ইপেপার । আজ শনিবার, ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৩ ভাদ্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আলমডাঙ্গা পৌরসভার সার্ভেয়ার নিশির বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ

প্রতি মাপযোগে উৎকোচ নেন ২৫০০-৩০০০ টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক:
  • আপলোড টাইম : ১১:১৬:৩৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৩ জুলাই ২০২৪
  • / ৮১ বার পড়া হয়েছে

আলমডাঙ্গা পৌরসভার সার্ভেয়ার নিশি

বিভিন্ন দুর্নীতি, অনিয়ম ও অবৈধভাবে অর্থ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে আলমডাঙ্গা পৌরসভার সার্ভেয়ার মোর্শেদুর নাহার নিশির বিরুদ্ধে। তার বিরুদ্ধে অবৈধভাবে অর্থ দাবি করার অভিযোগ তুলে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব বরাবরে অভিযোগ দিয়েছেন পৌর এলাকার নওদা বণ্ডবিল গ্রামের মৃত আজিজুল হকের ছেলে ব্যবসায়ী জাবুর আলী। সার্ভেয়ার মোর্শেদুর নাহার নিশি আলমডাঙ্গা পৌর এলাকার বাবুপাড়ার বাসিন্দা ও আলমডাঙ্গা পৌরসভার টিকাদান কর্মী আঞ্জুমান আরা বেবির মেয়ে।
জাবুর আলীর দায়ের করা অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, আলমডাঙ্গা উপজেলার অন্তর্গত ৪৭ নম্বর মৌজা বন্ডবিল আলমডাঙ্গা পৌরসভার মধ্যে অবস্থিত আরেক খতিয়ান ৩২৯৬ আরএস দাগ ১১১০ ও ১১১১ জমির পরিমাণ ২২ শতক। ওই জমিতে তিনি সীমানা নির্ধারণ করার লক্ষ্যে গত ২০২৩ সালের ২৬ জুলাই আলমডাঙ্গা পৌরসভার মেয়র বরাবর আবেদন করেন। ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আলমডাঙ্গা পৌরসভার মেয়রের নির্দেশে সার্ভেয়ার মোর্শেদুর নাহার নিশি পর্যায়ক্রমে ০৩-০৮-২০২৩, ২৪- ৮-২০২৩, ১৮-৯-২০২৩, ২৩-১১-২০২৩, ২৯-১১-২০২৩, ৬-৩-২০২৪ তারিখে অর্থাৎ ৬ বার জমির দ্বিতীয় পক্ষ ও সার্ভে জানা গণ্যমান্য আমিনগণের উপস্থিতিতে মাপযোগ করেন। প্রতিবার মাপ যোগের ক্ষেত্রে পৌরসভার সার্ভেয়ার মোর্শেদুন নাহার নিশি ২৫০০-৩০০০ টাকা এবং আমিনদের দেওয়ার কথা বলে প্রতিবার ১ হাজার ২০০০ টাকা করে উৎকোচ নেন বলেও তিনি অভিযোগে উল্লেখ করেছেন।
অভিযোগে তিনি আরও উল্লেখ করেন, নিরুপায় হয়ে প্রতিবার টাকা দেওয়ার পরেও সার্ভেয়ার মোর্শেদুন নাহার নিশির কাছে জমি মাপের পরবর্তী প্রদান করা স্কেচ ম্যাপ চাইলে এবং স্কেচ ম্যাপ নিতে হলে তার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দিতে হবে বলে এক লাখ টাকা উৎকোচ দাবি করেন।
ভুক্তভোগী জাবুর আলী বলেন, ‘টাকা না নিয়ে স্কেচ ম্যাপ দেওয়ার জন্য বারবার অনুরোধ করলে সার্ভেয়ার মোর্শেদুন নাহার নিশি তাকে বিভিন্ন প্রকার মামলার ভয়-ভীতি দেখান। উপায় না পেয়ে ঘটনার উল্লেখ করে আমি সচিব বরাবরে অভিযোগ দিয়েছি। বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য আমার জেলা প্রশাসকের কাছে অনুরোধ। তা ছাড়া, তিনি অনেককে হয়রানি করেন। টাকা না দিলে কিছু করেন না। ওনার কাছে টাকাই সব। কিন্তু অজানা কারণে পৌর কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।’
এদিকে অভিযোগ রয়েছে, ২০১৬ সালে মোর্শেদুর নাহার নিশি প্রথমে আলমডাঙ্গা পৌরসভায় মাস্টার রুলে অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে যোগদান করেন। তবে নানা দরবারের তদবির ও অর্থের বিনিময়ে সার্ভেয়ার (আমিন) সার্টিফিকেট না থাকলেও ২০২১ সালের শেষের দিকে পৌর সার্ভেয়ার পদে যোগদান করেন।
নাম প্রকামে অনিচ্ছুক এক পৌর কর্মচারী বলেন, ‘কী আর বলব, পৌরসভা চলেই তো তার কথায়। সে একজন সার্ভেয়ার হলেও তার বিচরণ পৌরসভার সব দপ্তরে, সব বিষয়ে। কর্তা বাবুর কাছের মানুষ সে, পৌরসভার সব ক্ষমতা তো তার।’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক পৌর কর্মচারী বলেন, ‘গোড়ায় গলদ থাকলে যা হয় আর কি। সে যে সার্ভেয়ার পদে বসে আছে, সরকারি টাকা বেতন নিচ্ছে প্রতি মাসে, তার সেই সার্ভেয়ার পদের জন্য যে (সিট ফাউন্ডেশন বগুড়া, নামক প্রতিষ্ঠানের) সার্ভেয়ার সার্টিফেকেট জমা দিয়েছে, সেটাই তো ভুয়া। ভালো করে খোঁজ খবর নেন, সে চাকরি করছে শুধু মামা, খালু, আর নানাদের জোরে।’
আরেক কর্মচারী বলেন, ‘চাকরি তো আমরাও করি। আমরা তো এতো কিছু করতে পারি না। পৌরসভার বেতন তো ঠিক মতো এখনো প্রতি মাসে পাওয়া যায় না। তাহলে মাত্র দুই-তিন বছর চাকরি করেই স্বামীর থেকে পৃথক থাকার পরেও বাড়িতে লাগিয়েছে এসি। নিজের টাকায় কিনেছে স্কুটি, এতো টাকা সে পায় কোথায়?’
এ বিষয়ে পৌর মেয়র হাসান কাদির গণু মিয়া বলেন, ‘এ ধরনের কোনো অভিযোগ এখনো আমার নজরে নেই। তবে হলে তদন্ত করা হবে।’ এ বিষয়ে আলমডাঙ্গা পৌরসভার সার্ভেয়ার মোর্শেদুর নাহার নিশির সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘কে সাংবাদিক অতো আমি চিনি? আমি এতো কিছু মোবাইলে বলতেও পারব না। আমার দপ্তরে এসে দেখা কইরেন।’

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

আলমডাঙ্গা পৌরসভার সার্ভেয়ার নিশির বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ

প্রতি মাপযোগে উৎকোচ নেন ২৫০০-৩০০০ টাকা

আপলোড টাইম : ১১:১৬:৩৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৩ জুলাই ২০২৪

বিভিন্ন দুর্নীতি, অনিয়ম ও অবৈধভাবে অর্থ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে আলমডাঙ্গা পৌরসভার সার্ভেয়ার মোর্শেদুর নাহার নিশির বিরুদ্ধে। তার বিরুদ্ধে অবৈধভাবে অর্থ দাবি করার অভিযোগ তুলে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব বরাবরে অভিযোগ দিয়েছেন পৌর এলাকার নওদা বণ্ডবিল গ্রামের মৃত আজিজুল হকের ছেলে ব্যবসায়ী জাবুর আলী। সার্ভেয়ার মোর্শেদুর নাহার নিশি আলমডাঙ্গা পৌর এলাকার বাবুপাড়ার বাসিন্দা ও আলমডাঙ্গা পৌরসভার টিকাদান কর্মী আঞ্জুমান আরা বেবির মেয়ে।
জাবুর আলীর দায়ের করা অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, আলমডাঙ্গা উপজেলার অন্তর্গত ৪৭ নম্বর মৌজা বন্ডবিল আলমডাঙ্গা পৌরসভার মধ্যে অবস্থিত আরেক খতিয়ান ৩২৯৬ আরএস দাগ ১১১০ ও ১১১১ জমির পরিমাণ ২২ শতক। ওই জমিতে তিনি সীমানা নির্ধারণ করার লক্ষ্যে গত ২০২৩ সালের ২৬ জুলাই আলমডাঙ্গা পৌরসভার মেয়র বরাবর আবেদন করেন। ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আলমডাঙ্গা পৌরসভার মেয়রের নির্দেশে সার্ভেয়ার মোর্শেদুর নাহার নিশি পর্যায়ক্রমে ০৩-০৮-২০২৩, ২৪- ৮-২০২৩, ১৮-৯-২০২৩, ২৩-১১-২০২৩, ২৯-১১-২০২৩, ৬-৩-২০২৪ তারিখে অর্থাৎ ৬ বার জমির দ্বিতীয় পক্ষ ও সার্ভে জানা গণ্যমান্য আমিনগণের উপস্থিতিতে মাপযোগ করেন। প্রতিবার মাপ যোগের ক্ষেত্রে পৌরসভার সার্ভেয়ার মোর্শেদুন নাহার নিশি ২৫০০-৩০০০ টাকা এবং আমিনদের দেওয়ার কথা বলে প্রতিবার ১ হাজার ২০০০ টাকা করে উৎকোচ নেন বলেও তিনি অভিযোগে উল্লেখ করেছেন।
অভিযোগে তিনি আরও উল্লেখ করেন, নিরুপায় হয়ে প্রতিবার টাকা দেওয়ার পরেও সার্ভেয়ার মোর্শেদুন নাহার নিশির কাছে জমি মাপের পরবর্তী প্রদান করা স্কেচ ম্যাপ চাইলে এবং স্কেচ ম্যাপ নিতে হলে তার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দিতে হবে বলে এক লাখ টাকা উৎকোচ দাবি করেন।
ভুক্তভোগী জাবুর আলী বলেন, ‘টাকা না নিয়ে স্কেচ ম্যাপ দেওয়ার জন্য বারবার অনুরোধ করলে সার্ভেয়ার মোর্শেদুন নাহার নিশি তাকে বিভিন্ন প্রকার মামলার ভয়-ভীতি দেখান। উপায় না পেয়ে ঘটনার উল্লেখ করে আমি সচিব বরাবরে অভিযোগ দিয়েছি। বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য আমার জেলা প্রশাসকের কাছে অনুরোধ। তা ছাড়া, তিনি অনেককে হয়রানি করেন। টাকা না দিলে কিছু করেন না। ওনার কাছে টাকাই সব। কিন্তু অজানা কারণে পৌর কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।’
এদিকে অভিযোগ রয়েছে, ২০১৬ সালে মোর্শেদুর নাহার নিশি প্রথমে আলমডাঙ্গা পৌরসভায় মাস্টার রুলে অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে যোগদান করেন। তবে নানা দরবারের তদবির ও অর্থের বিনিময়ে সার্ভেয়ার (আমিন) সার্টিফিকেট না থাকলেও ২০২১ সালের শেষের দিকে পৌর সার্ভেয়ার পদে যোগদান করেন।
নাম প্রকামে অনিচ্ছুক এক পৌর কর্মচারী বলেন, ‘কী আর বলব, পৌরসভা চলেই তো তার কথায়। সে একজন সার্ভেয়ার হলেও তার বিচরণ পৌরসভার সব দপ্তরে, সব বিষয়ে। কর্তা বাবুর কাছের মানুষ সে, পৌরসভার সব ক্ষমতা তো তার।’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক পৌর কর্মচারী বলেন, ‘গোড়ায় গলদ থাকলে যা হয় আর কি। সে যে সার্ভেয়ার পদে বসে আছে, সরকারি টাকা বেতন নিচ্ছে প্রতি মাসে, তার সেই সার্ভেয়ার পদের জন্য যে (সিট ফাউন্ডেশন বগুড়া, নামক প্রতিষ্ঠানের) সার্ভেয়ার সার্টিফেকেট জমা দিয়েছে, সেটাই তো ভুয়া। ভালো করে খোঁজ খবর নেন, সে চাকরি করছে শুধু মামা, খালু, আর নানাদের জোরে।’
আরেক কর্মচারী বলেন, ‘চাকরি তো আমরাও করি। আমরা তো এতো কিছু করতে পারি না। পৌরসভার বেতন তো ঠিক মতো এখনো প্রতি মাসে পাওয়া যায় না। তাহলে মাত্র দুই-তিন বছর চাকরি করেই স্বামীর থেকে পৃথক থাকার পরেও বাড়িতে লাগিয়েছে এসি। নিজের টাকায় কিনেছে স্কুটি, এতো টাকা সে পায় কোথায়?’
এ বিষয়ে পৌর মেয়র হাসান কাদির গণু মিয়া বলেন, ‘এ ধরনের কোনো অভিযোগ এখনো আমার নজরে নেই। তবে হলে তদন্ত করা হবে।’ এ বিষয়ে আলমডাঙ্গা পৌরসভার সার্ভেয়ার মোর্শেদুর নাহার নিশির সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘কে সাংবাদিক অতো আমি চিনি? আমি এতো কিছু মোবাইলে বলতেও পারব না। আমার দপ্তরে এসে দেখা কইরেন।’