চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুরসহ সারাদেশে পৌর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মবিরতি পালন
- আপলোড তারিখঃ ০৭-১১-২০১৭ ইং
বেতন-ভাতা ও পেনশনসহ অন্যান্য সুবিধা সরকারী কোষাগার থেকে প্রদানের দাবিতে
সমীকরণ ডেস্ক: সারাদেশের পৌরসভায় কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা সরকারী কোষাগার থেকে প্রদানের দাবিতে কেন্দ্রীয় কমিটির সিদ্ধান্ত অনুসারে অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালন করেছে বাংলাদেশ পৌরসভা সার্ভিস এ্যাসোসিয়েশন। গতকাল সোমবার সকাল নয়টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত সারাদেশের পৌর কর্মকর্তা-কর্মচারীররা এ কর্মবিরতি পালন করে।
আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক জানিয়েছেন, পৌর কর্মকর্তা-কর্মচারিদের বেতন-ভাতা ও পেনশনসহ অন্যান্য সুবিধা রাষ্ট্রীয় কোষাগার হতে প্রদানের দাবিতে বাংলাদেশ পৌরসভা সার্ভিস এ্যাসোসিয়েশনের আহ্বানে গতকাল সোমবার সকাল ৯টা হতে দুপুর ১টা পর্যন্ত অর্ধদিবস কর্ম বিরতি পালন করে চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। পৌরসভার সংশ্লিষ্ট সকলেই উপস্থিত থেকে কর্মবিরতি পালন করেন। এ সময় বক্তব্য রাখেন চুয়াডাঙ্গা পৌরসভা সার্ভিস এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আয়ুব আলী বিশ্বাস, উপদেষ্টা কাজী শরিফুল ইসলাম, মোয়াজ্জেম হোসেন, ইউনিট কমিটির সাধারণ সম্পাদক আলী হোসেন, প্রধান সহকারী আসাবুল হক বিশ্বাস। বক্তারা বলেন, ‘স্থানীয় সরকার ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের অধীনে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সরকারি রাজস্ব তহবিল থেকে বেতন-ভাতা, পেনশনসহ অন্যান্য সুবিধা ভোগ করছেন। অথচ একই মন্ত্রণালয়ের অধীনে পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা পৌরসভা থেকে বেতন-ভাতা উত্তোলন করেন। কিন্তু পৌরসভার পর্যাপ্ত তহবিল না থাকায় কর্মচারীদের বেতন সহ অন্যান্য সুবিধাদি নিয়মিত পাচ্ছে না। আমাদের দাবি অবিলম্বে পৌর কর্মকর্তা-কর্মচারিদের বেতন-ভাতা ও পেনশনসহ অন্যান্য সুবিধা রাষ্ট্রীয় কোষাগার হতে প্রদানের ব্যবস্থা করা হোক।
আলমডাঙ্গা অফিস জানিয়েছে, আলমডাঙ্গা পৌরসভা সার্ভিস এসোসিয়েশনের আয়োজেন গতকাল সকাল ৯টা হতে বেলা ১টা পর্যন্ত পৌরসভা কার্যালয়ে অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালন করা হয়। অনুষ্ঠানে পৌর মেয়র হাসান কাদির গনু পূর্ণ সমর্থন দিয়ে বক্তব্য রাখেন, পৌরসভার প্যানেল মেয়র-১ সদর উদ্দিন ভোলা, প্যানেল মেয়র-৩ সামসাদ রানু, ৯নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মামুন অর রশিদ হাসান, ৮নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর জাহিদুল ইসলাম, কর্মকর্তাদের মধ্যে নির্বাহী প্রকৌশলী তসলিম উদ্দিন, কর্মচারীদের মধ্যে আনিছুর রহমান, সিরাজুল ইসলাম, হামিদুল ইসলাম নিলা, খন্দকার খাইরুল ইসলাম, খন্দকার আসাদুল ইসলাম, জেহের আলী, মুস্তাফিজুর রহমান সোহাগ, হাফিজুর রহমান, আবু সায়েম, আব্দুস ছাত্তার, জয় কুমার বিশ্বাস, শেফালী সাধু খা, চন্দনা রানী, মাজেদা বেগম প্রমুখ। এ সময় পৌরসভার সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী উপস্থিত ছিলেন। বক্তব্যে প্যানেল মেয়র সামসাদ রানু পৌর কর্মকর্তা কর্মচারীদের সরকারী কোষাগারে থেকে বেতন ভাতা প্রদানের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সদয় দৃষ্টি কামনা করেন। একই সাথে কাউন্সিলর মামুন অর রশিদ হাসান বলেন বাংলাদেশের অন্যান্য সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে পৌরসভা একটি অন্যতম সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান। পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দিন রাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে জনগনের সেবা প্রদান করে থাকে, কিন্তু তারা মাসের পর মাস কোন বেতন না পেয়ে খেয়ে না খেয়ে দিন যাপন করে এবং অবসরে যাবার সময় সম্পূর্ণ খালি হাতে তাদের অবসর গ্রহণ করতে হয়। যাহা সত্যিকার অর্থেই অমানবিক,তিনি পৌরসভার কর্মচারীদের সরকারী কোষাগার থেকে বেতন প্রদানের সকল ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। কাউন্সিলর জাহিদুল ইসলাম জানান পৌর কর্মচারীরা বেতন ভাতা না পেয়ে তাদের সন্তাদের স্কুলের ফিস দিতে পারে না, বাজারে কোনো দোকানদার তাদের বাকিতে সদায় দিতে চাইনা, পরিবারের মানুষের চিকিৎসার জন্য ওষধ ক্রয় করতে পারে না, পৌরসভার কর্মচারীদের সরকারী কোষাগার থেকে বেতন ভাতা ও পেনশন প্রদানের জন্য সরকারের আশু দৃষ্টি কামনা করেন।
দর্শনা অফিস জানিয়েছে, দামুড়হুদা উপজেলার দর্শনা পৌরসভায় অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালন করেছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ। কেন্দ্রীয় কর্মসূচীর অংশ হিসাবে সোমবার সকাল ৯ টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত এ কর্মবিরতি পালন করেছে দর্শনা পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ। রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে বেতন-ভাতা ও পেনশন এর দাবীতে তারা এ কর্মবিরতি পালন করেন। দর্শনা পৌর কর্মকর্তা-কর্মচারী এসোসিয়েশনের সভাপতি শাহ আলম এর সভপতিত্বে অনুষ্ঠিত কর্মবিরতি অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন, হাজী ইউনুচ আলী, রুহুল আমিন, সৈয়দ রুমি আলম পলাশ, আরেফিন হোসেন, মমিনুল ইসলাম, আব্দুল মজিদ। বক্তারা বলেন, পৌরসভায় রাত-দিন পরিশ্রম করার পরেও দীর্ঘ ১৫ মাস বেতন-ভাতা বকেয়া রয়েছে তাদের। ফলে পরিবার-পরিজন নিয়ে অধিকাংশ পৌর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা পড়েছেন বিপাকে পড়েছে। এ চিত্র শুধু দর্শনা পৌরসভার কর্মচারী-কর্মকর্তাদেরই নয়। সারাদেশের ৩২৬ টি পৌরসভার অধিকাংশ পৌর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবস্থা একই রকম। এসময় পৌরসভার সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন। সার্বিক অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন জেলা পৌর কর্মকর্তা-কর্মচারী এসোসিয়েশন এর সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশিদ।
মেহেরপুর অফিস জানিয়েছে, মেহেরপুর পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন ভাতাদি সরকারী কোষাগার হতে প্রাপ্তির দাবীতে কেন্দ্রীয় কর্মসূচীর অংশ হিসেবে অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালন করেছে পৌর কর্মকর্তা-কর্মচারী । গতকাল সোমবার সকাল ১০টার দিকে পৌরসভা কার্যালয়ে এ অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালন করা হয়। কর্মবিরতি চলাকালে আলোচনা সভায় পৌরসভা সার্ভিস এসোসিয়েশনের জেলা শাখার সভাপতি পৌর সচিব তফিকুল আলম বলেন, দেশের ৩২৭টি পৌরসভার অনেক পৌরসভাতে বেতন ভাতাদি অনিশ্চিত এবং ২ থেকে ৫৫ মাস পর্যন্ত বেতন বকেয়া রয়েছে এবং বহু কর্মকর্তা ও কর্মচারী অবসর পরবর্তী আনুতোষিক থেকে বঞ্চিত হয়ে অবসরের পর পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। ফলে পৌরসভার কর্মকর্তা কর্মচারীরা প্রজাতন্ত্রের অন্য প্রতিষ্ঠানে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তুলনায় বেতন ও অন্যান্য আর্থিক সুযোগ সুবিধার ক্ষেত্রে বৈষম্যের স্বীকার হচ্ছেন। তিনি আরও বলেন- মিয়ানমারের নাগরিক রোগিঙ্গাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশে আশ্রয় দিয়েছেন, তাদের ৩ বেলা খাবারের ব্যবস্থা করেছেন। এজন্য তিনি `মানবতার মা` উপাধিতে ভূষিত হয়ে ইতিমধ্যে বিশ্বের সর্বস্তরের মানুষের প্রসংশায় সিক্ত হয়েছেন। তাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট আমাদের সমস্যা সমাধানে আশু হস্তক্ষেপ কামনা করছি। মেহেরপুর পৌরসভা সার্ভিস এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সানোয়ার হাসান দিপু বলেন, আমরা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হিসাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট আমাদের দুঃখের কথা জানাচ্ছি। আমার সময়মত বেতন ভাতাদি না পাওয়ার কারনে আমাদের সন্তানেরা, বৃদ্ধ মা-বাবার অনেক কষ্ট ভোগ করে থাকেন। আমরা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হয়েও ৩ বেলা খাবারের নিশ্চয়তা পাচ্ছি না। একটাই দাবি প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের শিশুদের ও বৃদ্ধ মা-বাবাদের দুর্দশার কথা ভেবে সকল পৌরসভার কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন ভাতাদি সরকারের রাজস্ব তহবিল হতে দেওয়ার নির্দেশ দিবেন। পৌর সহকারী কর আদায়কারী শফিউদ্দিনের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন মেহেরপুর পৌরসভা সার্ভিস এসোসিয়েশনের সভাপতি সেলিম খাঁন, সাবেক সভাপতি আবুল কালাম আজাদ, পৌর প্রশাসনিক কর্মকর্তা জয়নাল আবেদীন, ষ্টোর কিপার জহিরুল ইসলাম ,রকিবুল ইসলাম প্রমূখ। সকলেই বেতন-ভাতা সরকারী তহবিল থেকে প্রদানের দাবী জানান। আগামী ১৩ নভেম্বর কেন্দ্রীয় কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত দেশের ৩২৭টি পৌরসভায় একযোগে পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করা হবে।
গাংনী অফিস জানিয়েছে, সরকারী কোষাগার থেকে বেতন-ভাতার দাবিতে মেহেরপুরের গাংনী পৌরসভার কর্মকর্তা কর্মচারীরা কর্মবিরতি কর্মসূচি পালন করেছে। কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত মোতাবেক সোমবার সকাল ৯ টা থেকে দুপুর ১২ টা পর্যন্ত কর্মবিরতি পালন করা হয়। এসময় চরম দূর্ভোগে পড়তে হয় বিভিন্ন সেবা নিতে আসা লোকদের। মেহেরপুর জেলা পৌরসভা কর্মকর্তা-কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারন সম্পাদক প্রকৌশলী শামিম আহমেদ বলেন, বছরের পর বছর বেতন-ভাতা না পেয়ে পৌরসভা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পরিবারের সদস্যরা মানবেতর জীবন যাপন করে আসছে। সরকারী বিধি মোতাবেক নিয়োগ প্রাপ্ত হয়েও নানা অবহেলা, লাঞ্চনা ও বেতন-ভাতা না পেয়ে অনাহারে অর্ধাহারে চলছে পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পরিবার। অবিল¤ে॥^ জেলা ও ইউনিয়ন পরিষদের মত করে দেশের সকল পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সরকারী কোষাগার থেকে বেতন-ভাতা প্রদানের দাবি করেন তিনি। এ সময় গাংনী পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।
কমেন্ট বক্স