ইতালি যাওয়ার স্বপ্নে ঘর ছেড়েছিলেন আলমডাঙ্গা উপজেলার নাগদাহ ইউনিয়নের খেজুরতরা গ্রামের জুনায়েদ হাসান প্লাবন (২৫)। পরিবারে সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনার প্রত্যাশায় দালালের সঙ্গে ১২ লাখ টাকার চুক্তিতে ১৬ মাস আগে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছিলেন। কিন্তু সেই স্বপ্ন শেষ পর্যন্ত কাল হয়ে দাঁড়ায়। ভয়াবহ নির্যাতনের পর লিবিয়ায় মৃত্যু হয় প্লাবনের।
প্লাবনের পরিবার জানায়, ২০২৪ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি দুবাই হয়ে লিবিয়া পৌঁছান প্লাবন। সেখানে পৌঁছেই শুরু হয় টাকা আদায়ের নির্যাতন। ভিডিও কলে নির্যাতনের ছবি দেখিয়ে একের পর এক কিস্তিতে পরিবার থেকে আদায় করা হয় মোট ৪২ লাখ টাকা। প্রথমে জায়গা-জমি বিক্রি, পরে এনজিও থেকে ঋণ করে প্রাণ বাঁচানোর আকুতি মেটানোর চেষ্টা করেন পরিবার।
প্লাবনের বাবা জমশেদ আলী বলেন, ‘আমি নিঃস্ব হয়ে গেছি। প্রথমে জায়গা-জমি বিক্রি করে ১২ লাখ টাকা দিয়েছিলাম। পরে ছেলেকে অমানসিক নির্যাতন করে ভিডিও কলে দেখিয়ে টাকা চাইত। আমি ছেলের নির্যাতন আর সহ্য করতে না পেরে জমি বিক্রি ও এনজিও থেকে ঋণ করে এভাবে দিতে হয়েছে ৪২ লাখ টাকা। তারপরও আমার ছেলেকে ওরা মেরে ফেলেছে। আমি প্রতিবার জিমের হাতে টাকা দিয়েছি। জিম আরও টাকা চাইলে দরকার হলে আমি আমার কিডনি বেচে টাকা দিতাম। ওরা আমার ছেলেকে মেরে ফেলল কেন? আমি আমার ছেলের হত্যার বিচার চাই।’
ছবি: নিহত জুনায়েদ হাসান প্লাবন
বড় বোন স্বপ্না খাতুন বলেন, ‘১৬টা মাস আমার ভাইকে আটকে রেখে নানাভাবে আমাদের থেকে টাকা নিয়েছে দালাল চক্র। আমার ভাইকে মারধর করতো আর আমাদের ভিডিও কলে দেখিয়ে টাকা চাইতো। জিম এসে আমাদের বাড়ি থেকে টাকা নিয়ে যেত। আমাদেরকে ভিডিও কলে রেখে ২০ দিন আগে আমার ভাইকে মারধর করছিল দালাল চক্রের লোকজন। একপর্যায়ে আমার ভাইয়ের মাথায় আঘাত করে তারা। ভিডিও কলে নির্যাতনের ছবি দেখিয়ে আমাদের কাছে আরও টাকা চায়, টাকা দিতে না পারার কথা জানালে আমাদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতো। আমাদের গ্রামের জুয়েল নামে আরও একটা ছেলে আছে আমার ভাইয়ের সাথে। দালালরা আজ সকালে জুয়েলের স্ত্রীকে ভিডিও কলে জুয়েলকে মারধর করা দেখায় ও আমার ভাইয়ের লাশ দেখায়। তারপর আমরা জানতে পারি আমার ভাইকে ওরা মেরে ফেলেছে।’
মা আদরি খাতুন কান্নায় ভেঙে পড়ে বলেন, ‘আমার ছেলেকে ওরা মেরে ফেলেছে। আমার ছেলের লাশটা অন্তত ফেরত চাই। আমি একটি বার দেখতে চাই আমার ছেলের মুখটা। আমার ছেলের কী দোষ ছিল? আমার ছেলে তো কোনো দোষ করেনি।’
পরিবারের অভিযোগ, বেলগাছি গ্রামের দালাল জাণ্টু মালিথার ছেলে সাগর (বর্তমানে লিবিয়ায়) এবং ঠাণ্টু মালিথার ছেলে জিম (বর্তমানে গ্রামে) এই চক্রের মূলহোতা। ঘটনার পর থেকে দালাল জিম পলাতক রয়েছে। তারা জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন।