সোমবার, ২৩ জুন, ২০২৫
সর্বশেষ স্থানীয় সংবাদ জাতীয় রাজনীতি আর্ন্তজাতিক সারাদেশ অর্থনীতি খেলা বিনোদন ফ্যাক্টচেক আজকের পত্রিকা প্রযুক্তি চাকরি

ব্যাংক খাতে লুটপাট; দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন

  • আপলোড তারিখঃ ২০-০৫-২০২৫ ইং
ব্যাংক খাতে লুটপাট; দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন

গত দেড় দশকের লুটপাটের যে ভয়াবহ চিত্র ক্রমেই প্রকাশ পাচ্ছে, তা ভাবনারও অতীত। নানা খাতেই চলছিল এই মহালুটপাট। ব্যাংক খাতও তার বাইরে নয়। পরিচালকের তকমা লাগিয়ে এক ব্যাংকের পরিচালক অন্য ব্যাংকের টাকা মেরে দিয়েছেন যোগসাজশ করে। নামে-বেনামে, ভুয়া নথিপত্র আর জাল দলিলে রীতিমতো ‘হাওয়া’ করে দিয়েছেন শতকোটি নয়, হাজার কোটি নয়, প্রায় আড়াই লাখ কোটি টাকা। এমন দৃষ্টান্ত গোটা বিশ্বেই বিরল। অথচ ব্যাংকগুলোতে নানা ধরনের সংকট চলছে। সৎ উদ্যোক্তারা উচ্চহারে সুদ দিয়েও প্রয়োজনীয় ঋণ পাচ্ছেন না। এককথায় ব্যাংকিং সেবা বা ব্যাংক ব্যবস্থার আসল উদ্দেশ্যই ব্যাহত হচ্ছে। কিন্তু নজিরবিহীন আর্থিক কেলেঙ্কারির ‘নায়ক’ ওই ব্যাংক পরিচালকদের শাস্তি হচ্ছে না। ব্যাংক খাতের এমন নজিরবিহীন লুটপাট নিয়ে গতকাল কালের কণ্ঠে একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনা ও বিশ্লেষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দেশে বর্তমানে নতুন-পুরনো মিলিয়ে সরকারি-বেসরকারি ৫২টি এবং ৯টি বিদেশি ব্যাংক রয়েছে। এসব ব্যাংকের মোট পরিচালকের সংখ্যা ৭৬০। তাঁদের মধ্যে এক শরও বেশি পরিচালক ব্যাংকিং খাতে মূলত লুটপাট চালিয়েছেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা যায়, গত বছরের ২০ আগস্ট পর্যন্ত ব্যাংক খাতে পরিচালকদের ঋণের পরিমাণ ছিল দুই লাখ ৩৩ হাজার ৮৮৫ কোটি টাকা। ২০১৬ সালে এই ঋণের পরিমাণ ছিল প্রায় ৯০ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ আট বছরে ব্যাংক থেকে নামে-বেনামে পরিচালকদের ঋণ তুলে নেওয়ার পরিমাণ বেড়েছে প্রায় ১৬০ শতাংশ। ডিসেম্বরের হালনাগাদ প্রতিবেদন তৈরির কাজ করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এটি চূড়ান্ত হলে পরিচালকদের ঋণের হালনাগাদ তথ্য পাওয়া যাবে। জানা যায়, নিজ ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে কিছু পদ্ধতিগত অসুবিধা রয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিধি অনুযায়ী, পরিচালকরা নিজ ব্যাংক থেকে তাঁদের মোট শেয়ারের ৫০ শতাংশের বেশি ঋণ নিতে পারেন না। সে অসুবিধা কাটাতে বিভিন্ন ব্যাংকের অসাধু পরিচালকদের মধ্যে আঁতাত গড়ে উঠেছিল। একজন আরেকজনের ব্যাংক থেকে ঋণ নিতেন। সেই ঋণ আবার নামে-বেনামেও নেওয়া হতো। অর্থাৎ আত্মীয়-স্বজন, নিকটজনদের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মালিক সাজিয়ে তাঁদের নামে ঋণ নেওয়া হতো। তথ্য বলছে, ব্যাংক খাতে নিজ ব্যাংক থেকে পরিচালকরা এক হাজার ৩৪০ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছেন। আর অন্য ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছেন দুই লাখ ৩২ হাজার ৫৪৫ কোটি টাকার মতো। বিশ্লেষকরা অবশ্য বলছেন, গত ১৫ বছরে দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ীরা নামে-বেনামে অনেক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। এসব প্রতিষ্ঠানের মোট ঋণ হিসাব করলে পরিচালকদের ঋণ পাঁচ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের তথ্য মতে, সরকার পরিবর্তনের পর ১৪টি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ পরিবর্তন করা হয়েছে। পদ হারিয়েছেন পঞ্চাশের বেশি পরিচালক। ব্যাংকাররা বলছেন, ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের ওপর পরিচালকদের বেআইনি ও অনৈতিক চাপে দিশাহারা ব্যাংক খাতের সার্বিক প্রশাসনিক ব্যবস্থা। সরকারি-বেসরকারি প্রতিটি ব্যাংকেই এখন বেনামি ঋণের পাহাড়। আমরা মনে করি, দেশের ব্যাংকিং খাতকে দুর্নীতি ও লুটপাটের রাহুমুক্ত করতে সর্বোচ্চ প্রয়াস নিতে হবে। প্রশাসনিক, আইনগত ও অন্যান্য প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ ও পর্যালোচনা আরো জোরদার করতে হবে। পাশাপাশি লুটেরা পরিচালকদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে।




কমেন্ট বক্স
notebook

পানি খেতে গিয়ে বিদ্যুতের ফাঁদে যুবকের মৃত্যু