রাতে-দিনে শীতের কাঁপন
- আপলোড তারিখঃ ১৩-০১-২০২০ ইং
চুয়াডাঙ্গায় কনকনে হিমেল হাওয়া, দুর্বিষহ জীবনযাত্রা
সমীকরণ প্রতিবেদক:
ঘন কুয়াশার আড়ালে ঢাকা সূর্য। রোদের খুব একটা দেখা নেই। হাড় কনকনে অসহ্য হিমেল হাওয়া বয়ে যাচ্ছে। দিনের তাপমাত্রার পারদও নেমে গেছে রাতের তাপমাত্রার খুব কাছাকাছি। চুয়াডাঙ্গায় দুই-তিন দিন যাবৎ দিন এবং রাতের বেলায় তাপমাত্রার পার্থক্য কমে গেছে খুবই অস্বাভাবিক পর্যায়ে। গতকাল রোববার চুয়াডাঙ্গায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৯.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গাঢ় কুয়াশা ও আকাশ মেঘলা, সেই সঙ্গে উত্তর-পশ্চিম ও উত্তর দিক থেকে হিমেল হাড় কনকনে হাওয়া বইছে চুয়াডাঙ্গায়। এ অবস্থায় চুয়াডাঙ্গার স্বাভাবিক জীবনযাত্রা দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে। দিনের বেলায়ও কাঁপছে মানুষ ঘন কুয়াশা ও হিমেল হাওয়ায় শীতের তীব্রতায়। যা আজও অব্যাহত থাকার আভাস দিয়েছে আবহাওয়া বিভাগ।
তীব্র শীতে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার দীননাথপুর গ্রামের আব্দুল হাকিম বলেন, ‘আমরা খেটে খাওয়া মানুষ। প্রতিদিন কাজ না করলে আমাদের সংসার চলে না। কয়েকদিন যাবত অতিরিক্ত কুয়াশা ও প্রচণ্ড ঠান্ডা বাতাসের কারণে আমরা কাজে যেতে পারছি না। আমরা দিন আনি দিন খাই। ঘন কুয়াশা ও ঠান্ডার কারণে হাত-পা অবশ হয়ে আসছে। কোনো কাজকর্ম করতে পারছি না।’
আইনুল হক নামের এক ছাত্র বলেন, ‘তীব্র শীতের জন্য জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ বাড়ি থেকে বের হচ্ছে না। শীত ও ঠান্ডা আবহাওয়ায় উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কমে গেছে। সকালের তীব্র শীতে আমি নিজেও কলেজে যেতে পারছি না।’
চুয়াডাঙ্গা জেলা আবহাওয়া অফিসের পর্যবেক্ষক সামাদুল হক জানান, চুয়াডাঙ্গা জেলায় তাপমাত্রার পারদ কিছুটা বাড়লে শীতল হাওয়া বয়ে যাওয়ায় শীতের মাত্রা বেশি অনুভুত হচ্ছে। রোববার চুয়াডাঙ্গায় সর্বম্নি তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ দশমিকত ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রাতে ঘন কুয়াশা থাকবে। চুয়াডাঙ্গার ওপর দিয়ে যে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে, তা আরও দুই-তিন দিন অব্যাহত থাকতে পারে।
শুধু চুয়াডাঙ্গা নয়, রাতে-দিনে তীব্র শীতের কাঁপন এখন দেশজুড়ে। রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে থমকে গেছে স্বাভাবিক জনজীবনের গতি। কুয়াশার সঙ্গে ধূলোবালি, ধোঁয়ায় দূষণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। সর্দি-কাশি, ভাইরাস জ্বর, শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়া, ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন ধরনের রোগব্যাধিতে মানুষ ঘরে ঘরে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। হাসপাতাল-ক্লিনিক, ডাক্তারের চেম্বারে প্রতিদিনই বাড়ছে রোগীর ভিড়। সড়ক-মহাসড়ক, নৌ ও রেলপথে যানবাহনের গতি থমকে গেছে। বেড়েছে ঝুঁকি। আকাশপথেও বিলম্বে ছাড়ছে ফ্লাইট। সর্বত্র মানুষের কর্মঘণ্টা নষ্ট ও অপচয় ঘটছে বৈরি আবহাওয়ায়।
আবহাওয়া বিভাগ বলছে, শীত ও কুয়াশার একটি বলয় অর্থাৎ উপমহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের বর্ধিতাংশ এখন বাংলাদেশের পশ্চিমাঞ্চল ও এর সংলগ্ন এলাকা পর্যন্ত বিস্তার লাভ করেছে। এরফলে রাতের তাপমাত্রার তুলনায় অনেক জায়গায় দিনের তাপমাত্রা কমে গেছে এবং শীতের দাপট হঠাৎ করে বৃদ্ধি পেয়েছে। গতকাল দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল রংপুর বিভাগের রাজারহাটে ৯.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রাতের তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে গেলে বাংলাদেশের আবহাওয়ায় একে বলা হয় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। কিন্তু গত দুই দিন ঢাকাসহ দেশের অনেক জায়গায় দিনের (সর্বোচ্চ) তাপমাত্রার অস্বাভাবিক পতন, ঘন কুয়াশা, মেঘলা আকাশ, উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে হিমেল কনকনে হাওয়া প্রবাহিত হওয়া- এসব কারণে প্রায় সারা দেশে তীব্র শীতে মানুষের কষ্ট ও দুর্ভোগ অসহনীয় হয়ে উঠেছে।
আজ সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে জানা গেছে, সারা দেশে মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে। দেশের কোথাও কোথাও গাঢ় কুয়াশাপাত বিকেল পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। ঈশ্বরদী, কুড়িগ্রাম, পঞ্চগড়, কুষ্টিয়া অঞ্চলের ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে। সারা দেশে রাতের তাপমাত্রা কিছুটা হ্রাস পেতে পারে। দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টায় আবহাওয়ায় সামান্য পরিবর্তন হতে পারে। এরপরের ৫ দিনে রাতের তাপমাত্রা বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে।
এদিকে উত্তর-পশ্চিম দিকে থেকে আসা হিমালয়ের হিমেল কনকনে হাওয়া ও ঘন কুয়াশায় সর্বত্র মানুষের কষ্ট-দুর্ভোগ বেড়েই চলেছে। পৌষ মাসের প্রথম তিন দিন পর টানা প্রায় তিন সপ্তাহেরও বেশিদিন যাবৎ শীতের দাপটে দেশজুড়ে জনজীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে। ব্যবসা-বাণিজ্য, লেনদেন, কর্মজীবী মানুষের আয়-রোজগার ও কর্মচাঞ্চল্য, মালামাল ডেলিভারি পরিবহন, ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসা, গ্রামীণ অর্থনীতি, কৃষি-খামারসহ সর্বক্ষেত্রে স্থবিরতা বিরাজ করছে। প্রায় মাসজুড়ে শীতকষ্টে দিশেহারা হয়ে পড়েছে দিনে এনে দিনে খাওয়া হতদরিদ্র শ্রমজীবী মানুষজন। সকালবেলায় শিশু-কিশোর শিক্ষার্থীদের স্কুল-মাদ্রাসায় আসা-যাওয়া ব্যাহত হচ্ছে। আবার অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েছে।
কমেন্ট বক্স