গণ-অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দেশবাসীর প্রত্যাশা পাহাড়প্রমাণ। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। রাজস্ব আয়ে বড় ঘাটতি। বিদেশি ঋণ শোধের চাপ। এর মধ্যেও নিত্যখরচের বোঝা। সব মিলিয়ে গলদঘর্ম অর্থ মন্ত্রণালয়। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নাজুক। বাড়ছে রাজনৈতিক উত্তেজনা। পরিবেশ অনুকূলে না থাকায় দেশি-বিদেশি উভয় ধরনের বিনিয়োগ গতি হারিয়েছে। উদ্যোক্তাদের মধ্যে বাড়ছে আস্থাহীনতা। কর্মসংস্থানের অভাব তীব্র হচ্ছে। দারিদ্র্যসীমার নিচে নামা মানুষের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে।
ব্যাংকিং খাত ও জ্বালানি খাতের নানা দুর্বলতায় ব্যবসা-বাণিজ্যে চলছে মন্দাভাব। এমন পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম বাজেট উপস্থাপিত হয়েছে গতকাল সোমবার। জাতীয় সংসদের অবর্তমানে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বেতার ও টেলিভিশনে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের এই বাজেট উপস্থাপন করেন। এবার বাজেটের আকার ধরা হয়েছে সাত লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট।
ঘোষিত বাজেট নিয়ে ব্যবসায়ী, উদ্যোক্তা, অর্থনীতিবিদদের অনেকেই হতাশা প্রকাশ করেছেন। তাঁদের মতে, গতানুগতিক এই বাজেট দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বড় কোনো ভূমিকা রাখতে পারবে না, বরং গণমানুষের আশাহত হওয়ার মতো অনেক কিছুই রয়েছে এই বাজেটে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে এবারই প্রথম আগের অর্থবছরের চেয়ে ছোট বাজেট হচ্ছে। এই বাজেটে সরকারের উন্নয়ন ব্যয় আগের অর্থবছরের চেয়ে ৩৫ হাজার কোটি টাকা কমিয়ে দুই লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা করা হচ্ছে। ফলে জনপ্রত্যাশা পূরণের লক্ষ্যে উন্নয়নে খুব বেশি নজর দেওয়ার সুযোগ পাবে না সরকার। তবে এবার পরিচালন ব্যয় নিয়ে বেশ চাপে আছে সরকার। এর নেপথ্যে রয়েছে সুদ ও বেতন-ভাতা বাবদ ব্যয় বৃদ্ধি।
গণ-অভ্যুত্থানের মূল আকাক্সক্ষা ছিল বৈষম্যের অবসান, কিন্তু আগামী অর্থবছরের বাজেটে বৈষম্য কমাতে নতুন কোনো রোডম্যাপ থাকছে না। ফলে জন-আকাক্সক্ষা পূরণ অনেকটা ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফল পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি আবদুল আউয়াল মিন্টুর মতে, আয়ের বৈষম্য, সামাজিক বৈষম্য, সম্পদের বৈষম্য, রাজনৈতিক বৈষম্য-সবই বাংলাদেশে দিন দিন বেশি হচ্ছে। এগুলো শনাক্ত করতে হবে। পদক্ষেপ নিতে হবে। এই বাজেট ব্যবসায়ী, উদ্যোক্তা ও জনসাধারণের প্রত্যশা পূরণে কতটা ভূমিকা রাখতে পারবে, তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করছেন অনেক অর্থনীতিবিদ। তাঁদের মতে, আগামী বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ নেই, বরং করছাড় তুলে দেওয়ায় অনেক ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতি বাড়তে পারে। নিত্যপ্রয়োজনীয় গৃহস্থালি অনেক পণ্যের ভ্যাট বাড়ানোর ফলেও পণ্যমূল্য বৃদ্ধি পাবে।
ঘোষিত বাজেট নিয়ে আগামী দিনগুলোতে আরো অনেক আলোচনা, সমালোচনা ও বিশ্লেষণ হবে। সরকারকে খোলা মনে সেগুলো বিবেচনায় নিতে হবে। আমরা চাই, জনপ্রত্যাশা পূরণে আরো বেশি গুরুত্ব আরোপ করা হোক।