বুধবার, ১৫ অক্টোবর, ২০২৫
সর্বশেষ স্থানীয় সংবাদ জাতীয় রাজনীতি আর্ন্তজাতিক সারাদেশ অর্থনীতি খেলা বিনোদন ফ্যাক্টচেক আজকের পত্রিকা প্রযুক্তি চাকরি
দামুড়হুদার গোবিন্দহুদায় পৈত্রিক সম্পত্তি নিয়ে বিরোধে সশস্ত্র হামলা

কৃষককে কুপিয়ে হত্যা, গুরুতর জখম আরও তিনজন

  • আপলোড তারিখঃ ১৫-১০-২০২৫ ইং
কৃষককে কুপিয়ে হত্যা, গুরুতর জখম আরও তিনজন

দামুড়হুদায় পৈত্রিক সম্পত্তি নিয়ে বিরোধের জেরে জয়নুল মন্ডল (৫০) নামের এক কৃষককে কুপিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় গুরুতর জখম তার দুই ভাইকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সকাল নয়টার দিকে দামুড়হুদায় সদর ইউনিয়নের গোবিন্দহুদা গ্রামের মাঠে এ হামলার ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে পরিবারের সদস্যরা তাদের উদ্ধার করে সদর হাসপাতালের নিলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বেলা সাড়ে ১১টায় জয়নুলের মৃত্যু হয়। তিনি গোবিন্দহুদা গ্রামের নূর বক্স মন্ডল ওরফে ঝড়ুর ছেলে। এদিকে, ঘটনার খবর পেয়ে চুয়াডাঙ্গার সহকারী পুলিশ সুপার (দামুড়হুদা সার্কেল) আনোয়ারুল কবির ও দামুড়হুদা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হুমায়ন কবির ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।


পরিবারের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে পৈত্রিক সম্পত্তি নিয়ে মৃত ঝড়ু মণ্ডলের ছেলেদের সঙ্গে একই গ্রামের বরকত মন্ডলের ছেলে নুরুল হক পেশকারের বিরোধ চলে আসছিল। এ নিয়ে আদালতে মামলা চলমান রয়েছে। সম্প্রতি নুরুল হক পেশকারের দখলে থাকা জমি জয়নুল মন্ডল ও তার দুই ভাই নিজ দখলে পান। এরপর থেকে দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধ আরও বাড়তে থাকে। গতকাল সকালে মাঠে কাজ করার সময় নুরুল হক পেশকার ও তার ১৫-২০ জনের একটি দল জয়নুল মন্ডল, তার দুই ভাই জাহিদ মণ্ডল (৫৫) ও খাজা মণ্ডল (৫৬) এবং তার ছেলে দিপুকে (১৮) এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করে পালিয়ে যায়।


জখম জাহিদ মণ্ডলের ছেলে কামাল মণ্ডল বলেন, ‘প্রায় ৩০ বছর ধরে পৈত্রিক জমি নিয়ে নুরুল হক পেশকারের সঙ্গে আমাদের বিরোধ চলে আসছে। কোর্টের পেশকার হওয়ায় সে আমাদের বিভিন্ন মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করে আসছিল। একমাস আগে পেশকারের দখলে থাকা একটি জমির বিষয়ে সিভিল মামলা করে পেশকার। এবং আমাদের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর কাছে অভিযোগ করে। পরে সেনাবাহিনী দুই পক্ষকে ডাকলে আমরা আমাদের সকল কাগজপত্র দেখায়। এতে প্রমাণ হয় আদালতে মামলা চললেও জমির প্রকৃত হকদার আমরা। তখন ওই বিরোধপূর্ণ জমি আমরা দখলে পাই।’


তিনি আরও বলেন, ‘জমি আমরা দখলে পাওয়ায় সেখানে ঝাল চাষ করা হয়েছে। এই মধ্যে মঙ্গলবার সকালে জয়নুল চাচাসহ আমরা কাতলমারি ও বিলের মাঠে কৃষি কাজ করছিলাম। এসময় হঠাৎ করেই ১৫ থেকে ২০ জনকে নিয়ে নুরুল পেশকার আমাদের ওপর দা, হাসুয়া, শাবল দিয়ে হামলা চালিয়ে পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয়রা জখম অবস্থায় আমাদের হাসপাতালে নিলে জয়নুল চাচা মারা যান।’


সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন দিপু মণ্ডল বলেন, ‘আমি ও আমার পিতা একসঙ্গে ছিলাম। হঠাৎ করেই আমাদের পেছন থেকে চিৎকার শুনি। সঙ্গে সঙ্গে ১৫ থেকে ২০ জন দা, কোদাল, শাবল নিয়ে আমাদের ওপর হামলা চালায়। তাদের মধ্যে বেশকয়েকজন আমাদের মারতে শুরু করে অন্যরা জয়নুল ও জাহিদ চাচার দিকে দৌঁড়ে গিয়ে তাদের ওপরও হামলা চালায়।’


সদর হাসপাতালে জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. শাপলা খাতুন বলেন, ‘সকালে গুরুতর জখম চারজনকে জরুরি বিভাগে পাই। তাদের প্রত্যেকের শরীরে ধারালো ও ভোতা জাতীয় বস্তুর আঘাতের একাধিক চিহ্ন ছিল। তাৎক্ষণিক চিকিৎসা দিয়ে ভর্তি করা হলেও চিকিৎসাধীন অবস্থায় জয়নুল মন্ডলের মৃত্যু হয়েছে। চিকিৎসাধীন অন্য তিনজনের অবস্থাও শঙ্কাজনক হওয়ায় তাদেরকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজশাহী ও ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়েছে।’
চুয়াডাঙ্গার সহকারী পুলিশ সুপার (দামুড়হুদা সার্কেল) আনোয়ারুল কবির বলেন, ‘পৈত্রিক সম্পত্তি নিয়ে দুই পক্ষের মারামারিতে একজন নিহত ও আরও তিনজন জখম হয়েছে। ঘটনার খবর পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। হামলাকারীদের ধরতে চেষ্টা চলছে। অভিযোগ সাপেক্ষে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’


এদিকে, গতকাল বিকেলে নিহত জয়নুল মণ্ডলের মরদেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছে পুলিশ। পরে রাত ১০টায় গোবিন্দহুদা গ্রাম্য কবরস্থানে জয়নুল মন্ডলের দাফনকার্য সম্পন্ন করেছে পরিবারবর্গ। রাত ১২টায় শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত এ ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগ হয়নি।



কমেন্ট বক্স
notebook

আলমডাঙ্গা বণিক সমিতির বিশেষ বর্ধিত সভা