ইপেপার । আজশুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আলমডাঙ্গা মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে স্মরণকালের বিশাল জনসমাবেশে দিলীপ কুমার আগরওয়ালা

জেলার উন্নয়নে দিলেন একগুচ্ছ প্রতিশ্রুতি, ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার আহ্বা

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৪:৪৭:৪১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২ জানুয়ারী ২০২৪
  • / ৫১ বার পড়া হয়েছে


সমীকরণ প্রতিবেদক:
দিলীপ কুমার আগরওয়ালা বলেছেন, ‘এই আলমডাঙ্গা-চুয়াডাঙ্গার ধুলো-মাটি আমার গায়ে লেগে আছে। আমি এই জনপদের মাটি ও মানুষের টানে বারবার ছুটে আসি। এই টানই আমাকে নামিয়েছে ভোটের মাঠে, পরিবর্তনের অঙ্গিকার নিয়ে আমি আপনাদের সামনে দাড়িয়েছি। আপনাদের এই বিশাল উপস্থিতি আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে, আমাকে অভিভূত করেছে। আপনারা আজ প্রমাণ করেছেন, চুয়াডাঙ্গা-আলমডাঙ্গাবাসী পরিবর্তন চাই। গতকাল সোমবার আলমডাঙ্গা সরকারি পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে ঈগল প্রতীকের বিশাল জনসভায় এসব কথা বলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী এবং আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য দিলীপ কুমার আগরওয়ালা। এবারই প্রথম নির্বাচনে অংশ নিয়ে বেশ সাড়া ফেলেছেন তিনি। আছেন ভোটারদের আলোচনার কেন্দ্র বিন্দুতেও। সাধারণ ভোটারদের মতে নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে, ঈগল প্রতীক নিয়ে আলোচনাও ততই বাড়ছে। নির্বাচনী আসনটির সর্বত্র বিরামহীন প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন দিলীপ কুমার ও তাঁর কর্মী-সমর্থকেরা। গতকালদুপুর থেকেই আলমডাঙ্গা উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে হাজার হাজার নারী-পুরুষ দলে দলে ঈগল প্রতীকের ব্যানার ও ফেস্টুন নিয়ে মিছিলসহকারে সমাবেশস্থলে উপস্থিত হতে শুরু করে। বিকেলের মধ্যে সরকারি পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠ কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে যায়। এরপরেও বিভিন্ন এলাকা থেকে সেখানে স্বতন্ত্র ঈগল প্রতীকের সমর্থকরা আসতে থাকলে মাঠ ছাপিয়ে জনসমাগম রাস্তা ও আশপাশের এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। সমাবেশে অন্তত অর্ধলক্ষাধিক মানুষের সমাগম ঘটে বলে স্থানীয়দের ধারণা।

ওই সমাবেশে হাজার হাজার সমর্থকদের সামনে দাঁড়িয়ে দুর্নীতিমুক্ত চুয়াডাঙ্গা গড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে দিলীপ কুমার আগরওয়ালা আরও বলেন, ‘উন্নয়নের জন্য পরিবর্তন চাই। আমি আপনাদের সন্তান। আপনাদের টানই আমাকে ভোটের মাঠে নামিয়েছে পরিবর্তনের জন্য। এই জনপদের কি পরিবর্তন চান আপনারা? ইনশাআল্লাহ সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছায় আপনাদের চেষ্টায় পরিবর্তন আসবেই। পরিবর্তন না হলে এই জনপদের উন্নয়ন সম্ভব নয়। আমাদের স্লোগান হবে “উন্নয়নের জন্য পরিবর্তন চাই।’’ আমি নির্বাচিত হলে এখানে বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তুলব, আলমডাঙ্গায় হাসপাতাল হবে, সদর হাসপাতালকে ৫০০ শয্যার হাসপাতালে রূপান্তরিত করব। এখানে যুব সমাজের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করব। অবকাঠামোগত উন্নয়ন করব। জেলার সার্বিক উন্নয়নে কাজ করে আপনাদের ঋণ শোধ করব।’
বিশাল ওই জনসমাবেশে দিলীপ কুমার আগরওয়ালা আরও বলেন, ‘চুয়াডাঙ্গাবাসী আজ পরিবর্তন চায়। তারা আর কোনো নির্দিষ্ট পরিবারের গণ্ডিতে আটকে থাকতে চায় না। কারণ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সারাদেশে উন্নয়ন হলেও চুয়াডাঙ্গা-১ আসনে তার সুফল আসেনি। তাই আমি বিজয়ী হলে এই জেলাকে স্মার্ট চুয়াডাঙ্গায় রূপ দেব।’

সাম্প্রদায়িক রাজনীতি বন্ধের আহ্বান জানিয়ে প্রতিপক্ষ প্রার্থীর উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ অসাম্প্রদায়িক। তাই নির্বাচনের মাঠে হিন্দু-মুসলমান বিভেদ সৃষ্টি করবেন না। এসময় তিনি প্রত্যেক নির্বাচনী আসনের প্রত্যেক ইউনিয়নে একটি করে মডেল মসজিদ, মাদ্রাসা, গোরস্তান, শ্মশান, মন্দির গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দেন। পরিবারের আত্মত্যাগের কথা তুলে ধরে দিলীপ কুমার আগরওয়ালা বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধে আমার পরিবারের অবদান রয়েছে। আমার মাতামহ ও আপন দুই মামা ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হন। আমার মায়ের নামে করা স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান, “তারা দেবী ফাউন্ডেশনের” কথা আপনারা সবাই জানেন। ব্যক্তি উদ্যোগে আপনাদের পাশে আছি। সবসময় ছিলাম।’
দিলীপ কুমার আগরওয়ালা বলেন, ‘বৃহৎ পরিসরে উন্নয়নের জন্য ডিও লেটার ছাড়া অনেক কিছুই সম্ভব নয়। একটা স্বাক্ষর অনেক গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়নের জন্য। তাই চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য আমি এমপি হতে চাই। চুয়াডাঙ্গা-আলমডাঙ্গার মানুষকে জিম্মিদশা থেকে উদ্ধার করার জন্য আমি এমপি হতে চাই। আমি আপনাদের কথা চিন্তা করে এখানে এসেছি। আমাকে সৃষ্টিকর্তা যতটুকু দিয়েছে, তা দিয়ে আমার পরবর্তী তিন প্রজন্ম সুখে-শান্তিতে জীবন কাটাতে পারে। কিন্তু সবকিছু ছেড়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আমি আপনাদের পাশে দাঁড়িয়েছি।’
নির্বাচনী প্রচারণায় বাঁধা পাওয়ার কথা উল্লেখ করে দিলীপ কুমার আগরওয়ালা বলেন, ‘আমার কর্মীরা পোস্টার লাগাতে গেলে লাগাতে পারছে না। আমার কর্মীদের লাগানো পোস্টার-ব্যানার তারা কেটে দিচ্ছে। আমার কর্মীকে তারা মারধর করছে। হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। এখন পর্যন্ত চুয়াডাঙ্গা এবং আলমডাঙ্গা থানায় ১০টি জিডি ও মামলা করেছি। ৬টি অভিযোগ দায়ের করেছি। তারা আমাকে টার্গেট করেছে। আপনারা পত্র-পত্রিকায় দেখেছেন, শংকরচন্দ্র ইউনিয়নে আমি নির্বাচনী প্রচারে গেলে আমার ওপর হামলা করা হয়। পার্শ্ববর্তী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মানিক অস্ত্র উঁচিয়ে আমাকে হত্যা ও অপহরণ চেষ্টা করেন। ওই ঘটনায় প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দ্রুত ব্যবস্থা নেয়। আমি তাদের নিকট কৃতজ্ঞ। মানিক অ্যারেস্ট হয়। কিন্তু জামিনে মুক্তি পেয়েই প্রকাশ্যে হুমকি দিয়েছেন। আমার কর্মীদেরকে ডেকে নিয়ে হুমকি দিয়েছেন। কিন্তু আমার কর্মীরা আমার মতোই সাহসী।’
তিনি বলেন, ‘বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, মুক্তিযোদ্ধা ভাতা, মাতৃত্বকালীন ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা এই সরকারই দিয়েছে। কিন্তু চুয়াডাঙ্গা-আলমডাঙ্গায় বণ্টন সমানভাবে হচ্ছে না। আমি নির্বাচিত হলে এসব অনিয়ম, বৈষম্য থাকবে না। আমি এমপি হলে প্রত্যেক ইউনিয়নে একটি মডেল মসজিদ, একটি মডেল মাদ্রাসা ও একটি মডেল পাবলিক কবরস্থান করব। এছাড়া প্রতিটা ইউনিয়নে একটা মডেল শ্মশান ও মডেল মন্দির করব। কর্মমুখী শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির জন্য আমি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। কর্মসংস্থান নিয়ে আমি স্বপ্ন দেখি, বেকার মুক্ত হবে চুয়াডাঙ্গা-আলমডাঙ্গা। কর্মসংস্থান পেলে হাত পেতে অনুদান নেওয়ার সংস্কৃতি বন্ধ হবে। সৃষ্টিকর্তা যদি সুযোগ দেয়, চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে ফ্রি ওয়াইফাই জোন করে দেব।’
তথ্য-প্রযুক্তি উন্নয়নের বিষয় তুলে ধরে দিলীপ কুমার আগরওয়ালা বলেন, অনলাইনে আউটসোর্সিং ট্রেনিং সেন্টার করে দেব। চুয়াডাঙ্গা-আলমডাঙ্গার শিক্ষার্থীরা যাতে পড়াশোনা করা অবস্থাতেই অনলাইনে ইনকাম করতে পারে, সেই ব্যবস্থা করে দেব। সৃষ্টিকর্তা যদি সুযোগ দেয়, ঘুষ ও দুর্নীতিমুক্ত চুয়াডাঙ্গা-আলমডাঙ্গা আমি উপহার দেব।’
তিনি আরও বলেন, ‘এছাড়া কৃষি, সামাজিক নিরাপত্তা, নারী জাগরণ, দারিদ্র্য বিমোচন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি, সন্ত্রাসমুক্ত জনপদ, অসাম্প্রদায়িক চুয়াডাঙ্গা, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, দলিত ও অবহেলিত জনগোষ্ঠী, জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশ সুরক্ষা নিয়ে আমি কাজ করব।’ পরিশেষে আলমডাঙ্গাবাসীর উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ৫২ বছরের ইজারা শেষ করতে হলে ভোট কেন্দ্রে যেতে হবে। আর এইবার যদি ভোটকেন্দ্রে না যান, তবে ওই পরিবার ১০০ বছরের চুয়াডাঙ্গা-আলমডাঙ্গার ইজারা নিবে। কী করবেন? সিদ্ধান্ত আপনাদের। এসময় নেতা-কর্মী ও সমর্থকরা ঈগল প্রতীকের স্লোগানে সমাবেশস্থল মুখর করে তোলে।
আলমডাঙ্গা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও পৌরসভার মেয়র হাসান কাদির গনুর সভাপতিত্বে জনসভায় চুয়াডাঙ্গা-১ নির্বাচনী আসনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা বক্তব্য দেন। বক্তারা তাদের বক্তব্যে বিগত ১৫ বছরে জেলার উন্নয়ন ও সুশাসন নিয়ে আক্ষেপ প্রকাশ করেন। তারা আশা করেন, ঈগল প্রতীকের প্রার্থী দিলীপ কুমার আগরওয়ালা বিজয়ী হলে স্মার্ট চুয়াডাঙ্গা গড়ে উঠবে। সৃষ্টি হবে নতুন নতুন কর্মসংস্থান।
চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক সাবেক চেয়ারম্যান কাওসার আহম্মেদ বাবলু ও আলমডাঙ্গা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মতিয়ার রহমান ফারুকের সঞ্চালনায় জনসভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য ও জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান শেখ সামসুল আবেদীন খোকন, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আইয়ুব হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাড. আব্দুল মালেক, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুব ও ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক অ্যাড. শফিকুল ইসলাম শফি, জেলা কৃষক লীগের সভাপতি সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম ফারুক জোয়ার্দ্দার, আলমডাঙ্গা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাজী রবিউল হক, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আতিয়ার রহমান, সাবেক ক্রীড়া সম্পাদক ও সাবেক বিআরডিবি চেয়ারম্যান মহিদুল ইসলাম মহিদ, আলমডাঙ্গা উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি অ্যাড. সালমুন আহমেদ ডন, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান কাজী মারজাহান নিতু, ইউপি চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম, উপজেলা জাসদের সভাপতি মোল্লা গোলাম সরোয়ার, সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমান আনিস, পৌর জাসদের সাধারণ সম্পাদক কাউন্সিলর ডালিম হোসেন, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আমিরুল ইসলাম মণ্টু, নুরুল ইসলাম, সাখাওয়াত হোসেন টাইগার ও আব্দুল হালিম।
নির্বাচনী এই জনসভায় আরও উপস্থিত ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ৭০’র অগ্নিসেনা মঈন উদ্দিন পারভেজ, পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক প্রচার সম্পাদক রেজাউল হক তবা, ডাউকি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুল ইসলাম দিপু মাস্টার, জেলা কৃষক লীগের যুগ্ম সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল হোসাইন দিপক, কালিদাসপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোল্লা কামরুজ্জামান শামিম, গাংনী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রকিবুল ইসলাম, খাসকররা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আনোয়ার মাস্টার, জেলা যুব মহিলা লীগের সভানেত্রী আফরোজা পারভীন, উপজেলা যুবলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক সাজ্জাদুল ইসলাম খান স্বপন, যুবলীগ নেতা কাউন্সিলর আশরাফুল হোসেন বাবু, হাসিবুল ইসলাম, আরিফুল ইসলাম, হাবিবুর রহমান রুবেল, পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি নয়ন সরকার, কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সেলিম রেজা তপনসহ বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে আগত হাজার হাজার সাধারণ নারী-পুরুষ ভোটাররা।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আলমডাঙ্গা মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে স্মরণকালের বিশাল জনসমাবেশে দিলীপ কুমার আগরওয়ালা

জেলার উন্নয়নে দিলেন একগুচ্ছ প্রতিশ্রুতি, ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার আহ্বা

আপলোড টাইম : ০৪:৪৭:৪১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২ জানুয়ারী ২০২৪


সমীকরণ প্রতিবেদক:
দিলীপ কুমার আগরওয়ালা বলেছেন, ‘এই আলমডাঙ্গা-চুয়াডাঙ্গার ধুলো-মাটি আমার গায়ে লেগে আছে। আমি এই জনপদের মাটি ও মানুষের টানে বারবার ছুটে আসি। এই টানই আমাকে নামিয়েছে ভোটের মাঠে, পরিবর্তনের অঙ্গিকার নিয়ে আমি আপনাদের সামনে দাড়িয়েছি। আপনাদের এই বিশাল উপস্থিতি আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে, আমাকে অভিভূত করেছে। আপনারা আজ প্রমাণ করেছেন, চুয়াডাঙ্গা-আলমডাঙ্গাবাসী পরিবর্তন চাই। গতকাল সোমবার আলমডাঙ্গা সরকারি পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে ঈগল প্রতীকের বিশাল জনসভায় এসব কথা বলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী এবং আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য দিলীপ কুমার আগরওয়ালা। এবারই প্রথম নির্বাচনে অংশ নিয়ে বেশ সাড়া ফেলেছেন তিনি। আছেন ভোটারদের আলোচনার কেন্দ্র বিন্দুতেও। সাধারণ ভোটারদের মতে নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে, ঈগল প্রতীক নিয়ে আলোচনাও ততই বাড়ছে। নির্বাচনী আসনটির সর্বত্র বিরামহীন প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন দিলীপ কুমার ও তাঁর কর্মী-সমর্থকেরা। গতকালদুপুর থেকেই আলমডাঙ্গা উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে হাজার হাজার নারী-পুরুষ দলে দলে ঈগল প্রতীকের ব্যানার ও ফেস্টুন নিয়ে মিছিলসহকারে সমাবেশস্থলে উপস্থিত হতে শুরু করে। বিকেলের মধ্যে সরকারি পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠ কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে যায়। এরপরেও বিভিন্ন এলাকা থেকে সেখানে স্বতন্ত্র ঈগল প্রতীকের সমর্থকরা আসতে থাকলে মাঠ ছাপিয়ে জনসমাগম রাস্তা ও আশপাশের এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। সমাবেশে অন্তত অর্ধলক্ষাধিক মানুষের সমাগম ঘটে বলে স্থানীয়দের ধারণা।

ওই সমাবেশে হাজার হাজার সমর্থকদের সামনে দাঁড়িয়ে দুর্নীতিমুক্ত চুয়াডাঙ্গা গড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে দিলীপ কুমার আগরওয়ালা আরও বলেন, ‘উন্নয়নের জন্য পরিবর্তন চাই। আমি আপনাদের সন্তান। আপনাদের টানই আমাকে ভোটের মাঠে নামিয়েছে পরিবর্তনের জন্য। এই জনপদের কি পরিবর্তন চান আপনারা? ইনশাআল্লাহ সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছায় আপনাদের চেষ্টায় পরিবর্তন আসবেই। পরিবর্তন না হলে এই জনপদের উন্নয়ন সম্ভব নয়। আমাদের স্লোগান হবে “উন্নয়নের জন্য পরিবর্তন চাই।’’ আমি নির্বাচিত হলে এখানে বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তুলব, আলমডাঙ্গায় হাসপাতাল হবে, সদর হাসপাতালকে ৫০০ শয্যার হাসপাতালে রূপান্তরিত করব। এখানে যুব সমাজের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করব। অবকাঠামোগত উন্নয়ন করব। জেলার সার্বিক উন্নয়নে কাজ করে আপনাদের ঋণ শোধ করব।’
বিশাল ওই জনসমাবেশে দিলীপ কুমার আগরওয়ালা আরও বলেন, ‘চুয়াডাঙ্গাবাসী আজ পরিবর্তন চায়। তারা আর কোনো নির্দিষ্ট পরিবারের গণ্ডিতে আটকে থাকতে চায় না। কারণ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সারাদেশে উন্নয়ন হলেও চুয়াডাঙ্গা-১ আসনে তার সুফল আসেনি। তাই আমি বিজয়ী হলে এই জেলাকে স্মার্ট চুয়াডাঙ্গায় রূপ দেব।’

সাম্প্রদায়িক রাজনীতি বন্ধের আহ্বান জানিয়ে প্রতিপক্ষ প্রার্থীর উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ অসাম্প্রদায়িক। তাই নির্বাচনের মাঠে হিন্দু-মুসলমান বিভেদ সৃষ্টি করবেন না। এসময় তিনি প্রত্যেক নির্বাচনী আসনের প্রত্যেক ইউনিয়নে একটি করে মডেল মসজিদ, মাদ্রাসা, গোরস্তান, শ্মশান, মন্দির গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দেন। পরিবারের আত্মত্যাগের কথা তুলে ধরে দিলীপ কুমার আগরওয়ালা বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধে আমার পরিবারের অবদান রয়েছে। আমার মাতামহ ও আপন দুই মামা ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হন। আমার মায়ের নামে করা স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান, “তারা দেবী ফাউন্ডেশনের” কথা আপনারা সবাই জানেন। ব্যক্তি উদ্যোগে আপনাদের পাশে আছি। সবসময় ছিলাম।’
দিলীপ কুমার আগরওয়ালা বলেন, ‘বৃহৎ পরিসরে উন্নয়নের জন্য ডিও লেটার ছাড়া অনেক কিছুই সম্ভব নয়। একটা স্বাক্ষর অনেক গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়নের জন্য। তাই চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য আমি এমপি হতে চাই। চুয়াডাঙ্গা-আলমডাঙ্গার মানুষকে জিম্মিদশা থেকে উদ্ধার করার জন্য আমি এমপি হতে চাই। আমি আপনাদের কথা চিন্তা করে এখানে এসেছি। আমাকে সৃষ্টিকর্তা যতটুকু দিয়েছে, তা দিয়ে আমার পরবর্তী তিন প্রজন্ম সুখে-শান্তিতে জীবন কাটাতে পারে। কিন্তু সবকিছু ছেড়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আমি আপনাদের পাশে দাঁড়িয়েছি।’
নির্বাচনী প্রচারণায় বাঁধা পাওয়ার কথা উল্লেখ করে দিলীপ কুমার আগরওয়ালা বলেন, ‘আমার কর্মীরা পোস্টার লাগাতে গেলে লাগাতে পারছে না। আমার কর্মীদের লাগানো পোস্টার-ব্যানার তারা কেটে দিচ্ছে। আমার কর্মীকে তারা মারধর করছে। হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। এখন পর্যন্ত চুয়াডাঙ্গা এবং আলমডাঙ্গা থানায় ১০টি জিডি ও মামলা করেছি। ৬টি অভিযোগ দায়ের করেছি। তারা আমাকে টার্গেট করেছে। আপনারা পত্র-পত্রিকায় দেখেছেন, শংকরচন্দ্র ইউনিয়নে আমি নির্বাচনী প্রচারে গেলে আমার ওপর হামলা করা হয়। পার্শ্ববর্তী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মানিক অস্ত্র উঁচিয়ে আমাকে হত্যা ও অপহরণ চেষ্টা করেন। ওই ঘটনায় প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দ্রুত ব্যবস্থা নেয়। আমি তাদের নিকট কৃতজ্ঞ। মানিক অ্যারেস্ট হয়। কিন্তু জামিনে মুক্তি পেয়েই প্রকাশ্যে হুমকি দিয়েছেন। আমার কর্মীদেরকে ডেকে নিয়ে হুমকি দিয়েছেন। কিন্তু আমার কর্মীরা আমার মতোই সাহসী।’
তিনি বলেন, ‘বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, মুক্তিযোদ্ধা ভাতা, মাতৃত্বকালীন ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা এই সরকারই দিয়েছে। কিন্তু চুয়াডাঙ্গা-আলমডাঙ্গায় বণ্টন সমানভাবে হচ্ছে না। আমি নির্বাচিত হলে এসব অনিয়ম, বৈষম্য থাকবে না। আমি এমপি হলে প্রত্যেক ইউনিয়নে একটি মডেল মসজিদ, একটি মডেল মাদ্রাসা ও একটি মডেল পাবলিক কবরস্থান করব। এছাড়া প্রতিটা ইউনিয়নে একটা মডেল শ্মশান ও মডেল মন্দির করব। কর্মমুখী শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির জন্য আমি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। কর্মসংস্থান নিয়ে আমি স্বপ্ন দেখি, বেকার মুক্ত হবে চুয়াডাঙ্গা-আলমডাঙ্গা। কর্মসংস্থান পেলে হাত পেতে অনুদান নেওয়ার সংস্কৃতি বন্ধ হবে। সৃষ্টিকর্তা যদি সুযোগ দেয়, চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে ফ্রি ওয়াইফাই জোন করে দেব।’
তথ্য-প্রযুক্তি উন্নয়নের বিষয় তুলে ধরে দিলীপ কুমার আগরওয়ালা বলেন, অনলাইনে আউটসোর্সিং ট্রেনিং সেন্টার করে দেব। চুয়াডাঙ্গা-আলমডাঙ্গার শিক্ষার্থীরা যাতে পড়াশোনা করা অবস্থাতেই অনলাইনে ইনকাম করতে পারে, সেই ব্যবস্থা করে দেব। সৃষ্টিকর্তা যদি সুযোগ দেয়, ঘুষ ও দুর্নীতিমুক্ত চুয়াডাঙ্গা-আলমডাঙ্গা আমি উপহার দেব।’
তিনি আরও বলেন, ‘এছাড়া কৃষি, সামাজিক নিরাপত্তা, নারী জাগরণ, দারিদ্র্য বিমোচন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি, সন্ত্রাসমুক্ত জনপদ, অসাম্প্রদায়িক চুয়াডাঙ্গা, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, দলিত ও অবহেলিত জনগোষ্ঠী, জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশ সুরক্ষা নিয়ে আমি কাজ করব।’ পরিশেষে আলমডাঙ্গাবাসীর উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ৫২ বছরের ইজারা শেষ করতে হলে ভোট কেন্দ্রে যেতে হবে। আর এইবার যদি ভোটকেন্দ্রে না যান, তবে ওই পরিবার ১০০ বছরের চুয়াডাঙ্গা-আলমডাঙ্গার ইজারা নিবে। কী করবেন? সিদ্ধান্ত আপনাদের। এসময় নেতা-কর্মী ও সমর্থকরা ঈগল প্রতীকের স্লোগানে সমাবেশস্থল মুখর করে তোলে।
আলমডাঙ্গা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও পৌরসভার মেয়র হাসান কাদির গনুর সভাপতিত্বে জনসভায় চুয়াডাঙ্গা-১ নির্বাচনী আসনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা বক্তব্য দেন। বক্তারা তাদের বক্তব্যে বিগত ১৫ বছরে জেলার উন্নয়ন ও সুশাসন নিয়ে আক্ষেপ প্রকাশ করেন। তারা আশা করেন, ঈগল প্রতীকের প্রার্থী দিলীপ কুমার আগরওয়ালা বিজয়ী হলে স্মার্ট চুয়াডাঙ্গা গড়ে উঠবে। সৃষ্টি হবে নতুন নতুন কর্মসংস্থান।
চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক সাবেক চেয়ারম্যান কাওসার আহম্মেদ বাবলু ও আলমডাঙ্গা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মতিয়ার রহমান ফারুকের সঞ্চালনায় জনসভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য ও জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান শেখ সামসুল আবেদীন খোকন, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আইয়ুব হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাড. আব্দুল মালেক, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুব ও ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক অ্যাড. শফিকুল ইসলাম শফি, জেলা কৃষক লীগের সভাপতি সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম ফারুক জোয়ার্দ্দার, আলমডাঙ্গা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাজী রবিউল হক, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আতিয়ার রহমান, সাবেক ক্রীড়া সম্পাদক ও সাবেক বিআরডিবি চেয়ারম্যান মহিদুল ইসলাম মহিদ, আলমডাঙ্গা উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি অ্যাড. সালমুন আহমেদ ডন, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান কাজী মারজাহান নিতু, ইউপি চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম, উপজেলা জাসদের সভাপতি মোল্লা গোলাম সরোয়ার, সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমান আনিস, পৌর জাসদের সাধারণ সম্পাদক কাউন্সিলর ডালিম হোসেন, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আমিরুল ইসলাম মণ্টু, নুরুল ইসলাম, সাখাওয়াত হোসেন টাইগার ও আব্দুল হালিম।
নির্বাচনী এই জনসভায় আরও উপস্থিত ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ৭০’র অগ্নিসেনা মঈন উদ্দিন পারভেজ, পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক প্রচার সম্পাদক রেজাউল হক তবা, ডাউকি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুল ইসলাম দিপু মাস্টার, জেলা কৃষক লীগের যুগ্ম সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল হোসাইন দিপক, কালিদাসপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোল্লা কামরুজ্জামান শামিম, গাংনী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রকিবুল ইসলাম, খাসকররা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আনোয়ার মাস্টার, জেলা যুব মহিলা লীগের সভানেত্রী আফরোজা পারভীন, উপজেলা যুবলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক সাজ্জাদুল ইসলাম খান স্বপন, যুবলীগ নেতা কাউন্সিলর আশরাফুল হোসেন বাবু, হাসিবুল ইসলাম, আরিফুল ইসলাম, হাবিবুর রহমান রুবেল, পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি নয়ন সরকার, কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সেলিম রেজা তপনসহ বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে আগত হাজার হাজার সাধারণ নারী-পুরুষ ভোটাররা।