দামুড়হুদার কার্পাসডাঙ্গায় এই প্রথম বানিজ্যিকভাবে
- আপলোড তারিখঃ ০৩-০২-২০১৮ ইং
মৌ চাষ করে স্বাবলম্বী যুবক জানারুল ইসলাম
সুলতান জসিম/রাশেদুল ইসলাম: সীমান্তবর্তী একটি গ্রাম কুতুবপুর। ওই গ্রামেরই পশ্চিমপাড়ার শাহাবুদ্দিন সর্দারের একমাত্র ছেলে নাম জানারুল ইসলাম (৩০)। অভাব অনটনের সংসারে পড়ালেখা বেশী দুর এগুতে পারেনি। জমিজমাও তেমন নেই বললেই চলে। দু’বোনের আগেই বিয়ে হয়ে গেছে। স্ত্রী, একমাত্র মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস (৭) এবং মা, বাবা এ নিয়েই তাদের সংসার। সীমান্তে বাড়ি হলেও অন্যের দেখাদেখি জানারুল কখনও চোরাচালানি কাজে জড়িয়ে পড়েনি। অন্যের জমিতে দিনমজুরি করে কোনমতে সংসার চালিয়েছে।
প্রায় বছর দু’য়েক আগে জানারুল বাড়ি থেকে রাগ করে চলে যান গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানি উপজেলায়। ওখানে মাঠে সেচ মেশিন চালানোর কাজ নেয়। ওই কাশিয়ানিতেই পরিচয় হয় রাজশাহীর জুয়েল নামের এ মৌচাষির সাথে। তারই পরামর্শে জানারুল মাস পাঁচেক আগে গ্রামে ফিরে আসে এবং ওই জুয়েলের কাছ থেকে ৪০ হাজার টাকায় মৌচাষের প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ক্রয় করে। প্রায় আড়াই মাস ধরে তিনি গ্রামেরই সীমান্তের কোলঘেষে হুদাপাড়া মাঠে মৌচাষ শুরু করেন। গ্রামবাসী প্রথমে ঠাট্টা-মশকরা করলেও এখন তার পোয়া বারো। প্রতি সপ্তাহে প্রায় ৭ থেকে ৮ হাজার টাকার মধু বিক্রি করছেন তিনি। সংসারের ফিরতে শুরু করেছে স্বচ্ছলতা।
এ বিষয়ে মৌচাষি জানারুল জানান, কাশিয়ানিতে জুয়েল ভাইয়ের মৌচাষ দেখে আগ্রহ সৃষ্টি হয়। কিছু টাকা জোগাড় করে
বাড়ি ফিরে আসি। পরে ওই জুয়েল ভাইয়ের সাথে রাজশাহী থেকে ৪০ হাজার টাকায় ৭টি বক্স, মৌমাছিসহ ৩৫টি চাক এবং চাক থেকে মধু ছাড়ানো মেশিন কিনে নিয়ে আসি। পরে আমি একটি বক্স এবং ১০টি চাক বাড়িয়েছি। বর্তমানে মোট ৯টি বক্সে ৪৭টি চাক আছে। ২ মাসে প্রায় ১’শ ৩০ কেজির মত মধু বিক্রি করেছি। প্রতি কেজি ৩’শ টাকা করে বিক্রি করি। এলাকায় নির্ভেজাল মধুর প্রচুর চাহিদা রয়েছে। তাই বাড়ি থেকেই বিক্রি হয়ে যায়। প্রতি সপ্তাহে ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা থাকে। বাড়ি থেকে চলে গিয়েছিলেন কেন? এমন
প্রশ্নের জবাবে তিনি বললেন অভাবের তাড়নায়।
তিনি মুচকি হেসে আরও বললেন, যারা প্রথম প্রথম ঠাট্ট্রা-মশকরা করতো এখন সেই সমস্ত লোকজনই বাড়ি থেকে মধু কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। তিনি আরও জানান, একটি বক্সে ১টি মাত্র রানী মৌমাছি থাকে, আর পুরুষ মৌমাছি থাকে ৪-৫ টি। বাকীরা সবাই শ্রমিক। তারা ফুল থেকে কষ সংগ্রহের কাজে ব্যস্ত থাকে। রানী মৌমাছি না থাকলে চাকে মধু হবে না বলেও জানিয়েছেন মৌচাষি জানারুল। দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবু হেনা মোহাম্মদ জামাল শুভ জানান, মধু মহান সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত প্রাকৃতিক এন্টিবায়েটিক ওষুধ। যা সহজেই হাতের কাছে পাওয়া যায়। মধু এমন একটি দামী এবং মূল্যবান ওষুধ যার গুনের কথা বলে শেষ করা যাবে না। শিশুদের ঠান্ডা/কশি সারাতে খুবই ভাল কাজ করে। বড়দের ক্ষেত্রেও মধুর রয়েছে বিশেষ কিছু গুনাবলি। ওজন ও চর্বি কমাতে দারুণভাবে সহযোগিতা করে থাকে। এবং দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাবৃদ্ধি করে। প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর আগে মধু খেলে ভাল ঘুম হতে সাহায্য করে।
দামুড়হুদা উপজেলা কৃষি অফিসার সুফি মো. রফিকুজ্জামান বলেন, মৌমাছির ফুলে বসার মধ্যদিয়ে পরাগায়ন হয়। যে মাঠে যত বেশী মৌমাছি থাকবে সেই মাঠে ততবেশী হবে। স্বাভাবিকভাবে একবিঘা জমিতে ৪-৫ মন সরিষা হয়। মৌমাছি বেশী হলে প্রায় ২৫ ভাগ উৎপাদন বেড়ে যায়। চলতি মরসুমে উপজেলায় প্রায় আড়াইশ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। মৌচাষ করতে হলে বিচ্ছিন্নভাবে না করে কমিউনিটি আকারে সরিষার আবাদ করাটাই উত্তম।
এতে উৎপাদনও ভাল হবে এবং মৌচাষ এগিয়ে নেয়াটা সহজ হবে। তিনি আরও বলেন, শুধু সরিষার মরসুমেই নয় সারা বছরই মৌচাষ করা যাবে। কারণ আমাদের দেশে সারা বছরই কোন না কোন ফুল থাকে। ফলে সরিষা শেষে আম বাগান, লীচু বাগানেও মৌচাষ করা যাবে। মৌচাষে বিনিয়োগের তুলনায় মুনাফা বেশী। কেউ যদি বানিজ্যিকভাবে মৌচাষ করতে চান আমাদের সাথে যোগাযোগ করলে প্রয়োজনীয় পরামর্শসহ সার্বিক সহযোগিতা করা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
কমেন্ট বক্স