স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের আমলে লুটপাটের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতি ফোকলা করা হয়েছে। এ সময়ে অবস্থা এত নাজুক ছিল যে, দেশের অর্থনীতির সার্বিক পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে অন্তর্র্বতী সরকার যে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি গঠন করে, তার চূড়ান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শাসনামলে গত ১৫ বছরে বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর গড়ে ১৫ বছরে বিভিন্ন দেশে পাচার হয়েছে ২৮ লাখ কোটি টাকা। কমিটির তথ্য মতে, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে প্রতি বছর পাচার হয়েছে এক লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। অন্তর্বতী সরকারের অন্যতম একটি কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনার বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নেয়া। ইতোমধ্যে সরকার বিভিন্ন দেশের সরকার ও আন্তর্জাতিক সংস্থার সাথে এ নিয়ে কাজ শুরু করেছে। এমন সময়ে জানা গেল, আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ বছরে সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশী ব্যক্তি ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের আমানতের পরিমাণ বেড়েছে ৩৩ গুণ। ২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে আমানতের এই উল্লম্ফন নজিরবিহীন। সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুইস ন্যাশনাল ব্যাংকের (এসএনবি) বার্ষিক প্রতিবেদনে এ তথ্য পাওয়া গেছে। ২০২৪ সালে জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে বাংলাদেশীরা এ টাকা সুইস ব্যাংকে জমা করেন। ধারণা করা হচ্ছে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের আগে-পরের সময়ে দেশ থেকে অর্থ সরিয়েছেন অনেকে।
২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর (১২ মাস) শেষ হওয়া বছরের প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশটির ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশীদের আমানত এখন আট হাজার ৮৩৪ কোটি টাকা। অথচ আগের বছর ২০২৩-এ এটি ছিল ২৬৪ কোটি টাকার মতো। এক বছরে আমানত বেড়েছে ৩৩ গুণ বা আট হাজার ৫৭০ কোটি টাকা। সুইস কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানায়, যদি কোনো বাংলাদেশী, নাগরিকত্ব গোপন রেখে অর্থ জমা রেখে থাকেন, তবে ওই টাকা এই হিসাবে অন্তর্ভুক্ত হয়নি। গচ্ছিত রাখা স্বর্ণ বা মূল্যবান সামগ্রীর আর্থিক মূল্যমানও হিসাব করা হয়নি প্রতিবেদনে।
অর্থপাচার একটি জটিল ও সূক্ষ্ম আর্থিক অপরাধ। অর্থপাচার চিহ্নিত করা, সঠিক তথ্য উদঘাটন, পাচারকারীদের আইনের আওতায় আনা খুব কঠিন ও জটিল একটি কাজ। কারণ অপরাধটি করা হয় সুকৌশলে। আমদানি, রফতানি, বড় প্রকল্পের কেনাকাটার আড়ালে দেশ থেকে সবচেয়ে বেশি অর্থপাচার হয়ে থাকে। পাচার হওয়া অর্থ যত সহজে দেশের বাইরে গেছে, ফিরিয়ে আনা তত জটিল ও সময়সাপেক্ষ। এর উদাহরণ, বাংলাদেশের আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট (বিএফআইইউ) সুইজারল্যান্ডের ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (এফআইইউ) সাথে কয়েক দফা যোগাযোগ করলেও এখন পর্যন্ত কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিস্তারিত তথ্য পায়নি। সুইস কর্তৃপক্ষ বলছে, অবৈধভাবে অর্থ স্থানান্তরের প্রমাণ দেয়া হলে তারা তথ্য সরবরাহে সহযোগিতা করতে পারে। পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধারে এখন পর্যন্ত যে সম্মিলিত উদ্যোগ নেয়া হয়েছে তা নিঃসন্দেহে সরকারের আন্তরিকতার বহিঃপ্রকাশ। তবে এ নিয়ে দ্রুততার সাথে বিভিন্ন দেশের সাথে চুক্তি করে পাচারের অর্থ ফেরত আনতে হবে। সে ক্ষেত্রে জাতিসঙ্ঘ ও বিশ্বব্যাংকের সহযোগিতায় অন্তর্র্বতী সরকার কাজটি এগিয়ে নেবে বলে আমাদের বিশ্বাস। একইসাথে নতুন করে যাতে দেশ থেকে অর্থপাচার কেউ করতে না পারেন, সে জন্য কঠোর নজরদারি বাড়ানো দরকার।