হয়।

অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য দেন বিএনপি নেতা মাসুদ অরুন, মেহেরপুর জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি আব্দুর রহমান, পৌর বিএনপির সভাপতি জাহাঙ্গীর বিশ্বাস, সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি মারুফ আহমেদ বিজন, মুজিবনগর উপজেলা বিএনপির সভাপতি আমিরুল ইসলাম প্রমুখ।

সমাবেশে সাবেক সাংসদ মাসুদ অরুন বলেন, ‘শতবাধা পেরিয়ে বিভাগীয় সমাবেশ শেষে ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় রক্তপাতের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত সমাবেশ প্রমান করেছে বিএনপি অপ্রতিরোধ্য। তাই এই সরকারকে বিএনপি দাবি মানতেই হবে। অন্যথায় কোন নির্বাচন হবে না। কারণ বিএনপি’র ১০ দফা দেশের গণতন্ত্র, বাকস্বাধীনতা, আইনের শাসন, মানুষের জানমালের নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠাসহ একটি কার্যকর জবাবদিহিতামূলক রাস্ট্রব্যবস্থা নিশ্চিতকরণের দাবি। তিনি বলেন- তাই কালক্ষেপন না করে অবিলম্বে বেগম খালেদা জিদাসহ কারাবন্দি সকল নেতাদের মুক্তি দিয়ে গণতান্ত্রিক আচরণের পথ বেছে নিয়ে দেশকে সংঘাতের হাত থেকে মুক্ত করতে সরকারকে এগিয়ে আসার আহবান জানান তিনি।

ঝিনাইদহ:

১০ দফা দাবি বাস্তবায়নসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের মুক্তির দাবিতে ঝিনাইদহে গণমিছিল ও সমাবেশ করেছে বিএনপি। গতকাল শনিবার সকালে জেলা বিএনপির আয়োজনে ঝিনাইদহ প্রেসক্লাবের সামনে থেকে মিছিলটি বের করা হয়। সকাল থেকেই বিভিন্ন উপজেলা থেকে নেতাকর্মীরা ঝিনাইদহ শহরে মিছিল নিয়ে জমায়েত হতে থাকে। দুপুর নাগাদ ঝিনাইদহ প্রেসক্লাবের রাস্তা ও আশপাশের এলাকায় জনতার ঢেউ আছড়ে পড়ে। ঝিনাইদহ প্রেসক্লাবের সামনে থেকে বিএপির মিছিলটি শহরে প্রবেশ করতে চাইলে পুলিশ বাঁদাদেয়। ফলে পুলিশের বাধা পেয়ে শহরের মর্ডান মোড়ে মিছিলটি শেষ হয়। সেখানে অনুষ্ঠিত সমাবেশে জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক এস এম মশিয়ুর রহমান, জেলা বিএনপির সভাপতি এ্যাড. এম এ মজিদ, সাধারণ সম্পাদক জাহিদুজ্জামান মনা, সহ-সভাপতি এ্যাড মুন্সী কামাল আজাদ পান্নু, যুগ্ম সম্পাদক আব্দুল মজিদ বিশ^াস, সহ-সভাপতি আক্তারুজ্জামানসহ নেতাকর্মীরা বক্তব্য দেন।

জেলা বিএনপির সভাপতি এম এ মজিদ বলেন, ‘পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদ মির্জা ফকরুল ইসলাম আলমগীরকে সরকার আটকে রেখে প্রমাণ করেছে সবখানে তাদের হস্তক্ষেপ আছে। হাসিনা সরকার দেশের গণতন্ত্র, নির্বাচন ব্যবস্থা, মানবাধিকার, আইন আদালত, পুলিশ, র‌্যাব সবকিছুই ধ্বংস করে দিয়ে গণতন্ত্রের বানী শোনাচ্ছেন। তিনি ফকরুল ও মির্জা আব্বাসসহ গ্রেফতারকৃত নেতাকর্মীদের নিঃশর্ত মুক্তি ও তত্বাবধায়ক সরকারের অধিনে নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আরও বলেন, ‘দেশের মজলুম জনতা জেগে উঠেছে। সময় থাকতে পদত্যাগ করে চলে যান, নইলে দেশের শোষিত মানুষ টেনে হিচড়ে গদি থেকে নামাতে বাধ্য হবে।’

বাগেরহাট:

বাগেরহাটে জেলা বিএনপির অফিস ও জেলা আহ্বায়কের বাড়িতে ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে। শনিবার কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচির দিন এ ঘটনা ঘটে। বিএনপির জেলা আহ্বায়ক এ টি এম আকরাম হোসেন তালিম জানান, ‘আমাদের বাড়িতে চাচাত ভাই আলী রেজা আহম্মেদ কামালের স্ত্রী ফাতেমা বেগমকে দাফনের প্রস্তুতি চলছিল। এ সময় ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা আমাদের বাড়িতে হামলা চালায়। তারা বাড়ির শোকসন্তপ্ত মানুষজনকে মারধর করে। ঘরের দরজা, জানালা ও চেয়ার ভাঙচুর করে।’ অপরদিকে, জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এম এ সালামের কার্যালয়ে ব্যাপক ভাঙচুর করা হয়েছে বলে দাবি করেন এম এ সালাম।

উল্লেখ্য, মরহুমা ফাতেমা বেগম কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মরহুম ডা: এস এ মালেকের ভাগ্নি ছিলেন।