চুয়াডাঙ্গায় এক ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত স্থাপন হয়েছে মিথ্যা যৌতুক মামলায় আসামির খালাসের মধ্যদিয়ে। ব্যতিক্রমী রায়ের এই দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করেছেন চুয়াডাঙ্গার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শিমুল কুমার বিশ্বাস। গতকাল বৃহস্পতিবার আদালত যৌতুক নিরোধ আইন, ২০১৮ এর ৩ ধারায় দায়েরকৃত মামলায় আসামি অর্ণব হাসানকে বেকসুর খালাস প্রদান করেছেন। পাশাপাশি অভিযোগকারী মোছা. শিরিন আক্তার মুক্তিকে একই আইনের ৬ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে ৫ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে এক মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করেন।
মামলার বিবরণ অনুযায়ী, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার দশমাইল জীবনা গ্রামের মহিউদ্দীন বকুলের মেয়ে শিরিন আক্তার মুক্তি ঝিনাইদহের আরাপপুর গ্রামের মুনজুর হোসেন মাসুদের ছেলে ও ঢাকা মোহাম্মদপুর মেট্রোপলিটন হাউস এলাকার বাসিন্দা মো. অর্ণব হাসানের বিরুদ্ধে বিরুদ্ধে যৌতুকের অভিযোগ আনেন। তবে বিচারিক প্রক্রিয়ার ধারাবাহিক বিশ্লেষণে আদালত দেখতে পান, কথিত ঘটনার তারিখ ও সময়ে অভিযোগকারী ও আসামির মধ্যে স্বামী-স্ত্রীর বৈবাহিক সম্পর্ক বিদ্যমান ছিল না। বরং বিবাহ বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটেছিল ঘটনার প্রায় ৫ মাস ৪ দিন পূর্বেই।
আদালত বলেন, মামলায় উপস্থাপিত সাক্ষীদের সাক্ষ্যে পরস্পরবিরোধিতা ও অসংগতি ছিল। বিশেষত ঘটনার প্রকৃতি বা গধহহবৎ ড়ভ ঙপপঁৎৎবহপব সম্পর্কে প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষীদের বক্তব্যে গুরুতর বিরোধ ও অসংলগ্নতা থাকায় তাদের সাক্ষ্য বিশ্বাসযোগ্যতা হারায়। এই অবস্থায় মামলার ঘটনা মিথ্যা প্রমাণিত হয় এবং আসামিকে ফাঁসাতে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে আদালতের পর্যবেক্ষণ উঠে আসে।
অন্যদিকে, উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে মিথ্যা মামলা দায়ের করায় অভিযোগকারী মোছা. শিরিন আক্তার মুক্তিকে যৌতুক নিরোধ আইন, ২০১৮ এর ৬ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে ৫ হাজার টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়। অনাদায়ে এক মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়। আদালত নির্দেশ দেন, আগামী ৩০ দিনের মধ্যে অভিযোগকারীকে এই অর্থদণ্ড পরিশোধ করতে হবে, অন্যথায় তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ও সাজা পরোয়ানা ইস্যুর নির্দেশ প্রদান করা হবে।
আসামি পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সাজ্জাদ হোসেন রকি বলেন, ‘বাংলাদেশের আইন কাঠামো থেকে কেউ মুখ ফিরিয়ে নিক, এটা কখনই আমাদের কাম্য নয়। প্রত্যেকে যেন ন্যায়বিচার পান। সকল সাক্ষ্য-প্রমাণ বিবেচনা করে নির্দোষ হওয়ায় আদালত মামলার আসামিকে খালাস দিয়েছেন এবং মামলা মিথ্যা প্রমাণিত হওয়ায় অভিযোগকারীকে দণ্ড দিয়েছেন।’