আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সম্ভাব্য প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বিএনপিতে। নানা মাধ্যমে প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করাসহ নানা বিশ্লেষণ করা হলেও মূলত তালিকা এখনো চূড়ান্ত করা হয়নি। তিনশ আসনের মধ্যে দুই শতাধিক আসনে প্রার্থী তালিকায় চমক আনতে পারে বলে জানা গেছে। এরই মধ্যে সমমনা দলগুলোর কাছে প্রার্থী তালিকা চাওয়া হয়েছে। রাজনীতির বাইরে পেশাজীবিসহ গুণী ব্যক্তিদের একটি তালিকা প্রণয়ন করা হয়েছে। দল ও জোটের একক প্রার্থী ঠিক করতে সম্প্রতি দলের নীতিনির্ধারণী ফোরামের বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনাও হয়েছে। বিএনপির সূত্র মতে, ভিন্ন এক প্রেক্ষাপটে অনুষ্ঠিত হচ্ছে এবারের নির্বাচন। অতীতের মতো টানা তিন চারবার একই ব্যক্তিকে যেভাবে প্রার্থী করে জিতিয়ে আনা হয়েছে সেই পরিস্থিতি এখন আর নেই। মিত্রদলগুলোর বিষয়েও একই প্রক্রিয়া অনুসরণ করবে দলটি। ইতোমধ্যে ধাপে ধাপে মিত্রদের সাথে আলোচনা শুরু করেছে বিএনপি। দল এবং দলের বাইরে পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির সৎ ও দুর্নীতিমুক্ত উচ্চশিক্ষিত ব্যক্তিকে মনোনয়ন না দিলে ভোটে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। দীর্ঘ মেয়াদে দলকে ফেলতে পারে ঝুঁকিতে। ফলে ঝুঁকি ও বিতর্ক এড়াতে ইঞ্জিনিয়ার, ডাক্তার, শিক্ষক, কৃষিবিদ, আইনজীবী, সাংবাদিক, খেলোয়াড়সহ বিভিন্ন পেশার মধ্যে যারা জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য, তারা মনোনয়ন পাওয়ার অগ্রভাগে থাকবেন বলে জানা যায়।
মিত্র দলগুলোর সঙ্গে আসন সমঝোতা দ্রুত শেষ করতে চায় দলটি। এজন্য যুগপৎ আন্দোলনের শরিক দলগুলোর কাছে ইতিমধ্যে সম্ভাব্য প্রার্থীদের তালিকা চাওয়া হয়েছে। দলীয় সূত্রে জানা যায়, গত মঙ্গলবার রাতে অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এই বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে আলোচনা হয়। বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা চান আসন সমঝোতা ও প্রার্থী তালিকা দ্রুত চূড়ান্ত করা হোক, যাতে বিভ্রান্তি দূর হয়ে মাঠপর্যায়ে প্রচার-প্রচারণা শুরু করা যায়। ইতিমধ্যে কয়েকটি শরিক দলের প্রধানকে মৌখিকভাবে প্রার্থী তালিকা দিতে অনুরোধ করা হয়েছে। বিএনপির দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, এলডিপির চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিমসহ কয়েকজন শরিক দলের শীর্ষ নেতাকে ইতিবাচক ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে। একইভাবে গণতন্ত্র মঞ্চের নেতাদের কাছেও তালিকা চাওয়া হয়েছে। লিয়াজোঁর দায়িত্বে থাকা বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য সরাসরি ফোনে এ বিষয়ে যোগাযোগও করেছেন।
একটি সূত্র থেকে জানা যায়, বিএনপির যুগপৎ আন্দোলনে যুক্ত মিত্ররা ২১৭টি আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকা জমা দিয়েছে দলটির কাছে। এর মধ্যে গণতন্ত্র মঞ্চ ১৩৮, ১২ দলীয় জোট ২১, এগারো দলীয় জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট ৯, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপি ১৩, জাতীয় পার্টি-বিজেপি ৫, গণফোরাম ১৫, লেবার পার্টি ৬ ও জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন-এনডিএম ১০টি আসনে তাদের প্রার্থীর নাম দিয়েছে। তবে বিএনপি এবার মিত্রদের সর্বোচ্চ ৪০টি আসন ছাড় দিতে পারে। আর যাদের আসন ছাড় দেয়া হবে না, তাদের উচ্চকক্ষে মূল্যায়ন করা হবে বলে জানা গেছে। লন্ডনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছেও প্রার্থী তালিকা দিয়েছে একাধিক দল। গত ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শরিকদের ৫৮ আসনে ছাড় দিয়েছিল বিএনপি। এর মধ্যে জামায়াতে ইসলামীকে ২২ আসন ও অন্যদের ৩৬ আসন ছাড় দেয় দলটি। সূত্রমতে, মিত্রদলগুলো যে সব আসনের তালিকা জমা দিয়েছে সেই আসনগুলোতে একাধিক টিমের মাধ্যমে খোঁজখবর নেয়া শুরু হয়েছে। জরিপ থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী আসনগুলোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে বিএনপির হাইকমান্ড।
সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, ‘প্রায় ৬৪টি রাজনৈতিক দল বিগত স্বৈরাচারের সময় যার যার অবস্থান থেকে রাজপথে আন্দোলন গড়ে তোলার চেষ্টা করেছে। আমাদের সঙ্গে রাজপথের আন্দোলনে যে দলগুলোকে পেয়েছি, আমরা চাই সবাইকে সঙ্গে নিয়ে রাষ্ট্র পুনর্গঠন করতে। সবার মতামত নিয়ে রাষ্ট্র পুনর্গঠন করতে চাই। কমবেশি সবাইকে নিয়ে রাষ্ট্র গঠন করতে চাই।’ এ বিষয়ে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেন, ‘মিত্রদের সাথে নিয়ে আমরা আগামীর পথ চলতে চাই। তবে কতগুলো আসন দেয়া হবে তা দলীয় ফোরামে এবং মিত্রদের সাথে আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। যাদের যেসব আসনে জয়লাভের সম্ভাবনা রয়েছে সেই আলোকেই সিদ্ধান্ত হবে।’ মিত্রদের কয়টি আসন ছাড় দেবে বিএনপি তা চলতি মাসের শেষে জানা যাবে। তবে চাওয়া অনুযায়ী আসন ছাড় দিতে পারবে না বিএনপি। বিএনপি বড় দল হিসেবে প্রার্থী সংখ্যা অনেক এর বাইরে জনপ্রিয়তার বিষয় থাকায় সবার প্রত্যাশা একই সাথে পূরণ করা সম্ভব নয়। যাদের ছাড় দেবে তাদের বিএনপির হাইকমান্ড থেকে ‘সবুজ সংকেত’ দেওয়া হবে। পরবর্তী সময়ে নির্বাচনের তফশিল ঘোষণার পর প্রার্থী মনোনয়নের যথাযথ প্রক্রিয়া শেষে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হবে।
১২ দলীয় জোটের মুখপাত্র ও বাংলাদেশ এলডিপির চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, ‘বিএনপির হাইকমান্ড আমাকে পূর্ণাঙ্গ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে নামার জন্য নির্দেশনা দিয়েছে। কিভাবে কাজ করব সে বিষয়েও কিছু পরামর্শ দিয়েছে। সেভাবেই এলাকায় সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করেই কাজ করছি।’
সমীকরণ প্রতিবেদন