বেহাল দশা শিক্ষা খাতে
- আপলোড তারিখঃ ২১-১১-২০২০ ইং
সমীকরণ প্রতিবেদন:
করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে ১৭ মার্চ থেকে। সরাসরি পাঠদান বন্ধ থাকায় এ বছরের প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা, জেএসসি-জেডিসির পাশাপাশি বাতিল করা হয়েছে এইচএসসি পরীক্ষাও। আগামী বছরের এসএসসি পরীক্ষাও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও এখন সেশনজট চরমে।
প্রাথমিকে সিদ্ধান্ত নেই ধোঁয়াশা মাধ্যমিকে
চূড়ান্ত হয়নি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি
সমীকরণ প্রতিবেদন:
প্রাথমিক শিক্ষা থেকে শুরু করে উচ্চশিক্ষার বিদ্যাপীঠ বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত শিক্ষায় বেহাল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে করোনাভাইরাসের কারণে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার সব পর্যায়েই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ছাত্রছাত্রীরা। বাতিল করা হয়েছে এ বছরের প্রাথমিক সমাপনী, জেএসসি- জেডিসি ও এইচএসসি পরীক্ষা। প্রথম শ্রেণি থেকে শুরু করে নবম শ্রেণি পর্যন্ত বার্ষিক পরীক্ষা বাতিল করা হলেও প্রাথমিকের শিক্ষার্থীরা কিসের ভিত্তিতে ওপরের শ্রেণিতে প্রমোশন পাবে, সে বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি সরকারের পক্ষ থেকে। অ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নের কথা বলা হলেও সেটি নিয়েও রয়েছে ধোঁয়াশা। করোনার কারণে আগামী বছরের এসএসসি পরীক্ষা যথাসময়ে অনুষ্ঠিত হওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
তথ্যমতে, চলতি শিক্ষাবর্ষ শেষ হতে মাত্র ৪০ দিন বাকি। এখন পর্যন্ত প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নের ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত না আসায় বিপাকে পড়েছেন শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা। অনেক বিদ্যালয় নিজেরা বাসায় সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন পাঠিয়ে পরীক্ষা নিচ্ছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা বলছেন, শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নের জন্য প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দ্রুত সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দেওয়া উচিত, যেন বিদ্যালয়গুলো প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে পারে। এ ব্যাপারে সম্প্রতি সচিবালয়ের নিজ দফতরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে যদি আমরা করোনামুক্ত হতে পারি, তাহলে স্ব স্ব বিদ্যালয় মূল্যায়নের ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের পরবর্তী শ্রেণিতে উত্তীর্ণ করবে। তবে নির্দিষ্ট কোনো প্রক্রিয়া বা পদ্ধতির কথা তিনি বলেননি। অ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের নির্দেশনা দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কিন্তু মূল্যায়নের ক্ষেত্রে নম্বর দেওয়ার কোনো নিয়ম রাখা হয়নি। মূল্যায়নের ক্ষেত্রে চারটি সূচক ‘অতি উত্তম, উত্তম, ভালো ও অগ্রগতি প্রয়োজন’ রাখা হয়েছে। এ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন শিক্ষকরা। তারা বলছেন, ছাত্রছাত্রীদের এক ক্লাস থেকে অপর ক্লাসে উত্তীর্ণের ক্ষেত্রে রোল নম্বর হিসেবে বিবেচনা করতে হয়। শিক্ষার্থীদের কীভাবে রোল নম্বর নির্ধারণ করা হবে সে ব্যাপারে কোনো নির্দেশনাই দেওয়া হয়নি এখনো। এ ছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে অ্যাসাইনমেন্ট ছাত্রছাত্রীদের সরবরাহ করার কথা থাকলেও প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ এ নিয়ে পড়েছেন বিপাকে। কারণ অ্যাসাইনমেন্ট শিক্ষার্থীদের দিতে হয় ফটোকপি করে। সেক্ষেত্রে হাজার হাজার টাকা খরচ হচ্ছে স্কুলগুলোর। রাজধানীর মগবাজার মধুবাগে শের ই বাংলা স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ ড. আবদুস সাত্তার প্রতিবেদককে জানান, প্রতিষ্ঠানের অনেক শিক্ষক নন এমপিওভুক্ত। ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে করোনার কারণে টিউশন ফি আদায় করা সম্ভব হয়নি। অনেক অভিভাবক অ্যাসাইনমেন্ট সম্পর্কে জানে না। তাই তাদের ফটোকপি করে সরবরাহ করতে হয়। এ নিয়ে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সংকটে পড়েছে। প্রতিবছর ফেব্রুয়ারির শুরুতে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হলেও আগামী বছরের এ পরীক্ষার জন্য শিক্ষার্থীদের ফরম ফিলাপও হয়নি। নেওয়া হয়নি টেস্ট পরীক্ষাও। ফেব্রুয়ারিতে এ পরীক্ষা হচ্ছে না বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিক্ষাবোর্ডের নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানিয়েছে। এর আগে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, ফেব্রুয়ারিতে এসএসসি পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব না হলে পরে সুবিধাজনক সময়ে এই পরীক্ষা নেওয়া হবে। এ ছাড়া প্রতিবছর সেপ্টেম্বর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হলেও এবার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় কবে এই প্রক্রিয়া শুরু হবে সে ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার ব্যাপারে শিক্ষা মন্ত্রণালয় তাগিদ দিলেও বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় ইতোমধ্যে জানিয়েছে তারা এ প্রক্রিয়ায় যাবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা প্রথমে ‘প্রক্টরড রিমোট এক্সামিনেশন সিস্টেম’ সফটওয়্যার ব্যবহার করে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার কথা বললেও পরে সম্প্রতি এক বৈঠকে জানায়, এই সফটওয়্যার দিয়ে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার মতো সক্ষমতা দেশে এখনো তৈরি হয়নি। এই সফটওয়্যার দিয়ে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার ফলে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হতে পারে। তাই বাতিল করা হয় এ প্রক্রিয়া। এখন পর্যন্ত ভর্তি পরীক্ষার ব্যাপারে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে গত ১৭ মার্চ থেকে সব ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়। তবে করোনার প্রকোপ কিছুটা কমার পর গত আগস্ট মাসে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কওমি মাদরাসা খোলার অনুমতি দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। করোনা মহামারীর মধ্যেই ইংলিশ মিডিয়ামের ‘ও’ লেভেল এবং ‘এ’ লেভেলের পরীক্ষা গত অক্টোবরে শুরু হয়ে কোনো কোনো পরীক্ষা চলছে এখনো। করোনার মধ্যে পরীক্ষা নেওয়া নিয়ে এর আগে সাংবাদিকদের সঙ্গে ভার্চুয়াল মাধ্যমে আলাপে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি জানিয়েছেন, এই পরীক্ষার্থীদের সংখ্যা কম হওয়া স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরীক্ষা নিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
এইচএসসির ফল কীভাবে চূড়ান্ত হয়নি এখনো
সংশয়ে বিভাগ পরিবর্তন করা ফলপ্রার্থীরা
সমীকরণ প্রতিবেদন:
করোনার প্রাদুর্ভাবে এবারের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে। এসব শিক্ষার্থীকে জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি)-জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) ও এসএসসির ফলের গড় অনুযায়ী ফল নির্ধারণের ঘোষণা দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এতে এবার শতভাগ শিক্ষার্থীই পাস করবে। তবে বিভাগ পরিবর্তনকারী ও মানোন্নয়নে আবেদনকারী শিক্ষার্থীদের ফলাফল নিয়ে দেখা দিয়েছে জটিলতা। এ ব্যাপারে এইচএসসির ফলাফল সংক্রান্ত পরামর্শক কমিটির আহ্বায়ক শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব নাজমুল হক খান বলেন, ‘কমিটি ফল তৈরির বিষয় নিয়ে কাজ করছে। দ্রুতই এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানানো হবে। এইচএসসির ফল তৈরির রূপরেখা ও প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কমিটির সুপারিশ পাওয়ার পরই এ ব্যাপারে বলা যাবে।’ এইচএসসির পরই শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের লেখাপড়ায় যায়। ভবিষ্যতে তারা কোন পেশায় যেতে পারবে এ পর্যায়েই তা অনেকখানি নির্ধারিত হয়ে যায়। ফলে এইচএসসি পরীক্ষা শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এবার এইচএসসি পরীক্ষা না হওয়ায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আগামী শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় ১০০ নম্বরের মধ্যে এসএসসি ও এইচএসসির ফলাফলের জন্য মাত্র ২০ নম্বর নির্ধারণ করেছে। আগে ২০০ নম্বরের মধ্যে এসএসসি ও এইচএসসির জন্য নির্ধারিত ছিল ৮০ নম্বর। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যারা দুই বছর ধরে পড়াশোনা করল, তার কোনো মূল্যায়ন না রেখে তিন-চার বছর আগে একজন শিক্ষার্থী কী করেছে, তা দিয়ে মূল্যায়ন করলে প্রশ্ন থেকেই যায়। যার ব্যাপক প্রভাব পড়বে উচ্চশিক্ষায়। কারণ অনেক শিক্ষার্থীই হয়তো এসএসসিতে কোনো কারণে খারাপ করেছিল, তবে এইচএসসিতে তা পোষানোর জন্য প্রস্তুতি নিয়েছিল। কিন্তু পরীক্ষা না হওয়ায় তা আর সম্ভব হলো না। এতে সে হয়তো ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ারই সুযোগ পাবে না। উচ্চ মাধ্যমিকে শিক্ষার্থীদের সাতটি বিষয়ে ১৩টি প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা দিতে হয়, যে বিষয়গুলোর প্রাপ্ত ফলাফল পরবর্তী সময়ে নম্বরপত্রে তোলা হয়। বায়োলজি, গণিত, পদার্থ, রসায়ন বিজ্ঞানের বিষয়গুলোর আলাদা পত্র রয়েছে এইচএসসিতে; তবে এসএসসিতে তা নেই। আর জেএসসিতে এসএসসির চেয়েও বিষয় কম। জানা যায়, ২০১৯ সালের এইচএসসি ও সমমানের মোট পরীক্ষার্থী ছিল ১৩ লাখ ৩৬ হাজার ৬২৯ জন। এর মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছিল ৯ লাখ ৮৮ হাজার ১৭২ জন। গতবার অকৃতকার্য হয়েছিল তিন লাখ ৪৮ হাজার ৪৫৭ জন শিক্ষার্থী। যাদের মধ্যে এক বিষয়ে অকৃতকার্য এক লাখ ৬০ হাজার ৯২৯ জন, দুই বিষয়ে অকৃতকার্য ৫৪ হাজার ২২৪ জন এবং সব বিষয়ে অকৃতকার্য ৫১ হাজার ৩৪৮ জন এবার পরীক্ষার্থী রয়েছে। যারা এবার আর কোনো পরীক্ষায় অংশ না নিলেও উচ্চ মাধ্যমিকের সনদ পাবে। ফলে মূল্যায়নপদ্ধতি নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন সংশ্লিষ্টরা। শিক্ষাবোর্ড সূত্রে জানা যায়, গত বছর এইচএসসিতে জিপিএ ৫ পেয়েছিল মাত্র ৪৭ হাজার শিক্ষার্থী। কিন্তু জেএসসি ও এসএসসির ফলাফলের ভিত্তিতে এইচএসসির মূল্যায়ন হলে জিপিএ ৫ প্রাপ্তির সংখ্যাও দ্বিগুণ বেড়ে যাবে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে জটিলতা তৈরি হবে। এ ছাড়া যারা এইচএসসিতে এসে বিভাগ পরিবর্তন করেছে, তাদের মূল্যায়ন নিয়েও জটিলতা তৈরি হবে। কারণ তাদের এসএসসি ও এইচএসসির বেশির ভাগ বিষয়ের সঙ্গেই মিল নেই।
শিক্ষাবিদসহ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশগুলোও এ ধরনের বড় পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। এইচএসসি পরীক্ষা যখন বাতিল করা হয়, সেই সময়েই ইংলিশ মিডিয়ামের ‘ও’ এবং ‘এ’ লেভেলের পরীক্ষা গ্রহণের অনুমতি ঠিকই দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। বিদেশে পড়তে ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদেরও এবারের এইচএসসির ফলাফল ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়াবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এইচএসসি পরীক্ষার ফলকেই সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়। কিন্তু পরীক্ষা ছাড়া এইচএসসির ফল এবার তারা কতটা মূল্যায়ন করবে তা নিয়ে সন্দিহান তারা।
ক্লাস নেই, সেশনজটে নাকাল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়
সমীকরণ প্রতিবেদন:
করোনাভাইরাসের কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে সেশনজট বেড়েই চলেছে। যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে সেশনজট ছিল না সেগুলোতেও এখন প্রায় এক বছরের সেশনজট শুরু হয়েছে। বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত সাত কলেজের শিক্ষার্থীরাও এ কারণে বিপাকে পড়েছেন। করোনা শুরু হওয়ার পর বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইন ক্লাস শুরু হলেও সিংহভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ক্লাস বন্ধ রয়েছে। এদিকে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো চলছে দায়সারাভাবে। কোর্স শেষ করতে নামেমাত্র অনলাইন ক্লাস চালু রেখেছে বেশির ভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের সিংহভাগ বিভাগে অনলাইনে ক্লাস চলমান আছে। গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী নাসিমুল হুদা জানান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ার সময় পঞ্চম সেমিস্টারে ছিলাম আমরা। অনলাইনে ক্লাস শেষ করে ফাইনাল পরীক্ষা না নিয়ে ষষ্ঠ সেমিস্টারের ক্লাস শুরু হয়েছে। করোনার কারণে পরীক্ষা না হওয়ায় এরই মধ্যে বিভাগগুলো সেশনজটে পড়তে শুরু করেছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক জানান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ার পর প্রথমদিকে পুরোদমে অনলাইন ক্লাস চললেও এখন চলছে দায়সারাভাবে। কোনো বিভাগ নিচ্ছে, কোনো বিভাগ নিচ্ছে না। শিক্ষার্থীদের অংশ গ্রহণও কমে গেছে ক্লাসগুলোতে। ক্লাসের লেকচার ভিডিও শিক্ষার্থীদের দেওয়ার কথা থাকলেও তা দেওয়া হচ্ছে না। এভাবেই দায়সারাভাবে চলছে চবির অনলাইন ক্লাস। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় দীর্ঘমেয়াদি সেশনজটের শঙ্কা রয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১ বিভাগে। এরমধ্যে কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট, আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট, ইংরেজি ও নাট্যকলা বিভাগ, জীববিজ্ঞান অনুষদের প্রাণিবিদ্যা বিভাগ এবং স্পোর্টস সায়েন্স বিভাগ অন্যতম।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি জানান, করোনা প্রকোপের শুরুর দিকে কিছু বিভাগে অনলাইন ক্লাস শুরু হলেও ক্রমে তা কমেছে। বর্তমানে অধিকাংশ বিভাগে এ ক্লাস হচ্ছে না। এ ছাড়া বর্তমানে উপাচার্যের অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে বন্ধ ক্যাম্পাসেও বিরাজ করছে উত্তেজনা। শিক্ষকরাও পক্ষে-বিপক্ষে দুই ভাগে ভাগ হয়েছেন। এর প্রভাব পড়েছে একাডেমিক কার্যক্রমে। এর কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি জানান, প্রথমদিকে বেশিরভাগ বিভাগে অনলাইন ক্লাস শুরু হলেও তা গতি পায়নি। যেগুলোতে অনলাইন ক্লাস হচ্ছে সেগুলোতেও শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির হার ২০ থেকে ২৫ শতাংশ। কিছু বিভাগ অনলাইনে কোর্স শেষ করলেও পরীক্ষা না হওয়ায় সেশনজট বাড়ছে। রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক বিভাগে দুই থেকে আড়াই বছরের সেশনজট বিরাজ করছে। গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, বাংলা, ইংরেজি, ভূগোল ও পরিবেশবিজ্ঞানসহ প্রায় সবকটি বিভাগেই সেশনজট বিরাজ করছে বলে জানা গেছে। গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের চতুর্থ বর্ষ প্রথম পর্বের শিক্ষার্থী রাব্বী হাসান সবুজ প্রতিবেদকের কাছে অভিযোগ করে বলেন, ইউজিসির নির্দেশনা থাকলেও এ বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইন ক্লাস শুরু করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। এ বিভাগে বর্তমানে দুই বছরের সেশনজট চলছে।
জানা গেছে, ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ফাজিল অনার্স প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় এবং চতুর্থবর্ষ পরীক্ষা ২০১৯ শেষ হয়েছে গত বছরের ৮ ডিসেম্বর। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় পরীক্ষার পর দীর্ঘ ১০ মাস অতিবাহিত হলেও ফলাফল পাননি এ শিক্ষার্থীরা। এতে করে চাকরিতে আবেদন করতে না পারা ছাড়াও সেশনজটের মধ্যে পড়ে গেছেন ছাত্রছাত্রীরা। করোনায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় সেশনজটের দুর্ভোগ জেঁকে বসেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত রাজধানীর সরকারি সাত কলেজের কয়েক লাখ শিক্ষার্থীর ওপর। এসব কলেজেও ক্লাস চলছে দায়সারাভাবে।
কমেন্ট বক্স