হাসিনার ফ্যাসিবাদী সরকার দেশরক্ষায় নিয়োজিত সামরিক বাহিনীকেও ধ্বংসের লক্ষ্য নিয়ে এগিয়েছে। চব্বিশের বিপ্লব না হলে আমরা হয়তো দেশের সেই দুর্ভাগ্যজনক পরিণতি দেখতে পেতাম। এই বাহিনীর ভেতর থেকে একটি অংশ এ কাজে হাসিনার সহযোগী হয়েছিল। সে জন্য বিডিআরের ৫৭ চৌকস সেনাকর্মকর্তাকে হত্যার ঘটনা ঘটানো সম্ভব হয়েছিল। দেশের সার্বভৌমত্ব যখন হুমকিতে পড়ছিল তা মোকাবেলার বদলে বাহিনীর নিশানা ঠিক করে দেয়া হয় সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে। গুম-খুন-গুপ্ত কারাগার রচনা করে দেশে এক বিভীষিকাময় পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছিল খোদ হাসিনার মদদে। এর সাথে যুক্ত অপরাধীদের বিচার ও সামরিক বাহিনীকে আগের মতো শক্তিশালী অবস্থানে ফেরানোর তাগিদ নাগরিক সমাজের বিভিন্ন পক্ষ থেকে উঠানো হলেও অন্তর্র্বতী সরকারের দিক থেকে আশানুরূপ পদক্ষেপ এখনো দৃশ্যমান নয়। সামরিক বাহিনীর সাবেক কর্মকর্তাদের সংগঠন 'নেক্সাস ডিফেন্স অ্যান্ড জাস্টিস' সশস্ত্রবাহিনীর সংস্কারে করণীয় নিয়ে গত শনিবার একটি সেমিনার আয়োজন করে। বক্তারা বলেন, হাসিনা সরকার বিভিন্ন আইন প্রণয়নের মাধ্যমে সেনাবাহিনীর পেশাদারত্ব ধ্বংসের অপপ্রয়াস চালায়। এ সময়ে দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব হুমকিতে পড়লেও বাহিনীর পক্ষ থেকে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। আমাদের সাথে দু'টি দেশের সীমান্তে এ সময় আগ্রাসী তৎপরতা দেখা গেছে। মিয়ানমার থেকে বারবার বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ ঘটেছে। আমাদের দুর্বল সামরিক অবস্থানের বিপরীতে নেপিডোকে বারবার সীমালঙ্ঘন করতে দেখা গেছে। মিয়ানমারের বিমান কয়েকবার আমাদের আকাশ সীমায় ঢুলেও কোনো প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন হয় এমন বহু পদক্ষেপ নেয়া হয় হাসিনার সময়ে। এর মধ্যে ছিল ফেনী সীমান্তে ব্রিজ নির্মাণ, সীমান্ত লাগোয়া স্পর্শকাতর জায়গায় ভারতকে স্পেশাল ইকোনমিক জোনের নামে ১০০ একর জমি দেয়া, ভারতের স্বার্থে দিনাজপুরের হিলি থেকে শেরপুর সীমান্তে করিডোর নির্মাণের অনুমতি প্রদান। অথচ যাচাই-বাছাই করে এই ধরনের সুযোগ দেয়া যায় কি না তা অনুমোদনের দায়িত্ব ছিল সামরিক বাহিনীর। বক্তারা বলেন, এ সময় বরং সামিরক বাহিনীর একটি অংশ সরকারের অপকর্মের সহযোগী হয়েছে। জড়িত হয়েছে অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক বিভিন্ন প্রকল্পে। সবচেয়ে গুরুতর দিকটি ছিল সাধারণ নাগরিকের মানবাধিকার লঙ্ঘন। তারা অভিযোগ করছেন, সামরিক কর্মকর্তাদের একটি অংশ ভারত সরকার ও গোয়েন্দা সংস্থা 'র'-এর সহায়তায় সশস্ত্র বাহিনীকে বিতর্কিত করার লক্ষ্যে কাজ করেছে। যাদের বিরুদ্ধে এসব গুরুতর অভিযোগ রয়েছে এখনো তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। আমাদের দুই প্রতিবেশী দেশ প্রকাশ্যে শত্রুতা পোষণ করছে। বাংলাদেশের জনগণ তাদের দ্বারা নানামাত্রিক হুমকিতে রয়েছে। এ অবস্থায় আমাদের জন্য একটি শক্তিশালী সামরিক বাহিনী দরকার। কিভাবে সার্বভৌমত্ব রক্ষায় কার্যকর ও উপযুক্ত একটি সামরিক বাহিনী গঠন করা যায়; সেমিনারে সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রাথমিক কাজ হচ্ছে, অপরাধের সাথে যুক্ত ব্যক্তিদের বাহিনী থেকে পৃথক করা। দ্রুততার সাথে কাজটি করার কথা হলেও এখনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি নেই। পুরো বাহিনীকে একটি শক্তিশালী অবয়বে দাঁড় করাতে হলে প্রয়োজন একটি স্বতন্ত্র কমিশন গঠন করা।