‘প্রেস বিফ্রিং লেখা ব্যানারে মানববন্ধন, হাস্যরসের সৃষ্টি!
- আপলোড তারিখঃ ১১-০৮-২০২২ ইং
কৃষক-কৃষাণী পরিচয়ে আসা অনেকেই ছিলেন দিনমজুর-কলেজ ছাত্রছাত্রী, সচেতনমহল বিষয়টি দ্রুত সমাধান চান
নিজস্ব প্রতিবেদক: চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মনিরুজ্জামানের বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধ একটি চক্রের নানামুখী ‘অপপ্রচার’, মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও মনগড়া খবর প্রকাশের প্রতিবাদে কৃষকদের পক্ষে প্রেস ব্রিফিং অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টায় চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাব মিলনায়তনে এ প্রেস ব্রিফিং অনুষ্ঠিত হয়। তবে প্রেস বিফ্রিং লেখা সম্বলিত ব্যানার নিয়ে মানববন্ধনে দাঁড়ানো এবং উপস্থিত সাংবাদিকদের কোনো প্রশ্নের সদুত্তোর দিতে না পারা এই প্রেস ব্রিফিংকে সমালোচিত করে। এছাড়া প্রেস বিফ্রিং করতে আসা অনেকেই দিনমজুর-কলেজছাত্র হওয়ায় হাস্যরসেরও সৃষ্টি হয়। আর এই প্রেস বিফ্রিংয়ে দামুড়হুদা উপজেলার কোন কোন কৃষক সংগঠন অংশগ্রহণ করেছে সেবিষয়ে আয়োজনকারীরা পরিস্কারভাবে কিছু বলতে পারেনি। যার কারণে অনেকেই এই বিফ্রিংকে দামুড়হুদা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মনিরুজ্জামানের মদদপুষ্ট বলে মন্তব্য করেন। তবে এবিষয়ে কৃষি কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান কোনো বক্তব্য দেননি। এছাড়া কৃষি কর্মকর্তা বিরুদ্ধে মন্তব্যকারীরাও তাদের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক। বিধায় তাদের বক্তব্য দেওয়া সম্ভব হলো না।
ব্রিফিংয়ে কৃষকদের পক্ষে লিখিত বক্তব্যে উপজেলার পাটাচোরা গ্রামের কৃষক শাহীন আলী বলেন, ‘কৃষি ক্ষেত্রে চুয়াডাঙ্গায় কর্মরত সাংবাদিকদের ইতিবাচক ভূমিকা আমাদেরকে যথেষ্ট অনুপ্রাণিত করে। গত কয়েক বছর ধরে এ জেলায় উচ্চশিক্ষিত তরুণ-তরুণীরা চাকরির পেছনে না ছুটে পৈতৃক পেশা কৃষিকাজে মনোযোগী হচ্ছেন। অনেকেই জমি বন্দোবস্ত নিয়ে আধুনিক চাষাবাদ শুরু করেছেন। এখানকার কৃষকের উৎপাদিত নিত্য নতুন ফসল-ফল ও সফলতার কাহিনী সাংবাদিকদের মাধ্যমে বিশ্ববাসী প্রতিনিয়ত জানতে পারছে।
উদ্বেগের বিষয় দামুড়হুদা উপজেলায় মফস্বল এলাকায় এক শ্রেণির সুবিধাবাদী ধান্দাবাজ সাংবাদিকতা পেশায় নাম লিখিয়ে এ পেশাকে কলুষিত করছে। ওই চক্রের সদস্যদের কাজই হচ্ছে বিভিন্ন দপ্তরে গিয়ে ভয়-ভীতি দেখিয়ে আর্থিক সুবিধা আদায় করা। প্রভাবশালীদের পক্ষ নিয়ে নিরীহ মানুষের নামে মনগড়া খবর লিখে সামাজিকভাবে হেয় করা স্বাভাবিক ঘটনা। তারই ধারাবাহিকতায় সুবিধাভোগী চক্রটি দামুড়হুদা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মনিরুজ্জামানের পেছনে উঠেপড়ে লেগেছে। আমরা জানি এ চক্রের সদস্যরা দীর্ঘদিন ধরে মিথ্যা খবর প্রকাশের হুমকি দিয়ে কৃষকের অনুকুলে বরাদ্দ ভর্তুকি মূল্যে কৃষিযন্ত্র এবং ভর্তুকির বীজ, সার ও অর্থ হাতিয়ে আসছেন। এই চক্রের কারণেই প্রকৃত প্রান্তিক কৃষকেরা তাদের ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
আমাদের জানা মতে, দামুড়হুদা প্রেসক্লাবের সভাপতি কিন্তু সাংবাদিক নয়, কথিত সাংবাদিক নামধারী এম.নুরুন্নবী, শামীম রেজা, মোজাম্মেল হক, মিরাজুল ইসলাম, তানজিরসহ কয়েকজন কৃষি অফিসে বিভিন্ন সময় ভর্তুকি ও আর্থিক সুবিধা নিয়ে থাকেন। যে শামীম রেজাকে নিয়ে ঘটনা, সেই শামীম রেজা নিজে এবং তার বাবাও পেঁয়াজের বীজের আর্থিক সুবিধা নিয়েছেন। শামীম রেজার ব্যক্তিগত বিকাশ নম্বরেই তা জমা হয়েছে। আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী এম. নুরুন্নবী পেঁয়াজের ভর্তুকির ২ হাজার ৮০০ টাকা ছাড়াও যন্ত্রখাতে ভর্তুকির ৫ লাখ ৮১ হাজার টাকা নিয়েছেন। যা খোঁজ নিলে জানা যাবে। যারা অনৈতিক সুবিধা নিয়ে কৃষকদের দিনের পর দিন বঞ্চিত করে আসছেন, তাদের হঠাৎ করেই কৃষক দরদী হতে দেখে আমরা হতবাক হয়েছি। এ কারণেই কৃষকরা সত্যের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে এবং পরবর্তীতে নেবে।’
বক্তব্যে আরও বলা হয়, কৃষি পেশার সাথে জড়িতদের অনেকেই এখনও চাষাভুষা মনে করেন। এখন দিন বদলে গেছে। অন্তত ভালো-মন্দ চেনার সক্ষমতা তাদের আছে। দামুড়হুদা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান কর্মদক্ষতায় অনেক যোগ্য। তিনি কৃষকদের সার-কীটনাশকের বৈধ প্রতিষ্ঠান চিহ্নিত করতে স্বতন্ত্র সাইনবোর্ড চালু, ন্যায্য দামে সার পাওয়া নিশ্চিত, কৃষকদের সংগঠিত, বজ্রপাতে কৃষকদের প্রাণহানী ঠেকাতে মাঠে মাঠে কৃষকদের জন্য বজ্র শেল্টার স্থাপন, উচ্চ মূল্যের ফসল আবাদ ও সম্প্রসারণ, কার্যালয়ের সেবা সহজ ও মানোন্নয়ন, সরকারি প্রণোদনা ও সাহায্য স্বচ্ছতার সাথে আনুষ্ঠানিকভাবে বিতরণ করেছেন। সেই সাথে মোটিভেশনাল ভ্রমণসহ কৃষক ও কৃষক পরিবারের সদস্যদের বিনোদনে নানারকম খেলাধুলার আয়োজনও করে আসছেন। তার মতো সৎ ও যোগ্য কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের কারণে এ উপজেলায় কৃষি কাজ ব্যাহত হচ্ছে। প্রেস ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন কৃষক শামসুল, আব্দুর রাজ্জাক ও নূর ইসলামসহ শতাধিক কৃষাণ-কৃষাণী।
অন্যদিকে, প্রেস বিফ্রিং শেষে চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবে উপস্থিত সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নের জবাবে দিতে পারেননি প্রেস বিফ্রিং করতে আসা কৃষক সংগঠনের নেতা পরিচয়দানকারীরা। এসময় তারা চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের নিচে অন্যান্য ব্যানারের সাথে প্রেস বিফ্রিং লেখা সম্বলিত ব্যানার নিয়ে মানববন্ধনে দাঁড়িয়ে পড়ে। যা হাস্যরসের সৃষ্টি করে। একইসাথে প্রেস বিফ্রিং করতে আসা অনেকের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তারা কেউ কলেজে পড়ে আবার কেউ দিনমজুর। যার কারণে সচেতনমহল এই প্রেস বিফ্রিং ও মানববন্ধন নিয়ে নানা প্রশ্ন তুলেছেন। তবে সবারই দাবি বিষয়টি দ্রুত সমাধান হোক।
কমেন্ট বক্স