চুয়াডাঙ্গাসহ একযোগে দেশের ৫০টি মডেল মসজিদ উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
মেহেরাব্বিন সানভী:
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ‘মুজিববর্ষ ’ উপলক্ষে চুয়াডাঙ্গায় ‘জেলা মডেল মসজিদ ও ইসলামী সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের’ উদ্বোধন করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টায় শহরের পানি উন্নয়ন বোর্ডের মধ্যে নবনির্মিত মডেল মসজিদসহ ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারা দেশে একযোগে ৫০টি মডেল মসজিদের উদ্বোধন করেন।
উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘আজকে আমি সত্যি খুব আনন্দিত। মডেল মসজিদগুলো থেকে ইসলামের সঠিক মর্মবাণী প্রচার হবে, ইসলামের সঠিক প্রচার হবে। ইসলামের সঠিক জ্ঞানচর্চা হবে। জ্ঞান বিজ্ঞান চর্চায় মুসলমানরা আবারও এগিয়ে যাবে।’
রাজধানী ওসমানী স্মৃতি মিলনায়ন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে গণভবনের সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে ধর্মপ্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান বলেন, মুসলিম বিশ্বের এই প্রথম কোনো দেশের সরকার প্রধান একসঙ্গে ৫৬০টি মসজিদ নির্মাণ করছে। এর আগে কোনো মুসলিম শাসক বা সরকার প্রধান এক সঙ্গে এতগুলো মসজিদ নির্মাণ করেননি। এটি একটি অনন্য এবং যুগান্তকারী ঘটনা আমরা বলব। একসঙ্গে এতগুলো মসজিদ নির্মাণের যুগান্তকারী উদ্যোগ নেওয়ার জন্য ধর্ম প্রতিমন্ত্রী দেশের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানান।
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নুরুল ইসলাম স্বাগত বক্তৃতা করেন। গণভবন থেকে মুখ্যসচিব ড. আহমদ কায়কাউস অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন। এসময় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়াসহ পিএমও এবং গণভবনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ সেখানে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে ‘বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের ইসলাম প্রচারের পথিকৃৎ’ শীর্ষক একটি ভিডিও চিত্র প্রদর্শিত হয়।
এদিকে চুয়াডাঙ্গা প্রান্তে মডেল মসজিদ প্রাঙ্গনে উপস্থিত ছিলেন, জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকার, জেলার পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলাম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মনিরা পারভীন, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ সাদিকুর রহমান, চুয়াডাঙ্গা ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মীর মো. জান্নাত আলী, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক পৌর মেয়র রিয়াজুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার টোটন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফ আহমেদ ও ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপ-পরিচালক (ডিডি) এবিএম রবিউল ইসলাম।
এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মুন্সি আলমগীর হান্নান, চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ওসি আবু জিহাদ ফকরুল আলম খান, চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর সিদ্দিকুর রহমান, প্রফেসর মো. কামরুজ্জামান, সংশ্লিষ্ট কাজের ঠিকাদার আলী রেজা সজল প্রমুখ।
চুয়াডাঙ্গা শহরের ওয়াপদাপাড়ায় নির্মিত চারতলা বিশিষ্ট মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রটি একসঙ্গে ১ হাজার ২ শ মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারবেন। মডেল মসজিদ হবে গবেষণা, ইসলামী সংস্কৃতি ও জ্ঞানচর্চা কেন্দ্র। আধুনিক সুযোগ-সবিধা সম্বলিত সুবিশাল মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্সে নারী ও পুরুষদের জন্য পৃথক ওজু ও নামাজ আদায়ের সুবিধা, লাইব্রেরি, গবেষণা কেন্দ্র, ইসলামিক বই বিক্রয় কেন্দ্র, পবিত্র কোরআন হেফজ বিভাগ, শিশুশিক্ষা, অতিথিশালা, বিদেশী পর্যটকদের আবাসন, মৃতদেহ গোসলের ব্যবস্থা, হজ্বযাত্রী নিবন্ধন ও প্রশিক্ষণ, ইমামদের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, অটিজম কেন্দ্র, গণশিক্ষা কেন্দ্র এবং ইসলামী সংস্কৃতি কেন্দ্র থাকবে। এছাড়া, ইমাম-মুয়াজ্জিনের আবাসনসহ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য অফিসের ব্যবস্থা এবং গাড়ি পার্কিং সুবিধা রাখা হয়েছে।

চুয়াডাঙ্গায় মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রটি ২০১৯ সালের ৩০ এপ্রিল নির্মাণ কাজ শুরু হয়। এটি নির্মাণে ব্যয় করা হয়েছে ১৪ কোটি ১৪ লাখ টাকা। গণপূর্ত বিভাগের তত্ত্বাবধানে কাজটি করে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান শামীম এন্টারপ্রাইজ।
উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ধর্ম ইসলাম। কিন্তু কিছু লোক জঙ্গিবাদ সৃষ্টি করে, খুন করে আমাদের এই পবিত্র ধর্মের বদনাম সৃষ্টি করছে। ফলে সারা বিশ্বে এই ধর্মের পবিত্রতা নষ্ট হচ্ছে। সঙ্গে ইমেজটাও নষ্ট হচ্ছে। বিশ্বের কোথাও কিছু হলেই ইসলামের দোষ দেওয়া হয়।’
এসময় নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি আন্তর্জাতিক যেসব সম্মেলনে গেছি, সেখানে যখনই ইসলামকে হেয় করা হয়েছে আমি তার প্রতিবাদ করেছি। বলেছি, মুষ্টিমেয় মানুষের জন্য ইসলামের মতো একটা ধর্মকে অপরাধী করা যায় না।’ তিনি বলেন, ‘মানুষের সেবা করতে হবে, কল্যাণ করতে হবে। মানুষের ক্ষতি করে, হত্যা করে কেউ বেহেশতে যেতে পারবে না।’
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘বিশ্বের একটি অন্যতম বৃহৎ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এই দেশে সঠিক ইসলামি মূল্যবোধের চর্চা ও উন্নয়ন এবং ইসলামি সংস্কৃতি বিকাশের উদ্দেশ্যেই আমরা প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি করে মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণের প্রকল্প বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
চুয়াডাঙ্গা প্রান্তে জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকার বলেন, ‘আমরা যাঁরা আজ এখানে উপস্থিত আছি, আমরা একটি নতুন ইতিহাসের সাক্ষী হলাম। সারা পৃথিবির ইতিহাসে একসাথে ৫৬০টি মসজিদ আগে কোনো দেশের কোনো সরকার করেনি। আর প্রথম ৫০টির মধ্যেই আমাদের চুয়াডাঙ্গার একটি উদ্বোধন হলো সেটি আমাদের জন্য সুখকর। চুয়াডাঙ্গাতে আরও চারটি মসজিদ হচ্ছে। সেগুলোর কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে।’
চুয়াডাঙ্গা ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপ-পরিচালক এবিএম রবিউল ইসলাম জানান, শুক্রবার (আজ) জুম্মার নামাজের মাধ্যমে চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের এ মডেল মসজিদে নামাজ আদায় শুরু হবে। এদিন মসজিদের দ্বিতীয় তলায় নামাজ আদায় করা হবে।