চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর ও ঝিনাইদহে মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম প্রকল্পের শিক্ষক ও কর্মচারীদের মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল শনিবার পৃথক সময়ে তিন জেলার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে চত্বরে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধন শেষে আন্দোলনকারীরা প্রধান উপদেষ্টার বরাবর ৫ দফা দাবিসংবলিত স্মারকলিপি জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রদান করেন।
চুয়াডাঙ্গা:
চুয়াডাঙ্গায় ইসলামিক ফাউন্ডেশন পরিচালিত ‘নৈতিকতা ও ধর্মীয় মূল্যবোধ উন্নয়নে মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম (৮ম পর্যায়)’ প্রকল্পের দ্রুত অনুমোদন, জানুয়ারি ২০২৫ থেকে বকেয়া বেতন-ভাতা প্রদানসহ ৫ দফা দাবিতে মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদান কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষক, কেয়ারটেকার ও কর্মকর্তারা। গতকাল সকাল ১০টায় বিক্ষোভ মিছিলসহ শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন করেন তারা। পরে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।
মানববন্ধনে বক্তব্য দেন চুয়াডাঙ্গা ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ফিল্ড অফিসার মজিবর রহমান, ফিল্ড সুপারভাইজার (রাজস্ব) আব্দুল হাকিম, মাস্টার ট্রেইনার আমির হোসেন, চুয়াডাঙ্গা শিক্ষক কল্যাণ সমিতির সভাপতি লোকমান হোসেন, আলমডাঙ্গা শিক্ষক কল্যাণ সমিতির সভাপতি আকরাম হোসাইন, কেন্দ্র শিক্ষিকা সোহেলী আশরাফ চম্পা, সদর উপজেলার ফিল্ড সুপারভাইজার জিয়াউর রহমান, কেয়ারটেকার জামালউদ্দীন, সদর সেক্রেটারি হাফেজ ওসমান গনি ও জেলার সাংগঠনিক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম প্রমুখ।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, ইসলামিক ফাউন্ডেশন পরিচালিত এই প্রকল্পটি একটি সফল ও জনপ্রিয় উদ্যোগ। সারা দেশে ৮০ হাজার শিক্ষা কেন্দ্রে ইমাম, আলেম ও মহিলা শিক্ষকরা সুনামের সঙ্গে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। ১৯৯৩ সালে শুরু হওয়া এ প্রকল্পের সপ্তম পর্যায়ের কার্যক্রম ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর শেষ হলেও জানুয়ারি ২০২৫ থেকে কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
তারা আরও বলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি বৃদ্ধি, ঝরে পড়া রোধ, শিশু-কিশোর ও বয়স্কদের ধর্মীয় ও নৈতিকতা শিক্ষা প্রদান-এই প্রকল্পের মূল লক্ষ্য। অথচ বর্তমানে প্রকল্পের জনবল নানাবিধ বৈষম্যের শিকার। করোনা মহামারির সময় যেখানে স্বজনরাও মৃতের পাশে আসতে ভয় পেয়েছেন, সেখানে এই প্রকল্পের কর্মীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নিঃস্বার্থভাবে লাশ গোসল ও দাফন করেছেন।
বক্তারা অভিযোগ করেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে সামান্য সম্মানী দিয়ে ৮০ হাজার শিক্ষক-কর্মচারীর সংসার পরিচালনা করা দুরূহ। অথচ দীর্ঘ ৩৩ বছর চলমান প্রকল্পের ৩য় থেকে ৭ম পর্যায় পর্যন্ত কর্মীদের এখনও রাজস্বখাতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। ২০১৮ সালের ১৩ জুন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পত্রে ১ম ও ২য় পর্যায়ের জনবলকে ভুতাপেক্ষভাবে ১ জানুয়ারি থেকে রাজস্বখাতে অন্তর্ভুক্ত করা হলেও পরবর্তী পর্যায়গুলোর ক্ষেত্রে এ নির্দেশনা উপেক্ষিত। বরং নানা অজুহাতে আউটসোর্সিং ও কালো আইনের মাধ্যমে প্রকল্পের জনবলকে অবমূল্যায়নের চেষ্টা চলছে। এমনকি আদালতের শরণাপন্ন হওয়ার পথও রুদ্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
বক্তারা বলেন, আমাদের ৭০০ জন প্রকল্পকর্মীকে দ্রুত রাজস্বখাতে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। পাশাপাশি শিক্ষক, কেয়ারটেকার ও কর্মীদের উপযুক্ত স্কেলভুক্ত করে জানুয়ারি ২০২৫ থেকে বকেয়া বেতন-ভাতা ঈদুল আজহার পূর্বেই অনুমোদন করতে হবে। তা না হলে বৃহত্তর আন্দোলনের ঘোষণা দেওয়া হবে বলেও মানববন্ধন থেকে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন তারা।
মেহেরপুর:
মেহেরপুরেও মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা প্রকল্পের দ্রুত অনুমোদন ও পাঁচ মাসের বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধের দাবিতে মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদান কর্মসূচি পালন করেছেন প্রকল্পের শিক্ষক-কেয়ারটেকারসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। গতকাল সকাল ১০টায় মেহেরপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয় চত্বরে এ কর্মসূচি পালন করা হয়। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের আওতাধীন প্রকল্পটির সংশ্লিষ্টরা বলেন, ‘দেশজুড়ে হাজারো শিক্ষক-কর্মচারী চরম মানবেতর জীবনযাপন করছেন। গত পাঁচ মাস ধরে বেতন-ভাতা বন্ধ। সামনে ঈদ, কিন্তু পরিবার নিয়ে কীভাবে চলব সে দুশ্চিন্তায় ভুগছি। দ্রুত প্রকল্প অনুমোদন ও বকেয়া পরিশোধে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।’
ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন শেষে প্রধান উপদেষ্টার বরাবর ৫ দফা দাবিসংবলিত একটি স্মারকলিপি জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রদান করা হয়। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- ১. ঈদুল আযহার পূর্বে পাঁচ মাসের বকেয়া বেতন-ভাতা ও উৎসব ভাতা পরিশোধ। ২. প্রকল্পের জনবলকে নিজ নিজ পদসহ রাজস্বখাতে স্থানান্তর। ৩. ৭ম পর্যায়ের কর্মীদের অষ্টম পর্যায়ে স্বয়ংক্রিয় অন্তর্ভুক্তি। ৪. কেয়ারটেকার ও অন্যান্য কর্মীদের স্কেলভুক্ত করে উপযুক্ত বেতন কাঠামো। ৫. শিক্ষকদের সম্মানজনক বেতন কাঠামো ও ভাতা বৃদ্ধির দাবি।
মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন মেহেরপুর জেলা শিক্ষক সমিতির সভাপতি আবুল হাসেম। বক্তব্য রাখেন সদর উপজেলা শিক্ষক সমিতির সভাপতি শাহজাহান কবির সজল, গাংনী উপজেলার সভাপতি আবুল হক, মুজিবনগর উপজেলার সভাপতি সাইফুল ইসলাম।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ফিল্ড সুপারভাইজার তৌহিদুল ইসলাম। উপস্থিত ছিলেন ফিল্ড অফিসার ওবায়দুর রহমান, ফিল্ড সুপারভাইজার আমানুল্লাহ, মাস্টার ট্রেইনার আব্দুল হামিদ, ইউনিয়ন শিক্ষক সমিতির সভাপতি মাজহারুল ইসলাম, সিরাজুল ইসলাম, আওলাদ হোসেন, ওমর ফারুক, জাহাঙ্গীর আলমসহ শিক্ষক-কর্মচারী বৃন্দ। বক্তারা বলেন, দেশের শিক্ষাক্ষেত্রে অবদান রাখা এ সকল শিক্ষক-কর্মচারীদের অবহেলা ও বঞ্চনা আর চলতে পারে না। দ্রুত দাবি পূরণ না হলে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন তারা।