জীবননগরে গ্রাহকের স্বাক্ষর জারিয়াতি করে ঋণ গ্রহণ, টাকা আত্মসাত ও অনিয়মের অভিযোগ
- আপলোড তারিখঃ ০৭-০৯-২০২২ ইং
সমীকরণ প্রতিবেদক: জীবননগরে কৃষি ব্যাংকে গ্রাহকের নামে লোন করে তাদের স্বাক্ষর জালিয়াতি করে প্রায় সাড়ে ৫ লাখ টাকা আত্মসাতসহ লোনে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে জীবননগর কৃষি ব্যাংকের সাবেক শাখা ব্যবস্থাপক মাহাতাব উদ্দিন ও সাবেক ক্যাশিয়ার পিতম বাবুর বিরুদ্ধে। দুই ব্যাংক কর্মকর্তার অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলে জালিয়াতের দায়ে সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা মাহাতাব উদ্দিন ও ক্যাশিয়ার পিতম বাবুর পেনশনের টাকা তোলা বন্ধ করে দিয়েছে ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ।
জানা গেছে, ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে জীবননগর উপজেলার সীমান্ত ইউনিয়নের হরিহরনগর গ্রামের বাবুল আক্তারের মৎস্য চাষের ওপর ৪ লাখ টাকা লোন করে দেন জীবননগর কৃষি ব্যাংকের সাবেক শাখা ব্যবস্থাপক মাহাতাব উদ্দিন। ঋণের ৪ লাখ টাকার মধ্যে ২ লাখ টাকা নিজ নামে নিয়েছেন ম্যানেজার। একই অনিয়ম করেন হরিহরনগর গ্রামের সাবেক মেম্বার টিপু সুলতানের সাথে। তাঁর মায়ের নামে ১ লাখ টাকা লোন করেন এবং টিপুকে সাক্ষী করেন। পরে টিপু মেম্বারের নামেও ১ লাখ টাকা লোন করে ওই টাকা নিজ নামে করে নেন ওই ম্যানেজার। শুধু তাই নয়, মেদেনীপুর গ্রামের আ. রউফ বিশ্বাসের ছেলে আ. হালিম বিশ্বাসের জমি না থাকলেও তিনি ভুয়া দলিল করে লোন করে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে সাবেক ব্যাংক ম্যানেজার মাহাতাবের বিরুদ্ধে।
এদিকে ভুক্তোভোগীরা বিষয়টি জানতে পারে তাদের সাথে সাবেক ব্যাংক ম্যানেজার মাহাতাব উদ্দিন ও ক্যাশিয়ার পিতম বাবু প্রতারণা করেছেন। এদিকে ব্যাংক কর্মকর্তার অনিয়ম ও দুর্নীতির সংবাদ প্রকাশ হলে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ সাবেক ম্যানেজার মাহাতাব উদ্দিন ও ক্যাশিয়ার পিতম বাবুকে জীবননগর থেকে অন্যস্থানে বদলি করে দেয়। এছাড়া ম্যানেজার এবং ক্যাশিয়ারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়মের বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় শুরু হলে কৃষি ব্যাংকের অনেক গ্রাহক তৎকালীন ব্যাংক ম্যানেজার আরাফাত রহমানের নিকট সাবেক ব্যাংক ম্যানেজার মাহাতাব উদ্দিন ও পিতম বাবুর অনিয়মের কথা প্রকাশ করলে শুরু হয় তদন্ত। তদন্ত শেষে লোন দেওয়ার অনিয়ম প্রমাণিত হয়। ইতঃমধ্যেই সাবেক ম্যানেজার মাহাতাব উদ্দিন ও ক্যাশিয়ার পিতম বাবুর চাকরির মেয়াদ শেষ হয়।
এদিকে, লোন দেওয়ায় বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অপরাধে দুইজনের পেনশনের টাকা সাময়িকভাবে বন্ধ করে দিয়েছে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। যত দিন পর্যন্ত ব্যাংকের হিসাব এবং কাগজপত্র ঠিক করতে না পারবে, ততদিন পর্যন্ত পেনশনের টাকা তুলতে পারবেন না ওই দুই ব্যাংক কর্মকর্তা। এদিকে নিজেদের অপকর্ম ধামাচাপা দেওয়ার জন্য সাবেক ব্যাংক ম্যানেজার মাহাতাব উদ্দিন এবং সাবেক ক্যাশিয়ার পিতম বাবু কৌশলে বাবলু, টিপুসহ একাধিক গ্রাহকের বাড়িতে যেয়ে নিজের খরচে গরুর খামার তৈরি করে দিচ্ছেন এবং সুকৌশলে সাবেক ব্যাংক ম্যানেজার নিজের টাকা দিয়ে ব্যাংক লোন পরিশোধ করছেন।
হরিহরনগর গ্রামের বাবলু বলেন, ‘আমি ২০২০ সালে কৃষি ব্যাংকে ২ লাখ টাকা লোন করতে গিয়েছিলাম। তিনি আমাকে ৪ লাখ টাকা লোন করে দেয়। এর মধ্যে ২ লাখ টাকা তিনি আমাকে দেন, আর বাকি ২ লাখ টাকা ম্যানেজার মাহাতাব নেন। গত কয়েকদিন ধরে তিনি আমাকে বলছেন লোন শোধ করে দাও, তা না হলে আমি পেনশনের টাকা পাচ্ছি না। আমি ২ লাখ টাকা লোন নিয়েছি, সেটা আমার মেয়াদ শেষে দেব। এর মধ্যে ব্যাংকের যে লাভ, সেটা আমি পরিশোধ করব। আর আপনি যে টাকা নিয়েছেন, সেটা আপনি পরিশোধ করবেন। তিনি আমাকে বলেন, তোমার সব টাকা আমি পরিশোধ করে দেব। তুমি আমার এক বছর পর টাকা পরিশোধ করে দিও।’
একই কথা বলেন হরিহরনগর গ্রামের সাবেক মেম্বার টিপু সুলতান। তিনি বলেন, ‘আমার মায়ের নামে লোন করতে গিয়েছিলাম। সেখানে আমি সাক্ষী হিসেবে স্বাক্ষর করি। পরে জানতে পারি আমার নামেও লোন করা হয়েছে। আমি বিষয়টি মাহাতাব উদ্দিন সাহেবকে বললে তিনি বলেন এটা আমি পরিশোধ করে দেব।’ শুধু বাবলু বা টিপু নয়, তদন্ত করলে বেরিয়ে আসবে আরও অনেক ভুয়া দলিল, যাদের নামে জমি না থাকলেও ভুয়া জমির দলিল দিয়ে মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে নামে বেনামে লোন করে দিয়েছেন।
তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, মাহাতাব উদ্দিন শুধু ব্যাংকেই নয়-ছয় করেননি, তিনি এলাকায় নারী কেলেঙ্কারি ঘটনাতেও বেশ কয়েকবার জরিমানা দিয়েছেন। এ বিষয়ে জীবননগর কৃষি ব্যাংকের সাবেক ম্যানেজার মাহাতাব উদ্দিন বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ সত্য নয়। তাদেরকে ঋণের টাকা বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। কাগজপত্রে কিছু ভুল হওয়ায় পেনশন বন্ধ ছিল। তবে আমি কাগজপত্র সব ঠিকঠাক করে দিয়েছি, আমি তো পেনশনের টাকা পেয়েছি।’
জীবননগর কৃষি ব্যাংকের ম্যানেজার মো. সায়েম বলেন, জীবননগর কৃষি ব্যাংকের সাবেক ম্যানেজার মাহাতাব উদ্দিন ও ক্যাশিয়ার পিতম বাবুর বিরুদ্ধে লোন দেওয়ার কিছু অনিয়মের অভিযোগে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ তাদের পেনশনের টাকা সাময়িকভাবে বন্ধ রেখেছে। ইতঃমধ্যেই তিনি কিছু কাগজপত্র ঠিক করে ব্যাংকে জমা দিয়েছেন। এদিকে ব্যাংক কর্মকর্তাদের এহেন কাণ্ড দেখে এলাকার সাধারণ মানুষ হতবাক হয়ে পড়েছেন।
কমেন্ট বক্স