বিগত দেড় দশকে ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনার সরকার দেশে লুটপাটের রাজ্য তথা চোরতন্ত্র কায়েম করে। এতে এক দিকে যেমন তার দোসর ব্যবসায়ীগোষ্ঠী ধনী হয়েছে, অন্য দিকে গরিব আরো গরিব ও নিঃস্ব হয়েছে। ফলে দেশের সামাজিক ভারসাম্য ভেঙে পড়েছিল। বাস্তবতা হলো ক্ষমতার উত্তাপে ক্ষমতাসীন দুর্বৃত্তরা অবাধে জনগণের অর্থ লুটপাটে ঝাঁপিয়ে পড়ে। তাদের সবচেয়ে বড় লক্ষ্য ছিল ব্যাংক খাতের দিকে। এ খাত থেকে এখন পর্যন্ত চার লাখ কোটি টাকা লোপাট হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে।
জাতীয় একটি পত্রিকার খবর বলছে, সরকার গঠিত ১১টি তদন্তদলের অনুসন্ধানে ১০ শিল্পগোষ্ঠীসহ শেখ পরিবারের বিরুদ্ধে ব্যাংক ঋণে অনিয়ম, কর ফাঁকি ও অর্থপাচারসহ নানা ধরনের দুর্নীতির তথ্য উঠে এসেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি অনিয়ম ও অর্থপাচারের তথ্য পাওয়া গেছে এস আলম গ্রুপের বিরুদ্ধে। শেখ হাসিনার অন্যতম অর্থের জোগানদাতা এই এস আলম একাই ব্যাংক থেকে হাতিয়ে নিয়েছেন সোয়া দুই লাখ কোটি টাকা। লুণ্ঠিত এ অর্থের এক লাখ ১৮ হাজার কোটি টাকা দেশের সর্ববৃহৎ ইসলামী ব্যাংকের। এসব ঘটনায় একাধিক মামলা হয়েছে।
পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনতে সরকার একটি বিশেষ অধ্যাদেশ প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে। সেই সাথে এ অর্থ উদ্ধারে কোন ধরনের আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেয়া হবে তা নির্ধারণের কাজ চলছে। এ প্রক্রিয়ায় সহায়তা দিচ্ছে বিশ্বব্যাংকের উদ্যোগে গঠিত পাচার করা অর্থ উদ্ধারে অভিজ্ঞ বিশেষজ্ঞদল। অন্তর্বতী সরকার লুটেরাদের এক লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার সম্পদ জব্দ করেছে। সেই সাথে ৪২ হাজার কোটি টাকার শেয়ার জব্দ করা হয়েছে। এর মধ্যে শুধু শেখ হাসিনার পরিবারের সদস্যদেরই আছে ৬৩৫ কোটি টাকা। এ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর জানিয়েছেন, লুটেরাদের অর্থ দিয়ে একটি বিশেষ তহবিল গঠন করা হবে। সে তহবিল থেকে বিভিন্ন ব্যাংকের ক্ষতিগ্রস্ত আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দেয়া হবে। বাকি অর্থ গরিব মানুষের কল্যাণে ব্যয় করা হবে। তিনি আরো জানান, আদালতের সিদ্ধান্ত ও প্রয়োজনে আইন সংশোধনের মাধ্যমে এ তহবিল গঠন করা হবে। পতিত সরকারের দোসর লুটেরাশ্রেণীর আত্মসাৎ করা রাষ্ট্রীয় অর্থসম্পদ উদ্ধার করে জনকল্যাণে ব্যয় করার এ উদ্যোগ ইতিবাচক। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ভাগ্যোন্নয়নে ড. ইউনূসের সরকার যে আন্তরিক এই পদক্ষেপ থেকে তা স্পষ্ট।
দেশে গরিব মানুষের সংখ্যা যে আগের চেয়ে বেড়েছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। সম্প্রতি বিশ্বব্যাংক এক প্রতিবেদনে বলেছে, বাংলাদেশে এক বছরের মধ্যে আরো ৩০ লাখ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে যাবে। এমনিতে করোনা মহামারীর সময় দেশে অতি দারিদ্র্যের হার বেড়েছে। তাদের বেশির ভাগই সেই অবস্থা কাটিয়ে উঠতে পারেনি। তাই উদ্ধারকৃত লুটপাটের অর্থ দিয়ে তহবিল গঠন করে সরকারের জনকল্যাণের এ পরিকল্পনা সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য। উদ্ধার হওয়া অর্থ দিয়ে প্রান্তিক গোষ্ঠীর জন্য সরকার দারিদ্র্যবিমোচনে সামাজিক কর্মসূচির আওতা আরো বাড়াতে পারবে, যা কিছুটা হলেও সামাজিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে সহায়ক হবে।