রবিবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০২৫
সর্বশেষ স্থানীয় সংবাদ জাতীয় রাজনীতি আর্ন্তজাতিক সারাদেশ অর্থনীতি খেলা বিনোদন আজকের পত্রিকা প্রযুক্তি চাকরি

শেখ হাসিনাকে ফেরাতে জোর তৎপরতা

৩০ দিনের মধ্যে না ফিরলে গ্রেপ্তার হলেই রায় কার্যকর

  • আপলোড তারিখঃ ১৯-১১-২০২৫ ইং
শেখ হাসিনাকে ফেরাতে জোর তৎপরতা

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে ভারতে পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ড ঘোষণার পর ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কে নতুন করে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। গত এক বছরে বাংলাদেশের বারবার অনুরোধ সত্ত্বেও ভারত তাকে প্রত্যর্পণ না করায় দুই প্রতিবেশীর মধ্যে কূটনৈতিক অস্বস্তি আরো বেড়েছে। এ পরিস্থিতিতে হাসিনার দণ্ড কার্যকর করতে তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে আবারো ফেরত চেয়েছে বাংলাদেশ। হাসিনাকে ফেরত চেয়ে যে বিবৃতি বাংলাদেশ দিয়েছে এতে কঠোর ভাষায় বলা হয়েছে, যদি মানবতাবিরোধী হাসিনাকে ভারত এখনো আশ্রয় দেয়, তাহলে এটি অত্যন্ত অ-বন্ধুত্বপূর্ণ এবং ন্যায়বিচারের প্রতি অবজ্ঞার শামিল হবে। যদিও এটা সত্ত্বেও হাসিনাকে ভারত ফেরত দেবে না বলে সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরাকে বলেছেন দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক প্রফেসর সঞ্জয় ভরদ্বাজ। তার মতে ভারত মনে করে, হাসিনা রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার। তাই তাকে ফাঁসিতে ঝোলার জন্য ভারত ফেরত দেবে না।


ভারতের সদিচ্ছা ছাড়া শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ সম্ভব নয়:
২০১৩ সালের ৮ জানুয়ারি ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বন্দি প্রত্যর্পণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এ চুক্তির আওতায় দুই দেশ একে অপরের কাছে অপরাধী এবং পলাতক আসামিদের হস্তান্তর করতে পারবে। তবে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থীদের ফেলা যাবে না এ চুক্তির বাধ্যবাধকতায়। ২০১৬ সালে প্রত্যর্পণ প্রক্রিয়া আরো সহজ করতে চুক্তি সংশোধন করা হয়। বলা হয়, কারো নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকলেই তাকে প্রত্যর্পণ করা যাবে। এক্ষেত্রে অপরাধের প্রমাণস্বরূপ কোনো তথ্য প্রমাণ দাখিল করতে হবে না। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধেও একাধিক মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। সংশোধিত চুক্তি অনুসারেই তাকে প্রত্যর্পণ করার কথা বলছে অন্তর্বর্তী সরকার। তবে রাজনৈতিক ব্যক্তি হলেও শেখ হাসিনা মানবতাবিরোধী অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত। বিশ্লেষকদের মতে, সে কারণেই রাজনৈতিক ব্যক্তির জন্য বিশেষ ধারা কার্যকর হবে না ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ক্ষেত্রে। শুধু প্রয়োজন, দিল্লির রাজনৈতিক সদিচ্ছা।


আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) নাঈম আশফাক চোধুরী বলেছেন, হত্যা, গুম, খুন- এগুলোকে রাজনৈতিক চরিত্র বলে আখ্যায়িত বা সংজ্ঞায়িত করা যাবে না। তার মানে রাজনৈতিক পরিচয় বা কারণের বাইরে কিন্তু গুম, খুন আছে। সেই বিবেচানয় আমি মনে করি যে, শেখ হাসিনাকে প্রত্যর্পণ করার যথেষ্ট যুক্তি বাংলাদেশের আছে। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক অধ্যাপক এম শাহীদুজ্জামান বললেন, শেখ হাসিনার বেলায় ভারত এ চুক্তির প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকবে না। ভারত মনে করে যেহেতু সে একটা বৃহৎ শক্তি, তার প্রতি অনুগত ও তার স্বার্থ রক্ষাকারী যিনি রয়েছেন, তাকে রক্ষা বা তার জীবন রক্ষা করাটা ভারতীয় জাতীয় স্বার্থ।


অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পরই শেখ হাসিনাকে ফেরাতে দিল্লিকে চিঠি দিয়েছিল ঢাকা। তখন কোনো সাড়াই দেয়নি মোদি সরকার। রায় ঘোষণার পর ভারতের রাজনীতিবিদরা সংবাদমাধ্যমে বলছেন, শেখ হাসিনাকে ফেরত দেবে না দিল্লি। যা অযাচিত মনে করছেন বিশ্লেষকরা। অধ্যাপক এম শাহীদুজ্জামান বলেন, শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠানোটা ভারতের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হবে। যদি ভারতের সঙ্গে গোপন চুক্তি থেকে থাকে, সেগুলো সম্পর্কে শেখ হাসিনা যদি বাংলাদেশ সরকারকে অবগত করে দেয়, তাহলে ভারত আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় পড়বে। মেজর জেনারেল (অব.) নাঈম আশফাক চোধুরী বলেছেন, ‘আমি মনে করি যে রাজনৈতিক সদিচ্ছা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ভারতীয় জনগণ যারা নিরপেক্ষভাবে চিন্তা করবেন, তাদের উচিত তাদের সরকারের ওপরে চাপ সৃষ্টি করা। উনারা কি কোনো ব্যক্তিকে রক্ষা করতে যেয়ে দুই দেশের জনগণের মধ্যে যে সম্পর্ক সেই সম্পর্ককে ক্ষতি করতে চান, নাকি একজন ব্যক্তি তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ? ব্যক্তি নয়, দুই প্রতিবেশী দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কই মুখ্য বলে জানান বিশ্লেষকরা। দিল্লির ইতিবাচক সাড়া পেলেই সম্ভব মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে আনা।


হাসিনা গ্রেপ্তার হলেই মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হবে:
রায় ঘোষণার ৩০ দিনের মধ্যে আপিল না করলে ক্ষমতাচ্যুত দণ্ডপ্রাপ্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আপিলের সুযোগ থাকবে না বলে জানিয়েছেন প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামীম। তিনি বলেন, যদি তারা (দণ্ডপ্রাপ্ত শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান) ৩০ দিনের মধ্যে আপিল না করেন, তাহলে তারা গ্রেপ্তার হলে রায় কার্যকর হবে। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার এ কথা বলেন। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত হত্যাকাণ্ডসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে একটি মামলায় গত সোমবার শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল-১। একই মামলার অ্যাপ্রুভার বা রাজসাক্ষী পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।


ট্রাইব্যুনাল আইনের ২১ নম্বর ধারায় দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের আপিলের অধিকার দেওয়া হয়েছে। এ ধারার ৩ উপধারায় বলা হয়েছে, দণ্ড ও সাজা প্রদান অথবা খালাস অথবা কোনো সাজা দেওয়ার তারিখ থেকে ৩০ দিনের মধ্যে আপিল করতে হবে। এ সময়সীমা (রায় দেওয়ার ৩০ দিন পর) অতিক্রান্ত হওয়ার পর কোনো আপিল গ্রহণযোগ্য হবে না। আর ২১ নম্বর ধারার ৪ উপধারায় বলা হয়েছে, আপিল করার তারিখ থেকে ৬০ দিনের মধ্যে তা নিষ্পত্তি করতে হবে।


হাসিনার মৃত্যুদণ্ড জটিল পরিস্থিতিতে ফেলেছে ভারতকে সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, হাসিনার এ মৃত্যুদণ্ড ভারতকে জটিল পরিস্থিতিতে ফেলেছে। তারা বলেছে, এখন হাসিনাকে ফেরত পেতে বাংলাদেশ আরেকটি প্রত্যর্পণ অনুরোধ ইস্যু করবে। যা এরইমধ্যে বাংলাদেশ করেছে। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের মুখে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন হাসিনা। এরপর তাকে ফেরত চেয়ে বাংলাদেশ দুইবার প্রত্যর্পণ অনুরোধ ইস্যু করে। কিন্তু বাংলাদেশের এ অনুরোধে সাড়া দেয়নি ভারত। যদিও ঢাকা ও নয়াদিল্লির মধ্যে অপরাধীদের প্রত্যর্পণ চুক্তি রয়েছে। চুক্তি থাকলেও ভারত হাসিনাকে ফেরত নাও দিতে পারে বলে জানিয়েছেন আইন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, যদি ভারত মনে করে হাসিনার বিরুদ্ধে ‘রাজনৈতিক ও অসৎ উদ্দেশ্যে’ অভিযোগ আনা হয়েছে, তাহলে তারা তাকে ফেরত দিতে অস্বীকৃতি জানাতে পারে।



কমেন্ট বক্স
notebook

চুয়াডাঙ্গায় বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় প্রার্থনা অনুষ্ঠানে শরীফুজ্জামান